Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করলো বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট

মোহাম্মদ 6
বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্য ধারার পথিকৃৎ স্থাপত্যাচ্যর্য মাজহারুল। তাঁর নকশায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের নান্দনিক স্থাপনাগুলো কালজয়ী হয়ে থাকবে বলে মনে করেন স্থাপত্যবিদরা। স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট আয়োজিত মেমোরিয়াল লেকচার অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠানে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের বর্ণাঢ্য ও কর্ম নিয়ে উপস্থাপন করেন মাজহারুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের সভাপতি স্থপতি অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস। তিনি তাঁর বক্তব্যে মাজহারুল ইসলামের বিভিন্ন সময়ের করা স্থাপত্য কাজের আঙ্গিক বিশ্লেষণ করেন। মাজহারুল ইসলাম মেমোরিয়াল লেকচার অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের সভাপতি স্থপতি প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ ও স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খ্যাতিমান স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের সহ-সভাপতি স্থপতি মুহাম্মদ আলী নকী, সহ-সভাপতি স্থপতি খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক,সাধারণ সম্পাদক স্থপতি নবি নেয়াজ খান, সহ-সাধারন সম্পাদক স্থপতি ড. মাসুদুর উর রশিদ, কোষাধ্যক্ষ স্থপতি মীর মো: নাইয়ান সাকিব, স্থপতি নাজমুল হক বুলবুল, সম্পাদক, পেশা, স্থপতি আহসানুল হক রুবেল, প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক স্থপতি মো: শফিউল আজম শামীম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক স্থপতি মোহাম্মদ জিয়াউল শরিফ সেমিনার ও সম্মেলন সম্পাদক সাবরিনা আফতাব সহ অন্যান্য স্থপতিবৃন্দ।
২২ ডিসেম্বর স্থাপত্যচার্য মাজহারুল ইসলামের স্থাপত্যকর্ম নিয়ে রাজধানীর মানিকমিয়া এভিনিউর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে খোলা চত্বরে আয়োজন করা হয়েছিল চার দিন ব্যাপী বিশেষ প্রদর্শনীর। এই প্রদর্শনী শেষ হয় ২৫ ডিসেম্বর। মাস্টার আর্কিটেক্ট মাজহারুল ইসলামের শততম জন্মবাষির্কী উপলক্ষে বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট (বাস্থই) এর উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান মালার অংশ হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। এতে স্থান পায় স্থপতি মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলামের বিভিন্ন স্থাপনার ছবি, স্থাপত্য নকশার ছবি, বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা, স্মৃতিচরণ। এর পাশাপাশি মাজহারুল ইসলামের যুগান্তকারী নকশার ভবন গুলো ধ্বংসের মুখে এবং সে সব ভবনের যে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন তাও তুলে ধরা হয় প্রদর্শনীতে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন গুলোর মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বাসভবনের ছবি, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ভবনের ছবি, জয়পুরহাট কঠিন শিল্প প্রকল্পের ভবনের ছবি প্রভৃতি। এ ছাড়াও ছিল ভবন গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীনগর বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভবনের নানা অংশের ছবি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের ছবি সহ তার গুরুত্বপুর্ণ ডিজাইনের খন্ড খন্ড ছবি সহ আরও কিছু গুরুত্বপুর্ন ভবনের ছবি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট এর প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারন সম্পাদক সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের সভাপতি স্থপতি প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান, স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের শততম জন্মবাষির্কী অনুষ্ঠানের আহবায়ক স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমান, খ্যাতিমান স্থপতি ইকবাল হাবিব, স্থপতি ইশতিয়াক জহির, স্থপতি সাবরিনা আফতাব প্রমুখ।
সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশ বান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
নসরুল হামিদ
প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ
সমাজ, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটিয়েই পরিবেশ বান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে। অন্ধ অনুকরণের মাধ্যমে সৃজনশীল কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। দেশের জন্য কিছু করতে হলে আত্মউপলব্ধি থাকতে হবে। নিজের ভিতরে তাড়না থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের কাজে একদিকে যেমন সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা প্রকাশ পেয়েছে, ঠিক তেমনি স্থানীয় প্রকৃতি ও পরিবেশকে অভিযোজন করে প্রকৃতির আলো-বাতাসের সর্বোত্তম ব্যবহার করা হয়েছে। ষাটের দশকে স্থাপত্যাচার্য মাজহারুল ইসলামের পরিবেশের কথা বলেছেন। আজ এতদিন পর সারা বিশ^ পরিবেশ নিয়ে কার্বণ নিঃসরণ বিষয়ে সচেতন হয়েছে। নতুন প্রজন্মের স্থপতিরা মাজহারুল ইসলামের নির্মাণশৈলী নিজেরাই কালোত্তীর্ণ শিল্পকর্ম সৃজনে সক্ষম হবে।
আমাদের শেকড়টা যেন ঠিক জায়গায় থাকে
স্থপতি প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ
সভাপতি, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট
মাজহারুল ইসলাম স্যারের শততম জন্মবাষির্কী আমরা বাস্থই থেকে উদযাপন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা তাঁর স্থাপত্যকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী করেছি। বাস্থই কার্যালয়ের হলে মাজহারুল ইসলাম মেমোরিয়াল লেকচার হয়েছে। পরবর্তীতে আরো প্রদর্শনী হবে। আমরা তাঁর স্থাপত্যকর্ম গুলো তুলে ধরছি শেখার জন্যে, জনার জন্যে। কারণ আমরা মনে করি স্থাপত্য শুধুমাত্র একটা গোষ্ঠি বা ইকোনোমিক গ্রুপের কাছে প্রযোজ্য তা না। সাধারন মানুষের কাছে স্থাপত্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা শব্দ। আশ্রয়ন হচ্ছে স্থাপত্য। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা, জ্ঞান লাভ করা, তার চাহিদাপত্র তৈরি করার অধিকার আছে। মানুষজন এখন স্থপতিদের কাছে আসে তাদের বাসাটা বানানোর জন্য। অনেক ক্ষেত্রে স্থপতিরা করেন। অনেক ক্ষেত্রে স্থপতিরা তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করেন। আবার প্রতিযোগিতার প্রসেসেও কাজ করেন। কিন্তু একজন জ্ঞান ও কারিগরী সম্পন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। এজন্য আমরা মনে করি, স্থাপত্য সম্পর্কে ধারণা সাধারণ জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
যাতে করে আমরা একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। যে পরিবেশে আমাদের পরিবার, পরিজন, শহরবাসী, নগরবাসী, গ্রামবাসী সবাই মিলে মিশে একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি। এখানে স্থাপত্যের যথার্থতা প্রমাণ হবে। ওই স্পিরিট থেকে আমরা মাজহারুল ইসলামের স্থাপত্যকে সেলিব্রেট করে আসছি বা করছি। সামনে আমাদের আরো প্রোগ্রাম হবে। আমরা তুলে ধরতে চাই স্থপতি মাজহারুল ইসলাম কী ভাবে আমাদের আবহাওয়া, আমাদের পরিবেশ, আমাদের মাটি এবং পানি নিয়ে স্থাপত্য রচনা করেছেন তার দৃষ্টান্ত। আমরা বলছি না যে মাজহারুল ইসলাম স্যারের আর্কিটেকচারকে রেপ্লিকেট করতে হবে, আমরা বলছি, তাঁর আর্কিটেকচার সম্পর্কে যে ধারণা, যে গভীর জ্ঞান, এটাকে আত্মস্থ করলেই আমরা নতুন আর্কিটেকচার করতে পারব। নতুন স্টাইল রচনা করবো। কিন্তু আমাদের শেকড়টা যেন ঠিক জায়গায় থাকে। মাজহারুল ইসলামের কাজ বুঝবে এবং এটা দেখলে আমরা কিন্তু শিকড়ের সন্ধানটা সহজেই করতে পারবো। আমরা চাচ্ছি, মাজহারুল ইসলামের স্থাপত্যটাকে সবার মাঝে তুলে ধরতে। উনি আমাদের গুরু। তিনি আমাদের অত্যন্ত প্রাণ প্রিয় মানুষ ছিলেন।