উৎসব পার্বণে নিন বিকল্প মিষ্টির স্বাদ

মোজাম্মেল সাহেবের বয়স ষাটের ঘর পেরিয়েছে। কর্মক্ষেত্র থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন। এখন তিনি ‘পারিবারিক’ সময় কাটাচ্ছেন। কখনো মেয়ের বাসায় তো কখনো ছেলের বাসায় যান মোজাম্মেল সাহেব। নাতি-নাতনী নিয়ে ভালোই যাচ্ছে তার সময়। যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই ভরপুর খাওয়া-দাওয়া চলছে। এত এত খাবার নিয়ে তাকে হরহামেশাই পড়তে হচ্ছে ঝামেলায়। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার দেখলেই মোজাম্মেল সাহেবের ঝামেলা শুরু হয়। ইচ্ছে থাকার পরও খেতে পারেন না মিষ্টি জাতীয় খাবার। কারণ মোজাম্মেল সাহেবের ডায়াবেটিস আছে। তাই তো মিষ্টি জাতীয় খাবার তিনি চেকে দেখা তো দূরের কথা, সেই খাবারের দিকে চেয়েও দেখেন না। অথচ একসময় যেকোনো খাবারের পর মিষ্টি জাতীয় খাবার না হলে চলতোই না তার। এমনই যখন অবস্থা তখনই মোজাম্মেল সাহেবে পেলেন ‘জিরো ক্যাল’-এর সন্ধান। মিষ্টি জাতীয় খাবারের স্বাদ তিনি এখন পুরোপুরিই নিতে পারছেন। উৎসব-পার্বণে ফিন্নি-পায়েস আর জর্দার মতো মিষ্টি জাতীয় খাবার এখন মোজাম্মেল সাহেবের খেতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা ‘জিরো ক্যাল’ দিয়ে তৈরিকৃত মিষ্টি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিসসহ হাই কোলেস্টেরলের রোগীদের খাওয়ার জন্যই বিশেষ উপায়ে তৈরি হয়।

চিনি ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না, এটা যেমন সত্য, তেমনি অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটাও আমাদের অজানা নয়। খাদ্যাভাসে মাত্রাতিরিক্ত চিনি থাকলে তা রক্তে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে, আর ফল স্বরূপ বেড়ে যায় ওজন। তাই আজকাল অনেকেই বিকল্প মিষ্টির প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন, যাতে কম ক্যালোরি থাকার কারণে ওজন বেড়ে যাবার ভয় নেই, অন্যদিকে খাবারের মিষ্টতাও বজায় থাকছে। এসব বিকল্প মিষ্টির ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসে কি না এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এমনকি ইন্টারনেটে বিকল্প মিষ্টি কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে নানান সময়ে নানান প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এদের বেশিরভাগের ভাষ্য ছিল বিকল্প মিষ্টি নানান ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হতে পারে। কিন্তু আমেরিকার ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে বলেছে সাধারণ মানুষ এসব বিকল্প মিষ্টি নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এসব মিষ্টির উপর অনেক গবেষণার পর দৈনিক গ্রহণের নিরাপদ মাত্রাও স্থির করে দিয়েছেন।

জিরোক্যাল (চিনির বিকল্প) এর সরাসরি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই। চা, সেমাই, ফিন্নি যে কোনো মিষ্টি জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে স্বাদের ক্ষেত্রে কোনো তারতম্য ঘটে না। পূর্বে ঘন চিনি বা এস্পারটাম ব্যবহৃত হত চিনির বদলে। ২০০৪ নাগাদ তা আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে যদিও পূর্বে তারা এর অনুমোদন দিয়েছিল। এখন জিরো ক্যালোরি বলে যেটা খাচ্ছেন সেটা সুক্রালোস যা নিজেই এক ধরনের চিনি অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেড। শর্করা হিসেবে অর্থাৎ কার্বন সোর্স হিসেবে যা-ই খাই না কেন শরীর যদি এটাকে ভাঙতে পারে অর্থাৎ যদি এইগুলো ভাঙার ইনজাইম শরীরের থাকে বা শরীর উৎপাদন করতে পারে তবে আল্টিমেটলি সেটা গ্লুকোজে পরিণত হয়। তাই এটাকে সেইফ ভাবা যায়।

গরমের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উদ্বেগজনক একটি দিক হলো- এসময় শরীরে ব্লাড সুগার অস্বাভাবিক পরিমাণে বাড়ে-কমে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীরে মেটাবোলিজমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বাড়ারও সম্ভাবনা থাকে। প্রচণ্ড গরমে ঘর্মাক্ত বা ক্লান্ত হয়ে পড়া হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। নিজের বাড়তি যত্ন নিন এবং প্রতিবার দীর্ঘভ্রমণ ও যেকোনো কাজের আগে ও পরে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন। আর এই সময়ে জিরোক্যাল দিয়ে মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করতে ভুলবেন না।

আচ্ছা কখনো ভেবেছেন কি, এই যে  ঈদের সময় এত সেমাই, শরবত, পায়েস, মন্ডা-মিঠাই ইত্যাদি আমরা ইচ্ছামতো খাব এগুলো চিনি ছাড়া হলে কেমন লাগতো? আবার ধরা যাক রাস্তা-ঘাটে, বাড়িতে-অফিসে সময়ে অসময়ে চা পান করছেন সেটা চিনি ছাড়া হলে কেমন হত? ভাবতেই পারছেন না, তাই না? আসলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বিভিন্ন খাবারে চিনির ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনির পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করা উচিত।

অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে যে সমস্যাগুলো আপনার হতে পারে তা হলো- শরীরে মেদ বৃদ্ধি করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্তনালীর উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য চিনি অত্যন্ত ক্ষতিকর। অন্যদিকে চিনিজাত দ্রব্য শরীরে যে শক্তির সঞ্চার ঘটায় তা খুবই তাড়াতাড়ি নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে শরীর অল্পতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি একটি নেশা জাতীয় দ্রব্যের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোকেইন থেকে ৮ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। ফলে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণে অল্প বয়সে চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। দাঁতে ক্ষত সৃষ্টি করে। ওজন এবং হৃৎরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করাসহ শরীরে আরো অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

তাই বলে কী চিনির স্বাদ গ্রহণ করবেন না? এজন্যই রয়েছে ‘জিরোক্যাল’। পৃথিবীতে চিনি একমাত্র মিষ্টান্ন দ্রব্য নয়, এর বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে। চিনির পরিবর্তে আপনি জিরোক্যাল বা মধু ব্যবহার করতে পারেন। এটি শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি খাবার মিষ্টি করতেও সাহায্য করে। এছাড়া আপনি গুড় ব্যবহার করতে পারেন। স্বাদে চিনির মতো না হলেও এটি আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের সুগার ফ্রি পণ্য পাওয়া যায়। এগুলোতেও ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং তা চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করার জন্যই তৈরি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘জিরোক্যাল’।

  • ফিচার
Comments (০)
Add Comment