ট্রিবিউন আর্কিটেক্টস নিয়ে আহসান হাবিবের যত স্বপ্ন

দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে স্থাপত্যশিল্পে এ দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন স্থপতি আহসান হাবিব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০২ সালে ‘ট্রিবিউন আর্কিটেক্ট লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে যোগদন। বর্তমানে আহসান হাবিব এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করে নজর কেড়েছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

আমি সব সময় লোকজ স্থাপত্য রীতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। প্রাকৃতিক আলো-বাতাস এবং লোকজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের চেষ্টা করছি। বর্তমানে বিশ্বে বহুল উচ্চারিত ‘সবুজ স্থাপত্য’ এর ধারনা গুলোকে আমার কাজের মাঝে প্রয়োগের চেষ্টা করছি। ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের ক্ষেত্রে সাধারনত অতিসজ্জা, বাহুল্য বর্জন করি। সাদামাটা কিছু মার্জিত পরিসরের পরিকল্পনাই আমার ডিজাইনে প্রাধান্য পায়। কথা গুলো বললেন, স্থপতি আহসান হাবিব। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুর জেলার পরীগঞ্জে। হাবিবের বাবা আব্দুল মান্নান মন্ডল ছিলেন স্বনামধন্য

ব্যবসায়ী। মা হাজেরা খাতুন গৃহিনী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে স্থপতি হাবিব মেজ। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সংস্কৃতির বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। সেই ছোটবেলা থেকেই খেলাঘর করতেন। সেখানে ছবি আঁকতেন। ছবি আঁকার আগ্রহ

স্থপতি আহসান হাবিব

থেকে সৃষ্টিশীল কোনো কিছু করার উদ্দেশ্যে আর্কিটেক্ট হওয়া তার। পীরগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০০ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করার পরপরই আহসান হাবিব যোগ দেন খ্যাতিমান স্থপতি রফিক আজমের সাথে। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর আহসান হাবিব যোগ দেন কনকর্ড গ্রুপে। ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’এর কিছু কিছু কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে তিনি যোগদেন ‘ট্রিবিউন আর্কিটেক্টস লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে রংপুর পীরগঞ্জের আলতাব নগর জামে মসজিদ, ও বিস্তৃত

গৌরবের ইতিহাস, ডেমরায় বাংলাদেশ জুট মিল্স করপোরেশনে রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বরিশাল সদর রোডে ১৮তলা বানিজ্যিক ভবন সোনালী কমপ্লেক্স, উত্তর বাড্ডায় ১০ তলা হক ভিলা, রংপুরের পীরগঞ্জে পুরাতন মসজিদ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের হেয়ার কাটিং এন্ড গ্রুমিং সেলুনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, রংপুর জেলা পরিষদ এর ডাক বাংলো সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
২০০৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম লায়লা আহসান। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। কাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে স্থপতি আহসান হাবিব বলেন, আমাদের ইতিহাস টেরাকোটা, পটচিত্র, বাউল গানের সহজিয়া সুরের ইতিহাস। স্থাপত্যেও জটিল নকশা ও অতি আধুনিকতা আমাদের সহজ-সাধারন জীবন দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক বটে।
পাশ্চাত্য স্থাপত্য তথা আধুনিক স্থাপত্যের অন্ধ অনুকরন নয়, লোকজ উপাদান, জলবায়ু ও মাটির বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়ে স্থাপনা সৃষ্টিই আমার স্থাপত্য ভাবনার মূল্য উপজীব্য। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের দিকে নজর দেন স্থপতি আহসান হাবিব। এই স্থপতি তার নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি