Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দেশী উপকরণ নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন জুবায়ের হাসান

এ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে জুবায়ের হাসান অন্যতম। আন্তরিক সদিচ্ছা, দৃঢ়মনোবল ও উৎসাহ এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ‘জুবায়ের হাসান আর্কিটেক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বনামধন্য এই আর্কিটেক্ট বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

সুন্দর বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সাধারন মানুষের সঙ্গে স্থাপত্যের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্য নিরলস স্থাপত্যচর্চা করে যেতে চাই। কথা গুলো বললেন স্থপতি জুবায়ের হাসান। ইট, কাঠ, বালু ও কংক্রিটের মাঝে খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই তার প্রতিটি স্থাপনায় থাকে সবুজের ছোঁয়া। প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজ প্রকৃতি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তিনি।
স্থপতি জুবায়ের হাসান দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মেজ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। জুবায়ের হাসানের বাবা কে এম নজরুল ইসলাম ছিলেন স্বনামধন্য অ্যাডভোকেট। মা জেসমীন সুলতানা গৃহিনী। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। সৃষ্টিশীল কোনো কিছু করার উদ্দেশ্যে আর্কিটেক্ট হওয়া তার।

স্থপতি জুবায়ের হাসান

সিরাজগঞ্জ হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৬ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করার পরপরই জুবায়ের হাসান যোগ দেন ‘ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড’এ। সেখানে তিনি তিন বছর কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ‘জুবায়ের হাসান আর্কিটেক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে জুবায়ের হাসান দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং রিসোর্ট, ক্লাব, স্কুল, রেস্টুরেন্ট, ভ্যাকেশন হাউজ, অফিস বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে অ্যাম্বার ডেনিম লুম সেড ফ্যাক্টরি, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, ধানমন্ডি-২৭ এ বেঙ্গল শিল্পালয়, বনানীতে আর্ট ক্যাফে অ্যান্ড সুইট অফ বেঙ্গল, আশুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাব, কেরানীগঞ্জে জব্বার কমিউনিটি সেন্টার, ভ্যাকেশন হাউজ, কেরানীগঞ্জে বন্ধ ডাক পাড়া স্কুল, জিঞ্জিরা বাজার সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। এছাড়াও কক্সবাজারে পাঁচ তারকা মানের একটি হোটেল, জামালপুরে রিক্রেয়শন ক্লাব, ভৈরবে ইউনিভার্সিটি সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে তার।
স্থাপনার কাজে জুবায়ের হাসানের রয়েছে অসম্ভব সাফল্য। প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিয়ে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে তার সাফল্যের ঝুড়িতে জমা হয়েছে সেরা কর্মের স্বীকৃতি। উল্লেখযোগ্য অ্যাওয়ার্ড গুলোর মধ্যে রয়েছে আইএবি আয়োজিত বার্জার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, আইএবি ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড, জেকে আয়া অ্যাওয়ার্ডস, আর্কএশিয়া অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার, টু এ এশিয়া আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ডস, আমেরিকান আর্কিটেকচার প্রাইজ (এএপি) ইত্যাদি।
২০০৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তাহমিদা আফরোজ। তিনিও একজন আর্কিটেক্ট। এই দম্পতি এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী। ছেলের নাম রাইফ হাসান আলভান। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।
স্থপতি জুবায়ের হাসান বলেন, দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করা। দেশীয় কালচারকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা। অল্প খরচে প্রকল্প সম্পন্ন করা আমার একটি প্রধান চেষ্টা। এ দেশের স্থাপত্য কেমন হবে তা খুঁজে বের করার একটা চেষ্টা আমার সমস্ত প্রকল্পতেই থাকে।
তরুণ স্থপতিরা যারা এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ? এ প্রসঙ্গে স্থপতি জুবায়ের হাসান বলেন, তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দেশের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে স্থাপত্যকর্ম করার চেষ্টা করা। বাংলাদেশের আলো বাতাসকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশের মাটিকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে এ দেশের মানুষের কেউ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পৃথিবীর কাছে তার স্থাপত্যকর্ম দিয়ে পরিচিত।
তরুণদের দায়িত্ব এ চলমান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিজেদেরকে একত্র করা। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি জুবায়ের হাসান। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন।