Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মানুষ গড়ার কারিগর ফখরুল আমীন

অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফখরুল আমীন। বাংলাদেশের স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদ ও জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘ চার দশক এর বেশি সময় ধরে শিক্ষাবিদ হিসেবে পাঠ দান ও গবেষণার পাশাপাশি ভৌত স্থাপনার নকশা নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষানবেক্ষণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৭ সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি লেকচারার হিসেবে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালে বুয়েট থেকে তিনি জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিায়ারিং এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ সালে সৈয়দ ফখরুল আমীন যুক্তরাজ্যের স্ট্রাথক্লাইড ইউনিভার্সিটি থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর থেকে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্লাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ২০১৯ সালে বুয়েট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফখরুল আমীনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তাঁর বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম সামসুছদোহা। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন গৃহিনী। ছোট বেলা থেকে ফখরুল আমীন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। হয়েছেনও সফল। বাবা-মার ইচ্ছা আর নিজের আগ্রহ থেকেই প্রকৌশল হওয়া তার। সৈয়দ ফখরুল আমীন কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ১৯৭৭ সালে তিনি বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি লেকচারার হিসেবে যোগ দেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ১৯৮৪ সালে বুয়েট থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ১৯৯০ সালে ফখরুল আমীন যুক্তরাজ্যের স্ট্রাথক্লাইড ইউনিভার্সিেিট থেকে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর গবেষণা করেন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদেশের নিরাপদ ও সুনিশ্চিত জীবনের মোহ ঝেড়ে ফেলে দেশে ফিরে আসেন দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে। দেশে ফিরে এসে তিনি আবার শিক্ষকতা শুরু করেন। তারপর অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। এখনো দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি বুয়েট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘ চার দশকের বেশি কর্মজীবনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফখরুল আমীন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

অধ্যাফক ড. সৈয়দ ফখরুল আমীন দীর্ঘ তিন দশক এর বেশি সময় ধরে জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজ করে যাচ্ছেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে। বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ও পরামর্শক হিসেবে ছোট-বড় বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার। তিনি দেশের অনেক প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রশংসনীয়। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। যেমন মতিঝিলে ৫০ তলা সিটি সেন্টার, পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি, মতিঝিলে পিপলস ইন্সুরেন্স ভবন, পূর্বাচলে কাঞ্চন শীতলক্ষা ব্রিজ। গুলশান-২ এ ৩৯ তলা বানিজ্যিক কমপ্লেক্স, তেজগাঁও ১৪ তলা শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ার, শান্তা প্রপার্টির দিগন্ত পরীবাগ কনডমিনিয়াম অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মতিঝিলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২১ তলা অফিস বিল্ডিং সহ অনেক মাল্টিপারস বিল্ডিংয়ের স্ট্রাকচারাল ফাউন্ডেশন এবং ডিজাইন করেছেন। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম পোর্টের জেটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও জড়িত ছিলেন। তবে পোর্টের কাজ এবং ব্রিজ নির্মাণের কাজ বেশি করেছেন তিনি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফখরুল আমীন বলেন, আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকৌশল শিক্ষা আজকে সারা বাংলাদেশে প্রসারিত। বিভিন্ন জায়গায় ইউনিভার্সিটির সংখ্যা বেড়েছে। বছরের পর বছর আমাদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের ল্যাবরেটরি অনেক আধুনিক হয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষক বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসে তারা বিভিন্ন রকম উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছেন। সব মিলিয়ে আমি বলব স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে তো অনেক বড় বড় কাজের জন্য বিদেশ থেকে কনসালটেন্ট আনতে হতো। এখনো তো আমরাই করছি কাজ গুলো। বড় বড় রাস্তা ঘাট, ব্রিজের কাজ গুলো বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা কাজ করছে।
যেসব পুরাতন ভবন তৈরি হয়ে আছে, এগুলোকে কিভাবে টেকসই গড়ে তোলা যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ফখরুল আমীন বলেন, পুরাতন ভবন কোনোটা বেশি খারাপ, আবার কোনোটা কম খারাপ। একদম খারাপ ভবন গুলো ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। আবার যে সমস্ত বিল্ডিং দূর্বল আছে সে গুলোকে রেট্রোফিট করে ঠিক করতে পারেন। নির্ভর করে পুরাতন বিল্ডিংয়ের অবস্থার ওপর। তবে ঢালাও ভাবে বলা যাবে না এ সব ভবন ভেঙে ফেলেন। অবস্থা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা দেখতে হবে সমস্যা কী?

প্রিয় মার্তৃভূমিকে দেখতে চান? এ প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল আমীন বলেন, এটা খুবই কঠিন একটা প্রশ্ন। আমরা সবাই চাই এ দেশের উন্নতি হোক। উন্নতির সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। উন্নতি কাকে বলে? এটা আমরা এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারিনি। উন্নতি করতে কি বুঝায়? ঢাকা শহরে বড় বড় বিল্ডিং হলো এটা কী উন্নতি? নাকি আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে আমরা সততার সঙ্গে কাজ করছি, কোনটা উন্নতি? আমাদের কোনো কোনো সেক্টরে উন্নতি হয়েছে আবার কোনো কোনো সেক্টরে অবনতি হয়েছে। আমরা আশা করছি দেশে আরো উন্নতি হবে।
আমাদের জ্ঞান বাড়ছে এটা সন্দেহ নেই। আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নৈতিকতায় পিছিয়ে পড়েছি। সততাটা আমাদের মধ্যে কম। এই শিক্ষাবিদ ও প্রকৌশলী তাঁর কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন।