যা ইচ্ছা তাই’ নামে গুণী নাট্য শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদারের নতুন একটি বই প্রকাশ হয়েছে। বইটির প্রকাশনা উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ফেরদৌসী মজুমদারের এই লেখাটি ওই বইটি থেকে নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বইটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস।
আমার অভিনয়ের শুরুটা যেমন আকস্মিক, কিছু সাফল্য লাভ যদি সত্যিই করে থাকি সেটা অপ্রত্যাশিত এবং তার গল্পটা আরও চমকপ্রদ। আজকে যে জায়গায় এসে আমি পৌঁছেছি সেখানে পৌঁছবার পথটা কিন্তু মসৃণ ছিল না। হাজারো প্রতিক‚ল ও বৈরী পরিবেশের মধ্যদিয়ে আমাকে লম্বা পথ চলতে হয়েছে। অনেকটা হার্ডল রেইসের মতো। একেকটা বাঁধা পার হয়েছি আর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। আমার কিন্তু কোনো লক্ষ্য ছিল নাÑ কোনো উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল না যে, আমি বিরাট অভিনেতা হবোÑ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করব, প্রচ্ছদে আমার ছবি থাকবে, মানুষের হৃদয়ে একটা জায়গা করে নেব। একেবারে নির্জলা ভালোবাসা ছিল অভিনয়ের প্রতিÑ দিনে দিনে সে ভালোবাসাটাই উন্মাদনায় পরিণত হয়েছে।
আমি কী করে জাঁদরেল বাঘের মতো অমন বাবার সুরক্ষিত খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসেছি, ভাবলে আমার কাছে এখনও অসম্ভব মনে হয়। কতখানি মনের জোর ছিল, সাহস ছিল যে, আমি এমন রক্ষণশীল পরিবারের ব্যুহ ভেদ করে, নাট্যাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অবশ্য এতোদূর আসা সম্ভবই হতো নাÑ যদি না নানানজন নানাসময়ে আমার এ যুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিতেন।
আমি অভিনয়টা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছি। বাড়ির পরিবেশটাও অমন নয় যে চতুর্দিকে নাটক থিয়েটারের বাতাস বইছে। অভিনয় বলতে আমার মেজো বোন কণা আপাই (এখন নেই) একটু-আধটু অভিনয় করতেন মঞ্চে। আর মুনীর ভাই? নাটক লিখতেন, নাটক পড়তেন, নিজে নাটক লিখে আমাদের পড়ে শোনাতেনÑ তখনই দেখতাম তিনি কী উত্তেজিত, কী আমোদিত এবং আমার মনে হয় মুনীর ভাইয়ের সেই নাট্যপ্রীতিটা, সেই উচ্ছ¡াসটা আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। আর এ কথা অস্বীকার করলে চলবে নাÑ যত বড় হয়েছিÑ ততই বাড়ির এবং পরিবারের সদস্যদের চাল-চলন, কথাবার্তা, কথা বলার ঢং. ভিন্ন ভিন্ন লোকের ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে কাপড় পরা ইত্যাদি সবই অত্যন্ত সচারু রুপে আমি অভিনয় করে দেখাতামÑ এবং সে ব্যাপারে আমার ভাইবোনদের ঢোলের বাড়িও পেয়েছি। বাবাকে পর্যন্ত আমি ছেড়ে দিইনি। বাড়ির হর্তাকর্তা বিধাতাকে নকল করার বুকের পাটা দেখে, আমার বাবা সেদিন বিস্মিত হয়েছিলেন এবং চিন্তিতও হয়েছিলেনÑ সে কারণেই বোধ হয় সেদিন আমার কান মলে দিয়ে কপট উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। আমি বেশ মনে করতে পারিÑ আমি আমার অন্যান্য ভাই-বোনদের, বাবা কীভাবে পড়ান, বাবার কাছে পড়ার সময় আমরা কাঁদতে কাঁদতে মুখ বিকৃত করে, বাবার প্রশ্নের উত্তর দিতামÑ আর সেগুলো আব্বা ভেংচি কেটে ক্যারিক্যাচার করে আমাদের দেখাতেনÑ পুরো পদ্ধতিটা আমি করে দেখাতামÑ যেটা ভাইবোন ও অন্যান্য দর্শক-শ্রোতারা উপভোগ করতোÑ সন্দেহ নেই। এমনি এক দুপুরের ঘটনাÑ বাবার হাতে গ্রেপ্তার হলামÑ কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে বাবা যে আমার কান মলে দিয়েছিলেন, আমার দিকে চোখ রাঙিয়েছিলেন, সবটা রাগই যেন কপট ছিল এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পুরো ব্যাপারটা তিনিও যেন বেশ উপভোগ করেছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল, ‘তোর এতো বড় সাহস, তুই আমারে নি নকল করছো? অসৎ! খাড়া আইজ তোরে শ্যাস করি ফালামু।’ বুঝতেই পারছেন শেষ আমি হইনি। এখনও বহাল তবিয়তেই আছি। কেবল বাবাকেই নয়Ñ আমার ভাই, বোন, ভাবি, অতিথি অভ্যাগত সক্কলের স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতাম আমার অভিনয়ের মাধ্যমে। তখন কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি অভিনয়ের সঙ্গে আমি এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবো। অভিনয়কে পাগলের মতো ভালোবাসবো।
অভিনয়ে তখন মহিলা শিল্পী বড় দুষ্প্রাপ্য ছিলেন। সেই হিসেবে আমার চাহিদা বাড়তেই থাকলো নাট্যকার নির্দেশকদের কাছে। এরপর তৈরি হলো আমাদের ক’জনাকে নিয়েÑ নাট্যকার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, রামেন্দু মজুমদার, তবিবুল ইসলাম বাবু এবং আরও অনেককে নিয়ে ‘থিয়েটার’ নাট্যগোষ্ঠী। এখানে নারীশিল্পীর সংখ্যালঘুতা, আমার জন্য যেন শাপে বর হলো। থিয়েটারের প্রাণপুরুষ, নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা আবদুল্লাহ আল-মামুন উপায়ান্তর না দেখে এক নারী চরিত্রের নাটক লিখতে শুরু করলেনÑ সুবচন নির্বাসনে, এখন দুঃসময়। পরবর্তীতে থিয়েটার গ্রæপে নারী সমাগম হলো, তাঁর নাটকে নারী চরিত্রও বাড়লো। সেই সময় অভিনয়টাকে একটা খারাপ কাজ বলে মনে করা হতো। আমার বাবাও মনে-প্রাণে নাটক থিয়েটার করাকে শরিয়তবিরোধী কাজ মনে করতেন। সেই কারণেই আমাকে থিয়েটারে যেতে দিতে তাঁর এতো আপত্তি ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, তখন যে ক’জন মেয়ে থিয়েটারে যাও-বা আসতো, বেশিদিন টিকতে পারতো না। বিয়ের আগে বাপের বাড়ি থেকে বাধা-বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি থেকে হাজারো বিধি-নিষেধ দু’হাতে ঠেলে, অভিনয় চালিয়ে যাওয়া মেয়েদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক এবং হাস্যকর ছিল, মঞ্চে অভিনয় দেখে একটি মেয়েকে হয়তো কোনো পুরুষ পছন্দ করতো ঠিকই এবং আমরা খুশি হয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করতামÑ কিন্তু আশ্চর্য! বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই দেখা গেল স্বামীপ্রবরটি স্ত্রীর অভিনয় চিরতরে বন্ধ করে দিলেন। কী দুর্ভাগ্য ছিল তখন মেয়েদের! আমি নিজে একটা মেয়ের বিয়ের কথা জানিÑ আমরা সেই হবু বরকে শপথ করিয়ে নিয়েছিলাম যে, সে বিয়ের পর মেয়েটির অভিনয় বন্ধ করে দেবে না। বর বাবাজি সে শর্তে রাজি হয়েছিলেন এবং আজও সেই শর্ত অনুযায়ী তারা সুখে শান্তিতে কালাতিপাত করছেন। আসলে নারী-পুরুষ যা-ই বলুন না কেন, সেই অভিনয় ইচ্ছেকে, সেই ব্যক্তিটিকে আগে অভিনয়টাকে ভালোবাসতে হবে এবং তারপর সাহস করে সমস্ত বাধা-বিপত্তি আগ্রহ্য করে অভিনয়ে নামতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে, অভিনয় খারাপ কিছু নয়। নারী সমস্যা এখন অবশ্য ততটা প্রকট নেইÑ এটা একটা সুখের ব্যাপার। এখন অন্য সমস্যা দেখা দিয়েছেÑ নিয়মিত মহড়া, যানজট ইত্যাদি। কিছু না কিছু সমস্যা তো থাকবেই। সমস্যা ছাড়া কি জীবন হয়েছেÑ না হয়? না হবে?
আমি দেখেছি, পাÐুলিপি জোরদার না হলে, যত বড় অভিনেতাই হোক তার পক্ষে মনে রাখার মতন কিছু করে ওঠা হয় না। এদিক থেকে আমার সময়কার নাট্যকার আবদুল্লাহ আল-মামুন আর সৈয়দ শামসুল হকের নাম করতেই হয়। এখন দুঃসময়, কোকিলারা, মেরাজ ফকিরের মা, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, ম্যাকবেথÑ এসব স্ক্রিপ্ট-এর ঘটনা, সংলাপ, ভাষাÑ মনকাড়া না হলে, বাস্তব বিবর্জিত হলে এবং চিত্তাকর্ষক না হলে, শিল্পী অভিনয় করে কতখানি দর্শকের মন জয় করতে পারতো, আমার সন্দেহ। তাই বলছি অপ্রাপ্তির চেয়ে আমার প্রাপ্তিই বেশি।
অনেক পরে যখন অভিনেতার মর্যাদা পেলাম, তখন বুঝলাম যে, এটাই হচ্ছে বইয়ের ভাষায় পর্যবেক্ষণ (অবজারভেশন)। মঞ্চে ওঠে কতভাবে কত জায়গায়, কত চরিত্রে এ পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়েছি! কারণ মঞ্চটাই-তো অভিনয়ের বিদ্যাপীঠÑ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেখানে আমার নিজ চোখে দেখা, বস্তির মেয়েদের হাঁটা-চলাফেরা, অবলীলায় তাদের গালিগালাজ দেওয়া, উচ্চস্বরে কথা বলা, সবই আমি আমার চরিত্রে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি এবং দর্শক-শ্রোতাকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করেছি। আসলে জীবনঘেঁষা নাটকে অভিনয় করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। যেমন- আবদুল্লাহ আল-মামুনের এখনও ক্রীতদাস, কোকিলারা, মেরাজ ফকিরের মা, সৈয়দ শামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় অত্যন্ত বাস্তবধর্মী। তবে তার মানে এই নয় যে, উচ্চবিত্তের কাহিনি আমার ভালো লাগে না। সেগুলো করতে আরেক রাজকীয় অনুভ‚তি হয়েছে আমার। যেমনÑ ম্যাকবেথ, দুই বোনÑ কষ্ট করে যা আমি নই, সেই অভিনয়টা করে আমার অপার আত্মতৃপ্তি হয়েছেÑ এবং দর্শক-শ্রোতাও আমার অভিনয়ের আনন্দিত হয়ে আমার শ্রমকে সার্থক করেছেন।
টেলিভিশনকে বাদ দিলে আমার অভিনয় জীবনের গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ১৯৬৪ সনে ঢাকা টেলিভিশনের জন্ম। সেই জন্মলগ্ন থেকেই আমি আজকের বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত। একটা ছোট্ট ইউনিভার্সিটি ফোরাম দিয়ে ছোট পর্দায় আমার কাজ শুরু। বিটিভি-র প্রথম নাটকে আমি অভিনয় করেছি। মুনীর চৌধুরীর লেখা ‘একতালা-দোতালা’য় আমি ছাড়া আরও ছিলেন লিলি চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, ডলি ইব্রাহীম, খোন্দকার রফিকুল হক, রবিউল-এঁরা। যে মহড়া এখন একেবারেই ওঠে গেছেÑ একতলা-দোতলার সেই মহড়াই এক নাগাড়ে একমাস হয়েছিল। এখন ভাবতে অবাক লাগে, হাসিও পায়। আমি অবশ্য এতোদিন না হলেও ২/৩ দিন মহড়ার পক্ষে। আমি বিশ্বাস করি মহড়ার কোনো বিকল্প নেই।
একতালা-দোতলার প্রযোজক নির্দেশক ছিলেন (প্রয়াত) মনিরুল আলম। কী নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি আমাদের নিয়ে একমাস অবধি মহড়া দিয়েছিলেন, এখনও মনে পড়লে বিস্মিত হতে হয়। তখন রেকর্ডিং-এর ব্যবস্থা ছিল না। একটা মজার ঘটনা না বললেই নয়Ñ রামেন্দু মজুমদার সে-সময় সে নাটকে আমার নায়ক ছিলেন। দৃশ্যটা ছিল এমনÑ মুগুর দিয়ে কাপড় কাচতে গিয়ে আমার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল থেত্লে যায়। প্রেমিকপ্রবর রামেন্দু মজুমদার, প্রেমের আতিশয্যে আমার বুড়ো আঙ্গুল একটু ধরে ম্যাসেজ করতে চান। এখন ব্যাপারটা হয়েছে কী তিনি যতবার আমার আঙ্গুল ছুঁতে যান, ততবার নিচু স্বরে আমি তাঁকে শাসাতাম ‘খবরদার আপনি আমার পা ছোঁবেন না।’ ওমনি ও থেমে যেতো। আবার ওদিক থেকে প্রযোজকের হুংকার আসতো, ‘কী হলো রামেন্দু? থেমে আছেন কেন? ওঁর আঙ্গুলটা ছোঁন।’ কীভাবে ছোঁবে? এদিকে আমার নিষেধ, অন্যদিকে মনিরুল আলমের আজ্ঞাÑ বেচারা কোনটা পালন করবে? শেষ পর্যন্ত নামকা ওয়াস্তে ছুঁয়েছিলেন বোধ হয়। কী হাস্যকর! আমার তখনও বিয়ে হয়নি। হায়রে! সে যুগ আর এ যুগ! আরেকটা ঘটনা আরও চমকপ্রদ। আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের প্রয়োজনা ছিলÑ ‘ঢেউ-এর পরে ঢেউ’। নাটকটির নায়ক ছিলেন আহসান আলী সিডনি। নাটকের শেষ দৃশ্যটা ছিল দূর থেকে আমি আর বিপরীত দিক থেকে সিডনি এগোতে থাকেনÑ তার হাত প্রসারিত, আমার হাতও প্রসারিতÑ দুজনে দু’দিক থেকে দুজনার হাত ধরার চেষ্টা করছি এবং অবশেষে ভালোবাসার চ‚ড়ান্ত প্রকাশ ঘটে দুটো হাতের গভীর মিলনে। প্রযোজকের এটাই ছিল অভিলাষ। ওইখানে আমি বেঁকে বসলামÑ আমি ওঁকে ছোঁব নাÑ আমার তো তাহলে বিয়ে হবে না। তাহলে কী করা যায়? অনেক ভেবে-চিন্তে বের করা গেলো, হাতটা একজন পুরুষের হলে কেমন হয়? যার হাত একটু মেয়েলি, লোমহীন। পাওয়া গেল বাদল রহমানকে। সাবান দিয়ে তার হাতে আমার চুড়িগুলো পরানো হলোÑ সিডনি আর বাদল রহমান একটু একটু করে পরস্পরের হাত ধরলোÑ আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম এবং দৃশ্যটা সবাই বেশ উপভোগ করলো। আশ্চর্য! কেউ কিন্তু সেদিন বোঝেনি ওটা কার হাত ছিল।
আর কত বলবো। বলতে শুরু করলে শেষ হতে চায় না যে। আমি কোনো নাটকের স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইনিÑ অভিনয়ের আমি স্ব-শিক্ষিত বলা চলে। কম বয়সে যখন অভিনয়ে নামিনি, তখন থেকেইÑ দুপুরে যখন সবাই ঘুমুতো, আমি আমাদের রান্নাঘরের বেড়ার ফুটো দিয়ে, বস্তির অশ্লীল ঝগড়ার আদ্যপান্ত গোগ্রাসে গিলেছিÑ দেখেছি কীভাবে, মেয়ে বাপকে অবলীলায় ‘শালা’ বলছেÑ কীভাবে মা মেয়েকে অকথ্যভাষায় (বেশ্যা) গাল দিচ্ছে। আমি দেখেছি কীভাবে বস্তিবাসীরাÑ নির্যাতনকারী স্বামীর হাত থেকে বাঁচার জন্যে নিজ ঘরে ফিরে আসা মেয়েটিকে জ্বিনে ধরেছে বলে বাড়ির সকলে অপবাদ দিচ্ছে এবং শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে তার নাকে দিচ্ছে এবং অসহায় মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে গরম পানিতে চুবিয়ে তথাকথিত জ্বিনকে বিতাড়িত করছে। নিষ্ঠুরতার চ‚ড়ান্ত প্রকাশ আমি দেখেছি। এখন বুঝতে পারছি ওসব অভিজ্ঞতা পরবতীতে আমায় কত কাজে দিয়েছে। আমার সৌভাগ্যÑ বহুমুখি প্রতিভা থিয়েটারের নাট্যগুরু নাট্য নিদের্শক আবদুল্লাহ আল-মামুন দ্বারা আমি নাট্যজগতে চালিত হয়েছিÑ প্রতিপদে তিনি আমার ভুল-ত্রæটি শুধরে দিয়েছেন। আমার মধ্যে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। আমার এ অবস্থানে আসার পেছনে তাঁর অবদান অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য এবং কৃতজ্ঞতা আমার নিজস্ব পরিবারের প্রতি, আমার স্বামী-সন্তানের প্রতি, কৃতজ্ঞতা আমার শ্বশুরকুলের প্রতি, আমার বাবার পরিবারের প্রতি, সবার ওপরে ওপরওয়ালার প্রতি আমার বিন¤্র কৃতজ্ঞতা তো আছেই। এইভাবে সবার ভালোবাসা নিয়ে ভালোয় ভালোয় অমোঘ গন্তব্যের দিকে চলে যেতে পারলেই হয়Ñ সেই আশায়-ই আছি।
আমার অভিনয় জীবনের গল্পকথা-ফেরদৌসী মজুমদার
- এক্সক্লুসিভ