Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভালো কনটেন্ট-এর কোনো বিকল্প নাই

শাইখ সিরাজ, পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

১ অক্টোবর একুশ বছরে পা দিচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল স্যাটেলাইট টিভি মাধ্যম চ্যানেল আই। এ উপলক্ষে আনন্দ আলোর সাথে কথা বলেছেন চ্যানেল আই এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। তাঁর সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
আনন্দ আলো: একুশ বছরে পা দিল চ্যানেল আই। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
শাইখ সিরাজ: খুবই ভালো অনুভূতি। একেবারে যৌবনে পদার্পন। সময়ের সাথে সাথে চ্যানেল আই সব বিষয়ে পরিপুর্ণ হচ্ছে, তার অনুষ্ঠান নির্মাণ, দাপ্তরিক দক্ষতা, তার নির্মাণ শৈলী সবকিছু মিলিয়ে একটা পরিপুর্ণ টিভি চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ে টেলিভিশনের সেই জয়জয়কার যা গত দশকেও ছিল তা এখন নেই। ডিজিটাল মিডিয়া, সোশাল মিডিয়া টেলিভিশন মাধ্যমকে এক ধরনের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু একথাও সত্য, এই প্রতিযোগিতাটা সাময়িক। রেডিও যখন আসল, রেডিওর পরে আরও বিস্ময় নিয়ে আসল টেলিভিশন। টেলিভিশনের জয়জয়কার দেখে সকলের ধারনা হয়েছিল এখন থেকে সবকিছুই বোধকরি টেলিভিশনই দখল করে নিবে। পত্র-পত্রিকা থাকবেই না। বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে প্রত্যেকটি গণমাধ্যম যার যার স্বকীয়তা নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সময়ের জন্য একটি হয়তো অন্যটির প্রতিযোগী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরবর্তিতে তারা নিজেদের জায়গা পোক্ত করেছে। প্রতিযোগিতার মুখে হারিয়ে যায়নি। মুদ্রণ মাধ্যম থাকবেই না একথা অনেকে ভেবেছিল, এখনও ভাবছে। কিন্তু মুদ্রণ মাধ্যম ঠিকই তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এনিয়ে বিতর্ক হতে পারে। পত্রিকায় পড়লাম সংবাদপত্র পরিষদ ছাপা কাগজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগামীতে সেমিনার করার উদ্যাগ নিয়েছে। এটা হলো সময়ের দাবী। খেয়াল করলেই দেখবেন রেডিও কিন্তু আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। এফএম ব্যান্ড, কমিউনিটি রেডিও এখন বেশ পপুলার। গণমাধ্যম কিন্তু সময়ের প্রয়োজনেই রুপ বদল করে। অডিও ভিজুয়াল মিডিয়ার কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছে। বড় বাক্সটা থেকে মোবাইলের মাধ্যমে সেটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ভবিষ্যতে এই ধারারও যে পরিবর্তন হবে না তা বলা যায় না। ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রযুক্তির হয়তো আবির্ভাব ঘটবে।
আনন্দ আলো: একুশ বছরে গণমাধ্যম হিসেবে চ্যানেল আই এর অর্জন গুলো কি বলে আপনার মনে হয়?
শাইখ সিরাজ: একটা সময় আমাদের দেশে বাংলাদেশ টেলিভিশন অর্থাৎ বিটিভিই ছিল একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল। তখন আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ বিরক্ত হতাম। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ আনন্দিত হতাম। এ সপ্তাহের নাটক দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম। হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখার জন্য অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতোই না। সাপ্তাহিক টিভি সিরিয়াল দেখার জন্যও অপেক্ষায় থাকতে হতো। সেরকম একটা পরিবেশ থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম। ২৪ ঘণ্টার একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল এলো। ফলে দর্শকের মাঝে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার জায়গাটা বেড়ে গেল। মানুষ নতুন করে টেলিভিশনকে চিনতে শুরু করল। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে চ্যানেল আই প্রথম থেকেই সময়ের সাথে সাথে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের কথা ভেবেই এগিয়ে এসেছে। যাতে করে দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই বলতে পারে যে আমি আমার প্রতিচ্ছবি, আমার আনন্দ বেদনা চ্যানেল আইতেই দেখতে পাই। চ্যানেল আই আমার কথা বলে, আমার প্রত্যাশার ছবি দেখায়। চ্যানেল আইতে আমার ছবিটাই আমি দেখতে পাই। আশা করি চ্যানেল আই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এমনই আস্থার একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছে এবং এটাই চ্যানেল আই এর সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। চ্যানেল আই এর কাছে দর্শকের প্রত্যাশা কি ছিল? প্রত্যাশা ছিল আমার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার। আমার প্রত্যাশা ছিল চ্যানেল আই দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবে। দেশের প্রতি মমত্ববোধের অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি চেয়েছিলাম অর্থনৈতিক মুক্তির সম্ভাবনার কথা শুনতে। আমি চেয়েছিলাম আমার পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করতে। চেয়েছিলাম সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে। আমি চেয়েছিলাম এই টেলিভিশনটির মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্পী ও মেধাবী মানুষ বেরিয়ে আসবে। আমার বিশ্বাস চ্যানেল আই এই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের পথেই হেঁটে চলেছে। এটি চ্যানেল আই এর বড় অর্জন বলে মনে করি।
আনন্দ আলো: টেলিভিশন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে?
শাইখ সিরাজ: শুরুতে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবুও বলিÑ হুমকি… হুমকি তো বটেই। বাজার নিয়ে যদি কথা বলি, কনটেন্ট নিয়ে যদি কথা বলি… সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিছুটা হলেও টেলিভিশনের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগেও টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠানে কোনো শিল্পীকে দেখা গেলে তার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হতো। বর্তমান সময়ে তেমনটা দেখা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেল হয়তো প্রভাব বিস্তার করছে। ইদানিং লোকে বলাবলি করে আপনাকে মোবাইল ফোনে দেখলাম। তার মানে প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে অনুষ্ঠান দেখার মাধ্যমও বদলে যাচ্ছে। তবে এতে আতংকিত হবার কিছু নাই। টেলিভিশন মাধ্যম তার জায়গায়ই থাকবে। ৫০ মিনিটের একটা নাটক মোবাইলের ছোট পর্দায় দেখে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার চেয়ে বহুগুণে বেশি আনন্দ পাওয়া যায় টিভিতে দেখলে। অনুষ্ঠান দেখার বিকল্প মাধ্যম তৈরি হওয়ায় মানুষ হয়তো সাময়িক ভাবে অবস্থান বদলাচ্ছে। কিন্তু শেষ মেষ তাদেরকে টেলিভিশনেই আসতে হবে। এজন্য টেলিভিশন চ্যানেল গুলোতে ভালো কনটেন্ট দরকার। মেধা ভিত্তিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করা জরুরি। ভালো কনটেন্ট ছাড়া টেলিভিশনকে বাঁচানো যাবে না।

আনন্দ আলো: অনেকেই পে-চ্যানেলের প্রসঙ্গ তুলছেন। এক্ষেত্রে আপনার মন্তব্য কী?
শাইখ সিরাজ: পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই টেলিভিশন চ্যানেল মানেই পে-চ্যানেল। একটা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের টেলিভিশন। লাইসেন্স ফি দিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে হয়। আর বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল হলো সম্পুর্ণ কমার্শিয়াল চ্যানেল। বেসরকারী টিভি চ্যানেলসমূহে বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়া দ্বিতীয় কোনো আয়ের উৎস নাই। বরং ২৪ ঘণ্টার একটা টেলিভিশন চ্যানেলকে প্রতিনিয়ত হাতি পোষার মতো খরচ করতে হয়। একটি অনুষ্ঠান একবার প্রচারের পর তার আর কোনো গুরুত্ব থাকে না। সে কারণে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল সমূহে যে পরিমান অর্থ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে সেই পরিমান অর্থ ফেরৎ পাওয়ার একমাত্র সোর্স হচ্ছে বিজ্ঞাপন। দেশে একের পর এক বেসরকারী টিভি চ্যানেলের আত্মপ্রকাশ ঘটায় বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। এরকম একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে পে চ্যানেল ছাড়া কোনো অপশন নাই। পে-চ্যানেল চালু হলে অনেকগুলো সুবিধা হবে। প্রথম সুবিধা হলো যে সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেল প্রকৃত অর্থে ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণ করে পে-চ্যানেলে তারা যখন একেকটা সেগমেন্ট বানাবে… যেমন অপশন ১, ২ তখন ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটা বান্ডেল তৈরি হবে। তখন দেখা যাবে আপনার কাছে যদি চ্যানেল ঢ অথবা ণ এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকে, অনুষ্ঠানের মান ভালো থাকে, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সে চ্যানেল যে বান্ডেলেই পড়–ক দর্শক তার প্রতি আকৃষ্ট হবে। দর্শক ওই চ্যানেলই দেখতে চাইবে। এখানে সুবিধাটা হচ্ছে ধরা যাক, একটা বান্ডেলে ৩০টা টিভি চ্যানেল আছে। অর্থাৎ ৩০টি টিভি চ্যানেল দেখার অফার দেওয়া হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউটর, অপারেটর মিলে যদি একজন গ্রাহকের কাছে ৫০০ টাকা নেয় তাহলে তাদের সব ধরনের খরচ বাদে একটি টেলিভিশন চ্যানেল যদি প্রতিমাসে একজন গ্রাহক বাবদ ১০ টাকাও পায় তাহলেই তো আয়ের উৎস তো বের হয়ে আসবে। ধরা যাক একটি টেলিভিশনের এক কোটি দর্শক আছে। দর্শকপ্রতি যদি ১০ টাকাও পাওয়া যায় তাহলে প্রতি মাসে দর্শক থেকেই চ্যানেলটি ১০ কোটি টাকা আয় করতে পারবে। এটা সম্ভব হলে বিজ্ঞাপন দাতাদের ওপর নির্ভর করে আর চ্যানেল চালাতে হবে না। বর্তমান সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দাতারা অনুষ্ঠানের কনটেন্ট নির্ধারণ করে দেন বলেই কোনটা অনুষ্ঠান আর কোনটা বিজ্ঞাপন তা নির্ধারণ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবতা হলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতার শতভাগ মর্জির ওপর আপনাকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে বিজ্ঞাপনদাতা অনুষ্ঠানটির ব্যাপারে অতিমাত্রায় নজরদারি, খবরদারি দেখায়। তখন আর ওই প্রোগ্রামের কনটেন্ট, ক্রেডিবিলিটি কোনো কিছুই ঠিক রাখা যায় না। এমন বাস্তবতায় পে-চ্যানেল খুবই জরুরি।
এখন প্রশ্ন হলো আপনি চাইলেই কি পে চ্যানেল বানাতে পারবেন? পে-চ্যানেল বানাতে গেলে নেশন ওয়াইড যে অবকাঠামো দরকার তা কি আমাদের আছে? কোন চ্যানেলের কোন অনুষ্ঠান সবচেয়ে জনপ্রিয় তা যাচাই করার কোনো মাপকাঠি দেশে তৈরি হয়নি। অর্থাৎ আপনার কাছে যে সমস্ত সার্ভে রিপোর্ট আসে তার বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। পে-চ্যানেলের আগে সবচেয়ে জরুরি প্রয়াজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। ডিজিটাল রেটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সত্যি সত্যি রাত সাড়ে ৮টায় অমুক টিভি চ্যানেলের অমুক অনুষ্ঠানটা আসলে কতজন দেখেছিল এটা নিশ্চিত না করা গেলে পে-চ্যানেল চালু করে কোন লাভ পাওয়া যাবে না। এজন্য ব্যাপক ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন আছে। ভারতে পর্যায়ক্রমে পে-চ্যানেল চালু করা হয়েছে। আমাদের দেশে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল সমূহের মধ্যে সাংগঠনিক রূপরেখাটা ততটা শক্তিশালী নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের যতগুলো অবকাঠামো আছে সেখান থেকে একটা রূপরেখা বের হয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ সরকার নিজে একটা রূপরেখা তৈরি করে রেটিং পদ্ধতির একটা পথ খুলে দিতে পারে। যেমন ধরেন, এক সময় আমাদের তো কোনো স্যাটেলাইট ছিল না। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হওয়াতে আগামী ১লা অক্টোবর থেকে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান সম্প্রচার হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। সত্যিকথা বলতে গেলে দেশে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল গুলো অসম এবং অস্বস্থিকর একটা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুরই যেন বাছ-বিচার নাই। যেমন ধরুন, একদিকে হচ্ছে বিদেশেী টিভি চ্যানেলের আগ্রাসন। আমাদের টিভি চ্যানেল গুলো অন্যদেশে দেখা যায় না। আরেকটি হল আপনি পারমিশন নিয়েছেন পত্রিকার অথচ আপনি ডিজিটাল কনটেন্ট বানাচ্ছেন এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তা প্রচার করছেন। এখানেই একটা প্রশ্ন থেকে যায়, যারা টিভি চ্যানেল গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ ইনভেস্টমেন্ট করেছে তাদের সাথে পত্রিকাওয়ালাদের ইনভেস্টমেন্ট কি একই ধরনের? এ ধরনের অসম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল গুলোকে পথ চলতে হচ্ছে। আমি মনে করি এই অসম প্রতিযোগিতা বন্ধে সরকারের নজর দেওয়া সময়েরই দাবী। অন্যথায় দেশে বেসরকারী পর্যায়ে যে শিল্পটা বেড়ে উঠছে… কমতো নয় ৪০/৪৫টা টেলিভিশন চ্যানেল, একেকটা চ্যানেল যদি গড়ে ৪শ লোকও কাজ করে তাহলে দেশের ১৬ হাজার মেধাবী মানুষ অর্থাৎ ১৬ হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা এই শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে গেছে। দেশে এটা একটা নতুন ইন্ডাস্ট্রি। বিভিন্ন দেশে এধরনের নতুন ইন্ডাস্ট্রিকে সরকার নানাভাবে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেটা কি রকম? নতুন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে সরকারের তরফ থেকে ট্যাক্স হলিডে থেকে শুরু করে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু আমাদের দেশে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলসমূহের জন্য এ ধরনের কোনো সুযোগ সুবিধা নাই। যদি সেদিক থেকে বিচার করা হয় তাহলে টেলিভশন চ্যানেলগুলো তাদের নিজস্ব শক্তি দিয়েই চলছে। হ্যা, সরকার লাইসেন্স দিয়েছেন। অবাধ তথ্য প্রবাহের দরজা খুলে দিয়েছেন। এটা যেমন সত্য তেমনি আরও একটি সত্য হলো আমাদের এই ছোট্ট দেশে সত্যিকার অর্থে কতগুলো টেলিভিশনের বাজার আছে? সেটা দেখেই বোধকরি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া উচিৎ। তাহলে হয়তো অসম প্রতিযোগিতা কিছুটা হলেও দূর হবে।
আনন্দ আলো: একুশ মানেই দুরন্ত তারুণ্য। চ্যানেল আই একুশ বছরে পা দিল। ভবিষ্যৎ ভাবনাটা কী?
শাইখ সিরাজ: একুশ মানেই শুধুমাত্র দুরন্ত তারুণ্য নয়। একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। একুশ আমাদেরকে মাতৃভাষা দিয়েছে এবং একটি দেশও দিয়েছে। একুশ আমাদেরকে লাল-সবুজের শক্তির চেতনায় উজ্জীবিত করে। মূলত ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত পথ বেয়েই পরবর্তিতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বয়স হবে ৫০ বছর। চ্যানেল আই ২০১৯ সালে ২১ বছরে পদার্পন করলো। সেই যে শুরু করেছিলাম লাল সবুজের শক্তি নিয়ে…. বুকে ছিল ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ শ্লোগান। আজ মনে হয় একটা পরিপুর্ণ জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। দেশপ্রেম ও তারুণ্যই চ্যানেল আই এর মূল শক্তি। চ্যানেল আই তার ২০ বছরে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো এর মাধ্যমে মিডিয়ায় অসংখ্য মেধাবী শিল্পী তৈরি করেছে। এদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই হচ্ছে তরুণ। এখন তো তরুণ প্রজন্মেরই যুগ। গোটা পৃথিবীতে তারুণ্যেরই জয়জয়কার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই বাংলায় একবার এসেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খুবই পুরনো একটা বিদ্যাপীঠ আছে। সেখানে তিনি একটি অনুষ্ঠানে তরুণদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এখন আর চাকরির জন্য কেউ ধর্না দেয় না। তরুণরা নিজেদের উদ্যোগেই নিজেরা কর্মমুখি হয়ে উঠছে। এই বাংলায় তরুণদের মাঝে আমি সেই উদ্দীপন দেখতে পাই। আমার বাংলা আর এই বাংলার মাধ্যমে তফাৎ এখানেই যে, এখানকার তরুণেরা অনেক উদ্যোগী ও উদ্যমি… চিন্তা করে দেখুন শত বর্ষ আগে রবীন্দ্রনাথ ইনোভেশনের কথা বলে গেছেন। উদ্যোক্তার কথা বলেছেন। যাদেরকে আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তারুণ্যের শক্তি নিয়েই চ্যানেল আই এগিয়ে যেতে চায়।