যা কিছু প্রথম সবই চ্যানেল আই এর সৃষ্টি!

মামুন কায়সার
যা কিছু প্রথম তার সাথেই চ্যানেল আই এর গভীর বন্ধুত্ব। আর তাই দেশের টেলিভিশন অঙ্গনে আজ যত রিয়েলিটি শো, বিশেষ অনুষ্ঠানের উপস্থিতি দেখা যায় তার সবটাই চ্যানেল আই এর সৃষ্টি।
সকাল থেকেই যদি জার্নিটা শুরু করি তাহলে সকালের গানের অনুষ্ঠানের কথা সবার আগে উঠে আসবে। ‘সকালের গান’ চ্যানেল আই এর ব্যাপক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। দেশের প্রধানমন্ত্রীরও এই অনুষ্ঠানটি প্রিয়। সকালের গানে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাত সঙ্গীত তারকা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। হঠাৎ সরাসরি এই অনুষ্ঠানটিতে ফোন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাথে ছিলেন তাঁর প্রিয় ছোট বোন শেখ রেহানা। এই একটি ঘটনায় প্রমাণ করে অনুষ্ঠানটি কতটা জনপ্রিয়।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন দেশের একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলেও ‘সকালের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। দেখে মনে হয় চ্যানেল আই এর সকালের গানেরই অনুকরণ।
দেশে এই যে এখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ধারাবাহিক নাটকের জয় জয়কার তার শুরুটা করেছিল চ্যানেল আই। বিশিষ্ট নাট্যকার অভিনেতা প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনা নির্মিত দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক ‘জোয়ার ভাটা’ই মূলতঃ দেশের টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রথম দীর্ঘ ধারাবাহিক। জোয়ার ভাটার সাফল্যই অন্যদেরকে দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক নির্মাণে সাহস ও উৎসাহ যুগিয়েছে।
মাটি ও মানুষ বিটিভির ব্যাপক আলোচিত অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের প্রাণ পুরুষ কৃষি উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ চ্যানেল আইয়ের জন্য হৃদয়ে মাটি ও মানুষ নামে নতুন একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু করেন। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এর সাফল্য এখন বিশ্বজুড়ে। চ্যানেল আই এর অনুপ্রেরণায় দেশের একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলেও কৃষি উন্নয়ন ভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে।
প্রকৃতি ও জীবন নিয়ে এই দেশেও জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব তা দেখিয়েছে চ্যানেল আই। মুকিত মজুমদার বাবুর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় চ্যানেল আইতে প্রচার হয় নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’। শুরুর দিকে অনকেই এই অনুষ্ঠানের দুঃসাহসী চিত্র বিশেষ করে সাহসী কনটেন্ট দেখে অবাক হয়েছেন। পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে বাংলাদেশেও কি এত কষ্টসাধ্য অনুষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব? হ্যা সম্ভব। মুকিত মজুমদার বাবু ও তার টীম এই কষ্ট সাধ্য বিষয়কে অনেক সহজ করে তুলেছেন। প্রকৃতি ও জীবন চ্যানেল আই এর অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। তবে এখন পর্যন্ত দেশের অন্য কোনো টিভি চ্যানল এত কষ্টসাধ্য টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের সাহস দেখায়নি।
তৃতীয় মাত্রা বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতের একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। টকশো অনুষ্ঠানের ক্যাটাগরিতে চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রার প্রভাব অনেক। ফরিদুর রেজা সাগরের অনুপ্রেরণায় জিল্লুর রহমান চ্যানেল আইতে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন। ২০ বছরে পা দিয়েছে তৃতীয় মাত্রা। আনন্দের খবর হলো, চ্যানেল আই এর তৃতীয় মাত্রার অণুকরণে দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলে ভিন্ন ভিন্ন ফরমেটে টক শো প্রচার হয়। কিন্তু তৃতীয় মাত্রাকে কেউই ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।
টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠানও জনপ্রিয় করা যায় সেটা প্রমাণ করেছে চ্যানেল আই। বিশিষ্ট রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসীর পরিচালনা ও উপস্থাপনায় দেশে প্রথম চ্যানেল আইতেই রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় দেশের প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেল এখন ভিন্ন ভিন্ন ফরমেটে রান্নার অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে।
দেশীয় সংস্কৃতিকে উর্ধ্বে তুলে ধরার ক্ষেত্রে চ্যানেল আই এর আন্তরিক ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের স্রষ্টা চ্যানেল আই। সুরের ধারার সহযোগিতায় আগারগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চ্যানেল আই এর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ধারনা বাংলাদেশে প্রথম। দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠানটি ব্যাপক সমাদৃত।
বাংলাদেশ ১২ মাসে তের পার্বনের দেশ। চ্যানেল আইতেই এই বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে বরীন্দ্র মেলা, একই সাথে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে নজরুল মেলার নিয়মিত আয়োজন করে চ্যানেল আই। দেশের অন্য কোনো টিভি চ্যানেলে এই ধরনের নান্দনিক উদ্যোগ নাই।
ব্যান্ড সঙ্গীতের উৎকর্ষতায় চ্যানেল আই প্রতিবছর পহেলা ডিসেম্বর পালন করে ব্যান্ড উৎসব। এর পিছনে একটি গল্প আছে। চ্যানেল আই এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘তারকা কথনের’ একটি পর্বে অতিথি হিসেবে কথা বলছিলেন প্রয়াত ব্যান্ড সঙ্গীত তারকা আইয়ুব বাচ্চু। কথা প্রসঙ্গে তিনি বছরে একবার দেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের একটি উৎসব আয়োজনের প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন। সেদিন চ্যানেল আইতে নিজের অফিস কক্ষে অনুষ্ঠানটি দেখছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে ঘোষণা দেন আইয়ুব বাচ্চুর প্রত্যাশা পুরণ করা হবে। এখন থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর চ্যানেল আইতে ব্যান্ড সঙগঈত দিবস পালিত হবে। সেই থেকে প্রতি বছর চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
দেশে এখন ৩০টিরও বেশী টেলিভিশন চ্যানেল। অনেক তারকার প্রয়োজন। প্রশংসা করতেই হয় চ্যানেল আইয়ের। চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একাধিক রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকার জন্ম দিয়েছে। দেশের সঙ্গীত, অভিনয়ের ক্ষেত্রে এই তারকারাই এখন কার্যকর ভূমিকা রাখছেন। চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ, ক্ষুদে গান রাজ, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার, বাংলার গান, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম তারকা, ভীট চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে সহ চ্যানেল আইয়ের একাধিক রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা প্রায় ৪ শতাধিক তারকাই এখন দেশের শোবিজের অন্যতম ভরসা।
চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস চ্যানেল আই এর একটি অন্যতম জনপ্রিয় উদ্যোগ। শুদ্ধ সঙ্গীতের বিকাশে দেশের একমাত্র এই সঙ্গীত আয়োজনটি দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের মানুষের অনেক আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। কখনও দেশে, কখনও বিদেশে মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এর গ্রান্ডফিনালের আয়োজন করেছে চ্যানেল আই। দেশে যমুনার পাড়ে, ঢাকার লালবাগ কেল্লায়, কখনও বিদেশে এই আয়োজনটির জাকজমক গ্র্যান্ডফিনালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আগামী আসরের ক্ষেত্রে একটি চমক আছে।
ইস্পাহানী চা-এর সৌজন্যে চ্যানেল আইতে বাংলাবিদ নামে একটি রিয়েলিটি শো বেশ জনপ্রিয়। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা ও বাংলা বানানের সঠিক প্রয়োগ রক্ষার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের উদ্যোগী হয়েছে চ্যানেল আই। যা দেশের টেলিভিশনের ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন।
শিক্ষার্থীদের কথা যখন উঠলো তখন উচ্চ শিক্ষার কথা বলতেই হচ্ছে। এফ এল পি নামে চ্যানেল আই এর একটি শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান বেশ আলোচিত। এই অনুষ্ঠানের আওতায় বিদেশে দেশের একাধিক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশুনা করছেন।

চ্যানেল আই এক অর্থ দেশের সংস্কৃতি কর্মীদের মিলন কেন্দ্র। চ্যানেল আই-ই দেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল যার মাধ্যমে প্রতিদিন দেশের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের গুণী ব্যক্তিদের জন্মদিন, বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অতি সম্প্রতি সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা মনোয়ার, নায়ক আলমগীর ও সোহেল রানার অভিনয় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চ্যানেল আই পর পর ৩টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান তিনটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
একটি টেলিভিশন চ্যানেল তো শুধুমাত্র গৎ বাধা অনুষ্ঠান প্রচারের বাক্স নয়। এর সামাজিক দায়-দায়িত্বও আছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণও এর অংশ। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম থেকেই চ্যানেল আই এর অগ্রযাত্রা শুরু। ইমপ্রেস থেকে এ যাবৎ ২ শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। দেশের নবীণ প্রবীণ প্রায় সব পরিচালকই ইমপ্রেসের সিনেমা নির্মাণ করেছেন।
আনন্দের খবর। ঈদের দিনের নাটক মানেই ছিল হুমায়ূন আহমেদের নাটক। হুমায়ূন আহমেদের জীবদ্দশায় ঈদের দিনের বিশেষ নাটক ছিল তারই।
চ্যানেল আই এর যাত্রা শুরুর দিনে দশকের সামনে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিলেন সঙ্গীত তারকা মেহরীন। চ্যানেল আই এর প্রথম নাটক লিখেছিলেন আবুল হায়াত। নন্দিত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রথম চলচ্চিত্র ইমপ্রেস অর্থাৎ চ্যানেল আই এরই প্রযোজনা।

  • শীর্ষ কাহিনি