ভালোবাসার ভালো উপহার!

ভালোবাসা দিবস মানেই কি শুধু ফুল, ফুল আর ফুল। নানা দেশের, নানা রঙের ও নানা আকারের ফুল। ভালোবাসা দিবস মানেই না বলা মনের গোপন কথাটি যেন বলে ফেলার দিন, তেমনি পুরনো সাথীকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার দিন। এক কথায় একে অপরের ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যাওয়ার দিন ভ্যালেন্টাইনস ডে। তবে ভালোবাসার মানুষটির মুখের হাসিই যে এই দিনের সেরা প্রাপ্তি। আর তাকে খুশি করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এ দিনে তাকে আপনার সঙ্গ দেয়া। তবে এ দিনে বিশেষ কিছু উপহার আপনাদের ভালোবাসায় আনবে আলাদা আকর্ষণ। ভ্যালেনটাইনস ডে তে উপহার দেয়া-নেয়া শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান এবং যে কোনো প্রিয় বন্ধুকে এইদিন উপহার দিতে পারেন। ছোট্ট একটি উপহার আপনাদের সর্ম্পককে আরও বেশি মধুর করে তুলবে। তবে একটা ব্যাপার প্রথমেই মনে রাখা দরকার। উপহারের গুরুত্ব কখনো টাকার পরিমাপে করা উচিত নয়। কারণ ছোট, বড়, দামি, সস্তা সব উপহারের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে আপনার ভালোবাসার মানুষটির ভালোবাসা ও আন্তরিকতার ছোঁয়া।
একগুচ্ছ লাল গোলাপ : ভালোবাসা আর যা কিছুই দেন না কেন উপহারের তালিকায় লাল গোলাপ কিন্তু থাকতেই হবে। নইলে হাজারটা উপহারের পরও মনে হবে, কী যেন একটা নেই, খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই দেয়া হয়নি। তাই দিবসের শুরুতেই প্রিয়জনের হাতে তুলে দিতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ। সম্ভব হলে রাতেই দিয়েন। তাতে ভালোবাসার পরিমাণটা কিন্তু বেশিই বোঝাবে!
চিঠি: ভালোবাসা দিবসে উপহার হিসেবে তাকে লিখতে পারেন সুন্দর একটি চিঠি। আজকাল সাধারণত কেউ চিঠি লেখে না। সবাই ই-মেইল/এসএমএস/ফেসবুকে ভালোবাসার মানুষকে উইশ করে ফেলে। সুতরাং চিঠি লিখতে পারেন। ছোট্ট একটি কাগজে মনের কথাগুলো লিখে নীল খামে পুরে পাঠিয়ে দিন মনের মানুষটির কাছে। চিঠিটা নিজের হাতে না দিয়ে ডাকযোগে বা অন্যের মাধ্যমে পাঠালে ঘটনাটি আরও বেশি জমবে।
কার্ড : সুন্দর দেখে একটা ভ্যালেন্টাইন ডের কার্ড কিনে নিতে পারেন। ভেতরে লিখে দিন রোমান্টিক কোনো কবিতার দুই লাইন। কার্ডটা কিন্তু নিজেই দিতে হবে, মুখে তার হাসি ফুটতে বাধ্য। আর হ্যাঁ, ভেতরে ‘ভালোবাসি’ কথাটা লিখতে কিন্তু ভুল করবেন না যেন।
বই: ভালোবাসার মানুষটির প্রিয় লেখকের নামটা জানেন তো? তার লেখা একটি বই হতে পারে এই বিশেষ দিনটির বিশেষ উপহার। তবে এ ক্ষেত্রে তার পছন্দকেই গুরুত্ব দিন, নিজের পছন্দকে নয়। চলছে একুশে বইমেলা। ভালোবাসার দিনে প্রিয় মানুষকে নিয়ে প্রাণের মেলা বইমেলায় ঘুরতে যেতে পারেন। সেখানে গিয়েই কিনে দিন প্রিয় মানুষটির প্রিয় লেখকের কোনো বই। দেখবেন সময়টা অন্যরকম হয়ে যাবে।
চকলেট : পৃথিবীতে এমন মেয়ে কমই পাওয়া যায়, যারা চকলেট পছন্দ করে না। হৃদয়ঘটিত বিষয়টির দিনে তাকে দিতে পারেন হৃদয়াকৃতির একটি চকলেট বক্স। খুশি না হয়ে যাবে কোথায়!
পুতুল : বয়সে মেয়েরা যতই বড় হোক, মনের গহিনে সব সময় সেই বাচ্চা মেয়েটি থেকেই যায়। তাই তো পুতুল তাদের সব সময়ের প্রিয় বস্তু। ভালোবাসা দিবসে তাকে খুুশি করতে দিতে পারেন কিউট একটা টেডি বিয়ার। তবে বড়সড় একটা পুতুল দিলেও কিন্তু মন্দ হয় না।
ফটো অ্যালবাম : প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো মিষ্টি স্মৃতির কিছু ছবি দিয়ে একটা অ্যালবাম তৈরি করুন। অ্যালবামের ভেতর লিখে দিন, ‘ভালোবাসি, আগের চেয়েও অনেক বেশি।’ এটাই হতে পারে তার জীবনের পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
গহনা : সাজতে কে না পছন্দ করে! তাই তো ভালোবাসা দিবসে উপহার হতে পারে প্রয়োজনীয় কোনো সাজগোজের উপকরণ। সেটা সব সময় খুব দামি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, ভালোবাসার উপহারে মূল্য কোনো বিষয় নয়। যেমন: মেয়েদের জন্য এক পাতা টিপ বা সুন্দর একটি পায়েল এবং ছেলেদের জন্য ব্রেসলেট বা সানগ্লাস হতে পারে ভালোবাসা দিবসে মনের মতো উপহার।
লকেট : আজকাল বাজারে হার্ট শেপের অনেক সুন্দর সুন্দর লকেট পাওয়া যায়। এদের মাঝে ছোট ছোট ছবি লাগানোর ব্যবস্থা থাকে। এমন একজোড়া লকেটের মাঝে একপাশে তার ও একপাশে নিজের ছবি লাগিয়ে একটা গিফট দিন ভালোবাসার মানুষটিকে। আইডিয়াটা পুরোনো, কিন্তু এখনো কার্যকরী। ভালোবাসার উপহার বলে কথা!
প্রিন্টেড গিফট : আজকাল অনেক দোকানেই টি-শার্ট, কফি মগ বা শো-পিসে পছন্দের ছবি ছাপানো যায়। আজই ছাপিয়ে নিন নিজেদের সুন্দর একটা কাপল বা সিঙ্গেল ছবি আর গিফট করো ভালোবাসা দিবসে। অন্যদিকে কাঠের প্রেমে প্রিয় মানুষটির খোদাই করা ছবি হতে পারে তার জন্য অসাধারণ একটি উপহার। সঙ্গে যোগ করতে পারেন ভালোবাসা জানিয়ে ছোট্ট একটি বার্তাও। এ ছাড়া নাম ও বিভিন্ন বার্তা খোদাই করা কাঠের ফটোপ্রেম, চাবির রিং ইত্যাদি দিতে পারেন উপহার হিসেবে।
ডায়েরি : ডায়েরি খুব সাধারণ একটা উপহার। কিন্তু সেই ডায়েরির প্রতিটি পৃষ্ঠায় যদি লেখা থাকে তোমার ভালোবাসার গল্প বা বিশেষ মানুষটির জন্য তোমার ভালোবাসার মিষ্টি বার্তা, তবে তার চেয়ে চমৎকার উপহার আর হতে পারে না! একটি ডায়েরিতে ভালোবাসার গল্পটি সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে অথবা প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রিয় মানুষের প্রতি তোমার ভালোবাসার ছোট ছোট বার্তা লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন। ডায়েরিটাকে সুন্দর করে প্যাকেট করে উপরে একটা লাল গোলাপ লাগিয়ে সেটাকে করে তুলতে পারে আরও আকর্ষণীয়।
পোশাক ও পারফিউম : ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ উপলক্ষে বুটিক হাউসগুলোতে থাকে পোশাকের নতুন নতুন কালেকশন। কাজেই উপহার হিসেবে পছন্দের কোনো পোশাকও কিনতে পারেন। অন্যদিকে পছন্দের পারফিউম অথবা বডি স্প্রে দিয়েও চমকে দিতে পারেন ভালোবাসার মানুষটিকে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার পছন্দের কোনো ব্র্যান্ড থাকলে আগেভাগেই জেনে নিয়েন।
মোবাইল: মোবাইলও হতে পারে ভালোবাসা দিবসের উপযুক্ত উপহার। প্রিয়জনের পছন্দমতো একটা ফোন কিনে দিন। তার সঙ্গে সুন্দর দেখে মোবাইল কভার দিতেও ভুলেবেন না কিন্তু।

নিজের হাতে তৈরি উপহার

একটু সময় নিয়ে নিজের হাতেই বানিয়ে ফেলেতে পারেন গিফট কার্ড, ফটোফ্রেম, ব্রেসলেট, পুঁতির মালা কিংবা অন্য কোনো সুন্দর উপহার। নিজের শ্রম এবং সৃজনশীলতার সমন্বয়ে তৈরি এই উপহারটি ভালোবাসার মানুষের ভালো লাগা গ্যারান্টেড। বহু বছর আগে নাকি গুপ্তধনের নকশা আঁকা কাগজ ভরে বোতলের ছিপি আটকে সাগরে ফেলা হতো। সেই প্রাচীন পদ্ধতিতেই ভালোবাসার কথা জানাতে পারেন প্রিয় মানুষটিকে। সুন্দর করে একটা চিঠি লিখে সেটাকে ফিতা দিয়ে বেঁধে একটা সুন্দর কাচের বোতলে ভরে দিতে পারেন। আরেকটু আকর্ষণীয় করতে চিঠির সঙ্গে বোতলের ভেতর দিতে পারো কিছু ফুলের পাপড়ি।
পরিবারের জন্য : পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক সারা জীবন অটুট থাকে। সেখানে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সমন্বয়ে এমন একটি গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, যা অতুলনীয়। তাই ভালোবাসা দিবসে উপহার দিতে পারেন তাদেরকেও। ছোট ভাইকে কিনে দিতে পারেন কোনো ভিডিও গেম, ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল সহ এরকম কোনো কিছু। পোশাকও দিতে পারেন। আর বোনের জন্য কানের দুল, পায়েল, নুপূর, ব্রেসলেট, সানগ্লাস, পুতুল বা মেকআপ কিট দিতে পারেন। বাবার জন্য হাতঘড়ি, চশমা, পাঞ্জাবি, কলম ইত্যাদি দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন উপহার যেন তার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস হয়। মায়ের জন্য শাড়ি, চুড়ি, ঘড়ি, শোপিস, ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড ইত্যাদি উপহার দিতে পারেন। তার ক্ষেত্রেও নিত্যব্যবহার্য জিনিস দিলে ভালো হয়।
বন্ধুদের জন্য : বন্ধুদের জন্য ভালোবাসা তো সবারই থাকে। তাই ভালোবাসা দিবসে সেরা বন্ধুটিকে উপহার না দিলে কি চলে! তাহলে প্রিয় বন্ধু হাতে একটি বই তুলে দিন। তা হতে পারে কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাস। আবার আবৃত্তির সিডি, বাঁশি বা কলম। বন্ধু বলে কথা, যা দেবে তাতেই চলবে!
স্বামী-স্ত্রীর জন্য : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটি অনেক মধুর এবং স্পর্শকাতর। পারস্পরিক বোঝাপড়ার কারণে জানা হয়ে যায় পরস্পরের ভালো লাগা-মন্দ লাগা। যে কোনো উপহারই একটি সম্পর্ককে আরও গভীর করতে পারে। তাই ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে কাছের মানুষটির জন্য তার ভালো লাগা বিবেচনা করেই উপহার নির্ধারণ করুন। উপহার হিসেবে স্ত্রী স্বামীকে লেদারের ওয়ালেট, ব্রিফকেস, ল্যাপটপ কাভার, ট্রাভেল ব্যাগ, ব্যাগ-প্যাক, অফিস ব্যাগ, বেল্ট, টাই, ঘড়ি প্রভৃতি দিতে পারেন। এ ছাড়া শার্ট, পাঞ্জাবি বা ব্লেজার সেট গিফট করতে পারেন। অন্যদিকে স্বামী স্ত্রীকে দিতে পারেন- ব্যাগ, পার্টি ব্যাগ, নূপুর, কানের দুল, চকলেট, চুড়ি, মেকআপ বক্স, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পারফিউম সহ তার পছন্দ মতো কোনো উপহার। শুধু একজন আরেকজনের রুচিকে প্রাধান্য দিন।
পাবেন কোথায়?
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন সুপার শপ। এই শপগুলোতে পাওয়া যাবে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী। আলমাস সুপার শপ, আর্চিস গ্যালারি, মাদুলী শপ, হল-মার্কস, আড়ংসহ আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের প্রায় সব কটি গিফট শপেই পাওয়া যাবে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ উপহারগুলো। প্রিয়জনের জন্য পছন্দের উপহার কেনার আগে জেনে নিন কোথায় কী মূল্যে পাওয়া যাবে এসব উপহারসামগ্রী। তবে এসব মূল্যের কিছুটা তারতম্যও হতে পারে। আলমাস সুপার শপে পাবেন স্টোনের চুড়ি, মূল্য ৮০০-১৮০০ টাকা, ব্রেসলেট ১০০-৭৭৫ টাকা, পায়েল ২০০-৩৫০ টাকা, দুল ১৫০-৫৬০ টাকা, বডি স্প্রে ২২০-৩০০ টাকা। মাদুলী শপে হাড়ের নেকলেস ৩৫০-৭৫০ টাকা, দুল ১০০-৪৫০ টাকা, নেকলেস (পিতল) ২৫০-৭০০ টাকা, বালা (পিতল) ১৭০-২০০ টাকা, ব্রেসলেট ২৫০-৫০০ টাকা, কাঠের চুড়ি ৬০-২০০ টাকা। আর্চিস গ্যালারিতে গিফট কার্ডে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। মূল্যেও রয়েছে ওঠা-নামা। সেগুলোর মূল্য ৯০-২৫০০ টাকা, কানের দুল ১০০-১৫০০ টাকা, ব্রেসলেট ৪৯০-৩৫০০ টাকা, গলার লকেট ২০০-৬০০ টাকা, লাভ কোটেশন ৬৫-১২০ টাকা, লেডিস ওয়ালেট ২৯০-৭৫০ টাকা, মগ ১৫০-১১৫০ টাকা, ডল ৪৯০-৪৫০০ টাকা, জেন্স ওয়ালেট ৪৫০-৭৫০ টাকা, বডি স্প্রে ২৫০-৩৫০ টাকা, ক্যান্ডল লাইট ৩২০-৪৫০ টাকা, টেডি বিয়ার ২৪০০-৪৫০০ টাকা, পায়েল ২৫০-১২০০ টাকা, লাভ ডল ১৩০-২৮০ টাকা, পারফিউম ৫৫০-৫০০০ টাকা, শোপিস ডল ২৫০-২৫০০ টাকা, সানগ্লাস ২৫০-৪৮০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আড়ংয়ে পাবেন বিভিন্ন দেশীয় নানা উপহারসামগ্রী। যেমন মগ ১৩৭ টাকা, ক্যান্ডেল ৮-৩১৫ টাকা, ফটোফ্রেম ১৫২-৩০০ টাকা। এ ছাড়া ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের সংগ্রহ দেখা যায় আড়ংয়ে। আরো যেতে পারেন- রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ সহ দেশীয় সব ফ্যাশন হাউজে। যেখানে পাবেন নানান ধরনের উপহার সামগ্রী।

  • প্রতিবেদন