Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মানুষের নানান কথায় আমি মাথা ঘামাই না : মৌসুমী হামিদ

দুই মাধ্যমেই সরব তিনি। আর তাই তো চলচ্চিত্র এবং টিভি অঙ্গন- দুই জায়গায়ই তাকে নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা। পর পর তিনটি ছবি মুক্তিসহ আরো রয়েছে মুক্তিপ্রতীক্ষিত বেশ কয়েকটি ছবি। রয়েছে তার টিভি পর্দায়ও ব্যস্ততা। ঈদে তার অভিনীত বেশ কয়েকটি নাটক দর্শকনন্দিত হয়েছে। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক বলছি লাক্স চ্যানেল আই তারকা মৌসুমী হামিদের কথা। মৌসুমীর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় অনিমেষ আইচের ‘না মানুষ’ দিয়ে। কিন্তু নানা জটিলতায় মাঝ পথে থেমে যায় তার প্রথম সিনেমাটি। এরপর মৌসুমী হামিদ বেশকিছু চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন এবং সেগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটির শুটিংও শেষ করেন তিনি। মৌসুমী অভিনীত তিনটি ছবি মুুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্র অঙ্গণে তাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন অনেকে। মৌসুমীও চান পুরোপুরিভাবে চলচ্চিত্রে কাজ করতে। তারমানে কী টিভি পর্দাকে বিদায় জানাচ্ছেন মৌসুমী হামিদ? বিস্তারিত লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল

আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত পর পর তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। হাতে রয়েছে আরো কয়েকটি সিনেমা। তারমানে আপনাকে আমরা এখন থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রেই দেখতে পাবো?

মৌসুমী হামিদ: একজন অভিনয়শিল্পীর বড় পর্দায় অভিনয়ের স্বপ্ন অবশ্যই থাকে। আমার সেটা পূরণ হয়েছে। এজন্য অবশ্যই আমি ভাগ্যবান। এখন আমি বড় পর্দায় নিয়মিত কাজ করবো, নাকি টিভি পর্দায় নিয়মিত থাকবো- সেটা বড় কথা নয়। আমার যেহেতু টিভি পর্দা থেকেই শুরু, তাই টিভি মাধ্যম থেকে হুট করেই চলে যেতে পারবো না। তবে হ্যাঁ, চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো। হাতে কয়েকটি চলচ্চিত্র রয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত টিভি নাটকেও অভিনয় করছি। আমার চলচ্চিত্রে স্থায়ীভাবে থাকা হবে কিনা এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে, আমি যেহেতু একজন অভিনয়শিল্পী তাই আমার কাজ হচ্ছে অভিনয় করা। যে চরিত্রটি আমাকে টানবে, ভালো লাগবে আমি সেটাতেই অভিনয় করবো। এখন সেটা হতে পারে, টিভি পর্দা, চলচ্চিত্র কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

আনন্দ আলো: অনেকেই টিভি পর্দা থেকে চলচ্চিত্রে গিয়ে টিকতে পারেনি। এই বিষয়ে কী বলবেন?

blackmailমৌসুমী হামিদ: আমি নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করি না। অনেকের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি কী করছি সেটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি অভিনয়কে ভালোবাসি, আমার কাজকে ভালোবাসি সেটাই করে যাচ্ছি। দর্শক আমাকে যতোদিন ভালোবাসবে ততোদিন পর্যন্ত আমি কাজ করে যাবো। শোবিজের নানান মানুষের নানান কথা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। অভিনয়টা মন দিয়ে করতে চাই। আমি নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান অভিনয়শিল্পী মনে করি। কারণ খুব কাছাকাছি সময়ে আমার তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। আগস্টে আমার দুটি ছবি (ব্ল্যাকমানি ও ব্ল্যাক মেইল) এবং সেপ্টেম্বেরে একটি ছবি মুক্তি পায়। একজন নবাগত হিসেবে সত্যিই আমার জন্য এর চেয়ে সুন্দর সময় আর হতে পারে না।

আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত ‘জালালের গল্প’ সিনেমাটি দেশে-বিদেশে দর্শকনন্দিত হয়েছে। ছবিটি এ বছর বাংলাদেশের ছবি হিসেবে অস্কার-এ যাচ্ছে। কেমন লাগছে?

মৌসুমী হামিদ: নি:সন্দেহে দারুন লাগছে। বাংলাদেশী সিনেমা হিসেবে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যাওয়ার খবরটি শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। এটা অবশ্যই বিশাল ব্যাপার।

আনন্দ আলো: টিভি পর্দা নাকি চলচ্চিত্র কোথায় বেশি উপভোগ করেন?

মৌসুমী হামিদ: ফিল্ম অনেক কঠিন জায়গা। সেই তুলনায় নাটকের জায়গাটা অনেকটা সহজ। ফিল্মে পলিটিকস হয় বেশি। নাটকে তা নেই বললেই চলে। ফিল্মে অভিনয়ের চেয়ে কে কত বেশি রাজনীতি করতে পারে সেটাই বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো অভিনয়শিল্পী যদি একবার রাজনীতির মারপ্যাঁচে আটকে যায় তাহলে সে যতই মেধাবী হোক না কেন, তার পক্ষে বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব না। আমার কাছে এই ব্যাপারটা রীতিমতো ভয়ংকর মনে হয়েছে।

আনন্দ আলো: সেটা কেমনÐ নেতিবাচক নাকি ইতিবাচক?

Jalaler-Golpo-2মৌসুমী হামিদ: ছবির ক্ষেত্রে এখন কিন্তু আমাদের দেশে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, নায়িকা নিজেই প্রযোজক নিয়ে আসছেন। আবার প্রযোজকও তার পছন্দমতো নায়িকাকে চাপিয়ে দিচ্ছেন পরিচালকের ঘাড়ে। নায়কেরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বেশিরভাগ পরিচালকও এসব মেনে নিয়ে ছবির কাজ করে যাচ্ছেন। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এসব ছবির বেশির ভাগই কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে না। কোনো প্রযোজকের দুই একটা ছবি প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত যায় বটে, তারপর আর সেইসব প্রযোজকের কোনো হদিস মেলে না। এজন্য পরিচালকই দায়ী। আমার কথা হচ্ছে, পরিচালক যখন একটা ছবি বানাবেন, তখন তিনিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন তার এই ছবিতে কে বা কারা কাজ করলে সবচেয়ে ভালো করবেন। একটি জাহাজের ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনের। ঠিক তেমনি দর্শকদের  ভালো সিনেমা উপহার দেয়ার পুরো দায়িত্ব পরিচালকের। একজন পরিচালকই সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি কীভাবে কী করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখন অনেক গুণী ও মেধাবী পরিচালক ছবি নির্মাণের জন্য ঠিকমতো বাজেটই পান না। অথচ প্রতিদিনই শুনছি-ছবির মহরত হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এতে করে সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে টাকার।

আনন্দ আলো: আপনার অভিনীত কতটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে?

মৌসুমী হামিদ: ‘মেন্টাল’ সিনেমায় আমাকে আইটেম কন্যা হিসাবে দেখা যাবে। সাফি উদ্দিন সাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী টু’ সিনেমাতে আছি। এই ছবিতে আমাকে ইমনের বিপরীতে দেখা যাবে। এছাড়াও ‘শোধ প্রতিশোধ’, ‘হার্ডসনের বন্দুক’, ‘লুকোচুরি প্রেম’ ও ‘মিশন সিক্স’ শিরোনামের ছবিগুলো রয়েছে।

আনন্দ আলো: আর ছোটপর্দার কাজ?

মৌসুমী হামিদ: গত ঈদে আমার অভিনীত বেশ কয়েকটি নাটক-টেলিফিল্ম বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি প্রচার চলতি ধারাবাহিকে নিয়মিত অভিনয় করতে হচ্ছে। আসলে টিভি নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমি চরিত্রের ভিন্নতাটুকু বেশি পছন্দ করি। তাই একটি স্ক্রীপ্ট যখন আমি পাই, প্রথমেই দেখি নিজের চরিত্রটি। চরিত্র পছন্দ হলেই নাটকটিতে অভিনয় করি। কেননা আমি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। এটা আমার কাছে নেশার মতো।