এবার মুশকান পরিচয়ে রেহানা

রেহানা মরিয়ম নূর খ্যাত লাক্স-চ্যানল আই তারকা আজমেরি হক বাঁধনকে ঘিরে এখন দর্শকের ব্যাপক আগ্রহ। কান ফিল্ম উৎসব মাতিয়ে গত মাসেই দেশে ফিরেছেন বাঁধন। এবার ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে বাঁধনের নতুন কাজ ভারতের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সিরিজ নাটক ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি।’
গল্পটা অনেকটাই এরকম আমেরিকায় পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন মুশকান জুবেরি। ১৯৭২ সালে এক শিক্ষা সফরে গিয়ে আন্দিজ পর্বতমালায় এক প্লেন দুর্ঘটনার শিকার হন। ১০২ জন যাত্রীর মধ্যে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান ১৮ যাত্রীর তিনি একজন। তবে উদ্ধার হওয়ার আগে এই ১৮ যাত্রী ৮০ দিন বরফঢাকা পাহাড়ে প্লেন ক্রাশে নিহত সফরসঙ্গীদের মাংস খেয়ে বেঁচে ছিলেন। আরো ভয়ংকর তথ্য হলো, মানুষের শরীরের একটা বিশেষ অঙ্গ খাওয়ার কারণে মুশকান জুবেরির শরীরে একদমই বয়সের ছাপ পড়েনি অর্থাৎ সেই ১৯৭২ সালে তিনি যে তরুণী ছিলেন এখনো তেমনই আছেন। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ যাঁরা পড়েছেন তাঁরা এই রহস্য গল্পটা জানেন। এটাও হয়তো অনেকেরই জানা, সত্যিই আমেরিকাতে এমন এক প্লেন দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল। মরা মানুষের মাংস খেয়েই বেঁচে থাকতে হয়েছিল আটকে পড়া যাত্রীদের। সেই সত্যি গল্পের সঙ্গে রহস্যের মিশেল ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি।’
বাঁধন বলেন, ‘নাজিম ভাই গল্পটা অসাধারণভাবে লিখেছেন! কাল্পনিক এই গল্পে সত্য ঘটনাটার ছায়া আছে। অন্য লেভেলের একটা থ্রিলার। তাও আবার আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। যার কাছেই এই গল্পের কথা শুনেছি এককথায় বলেছেন অসাধারণ। রাহুল বোসও উপন্যাসটা পড়েছেন। পড়ে খুবই অবাক হয়েছেন, লেখক এমনটা ভাবলেন কিভাবে! এত ইন্টারেস্টিং গল্প।’
বাংলা চলচ্চিত্রের নামি থ্রিলার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি আরো আগেই পড়েছিলেন উপন্যাসটা। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন এটাকে পর্দায় আনবেন। কিন্তু নাজিম উদ্দিন তার আগেই কলকাতার একটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা দিয়ে ফেলেছিলেন। বাংলাদেশে এসে সৃজিত দেখা করলেন নাজিমের সঙ্গে। সৃজিতের কাজ নাজিমেরও পছন্দ। অবশেষে ভারতে ফিরে গিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজটা নিজেই নিলেন সৃজিত। বাংলাদেশেই সিরিজটির শুটিং হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল, বাঁধন ছাড়াও অভিনয় করবেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীসহ এখানকার অনেকেই। কিন্তু করোনা এসে সব ওলটপালট করে দিল। বাঁধন থাকলেন, বাকি সব বদলে গেল, এমনকি বদলে গেল চরিত্রগুলোর নাম ও ভৌগোলিক অবস্থান। মুশকান জুবেরির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনলাইনে সৃজিতের সঙ্গে ছয় মাস রিহার্সাল করেছেন বাঁধন। তবু খবর রটেছিল, বাঁধনও বাদ পড়ছেন। বাঁধন বলেন, ‘সৃজিত আমাকে বলেছে, ওরা পাওলি দামকে কাস্ট করেছিল। পাওলির সঙ্গে ডেট নিয়ে হয়তো ঝামেলা হয়েছিল। পরে হইচই-এর অনিন্দ্য ব্যানার্জি বললেন, যদি পাওলির সঙ্গে ডেট না-ই মেলে তাহলে বাঁধনই থাকুক, সৃজিত যেহেতু বাঁধনকে কাস্ট করেছে, ছয় মাস রিহার্সালও করিয়েছে। ওকেই রাখার চেষ্টা করি, যতদূর সম্ভব। আমি ধরে নিয়েছিলাম, সিরিজটা করা হচ্ছে না আমার। কারণ এখানকার অন্য শিল্পীরাও যেতে পারছে না। এর মধ্যে এর কাস্টিং নিয়ে নানা সংবাদ হলো। আমি জাস্ট চুপ করে ছিলাম। ইন্ডিয়ান হাইকমিশন অব বাংলাদেশের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে বিজনেস ভিসা দেওয়া হয়েছে। এমবাসি খুবই সংবেদনশীল জায়গা থেকে আমাকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, হইচই থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট পাঠানো হলো। এ রকম নানা চড়াই-উতরাইয়ের পর কাজটা অবশেষে করতে পেরেছি।’
শুটিংয়ে প্রায় এক মাস কলকাতায় ছিলেন বাঁধন। সিকিম ও বর্ধমানেও শুটিং হয়েছে। বাঁধন বলেন, ‘বর্ধমানের একটা গ্রামে টানা আট রাত শুটিং হয়েছে। দুপুরের খাবারের পরে আমাদের সেটে যেতে হতো। সারা রাত শুটিং চলত, শেষ হতো ভোরবেলায়। তখন ওখানে ৬-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এত্ত ঠাণ্ডা! সবাই দু-তিনটা জ্যাকেট পরে নিয়েছে। ওখানে একটা শাওয়ারের দৃশ্যের জন্য ওই ঠাণ্ডার রাতে আমাকে ভিজতে হয়েছে!’
সিকিমে প্রথম দিন শুটিংই প্যাকআপ হয়ে গেল। টিমের সবাই অসুস্থ হয়ে গেল। কারণ পাহাড়েরও ওপর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। ওপরে উঠলেই অক্সিজেন লেভেল কমে যায়। শুটিংটা হয়েছে জিরো পয়েন্টে। সবারই শ্বাসের সমস্যা হচ্ছিল। ‘আমাদের একজন ভিনদেশি কো-অ্যাক্টর ছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্যে তাঁর লাইফ সেভ করতে হয়েছে। না হলে হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত।’
গত মাসেই কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দারুণ প্রশংসিত হলো। যদি রেহানার সঙ্গে মুশকানের তুলনা করতে হয়, কী বলবেন বাঁধন? ‘রেহানার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা করব না। কলকাতার গণমাধ্যমগুলোতেও এ কথা আমি স্পেসিফিকভাবে বলেছি। তবে হ্যাঁ, সৃজিত মুখার্জি, পিপলু আর খানদের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য অনেক ইন্সপায়ারিং। তাঁরা বড়মাপের নির্মাতা। আমি অনেক কিছু শিখেছি। উনারাও বলেছেন, বাঁধন পরিশ্রমী।’
রেহানা আলাদা, তার নিশ্চয়ই কারণ আছে, কী সেগুলো? “আমার জীবন বদলে দেওয়ার গল্প ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এর চিত্রনাট্য, চরিত্র বা কানে যাওয়া—এসব না। আমার জীবনে ছবিটির প্রভাব আরো অনেক গভীরে। সব কিছুর থেকে আলাদা। সেটা আমার জীবনে আর ফেরত আসবে না। এর চেয়েও বেশি পুরস্কৃত বা প্রশংসিত ভালো কিছু যদি করে ফেলতে পারি সেটাও আসলে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ হবে না। আমি নামি অভিনেত্রীও না, তবু চ্যালেঞ্জটা সাদ নিয়েছে। আমার জীবনদর্শনের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা তো এর আগে কেউ করায়নি। এটা তো আমার জীবনে প্রথম।”
ডাবিংয়ের সময় ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ পুরো সিরিজটা দেখেছেন বাঁধন। দেখার পর নিজেকেই চিনতে পারেননি। বলেন, ‘মুশকানকে মুশকানের মতোই লাগছিল। ভয়েস, ঢং, আদল সবটাই মুশকানের মতো লেগেছে। মনে হয়নি ওটা আমি। সত্যিই আমি নিজেকে চিনতে পারিনি।’

  • ফিচার