লাকীর সোনাই মাধবে মুগ্ধ দর্শক!

ঢাকার মঞ্চে প্রবীণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তেমন একটা দেখাই মেলে না। এক সময় মঞ্চ কাঁপিয়েছেন গুণী অভিনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, মমতাজ উদদীন সহ অনেকে। তারা বেঁচে নেই। জীবিত যারা আছে তাদের মধ্যে গুণী নাট্যজন, আলী যাকের, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ইনামুল হক, কেরামত মওলা সহ আরও অনেকে মঞ্চে আছেন ঠিকই কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে ততটা সরব নন। এক্ষেত্রে গুণী নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী বোধকরি একটু ব্যতিক্রম। শিল্পকলা একাডেমীর মতো দেশের একটি গুরুত্বপুর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যস্ততার কারণে তার তো অভিনয় থেকে দূরে থাকার কথা। কিন্তু প্রবীণদের মধ্যে তিনিই এখন ঢাকার মঞ্চে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লোক নাট্যদলের কর্ণধার তিনি। ঢাকার মঞ্চের বহুল আলোচিত নাটক কঞ্জুস, সোনাই মাধব, তারা তিনজন সহ ৪টি মঞ্চ নাটক নিয়ে মঞ্চ পাড়ায় সরব ভ‚মিকা রেছে চলেছে লোক নাট্যদল। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে এই বয়সেও সমান তালে মঞ্চে অভিনয় করে চলেছেন গুণী নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী।
অতি সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হল লোক নাট্যদলের বহুল আলোচিত নাটক ‘সোনাই মাধব’। ময়মনসিংহ গীতিকার পদাবলী যাত্রা অবলম্বনে নাটকটির পরিকল্পনা, সঙ্গীত পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকটির একটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছেন। সোনাই মাধব মূলত মিউজিক্যাল ড্রামা। গান ও নৃত্যের মাধ্যমে এই নাটকের কাহিনী মঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। সেদিন শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির বিশেষ প্রদর্শনী দেখে দর্শক দারুণ আনন্দিত হয়েছেন। বিশেষ করে গুণী অভিনেতা লিয়াকত আলী লাকীর সুনিপুণ অভিনয় দর্শককে দারুণ মুগ্ধ করেছে।
মালিবাগ থেকে নাটকটি দেখতে এসেছিলেন শহীদ রায়হান। পরিবারের ৪ জন সদস্য ছিল তার সাথে। প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, অনেকেই বলেন, ঢাকার মঞ্চে ভালো নাটক হয় না। তারা ভুল বলেন। লোকনাট্য দলের কঞ্জুস নাটকটি বহুবার দেখেছি। আজ দেখলাম সোনাই মাধব। খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে লিয়াকত আলী লাকীর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছি। শিল্পকলা একাডেমির মতো গুরুত্বপুর্ণ প্রৃতিষ্ঠানে গুরু দায়িত্বে থাকার পরও যে তিনি মঞ্চে সময় দিচ্ছেন এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। লোকনাট্য দলের সোনাই মাধব সত্যিকার অর্থেই ঢাকার মঞ্চে একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রযোজনা হয়ে উঠেছে। যারা মঞ্চ নাটক নিয়ে নানান ধরনের সংশয় প্রকাশ করেন তাদের উচিৎ নাটকটি দেখা। নৃত্য গীতের মাধ্যমে একটি জীবন কাহিনীকে কিভাবে নাটকে জীবন্ত করে তোলা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে সোনাই মাধব।
সকলেই জানেন, পদাবলী কীর্তন আমাদের দেশের একটি প্রাচীণ নাট্যকর্ম। সঙ্গীতের মাধ্যমে অভিনেতা-অভিনেত্রীবৃন্দ পালার কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সোনাই মাধব পদাবলী কীর্তন ও যাত্রার সমন্বয়ে তৈরি। কিন্তু প্রবেশ, প্রস্থান পথ ইম্প্রোভাইজ করা হয়েছে। পদাবলী কীর্তনের মতো সঙ্গীতের মাধ্যমে কাহিনী বর্নিত হয়। যুক্ত করা হয়েছে নৃত্য। নাটকটির অভিনয়, নৃত্যগীত ও অন্যান্য আয়োজন সত্যি প্রশংসার দাবীদার। এজন্য লোকনাট্য দলকে অভিনন্দন। বাংলা মঞ্চ নাটকের জয় হোক।

  • প্রতিবেদন