স্থপতি তারিক হাসানের স্থাপত্য ভুবন

তারিক হাসান। বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান স্থপতি। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থাপত্য অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারনা তার। দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে স্থাপত্যশিল্পে এ দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তরিক সদিচ্ছা, দৃঢ় মনোবল ও উৎসাহ এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে আজকের এই অবস্থানে এনেছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘তারিক হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বনামধন্য এই স্থপতি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে স্বনামধন্য এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থাপত্যের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি সরলতা। আমি নান্দনিকতার পাশাপাশি ব্যবহারিক সুবিধাটার দিকে বেশি নজর দেই। আমি স্থাপত্য তৈরিতে সর্বদা দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আমার কাজের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খুব কম মেটারিয়াল ব্যবহার করি বিল্ডিংয়ে। কম বেশি আমার কাজের মৌলিক দর্শন এবং সর্বদা উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা থাকে। এ কথা গুলো বললেন স্বনামধন্য স্থপতি তারিক হাসান।
তাঁর গ্রামের বাড়ি যশোর শহরে হলেও জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার ইস্কাটনে। তারিক হাসান সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে তিনি ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য অনুষদে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে নিজে কিছু করবেন এ প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেন স্থাপত্য চর্চা। ১৯৯৮ সালে তারিক হাসান গড়ে তোলেন তাঁর নিজের স্থাপত্য চর্চা প্রতিষ্ঠান ‘তারিক হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড’। বেশ কয়েকজন মেধাবী আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য ক্ষেত্রের সহকর্মীদের নিয়ে তিনি সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্থপতি তারিক হাসান

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কুর্মিটোলায় সিভিল এভিয়েশন অথরিটির হেড কোয়াটার বিল্ডিং (ঈঅঅই), বসুন্ধরায় ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রাজউকের ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে রাজউক ঝিলমিল মসজিদ কেরানিগঞ্জ, রাজউক ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক, রাজউক ঝিলমিল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেরানিগঞ্জ, রাজউক ঝিলমিল টুইন টাওয়ার কেরানিগঞ্জ, প্রাগন ডায়াগনিস্টিক সেন্টার আশুলিয়া, মিরপুর দারুস সালাম এ বাংলাদেশ ডায়বেটিস অ্যাসোসিয়েশনের টিচিং হসপিটাল, শাহবাগে বিএসএমএমইউতে কোরিয়ান ফান্ডের অর্থায়নে ৭০০ বেডের সুপার স্পালাইজড হসপিটাল, গুলশান-২ এ ফোর পয়েন্ট বাই শেরাটন, বনানীতে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর আবাসিক কোয়াটার, ধানমন্ডিতে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, এসএমসির ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, অসংখ্য হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, বাণিজ্যিক ভবন, হোটেল, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বিল্ডিংসহ পাঁচ শত ভবনের ডিজাইন করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে স্বনামধন্য স্থপতি তারিক হাসান বলেন, বাংলাদেশ একটা উন্নয়নশীল দেশ। এখানে প্রচুর ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক হচ্ছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আবাসন প্রকল্পে প্রচুর কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা হচ্ছে। এখানে তরুণ স্থপতিদের কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। তাদের ওপর দায়িত্বটাও অনেক বেশি। দায়িত্বটা হচ্ছে স্থাপত্য পেশায় নৈতিকতা বজায় রেখে কাজ করা। আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং আমাদের দেশের হ্যারিটেজ এ গুলোকে মাথায় নিয়ে স্থাপত্য নকশার ভেতরে প্রতিফলন ঘটানো। তাতে করে দেখা যাবে আমাদের দেশের একটা নিজস্বতা তৈরি হবে। পেশায় তাদের সৎ থাকতে হবে। তাদের ডেডিকেশন থাকতে হবে। তরুণ স্থপতিদের প্রতি এটাই হচ্ছে আমার উপদেশ।
আর্কিটেকচার অন্যান্য প্রফেশন থেকে অনেক আলাদা। ডেডিকেশন না থাকলে কোনো ভালো কাজ হয় না। ডেডিকেশন নিয়ে খুব যত্ন সহকারে কাজ করতে হবে তরুণ স্থপতিদের।
আমাদের দেশের সংস্কৃতি যেভাবে বিকাশ করেছে ঠিক একই ভাবে আমাদের স্থাপত্যও এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ স্থপতিদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হবে আমাদের দেশের স্থাপত্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের স্থাপত্য সম্পর্কে স্থপতি তারিক হাসান বলেন, বাংলাদেশের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্থপতিরা তাদের ব্যক্তিগত অনুশীলনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তাদের অবদানে বাংলাদেশি স্থাপত্য বৈচিত্র্যময় হয়েছে। সমসাময়িক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন, নান্দনিক এবং প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত। আমরা এখন বিশ্বের স্থাপত্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারি। আমাদের বাংলাদেশি স্থপতিরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি তারিক হাসান। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি তারিক হাসান বলেন, আমাদের স্থাপত্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থাপত্য শিল্পে প্রতিষ্ঠিত করা। যেমন জাপানের স্থাপত্যের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে, ইন্ডিয়ানের স্থাপত্যেরও একটা বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু একই ভাবে আমরা মনে করি আমাদের বাংলাদেশের স্থাপত্য সেই পর্যায়ে যাওয়ার মতো একটা অবস্থায় চলে গিয়েছে। আমাদের স্থপতিরা এখন বিশ্বখ্যাত আগাখান অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে। আমারও চিন্তা ভাবনা একই রকম। আমিও যেন আন্তর্জাতিকভাবে বিল্ডিং ডিজাইন করে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করতে পারি।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি