Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শাকিবনামা

শাকিব খান আমাদের চলচ্চিত্রের যুবরাজ। কিং খান হিসেবে তিনি এখন দর্শকের কাছে ব্যাপক পরিচিত। তাঁকে ঘিরে চলচ্চিত্র পাড়ায় চলছে একধরনের অস্থিরতা। সার্বিক দিক নিয়েই আনন্দ আলোয় এবারের শীর্ষ কাহিনী প্রকাশ করা হলো।

রেজানুর রহমান: যে হাঁস প্রতিদিন একটি করে স্বর্ণের ডিম দেয় তাকে কি কেউ অবজ্ঞা করার কথা ভাবতে পারে? প্রতিদিন একটি করে স্বর্ণের ডিম দেয় যে হাঁস সে তো একাই একশ। গেরস্থের নয়নের মণি। সাতরাজার ধন। তাকে তো মাথায় তুলে রাখার কথা! যেহেতু সে প্রতিদিন একটি করে স্বর্ণের ডিম দেয় কাজেই সে একটু বেশি বেশি ‘প্যাক প্যাক’ করবে এটাই স্বাভাবিক। আশেপাশের অন্য কাউকে সে মান্যগণ্য নাও করতে পারে। তাতে ক্ষতি কি? স্বর্ণের ডিম পাওয়া বলে কথা। কথায় আছে যে গরু দুধ দেয় তার লাত্থি খেতেও দোষ নাই। তার মানে কথার কথা গিয়ে দাঁড়াল এমনÑ যার যোগ্যতা আছে তাকে পূজা করো। সে থাকবে ভুল ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে। আজকের যুগে এটাই বোধকরি বাস্তবতা। সে কারণে আমাদের চলচ্চিত্রের ‘কিংখান’ বলে খ্যাত চিত্রনায়ক শাকিব খানকে ঘিরে চলছে তুমুল অস্থিরতা। উপমাটা হতে পারে স্বর্ণের সেই হাঁসের মতোই। যে প্রতিদিন স্বর্ণের ডিম দেয়। শাকিব খানও তেমনি। শাকিব খানের ছবি মানেই সিনেমা হলে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। প্রযোজকের লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত তো আসবেই। উপরন্তু লাভের মুখ দেখার সুবর্ণ সুযোগ। একক কোনো ব্যক্তির ওপর যখন কোনো ইন্ডাস্ট্রি নির্ভরশীল হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই ব্যক্তি একটু অহংকারী হবে এটাই স্বাভাবিক। শাকিব খানের ওপর কি সত্যি সত্যি একটা ইন্ডাস্ট্রি নির্ভরশীল? যদি তাই না হবে তাহলে গোটা ইন্ডাস্ট্রি তাকে বয়কট করার ঘোষণা দেয়ার পরও কীভাবে থাকেন নির্বিকার? যেন কিছুই হয়নি? যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছে তারা ভুল করছে একথাই বারবার বুঝাতে চাইছেন তিনি। এই বুঝানোর প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো তিনি অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক ভঙ্গি করছেন। মিডিয়ার সামনে সদর্পে বলছেন ওরা কারা? এতদিন তারা কোথায় ছিলেন? চলচ্চিত্রের দুর্দিনে তাদেরকে তো দেখিনি…

শাকিব খান যাদেরকে ‘ওরা’ বলে সম্মোধন করেছেন তারা এই দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ। শাকিব খানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মিডিয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কিংবদন্তি তুল্য চিত্রনায়ক আলমগীর ও ফারুক। আলমগীর বলেছেন, শাকিব খান তার অতীত ভুলে গেছে। ছেলেটিকে আমি অনেক পছন্দ করি। কিন্তু সে ইদানিং ধরাকে শরা জ্ঞান করতে শুরু করেছে। এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। চিত্রনায়ক ফারুক বলেছেন, শাকিব খান আগুন নিয়ে খেলছে। ঐ ছেলেতো আগুনে পুড়ে যাবে…

ফারুক এবং আলমগীর আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের দুটি স্তম্ভ। তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায়ও শাকিব খানের কিছু যায় আসে না। চলচ্চিত্রের ১৬টি সংগঠন তাকে বহিষ্কার করেছে। অথচ তিনি নির্বিকার। বরং গুরুত্বহীন ভঙ্গিতে বলেছেন, ওরা আমাকে বহিষ্কার করার কে? আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব। দেখি আমাকে কে ঠেকায়?

