সাজিদ বিন দোজা। বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান স্থপতি ও শিক্ষক। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাস শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৯৯ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে সুইডেনের খটঘউ ইউনিভার্সিটি থেকে শেল্টার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। ২০১৬ সালে তিনি পর্তুগালের অ্যাভোরা ইউনিভার্সিটি থেকে শিল্পকলার ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। বর্তমানে স্বনামধন্য এই স্থপতি স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চাও চলছে। তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর নিজের স্কেচ এবং ড্রইং নিয়ে দেশে-বিদেশে নয়টি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপরও তিনি বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মানে আমি তে এই স্বনামধন্য স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
রাজশাহী গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯১ সালে। ১৯৯৩ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। ১৯৯৯ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য ডিসিপ্লিন থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরই সাজিদ বিন দোজা প্রজেক্ট আর্কিটেক্ট হিসেবে যোগ দেন কনকর্ড রিয়েল এস্টেট এ। সেখানে চার বছর কাজ করার পর ২০০৪ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভিাগে লেকচারার হিসেবে যোগদেন। এরপর সাজিদ সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগদেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে।
২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে সুইডেনের খটঘউ ইউনিভার্সিটি থেকে শেল্টার ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান পর্তুগালে। ২০১৬ সালে পর্তুগালের অ্যাভোরা ইউনিভার্সিটি থেকে শিল্পকলার ইতিহাসে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর দেশে ফিরে এসে তিনি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। দীর্ঘ ১১ বছর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ২০১৯ সালে স্থপতি ড. সাজিদ বিন দোজা যোগ দেন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে স্বনামধন্য এই স্থপতি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চাও চলছে।
২০০৪ সালে সাজিদের সহধর্মিনী স্থপতি রোকসানা সুলতানা সম্পা গড়ে তোলেন ‘বাবুই বাসা’ নামের একটি স্থাপত্য কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ায় কনকর্ডের ফ্যান্টাসি কিংডম পার্ক, শান্তি নগরে টুইন টাওয়ার, গুলশান-২ এ লেক ভিউ কনকর্ড, রাজশাহীতে ক্যান্সার সেন্টার হাসপাতাল, রাজবাড়িতে রেলওয়ে অডিটোরিয়াম, নারায়নগঞ্জে সামারা রিসোর্ট, গুলশান-১ এ এলআর ভিলা কনকর্ড, ফিলিং স্টেশন এবং রেস্টুরেন্ট কমপ্লেক্স, গোলাগঞ্জ, ফাইভ স্টার হোটেল, পায়রাপোর্ট ও ইকোনোমিকজোন, কমার্শিয়াল প্রজেক্ট, বারিধারা, দাড়াস বাড়ি মসজিদ কনজারভেশন পলিসি, নাচোল, কানসাট, দুর্বলপুর, তানোড়-এ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাই করেছেন। এছাড়াও তিনি বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। ২০০০ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম রোকসানা সুলতানা সম্পা। তিনিও একজন আর্কিটেক্ট। এই দম্পতি এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী।
হ্যারিটেজ ইলাসট্রেশন ও স্কেচিং কী? এ প্রসঙ্গে স্থপতি সাজিদ বলেন, প্রথমত বাংলাদেশে আর্কিটেকচারাল হ্যারিটেজ স্কেচিং ও ইলাসট্রেশন এর উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো প্রচলন বা সুযোগ নেই। ইউরোপে বিভিন্ন স্থাপত্যকলার স্কুল গুলোতে বিশেষায়িত সুযোগ দেখা যায়। স্থাপত্যের ইতিহাসকে বিশ্লেষনী চিত্রাঙ্কন
বাংলাদেশে স্থপতি ড. সাজিদ এই দক্ষতাটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনিই এই দেশে প্রথম একজন হ্যারিটেজ ইলাসট্রেটর যিনি বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাস শিক্ষায় দুই যুগ ধরে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি ড. সাজিদ বিন দোজা। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান।