Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছেলেটি সত্যিই কেয়ারলেস ছিলো!

সৈয়দ ইকবাল: প্রচণ্ড জোরে কান্নার শব্দ শোনা গেল। বুক ফাঁটা কান্না যাকে বলে ঠিক তেমনই। বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এতো জোরে শব্দ করে কাঁদছে কে? তবে এটি যে নারীর কান্নার শব্দ এটা নিশ্চিত। বাড়ির সামনে বেশ জটলা। হবারই কথা। কারণ সুনসান নীরব এলাকায় এমন কান্নার শব্দ সবারই কানে পৌঁছাবার কথা। আগ্রহ নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দোতলায় উঁকি মারতেই দেখা গেলো অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষকে। মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন। পাশে তার বাড়ির কাজের লোকজনও আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশ থেকে পরিচালক স্বরাজ দেব ‘কাট’ বলে উঠলেন। বোঝা গেলো এটা শুটিং-এর দৃশ্য। দোতলা বাসার বারান্দা থেকে নীচে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের আরেকটা জটলা দেখা গেলো। উপর থেকে বোঝা যাচ্ছিল একটি লোক মাটিতে পড়ে আছে আর মানুষজন বলাবলি করছে, ‘লোকটি মনে হয় আর বেঁচে নেই।’ অপর্ণা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। উপর থেকে নীচের মানুষের ভিড় দেখতে থাকেন। পরিচালক আবারও ‘কাট’ বলেন। চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে অপর্ণা মেকআপ রুমে যান। অন্যদিকে মানুষের জটলা থেকে উঠে দাঁড়ান অভিনেতা আফরান নিশো। অপর্ণা ও নিশো দু’জনেই তখন মেকআপ রুমে আসেন। সঙ্গে পরিচালক স্বরাজ দেবও। মেকআপ রুমে আগে থেকে ছিলেন অভিনয়শিল্পী সাবেরী আলম, এলেন শুভ্র, বাশরী অনন্যা ও প্রযোজক আবু সায়েমসহ অনেকে। প্রথমেই নিজের অভিনীত চরিত্র নিয়ে কথা বলেন অপর্ণা ঘোষ। কথায় কথায় বললেন, ‘নাটকটির গল্প সত্যিই অসাধারণ। এখানে আমার সঙ্গে নিশোর প্রেম থাকে। কিন্তু নিশো খুব কেয়ারলেস টাইপের ছেলে কখন কোথায় যায়, কী করে কিংবা কী করা তার উচিত বা কী করা উচিত নয় তা সে বুঝে না। মোটকথা উড়নচন্ডি টাইপের চরিত্র তার। এজন্য ওর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে আমারও পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। ঘটনাক্রমে একদিন রাতে নিশো আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। এর আগে তার সাথে আমার ঝগড়া হয়। ফলে আমি রাগ করে বাড়ির দারোয়ানকে দরজা খুলতে না করি। এদিকে ঠাণ্ডার মধ্যে নিশো ঘরের দরজায় ঘুমিয়ে পড়ে। তার আবার শ্বাসকষ্ট রোগ আছে। সেদিন সে ইনহেলার আনতে ভুলে যায়। পরদিন সকালে নিশোর লাশ আবিষ্কার 03_2করে এলাকার লোকজন। যার শুটিং খানিক আগে করছিলাম।’ কথাগুলো একটানা বলে যান অপর্ণা। কিছুটা আবেগঘন মনে হলো তাকে। পাশে নিশো ও সাবেরী আলমসহ সকলে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন কথাগুলো। এরপর মুখ খুললেন নিশো। নিজের অভিনীত চরিত্র নিয়ে বললেন, ‘একজন মানুষ কেয়ারলেস হলে যে তার শেষ পরিণতি কেমন হতে পারে তাই নাটকটির গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জীবনে চলার পথে সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই প্রয়োজন তাই দেখা যাবে ‘ছেলেটি ভীষণ কেয়ারলেস ছিলো’ নাটকটিতে। এতে প্রেম-ভালোবাসা, মানবজীবনের সূক্ষ অনুভূতি, মানবিক মূল্যবোধসহ সামাজিক সম্পর্কগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
এতো গেলো নায়ক আর নায়িকার চরিত্র নিয়ে আলাপচারিতা। পাশে বসে থাকা গুণী অভিনয়শিল্পী সাবেরী আলমকে তার চরিত্রটি নিয়ে প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘নাটকটিতে আমার চরিত্রটি বেশ মজার। অপর্ণার পূর্ণ বয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করছি। নাটকে এই বয়সে এসে আমারই ভাইয়ের ছেলের কাছে যৌবন বয়সের গল্পটা বলতে থাকি। যেটা নাটকের ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায়। আমার ভাইয়ের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করে এলেন শুভ্র ও তার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করে বাশরী অনন্যা। তাদের সম্পর্কের মধ্যে নানান সমস্যা আমার চোখেপড়ে। তাই একদিন তাদের দু’জনকেই ডেকে আমার নিজের গল্পটা বলতে শুরু করি। একটা সম্পর্ক সামান্য ভুলের কারণে যে ভেঙে যায় এবং প্রিয় মানুষটি কখনো অল্প একটু কেয়ারলেস হলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়- তাই নাটকটির গল্পে ফুটে উঠেছে’। পরিচালক স্বরাজ দেব বলেন, ‘আমি ভিন্ন একটি ভালোবাসার গল্প বলার চেষ্টা করেছি। জানিনা সেটা কতটুকু সফল হতে পারবো। তবে এইটুকু বলতে পারি দর্শক নাটকটি দেখার পর ভালোবাসাটাকে একটু ভিন্নভাবে উপলব্দি করবেন।’
এরইমধ্যে নাটকের টিম নগরীর দিয়া বাড়িতে শুটিং করার জন্য রওয়ানা দিলো। আনন্দ আলো টিমও গেলো তাদের সঙ্গে। দিয়া বাড়ির মিরপুর বেড়িবাঁধের ব্রিজের উপর দিয়ে দৌঁড়ে আসছেন নিশো। দৃশ্যটি নেয়ার জন্য প্রসত্মুত চিত্রগ্রাহক হৃদয় সরকার। দৌঁড়াচ্ছেন নিশো। তার হাতে একটি ফাইল। ব্রিজের শেষ মাথায় একটি চানাচুরের দোকানে চানাচুর কিনলেন তিনি। হাতে রাখা ফাইলটা মনের ভুলে রেখে আবার দৌঁড়াতে শুরু করলেন। ব্রিজের শেষ মাথায় তার প্রেমিকা অপর্ণা ঘোষ অপেক্ষা করতে থাকল। চানাচুর নিতে গিয়ে হাতের জরুরি কাগজপত্র রাখা ফাইলটা যে রেখে এসেছেন নিশোর তা মনেই নেই। দৃশ্যটি একটি টেকই ওকে হয়। এবার ব্রিজের উপরে দুজনের হাঁটা চলার দৃশ্য নেয়া হবে। ব্রিজের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় হাঁটছেন দু’জনে। একসময় ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন দু’জনে। ব্রিজের নীচে একটি সাপ চলে যেতে দেখে অপর্ণা। চিৎকার করে বলে উঠেন, ‘সাপ সাপ সাপ’। তখন নিশো মজা করে বলেন, ‘দূর, এটা সাপের বাচ্চা’। অপর্ণা প্রতিউত্তরে বললেন, ‘সাপ তো সাপই, সেটা ছোট হোক কিংবা বড়’। দুজনের এই মজা শেষে আবার দৃশ্য নেয়ার জন্য পরিচালক ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো, অ্যাকশন বলে উঠতেই দু’জনে অভিনয়ে মনোযোগ দিলেন। ইচ্ছে মতো কথা বলা শুরু করলেন তারা। কারণ দৃশ্যটি মিউট যাবে বলে পরিচালক বলে দিয়েছেন নিজেদের মতো করে কথা বলতে। চলতে থাকে দৃশ্যটি। শটের মাঝে নিশো হঠাৎ করে বলে উঠলেন, ‘সাপ সাপ সাপ…।’ অপর্ণা তখন চিৎকার দিয়ে উঠেন। নিশো তখন মজা করে বললেন, ‘এবার বড় কিংবা ছোট, কোনো সাপই নেই।’ অপর্ণা তখন নিশোর উদ্দেশ্যে বললেন, ‘নিশো প্লিজ বি সিরিয়াস। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। শুটিংটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।’ তখন নিশো বললেন, ‘আজব, আমি তো কেয়ারলেস ছেলে। এমনই তো আমার করার কথা…।’ উপস্থিত সকলে হেঁসে উঠলেন। সূর্য তখন সত্যি সত্যি ডুবো ডুবো অবস্থায়। দিনের আলো থাকতে থাকতে শুটিং শেষ করার তাড়া দিলেন পরিচালক। ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান, জিরো, অ্যাকশন বলে শুটিং আবারো শুরু করলেন। আনন্দ আলো টিম তখন রওয়ানা দিলো তাদের গনত্মব্যে। আর চলতে থাকলো কেয়ারলেস কোনো এক ছেলের গল্পের শুটিং…।