এটাতো এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণার মতো দম্ভোক্তি। তর্কের খাতিরে হলেও একটা বিষয় আলোচনা হওয়া জরুরি তাহলো বিশেষ কোনো সেক্টরে সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয় তখন তার পক্ষে নিশ্চয়ই একটা যুক্তি কাজ করে। অথচ যার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তিনি যদি থাকেন নির্বিকার বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে নেয়া সিদ্ধান্তকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে থাকেন তাহলে পরিস্থিতিটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? নিশ্চয়ই সেটা সুখকর পরিস্থিতি নয়।

তবে হ্যাঁ, আমাদের বোধকরি বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানো জরুরি। ধরা যাক শাকিব খান ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে চলেছেন। তিনি সিনিয়র জুনিয়র কাউকেই মান্যগণ্য করছেন না। কিন্তু একথাতো সত্য তার অভিনীত ছবি ছাড়া আমাদের সিনেমা হলগুলো যে বাঁচে না। এবার সমস্যাটা দেখা দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে। এবার ঈদে ৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তার দুটির নায়কই শাকিব খান। ৩টি ছবির দুটিই যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। অভিযোগ উঠেছে যৌথ প্রযোজনার ছবি দুটিতে নীতিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে। ছবি দুটি যাতে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র না দেয় সে ব্যাপারে আমাদের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৬টি সংগঠন যৌথ বিবৃতি দেয়া সত্তে¡ও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ছবি দুটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে এবং ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের ছবি হিসেবে মুক্তিও পায়। ৩টি ছবির একটির নাম রাজনীতি। এই ছবিটি দেশেই নির্মিত হয়েছে। অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসসহ অনেকে। যৌথ প্রযোজনার ছবি দুটির নাম নবাব ও বস-২। নবাব-এ নবাবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। মূলত এই ছবিটির ব্যাপারেই শাকিব খান অতিমাত্রায় সোচ্চার ছিলেন।

ঐ যে বললাম আমাদের বোধকরি বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানো দরকার। শাকিব খানের বিরুদ্ধে ১৬ সংগঠনের বহিষ্কার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর দর্শকের মাঝে খুব একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে তো মনে হয় না। বরং শাকিব খানকে বহিষ্কার করার কারণে দর্শক অতিমাত্রায় এবার সিনেমা হলমুখি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এক্ষেত্রে একটি মানসিক বিশ্লেষণ কাজ করেছে। তাহলো প্রিয় নায়ক শাকিব খানকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত তার ভক্তদের অনেকে মেনে নিতে পারেনি। সে কারণে প্রিয় নায়কের ঈদের ছবি দেখার ব্যাপারে ভক্তরা অতিমাত্রায় সিনেমা হলসমূহে ভিড় করেছে। এক্ষেত্রে আরো একটি জরুরি বিষয় কাজ করেছে। তাহলো আমাদের দেশে নিষিদ্ধ কিছু মানেই তার প্রতি অতিমাত্রায় উৎসাহ দেখানো। শাকিব খানের ছবি ঈদে মুক্তি নিয়ে যখন টানাপোড়েন শুরু হয় তখনই তার ভক্তদের মাঝে বিষয়টি তোলপাড় শুরু করে। কি আছে শাকিব খানের ছবিতে? কেন শাকিবকে বহিষ্কার করা হলো? এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য দর্শক দলে দলে এবার সিনেমা হলে গিয়েছে।

এই যে দর্শক হলমুখি হয়েছে এজন্য তো শাকিব খান ধন্যবাদ পেতেই পারেন। ঈদের ছবির সার্বিক অবস্থা দেখার জন্য আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে একটি টিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিনেমা হল পরিদর্শন করেছে। সব হলেই শাকিব খানের ছবি দেখার জন্য দর্শকের ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল শাকিবকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র পরিবারের বৃহৎ আন্দোলন তেমন সাড়া ফেলেনি। বরং দর্শকদের অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন, শাকিব খান এই দেশের সিনেমার নির্ভরযোগ্য একজন তারকা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে ‘সাতপাঁচ’ আরো অনেক কিছু ভাবতে হবে।

