দেশজ স্থাপত্য ও নির্মাণ পদ্ধতি শিক্ষাদানে সচেষ্ট সাজ্জাদুর রশীদ

এ দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য নিয়ে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গনে দৃপ্ত পদাচারণা তার। আন্তরিক সদিচ্ছা পরিশ্রম তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর ‘ডায়াগ্রাম আর্কিটেক্টস’ ফার্মে স্থপতি হিসেবে বছর খানেক কাজ করেন। এরপর নিজে গড়ে তোলেন ‘ত্রিমাত্রা’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে পরিবেশ বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ এর ফেলো। স্থাপত্য ও শিক্ষকতার বাইরে বাংলাদেশের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সক্রীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থাপত্যশিল্পে আরো উৎকর্ষতা অর্জন করতে চাই, দেশজ সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে আরও ভালো কাজ উপহার দিতে চাই। একই সাথে এ দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য কাজ করে যেতে চাই। কথা গুলো বললেন স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার নাগমুদে। জন্ম নোয়াখালী শহরে। বাবার নাম আব্দুর রশীদ। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। মা নুরুন্নেসা বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই স্থাপত্যের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ হয়েছেন দেশের সফল একজন স্থপতি। ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮০ সালে। ১৯৮২ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ১৯৮৯ সালে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই যোগ দেন ‘ডায়াগ্রাম আর্কিটেক্টস’ এ। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর নিজেই গড়ে তোলেন ‘ত্রিমাত্রা’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম।

সাজ্জাদুর রশীদ

খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। ২০১৫ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি প্রাইম এশিয়া ইউনিভাসিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্থাপত্যচর্চাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, কমার্শিয়াল বিল্ডিং, শপিং সেন্টার, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ফতুল্লা ফেব্রিকস, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকার গুলশানের শিশুপার্ক ওয়ান্ডার ল্যান্ড, ফেনীর শপিং সেন্টার মহিপাল প্লাজা, সাভারের দি অ্যাকসেসরিস ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, ইপিজেড এর স্টাইরেক্স ফ্যাশন, গাজীপুরে এল জেড ফ্যাশনস, কুনাবাড়িতে এল জেড টেক্সটাইল, মোহাম্মদপুরে মোহাম্মাদীয়া হাউজিং লিমিটেড এ সুলতানা’স ড্রীম অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ইন্দিরা রোডের ত্রয়ী নীড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ফেনীতে পিত্র ছায়া, গুলশানে রিজিয়া অ্যাপার্টমেন্ট, বনানীতে নয়না নীড়, মতিঝিলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন এর হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ডুপলেক্স, ট্রিপলেক্স অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। স্থাপনার কাজের বাইরে তিনি দেশে বিদেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সক্রীয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফেসবুক ভিত্তিক সেভ দ্য হেরিটেজ অব বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ঐতিহ্য বিষয়ক কমিটিতে জড়িত আছেন এই গুণী স্থপতি।
স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ বলেন, স্থাপত্য পেশায় আমি দেশীয় স্থাপত্য রীতি ও নির্মাণ কৌশল ব্যবহারে আগ্রহী। যেহেতু শিক্ষকতা পেশায় জড়িত সে ক্ষেত্রে দেশজ স্থাপত্য ও নির্মাণ পদ্ধতি শিক্ষাদানে সচেষ্ট আছি। আমি মনে করি স্থাপত্য চর্চায় দেশজ সংস্কৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু, নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ কৌশল স্থাপত্য চর্চাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। স্থাপত্যিক ঐতিহ্য নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। এ দেশের ঐতিহ্য স্থাপনা গুলো যে ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সে গুলোকে জনসম্মুখে তুলে আনার চেষ্টা করছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন সাজ্জাদুর রশীদ। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।

  • শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি