আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ চলেছেন তাদের মধ্যে রেজা নূর মুঈন ও জাকোয়ান সালওয়া তাকরিম অন্যতম। তারা স্বামী-স্ত্রী। দুজনেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। তাদের রয়েছে ‘জাদুকাটা স্টুডিওজ’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই ফার্মের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতি রেজা নূর মুঈন। আর পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি জাকোয়ান সালওয়া তাকরিম। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছে। এবার আনন্দ আলোর ভ্যালেন্টাইন সংখ্যায় শাহ্ সিমেন্ট ‘নিমাণে আমি’তে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগে পড়ার সময় জাকোয়ান সালওয়া তাকরিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর প্রেম-ভালোবাসা। অবশেষে ২০১৭ সালে তারা দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তইমুর রেজা এই স্থপতি দম্পতির একমাত্র সন্তান।
স্থপতি জাকোয়ান-সালওয়া তাকরিমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। তাকরিমের বাবার নাম নাজিম উদ্দীন। তিনি চাকরীজীবি ছিলেন। মা নার্গিস ফাতেমা একজন স্কুল শিক্ষিকা। দুই বোনের মধ্যে তাকরিম বড়। কুসুম কুমারীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ২০০৭ সালে। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বে সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০১৫ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তাকরিমও চট্টগ্রামের ফিয়ালকা লিমিটেড ছেড়ে ‘জে এ আর্কিটেক্টস’এ কাজ করেন। রেজা নূর মঈন যোগ দেন র্যাংগস গ্রুপে ইন্টেরিয়র ডিজাইন লিড হিসেবে। সেখানে দীর্ঘ সময় কাজ করে অবশেষে নিজেদের আর্কিটৈকচারাল ফার্মে মনোনিবেশ করার সুযোগ পান।
জাদুকাটা স্টুডিওজ এর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে গাজীপুর ভাওয়াল উদ্যানে একটি পরিবেশ সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠিান সিসিএ’র জন্য নির্মিত টার্টেল কনজারভেশন সেন্টারের ফিল্ড রিসার্চ স্টেশন ও ডমিটরি, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের দেশি মুরগীর খামার বাড়ি, বৃহত্তর সিলেট এ নির্মানাধীন দেশের প্রথম বার্ড পার্ক ও এগ্রো বেইজড ইকো রিসোর্ট, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি ইকো রিসোর্ট, কুড়িলে টেক স্টার্টাপ এপন্যাপ লিমিটেড, মিরপুর ডিওএইচএস-এ টেককেয়ার লিমিটেড, বনানীতে চিত্র গল্পের অফিস, নিকুঞ্জ-১ এ মোবাইল জার্নালিজম বাংলাদেশ টাইমসের নিউজরুম, গুলশান-১ এ প্রোভিটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের রেসিডেন্স ট্রিপ্লেক্স, চুনাতি ভ্যাকেমন হাউস, জাপানিস স্টাইলের ইন্টেরিয়র সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প। বর্তমানে জাদুকাটা স্টুডিওজ এবং দ্য ভিঞ্চি লিমিটেড কোম্পানীর মাধ্যমে মাল্টি ডিসপ্লিনারি ডিজাইন, টার্ন-কি কন্সট্রাকশন এবং আইটি রিলেটেড কাজ করছেন এই দম্পতি।
স্থপতি রেজা নূর মুঈন বলেন, জাদুকাটা স্টুডিওজ স্থাপত্যকর্মে ও চিন্তায় সব সময় প্রকৃতি পরিবেশ, সমাজ এবং সংস্কৃতিকে মাথায় নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে। প্রতিটি ডিজাইনের পেছনে ক্লায়েন্টের চাহিদা, গল্প, ব্যক্তিত্বের একটি ছাপ রাখার চেষ্টা করা হয় এবং তাতে প্রতিটি ডিজাইন হয়ে ওঠে অনন্য। আমাদের দেশে ডিজাইনকে শুধু নান্দনিকতার দিক থেকে সাধারনত বিবেচনা করা হলেও জাদুকাটা প্রতিটি প্রজেক্টককে কিছু সমস্যার সমষ্টি দেখতে পছন্দ করে এবং মূলত সেই সমস্যা গুলোর সমষ্ঠিগত সমাধান দিয়েই ডিজাইন চিন্তা গুলো ফুটে ওঠে। স্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইলের জন্য অধিকতর দিনের আলোর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, যেখানে সুযোগ আছে সেখানে ন্যাচারাল ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে, প্যাসিভ ডিজাইনে এসির ব্যবহার হ্রাস করে এনার্জি সেভিংসের সুযোগ তৈরি, অন্দর সজ্জার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মাঝে সংযোগ বৃদ্ধির জন্য আরো ইনক্লুসিভ লেয়াউট প্রদান, প্রো-একটিভ থাকার জন্য ছাদ বাগান ভার্টিকাল বারো ওয়ালা ছাদ কৃষি ইত্যাদি তাদের ডিজাইনে অন্তভুর্ক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। কর্মক্ষেত্রে মানুষ জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যয় করে। তবে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ জাকজমক পূর্ণ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে থাকে অস্বাস্থ্যকর। জাদুকাটা ইফিশিয়েন্ট ওয়ার্ক স্পেস ডিজাইনে স্পেশালাইজড সার্ভিস দিয়ে থাকে সেখানে কর্মীদের মানষিক এবং শারিরীক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নানারূপ পদক্ষেপ নেয়া হয় যা আদতে কাজের এফিশিয়েন্সি বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের লাভ হয়েই ফিরে আসে। দীর্ঘ সময় অপ্রতুল আলো কিংবা অনুপযুক্ত ভাবে বসে কাজ করার মাধ্যমে আমরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরে যাচ্ছি যা খুব সহজেই সমাধান করে নেয়া সম্ভব ডিজাইনের মাধ্যমে। জাদুকাটা এই স্থপতি যুগল ঘুরে বেড়াতে অসম্ভব ভালোবাসা ভালোবাসেন গান গাইতে, রান্না করতে এবং আড্ডা দিতে। ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে দূরে ১৮ নম্বর সেক্টরে তাদের স্টুডিও অফিস। সুযোগ পেলে শহর থেকে আরো দূরে চলে যান তাঁরা। রেজা নূর মঈন আনন্দ পান বন্যপ্রাণির ছবি তুলতে এরিয়াল ভিডিও গ্রাফি এবং লোকগান লোক গাঁথা সংগ্রহ করতে। জাকোয়ান সালওয়া কথা শিল্পী মুনমুন আহমেদের একজন ছাত্রী ছিলেন। তিনি শাবিপ্রবি স্থাপত্য বিভাগের এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন ‘আশা’র সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক এবং আজ মুক্তমঞ্চের সাবেক সহ সভাপতি।