Shakib-Apuএই ‘নির্ভরযোগ্য’ শব্দটার প্রতিই বোধকরি জোর দেয়া দরকার। আমাদের চলচ্চিত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি আর ক’জনের বেলায় খাটে? চলচ্চিত্রের ১৬ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শাকিব খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটাতো একটা সিদ্ধান্ত। আমরা কী নিশ্চিত করে বলতে পারি এত কিছুর পরও যারাই সিনেমা বানাতে চাইবেন তারাই প্রথমে শাকিব খানের কথা ভাববেন না? কারণ শাকিব খানকে ছবিতে নিতে পারলে প্রযোজক, পরিচালকের মাঝে এক ধরনের স্বস্তি আসে। ভাবনাটা এমনÑ আর কিছু না হোক লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আসবেই।

এর ফলে অভিনেতা শাকিব খান কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অহংকারী হয়ে উঠেছেন। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। এই ধরনের একটা অহংবোধ, ভাবনা তিনি মাঝে মাঝেই প্রকাশ করেন। মূল সমস্যাটা দেখা দিয়েছে এখানেই। কিন্তু এটাই তো বাস্তবতা। শাকিব খানই বর্তমানে দেশের চলচ্চিত্রকে বলা যায় একাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এটাও তো অনেকাংশে সত্যি। শাকিবের বাইরে আরো অনেক দক্ষ চিত্রনায়ক আছেন। তাদের অভিনীত ছবি দর্শক তেমনভাবে গ্রহণ করছে না। এর কারণ কি আমরা একবারও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি? এত বয়কট আন্দোলন সত্তে¡ও ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খান অভিনীত দুটি ছবিই দর্শকের মনোযোগ কেড়েছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শক টিকেট কিনেছে শাকিব খানের ছবি দেখার জন্য। কথায় আছে দশের মধ্যে যিনি এক তার তো একটু অহংকার থাকবেই। তবে একথাও সত্য একক কোনো ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। বিশেষ করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতো নয়ই। ফিল্মের ক্ষেত্রে ডিরেকটরকে বলা হয় ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। তার নেতৃত্বেই জাহাজ চলবে। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রের এই ধারণাটা লুপ্ত হওয়ার পথে। বিশেষ করে শাকিব খানের মতো একক অভিনেতার ওপর যেদিন থেকে ইন্ডাস্ট্রি নির্ভর করতে শুরু করেছে সেদিন থেকে ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ এই ধারণাও গুরুত্বহীন হতে শুরু করেছে। অতীতকালে এই দেশে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পরিচালকের বাসায় অভিনয়ের জন্য ধরনা দিত। সে কারণে তখনকার দিনে পরিচালকই ছিল ক্যাপ্টেন। আর এখন পরিচালকরা অভিনেতা-অভিনেত্রীর বাসায় ধরনা দেয়। ফলে ধারণাটাও পাল্টে গেছে। বর্তমান সময়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ হয়ে উঠেছেন। সে কারণেই বোধকরি পরিচালক শুটিং স্পটে আসেন কলটাইম সকাল ৯টায়। তার ছবির শিল্পীরা হয়তো আসেন ১১টা, ১২টায়। নায়কের মর্জি মাফিক পরিচালককে চলতে হয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এই দুরবস্থা? চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৬টি সংগঠন একজোট হয়েও কেন একজন শিল্পীকে বশে আনতে পারছেন না। এই তো সেদিন জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে টিভি নাটকের তিন সংগঠনের সমঝোতা চুক্তিনামা সম্পাদনের এক অনুষ্ঠানে হঠাৎ দর্শক সারী থেকে হাত উচু করলেন একজন প্রবীণ অভিনেতা। তার চোখে কান্না করছিল। অনুষ্ঠানটি চলচ্চিত্র বিষয়ক নয়। তবুও তিনি কাঁদতে কাঁদতেই চলচ্চিত্রের বর্তমান দুরবস্থার কথা তুলে ধরলেনÑ আমাদের চলচ্চিত্র কঠিন এক সময় পার করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ চলচ্চিত্রকে বাঁচান।

Shakib-Khan-Bubliএকটা গল্প শোনাই আপনাদেরকে। এক দেশে জাদুকরদের বেশ কদর। সে কারণে জাদু দেখানোই কারও কারও পেশা হয়ে উঠলো। ভালোই চলছিল। দেশের লোক আনন্দ-ফ‚র্তির সঙ্গে জাদু দেখে, জাদু নিয়েই তাদের সব আনন্দ আয়োজন। হঠাৎ একটা সময় মনে হলো জাদুকরদের জাদু যেন জমছে না। একই জাদু দেখাচ্ছে সবাই। দেশের জাদুকরদের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে থাকলো অনেকের। কেউ কেউ টেলিভিশনে বিদেশি জাদুকরের জাদু দেখার প্রতি আগ্রহী হতে থাকলো। হঠাৎ দেশেই আবির্ভূত হলো এক নতুন জাদুকর। তার জাদুর মায়ায় দেশের মানুষ যেন স্বস্তি ফিরে পেল। সবার মুখে মুখে নতুন জাদুকরের প্রশংসা। তাকে ঘিরে ধন্য ধন্য রব সর্বত্র। দিন ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা সমস্যা দেখা দিল। নতুন জাদুকর অনেকটাই স্বৈরাচারি হয়ে উঠলেন। কাউকেই মানেন না। তোয়াক্কাও করছেন না। একসময় যারা তার দুর্দিনের বন্ধু ছিল তাদেরকেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যরা সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে ‘বয়কট’ আন্দোলন শুরু করলো। তবুও সেই জাদুকরের আস্ফালন থামে না। বরং সে আরো অহংকারী হয়ে ওঠে। বলতে থাকেÑ আমিই শ্রেষ্ঠ। দর্শক আমার সঙ্গে আছে। আমার আর কাউকেই দরকার নাই।

হ্যাঁ কথা সত্য দর্শক তার সঙ্গে আছে। তার জাদুর অনুষ্ঠানে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। কিন্তু সব দিন সমান যায় না। সারাজীবন কেউ রাজা থাকে না। আর তাই একদিন ঘটে গেল নতুন এক বিস্ময়কর ঘটনা। দেশে অনেক জাদুকরের আবির্ভাব হলো। সবার ভাÐারেই নতুন জাদু। তাদের মুখের মায়াময় হাসি আর বিনীত আচরণ মুগ্ধতা ছড়াল সারাদেশে। সবাই ছুটতে থাকে নতুন জাদুকরদের দিকে। অতঃপর পুরনো জাদুকরের বোধোদয় হয়। আমি ভুল করেছি… ভুল করেছি বলে সবার কাছে প্রিয় হবার চেষ্টা করে সে…

প্রিয় পাঠক, এই গল্পের মাজেজা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন। বনে যদি একটিই বাঘ থাকে তাহলে অন্য পশুদের প্রতি তার আচার-আচরণ হবে ‘ড্যামকেয়ার’ স্টাইলের। আর একাধিক বাঘ থাকলে পরিস্থিতি, পরিবেশ হবে ভিন্ন। অনেকের ধারণা আমাদের চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খানের কথা ও আচরণে সবসময় এক ধরনের ‘ড্যামকেয়ার’ ভাব প্রকাশ পায়। এটার কারণ আছে। চলচ্চিত্রের এই সময়ে নায়ক হিসেবে তার বিকল্প আর কেউ নাই একথাতো সত্য। যার বিকল্প নাই তিনিতো একটু ঔদ্ধত্য দেখাবেনই। কাজেই সমাধান একটাই নতুন আরও অনেক জাদুকর চাই। যিনি হবেন মেধাবী। তার জাদুতে থাকতে হবে নতুন চমক। নতুন কোনো চমক ছাড়া আমাদের চলচ্চিত্রের বর্তমান সংকট দূর করা সম্ভব নয়। চমক চাই, নতুন চমক…

 

আমাকে ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করা হয়েছে

-শাকিব খান

শাকিব খানকে ঘিরে বিতর্ক যেন থামছেই না। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন তাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু এ নিয়ে শাকিব খানের যেন কোনোই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নাই। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি সরাসরি অনেক কথা বলেছেন। যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ প্রকাশ করা হলো।

-সম্পাদক

Shakib-Khan-1প্রশ্না: ঢালিউড কিং থেকে ঢাকার নবাব। নবাব সিনেমার সাফল্য আপনাকে রীতিমতো নতুন টাইটেল এনে দিয়েছে। সবাই আপনাকে নবাব বলে ডাকছে। আপনার ভাষ্য কী?

উত্তর: আমি বরাবরই বলে এসেছি দর্শকদের জন্যই আমি আজ শাকিব খান। দর্শক যেদিন আমার পাশ থেকে সরে দাঁড়াবে সেদিন আমি আর কিছুই থাকব না। নবাব একটি ভালো সিনেমা। অনেক কষ্ট করে সময় নিয়ে কাজটি করেছি। আমি জানতাম আমার দর্শক ঈদের মতো বড় একটি উৎসবে এমন টানটান উত্তেজনাকর দুর্দান্ত গল্পের ছবিটি দারুণভাবে গ্রহণ করবে। আদতে তাই হয়েছে। ভালোবেসে দর্শক আমাকে নবাব নামে ডাকছে। বিষয়টি আসলেই আনন্দের।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেছে আপনি চাননি রাজনীতি ছবিটি ঈদে মুক্তি পাক। এমনকি এই ছবির প্রচারেও আপনি সক্রিয় ছিলেন না।

উত্তর: এটা একদমই ভুল কথা। নবাব যেমন আমার অভিনীত সিনেমা, রাজনীতিও তাই। সত্যি কথা বলতে গেলে আমি আসলে কোনো ঈদের ছবির প্রচারেই ছিলাম না। নবাব ছবিটি আটকে যাচ্ছিল বলে আমি চেয়েছি ছবিটি যেন মুক্তি পায়। তার মানে এই নয় যে, আমি চেয়েছি রাজনীতি আটকে যাক। আমি এরই মধ্যে হলে গিয়ে পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস ও দর্শকদের সঙ্গে বসে ছবিটি দেখেছি। একজন শিল্পীর কাছে তার সব কাজই সমানভাবে পছন্দের ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি বাদ দিয়ে অন্যটির প্রচার করার প্রশ্নই উঠে না।

প্রশ্ন: তাহলে এই অভিযোগ উঠল কেন?

উত্তর: এখন আমার সবকিছুই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সুযোগ পেলেই তৃতীয় পক্ষ উল্টা-পাল্টা মতামত উপস্থাপন করছে। সবাই জানে যে, রংবাজ সিনেমার শুটিং নিয়ে আমাকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এই সিনেমার শুটিং শেষ করার পর আমি ঈদের ছবির প্রচারের জন্য সময় রেখেছিলাম। কিন্তু সে সময়টায়ও আমি শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। যদি আমার স্বাভাবিক কাজে বাধা না আসত তাহলে প্রচুর সময় পেতাম এবং ছবির প্রচারণায় সময় পেতাম। তবে এত আলোচনার পরও আমার সন্তুষ্টি একটাই, আমার দর্শক নবাব এবং রাজনীতি দুটোকেই সমানভাবে গ্রহণ করেছে। দর্শকের পছন্দের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না।

প্রশ্ন: অপু বিশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতিকে দর্শক ভালোভাবে নিয়েছে। অপুর সঙ্গে আপনার বাকি কাজগুলো দর্শক কীভাবে নেবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: তার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি নির্মাণাধীন আছে। আমি ভেবেছিলাম ছবিগুলো হয়তো দর্শক সেভাবে নেবে না। সেগুলোও হয়তো মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু এখন দেখছি রাজনীতি ভালোভাবে চলছে। তাই মনে হচ্ছে অন্য চলচ্চিত্রগুলো সেভ জোনেই আছে।

প্রশ্ন: ঈদের আগে লন্ডনে ‘চালবাজ’ সিনেমার শুটিংয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শোনা গেছে শুটিং বন্ধ হয়ে গেছে।

উত্তর: সমস্যাটা আসলে কলকাতার। ওখানকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের সঙ্গে ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার একটা ঝামেলা বেধেছিল। যে কারণে টেকনিশিয়ানরা কাজ করতে রাজি হননি। কারণ ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা। আমরা প্রস্তুতি সব শেষ করে এনেছিলাম। আমার নতুন লুক রেডি করেছি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ওরা কাজ করতে চাইল না। ফলে ওরা যেমন দেশে ফিরে গেছে, আমিও ফিরেছি।

প্রশ্ন: তাহলে কী অনিশ্চিত হয়ে গেল চালবাজ?

উত্তর:  নাহ। সেরকম কিছু না। সমস্যাটা সাময়িক ছিল। এর মধ্যেই সব সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। আমি শিগগিরই লন্ডন যাচ্ছি। সেখানে আরও কাজ আছে। আগামী ঈদের ছবির কাজ আছে।

প্রশ্ন: রংবাজের কী খবর। কবে আসছে?

উত্তর: রংবাজের কাজ তো শেষ। তাড়াহুড়ো করে এই ঈদে রিলিজ দিইনি। এটা উৎসবকে টার্গেট করে বানানো। তাই কোরবানির ঈদে রিলিজ হবে। এই ছবিতে দর্শকদের জন্য চমক থাকছে।

প্রশ্ন: কী ধরনের চমক?

উত্তর: সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। চমকটা চমক হিসেবেই থাকুক।

প্রশ্ন: নতুন ছবিগুলোতে আপনাকে নতুন নতুন লুক এ দেখা যাচ্ছে। চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে যাচ্ছে স্টাইলও। রহস্যটা কী?

উত্তর: কোনো রহস্য নেই। আসলে প্রোডাকশন এবং ডিরেক্টরের অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুসারেই সব হয়। একজন শিল্পী সব সময় চায় দর্শক তাকে নতুন করে আবিষ্কার করুক। নতুনরূপে দেখুক। আর সেটা গ্রহণ করুক। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আমি সেটা নতুন করে আবিষ্কার করেছি এবং এখন সেটা নিয়ে কাজ করছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী পরিবার আপনাকে চলচ্চিত্র থেকে বহিষ্কার করেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

Shakib-Khan-Shusriত্তর: এটা তো নতুন নয়। আমার সঙ্গে আগেও ঘটেছে। পুরো ব্যাপারটি আমার কাছে হাস্যকর লেগেছে। এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না। এসব নিয়ে মাথাও ঘামাতে চাই না। আমি কেবল আমার কাজ নিয়ে থাকতে চাই। আমাকে ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করা হয়েছে। একটা কথা আমি আগেও বলেছি, এখনো বলতে চাই। রাজনীতি করে তারকা হওয়া যায় না। আমাকে নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। আমার সিনেমা নিয়েও রাজনীতি হয়েছে। এভাবে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠার কোনো মানে হয় না। শিল্প আর শিল্পীর কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই। দর্শক-ভক্তদের ভালোবাসাই তাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমিও আমার দর্শকের কাছে দায়বদ্ধ। তারা যদি আমাকে গ্রহণ করে তাহলে আর কারও ক্ষমতা নেই কোনো কিছু করার। নবাব আর রাজনীতির সাফল্যই বলে দিচ্ছে দর্শক আসলে কী চায়। দর্শক ছাড়া আর কারও ক্ষমতা নেই কাউকে নিষিদ্ধ করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। আমি তো মনে করি সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে এমন নোংরা রাজনীতি থাকাই উচিত নয়।

প্রশ্ন: ষড়যন্ত্র বা নিষেধাজ্ঞার এই সংস্কৃতি দেশি চলচ্চিত্রে প্রভাব ফেলছে কী? এ থেকে উত্তরণের পথ কী?

উত্তর: প্রভাব তো অবশ্যই রাখছে। কেউ কেউ কাজ করছে। আবার কারও কারও কাজ নেই, ওরা ব্যস্ত ষড়যন্ত্রে। উত্তরণের পথ আসলে একটাই। চলচ্চিত্রের ভালো চাইলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন: আপনার নিজের প্রোডাকশনের কী খবর?

উত্তর: আপাতত আমার প্রোডাকশন থেকে কোনো ছবি করছি না। অনেক ছবি হাতে আছে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই।

প্রশ্ন: ভেঙ্কটেশের সঙ্গে আপনার চুক্তির গুঞ্জনটা উড়িয়ে দিয়েছেন। এসকে মুভিজের সঙ্গেও কাজ করেছেন। আসলে বিষয়টা কী?

উত্তর: আমি এখন আর কোনো নতুন আর্টিস্ট নই যে, কন্ডিশনাল চুক্তিতে যাব। ভেঙ্কটেশ এসকেসহ আরও অনেকের সঙ্গেই কাজ করা হবে। গল্প, স্ক্রিপ্ট, কাস্টিং পছন্দ হলে যে কারও সঙ্গেই কাজ করতে পারি। নির্দিষ্ট কোনো গÐিতে আমি বন্দি থাকতে চাই না।

প্রশ্ন: একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। ৭০ দশকে আমাদের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ ছিল। সেটা কী ফিরে পাওয়া সম্ভব?

উত্তর: অতীত ফিরে আসা নয়। বরং আজকের অবস্থান আগের থেকেও ভালো থাকার কথা। সোনালি অতীত তো বলিউডি সিনেমাতেও আছে। সেখান থেকে চিত্রটা এখন আরও অন্য রকম হয়ে গেছে। আমাদের সময়টা অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ার কথা। সেটা আসলে কিছু জটিলতার কারণেই হচ্ছে না।

প্রশ্ন: কিছু জটিলতা আর কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে হয়তো। নায়ক ফারুক, আলমগীর তারা আপনার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। এটা কেন হলো?

উত্তর: দেখুন, তাদের সঙ্গে আমার কোনো বিভেদ নেই। আমি সবসময় সিনিয়রদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে এসেছি। ফারুক ভাইকে নিয়ে আমি কেন বাজে কথা বলব? আমি কিছুদিন আগেও সেরা অভিনেতার পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রথমে ফারুক ভাইকে সালাম করেই পুরস্কার নিই। আমার কাছে তাদের অবস্থান অন্যরকম। আলমগীর সাহেবকে আমি বাবার মতো মনে করি। তিনি আমাকে ছেলের মতো দেখেন। তাদের সঙ্গে বেয়াদবির প্রশ্নই আসে না। আসলে তৃতীয় পক্ষ তাদের ভুল বোঝাচ্ছে।

প্রশ্ন: সমস্যাটা যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে। বলা হচ্ছে যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণা করা হচ্ছে। নিয়ম মানা হচ্ছে না।

Shakib-Khan-Shrabontiউত্তর: আমি একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। আমি নিজেও কিন্তু যৌথ প্রতারণার বিপক্ষে। প্রতারণার পক্ষ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আর নবাবকে আটকানোর আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি। সিনেমার নাম নবাব। নাম ভূমিকায় আমি। ফুল মার্ক এদেশের দিকেই চলে আসে। উল্টো ওদের আপত্তি জানানোর কথা ছিল। আমি মন্ত্রী ও পরিচালক সমিতির সভাপতির কথা শুনে বুঝলাম নবাব নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। অভিযোগ ছিল আরেকটি ছবি নিয়ে। কিন্তু ওরা নবাবকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। এখানেই তৃতীয় পক্ষের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। নবাব নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। কিন্তু রাজনীতি করেও নবাবকে আটকানো যায়নি।

প্রশ্ন: পুরনো প্রশ্নটা আবার। ভারতীয় ছবির ব্যাপারে আপনি নাকি নিজের স্ট্যান্ড পাল্টে ফেলেছেন। কাফনের কাপড় নিয়ে আন্দোলনে নেমে নিজেই আবার পাল্টে গেছেন।

উত্তর: ভুল। এটা এক ধরনের অপপ্রচার। তৃতীয় পক্ষের ওরা ব্যাপারটাকে ভুলভাবে তুলে ধরছে। ওই সময়ের আন্দোলনটা ছিল হিন্দি ছবির বিরুদ্ধে। তখনকার আন্দোলনের ছবিগুলো ঘাঁটলেই দেখবেন সেখানে ¯েøাগান লেখা আছে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় হিন্দি ছবি চলবে না।’ ওখানে যৌথ প্রযোজনা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা ফিল্মে আসার আরও আগে থেকেই যৌথ প্রযোজনা চলছে। তখন আপত্তিটা ছিল হিন্দি ছবি নিয়ে।

প্রশ্ন: মাঝখানে শোনা গিয়েছিল আপনি বলিউডে সিনেমা করছেন। কোনো আপডেট?

উত্তর: এখনই কিছু বলতে চাই না। আলাপ তো অনেক রকমই হয়। তবে সব ঠিক হওয়া মাত্র দর্শকদের জানাব।

প্রশ্ন: নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও বেশ কয়েকটি লোকাল প্রোডাকশনে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবর বেরিয়েছে।

উত্তর: কিন্তু সব চ‚ড়ান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা চলছে। বললেই তো আর চুক্তি হয়ে যায় না। অনেক ব্যাপার থাকে।

প্রশ্ন: অনেকের অনেক কথা সত্তে¡ও নবাব আর রাজনীতি সাফল্য পেল। এর আগে শিকারী দিয়ে আপনার যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেটা কিন্তু অটুট থাকল।

উত্তর: আপনারা জানেন, শিকারী আন্তর্জাতিকভাবে রিলিজ হয়েছে। কানাডায় রিলিজ হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় রিলিজ হয়েছে। আর মালয়েশিয়ায় তো আমি, মন্ত্রী মহোদয় গিয়েছিলাম। আজ যারাই এমিরেটসে যাতায়াত করেন তারা শিকারী ছবিটি দেখে থাকবেন। কারণ, এমিরেটস ছবিটির স্বত্ব কিনে নিয়েছেন। আর যৌথ প্রযোজনার নবাব ও রাজনীতি নিয়ে মিডলইস্টের মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ জন্মেছে। সেখানে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির পুরো বাজার। এখানেও কিন্তু নবাব ঢুকে গেছে আরবি সাবটাইটেল দিয়ে। বলিউড ছবির পাশাপাশি আমাদের এই ছবিগুলো সিনেপ্লেক্সে চলবে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, লন্ডনসহ বিভিন্ন স্থানে চলবে। যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে এটা কিন্তু আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার। আমি সবসময় যে স্বপ্ন দেখি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের ছবির জয়জয়কার। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখব আমাদের ছবির বিশাল বিলবোর্ড! হিরো যেই হোক, আমাদের সিনেমার একটি বিলবোর্ড। সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখব আমাদের সিনেমা চলছে। সেটার হাতছানি কিন্তু সবাই পেয়েছে। এই যে সাফল্য, এটার আভাস সবাই পাচ্ছে এখন।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি। আপনার পরিবার অপু বিশ্বাস, আপনার সস্তান আবরাম তারা সবাই কেমন আছেন?

উত্তর: ভালো আছে।

প্রশ্ন: বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন? কথা হয়েছে?

উত্তর: আসলে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমি ব্যক্তিগতই রাখতে চাই। এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ব্যক্তিজীবন নিয়ে তো অনেক দিন ছিলাম। প্রচুর টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই এখন আর সেটাকে সামনে আনতে চাই না। আমি চাই না নতুন করে কোনো কিছু প্রশ্নবিদ্ধ হোক।

প্রশ্ন: গণমাধ্যমে অপু বিশ্বাস বলেছেন বিয়ে করাটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

উত্তর: এটা তার উক্তি। প্রত্যেকেরই ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। যদি বিয়ে করাটা তার ভুল হয়ে থাকে তাহলে ভুল। এখানে আর কি বলার আছে!

প্রশ্ন: অনেক নায়িকার সঙ্গে আপনার কাজ করতে হয়েছে। আপনার প্রিয় সহঅভিনেত্রী বা নায়িকা কে?

উত্তর: অনেকেই।

প্রশ্ন: নির্দিষ্ট কারও নাম জানতে চাইলে কার কথা বলবেন?

উত্তর: নির্দিষ্ট কারও নাম বলে আবার বিতর্কে জড়াতে চাই না। যেহেতু আমি অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি তাই একজনের নাম বলে বাকি সবাইকে ছোট করতে চাই না।

প্রশ্ন: সহঅভিনেত্রীর মধ্যে কার সঙ্গে আপনার ক্যামেস্ট্রিটা সবচেয়ে ভালো?

উত্তর: যখন যার সঙ্গে কাজ করি তার সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি চেষ্টা করি তাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার।

প্রশ্ন: চিত্রনায়িকা বুবলীর সঙ্গে আপনার একটা সম্পর্কের গুঞ্জন রয়েছে।

উত্তর: এটা বুবলী না হয়ে অন্য কেউ হলেও হয়তো। আর অপুর কারণেই গুঞ্জনটা একটু বেশি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইব বুবলীর মতো যোগ্যতর মেয়ে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসুক। আজ বুবলীর সঙ্গে কাজ করছি, কাল হয়তো আরেকজনের সঙ্গে কাজ করব, তখন ভালো কাজ আর ক্যামেস্ট্রির জায়গা থেকে সবার মনে হতেই পারে। আসলে আমাদের এই পেশায় এমন কানাঘুষাটা একটু বেশিই হয়। সেই জায়গাটা অব্যাহত থাকবেই, যতদিন আমি নায়ক হিসেবে থাকব।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে অপু বিশ্বাসের জুটিটা বেশ সফল ছিল, সেটা যদি ভেঙে যায় তাহলে শাকিব খানের সঙ্গে আমরা কাকে দেখতে পাব?

উত্তর: সেটা আমার চাওয়ার ওপর কিন্তু নির্ভর করবে না। সেটা নির্ভর করবে মূলত দর্শকদের ওপরই। দর্শকরা যার সঙ্গে আমাকে দেখতে চাইবেন তার সঙ্গে আমার জুটিটা হবে।

প্রশ্ন: দর্শক আসলে কার সঙ্গে দেখতে চাইছেন বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: নতুনদের সঙ্গেই এখন দর্শক বেশি দেখতে চায়। নতুন মুখ চায় বেশি দর্শক।

প্রশ্ন: সামনের পরিকল্পনা?

উত্তর: বিশেষ কিছু না। ভক্তদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু দিতে চাই। নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।

কৃতজ্ঞতা: চ্যানেল ২৪