এই শীতে চুলের যত্ন

সুবর্ণা হক

কারও মাথায় অনেক লম্বা চুল। অথচ কী ঝরঝরে মোলায়েম। মাথা ঝাকিয়ে চুলকে যেমন খুশি তেমন স্টাইলে নিয়ে আসা তার কাছে কোনো ব্যাপারই না। আবার কারও মাথায় ছোটো খাটো চুল। কিন্তু এই খাটো চুলও যেন কথা শুনতে চায় না। অবস্থাটা এরকমÑ যেতে বলি বাঁয়ে, চলে যায় ডানে। আনন্দ আলোর রূপচর্চা বিভাগে শিউলী কনা নামে এক পাঠক চিঠি লিখেছেন। তার মাথার চুল ততটা বড় নয়, মাঝারি ধরনের। প্রায় প্রতিদিনিই চুলে শ্যাম্পু করেন তবুও নিজের মাথার চুলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। ঘর থেকে বের হলেই কিছুক্ষণ পর চুলে জট লেগে যায়। খসখসে ভাব ফুটে ওঠে। এ ব্যাপারে করণীয় কি জানতে চেয়েছেন। শান্তা চৌধুরী নামে কলেজ পড়–য়া এক তরুণী জানতে চেয়েছেন, শীত তো এসেই গেল। চুলের যত্নের সহজ উপায় জানতে চেয়েছেন। হ্যাঁ, সে ব্যাপারে আজকের লেখায় দিক-নির্দেশনা থাকবে। তবে তার আগে একটা গল্প বলি, ঠিক গল্প নয়। গল্প শব্দটা উচ্চারণ করলেই মনে হয়Ñ ও গল্পতো… সাজানো ঘটনা। বানিয়ে বানিয়ে বলছে। কাজেই শব্দটা ‘গল্প’ হবে না। তার চেয়ে বাস্তব ঘটনা বলাই ভালো।

অনেকদিন আগের ঘটনা। তখনকার দিনে চুলের যত্নের এত আধুনিক উপকরণ আবিষ্কার হয়নি। শ্যাম্পুও ছিল না। অথচ মেয়েদের মাথার চুল ঠিকই ঝরঝরে মোলায়েম ছিল। মাথায় লম্বা চুলের মেয়েরা অনায়াসে চুলের যত্ন নিতে পারতেন। তেমনই এক গৃহবধূর ঘটনা বলছি। সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে। যেমন গায়ের রং তেমনই চুলের বাহার। আত্মীয়স্বজন তাকে দেখতে এসে চুলের প্রশংসাই করেন। একদিন ননদ সম্পর্কের কিছু মেয়ে তাকে জেকে ধরলো। ভাবী তোমার মাথার চুলের যত্ন নাও কিভাবে? গৃহবধূ সবাইকে কাছে ডেকে নিয়েচুলের যত্নের একটা সহজ সরল সমাধান দিতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন করলেনÑ তোমরা দিনে কয়গ্লাস পানি খাও? (শব্দটা হওয়া উচিত কতগ্লাস পানি পান করো। কিন্তু ‘খাও’ শব্দটাই প্রচলিত তাই পান করার বদলে ‘খাও’ শব্দটিই ব্যবহার করা হলো)

গৃহবধূর প্রশ্ন শুনে উপস্থিত সবাই পরস্পরের দিকে তাকাতে থাকলো। তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি চুলের যত্নের সঙ্গে পানি খাওয়ার সম্পর্ক কি?

গৃহবধূ বুঝিয়ে বললেনÑ শোনো, পানির অপরনাম জীবন। মাথার চুল আমাদের শরীরের একটি অলঙ্কার। ভাবো একবার চুল বিহীন নারী হোক পুরুষ হোক তাকে কেমন দেখাবে? নিশ্চয়ই তাকে সুশ্রী মনে হবে না। খালি মাথা অর্থাৎ টাক মাথার নারীকে দেখতে আমরা মোটেই অভ্যস্ত নই। যে নারীর মাথায় যতবড় চুল সেই যেন তত সুশ্রী, তত আকর্ষণীয়া। কাজেই চুলের যত্নে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া জরুরি। পানি ছাড়া যেমন গাছ বাঁচে না। তেমনি পানি ছাড়া চুলও বাঁচে না। বলতে বলতে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত একটা প্রশ্ন ছুড়লেন গৃহবধু।

তোমরা কি জানো চুলের যত্নে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ভ‚মিকা অনেক। অনেকে ছোট মাছ খেতে পছন্দ করে না। শাক সবজির নাম শুনলে নাক সিটকায়। ডিম খেতে চায় না। অথচ এই খাবারগুলোও বহুলাংশে চুলের পুষ্টিগুণ বাড়ায়। চুলের যত্নের আরও অনেক ফর্মুলা আছে। তবে এই মুহূর্তে যা বললাম তা অনুসরণ করলেই মাথার চুল যত্ন পাবে। তোমরা কিছুদিন আমার এই কথাগুলো ফলো করে দেখতে পারো। নিশ্চয়ই উপকার পাবে।

হ্যাঁ, মেয়েরা উপকার পেয়েছিল। কিন্তু সেই সময়টায় আমাদের প্রকৃতি এতটা রুখ¥ ছিল না। শহরের পরিবেশও ছিল নির্মল, শান্তিময়। বাতাসে ধুলার আস্তরণ ছিল না। আর এখন? শহরের রাস্তায় ধুলারই রাজত্ব। সর্বত্র ধূলিময় পরিবেশ। সে কারণে শুধুই নিয়মিত পানি পান সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ছোট মাছ খেলেই মাথার চুল তার স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পারবে না। বিশেষ করে শীতের এই রুখ¥ সময়ে তো নয়ই। বাসা বাড়ি থেকে পথে নামলেই গোটা শরীর ধুলোবালিতে আক্রান্ত হয়। মাথার চুলই পড়ে নাজুক পরিস্থিতিতে। ধুলোবালি চুলের চরম শত্রæ। গরমে মাথার ঘাম আর শীতের বাতাসে ভাসা ধূলিকনা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। আর তাই বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতকালে চুলের যত্নে বেশি তৎপর থাকতে হয়। বাইরে থেকে বাসায় ফিরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নেয়া জরুরি। সবচেয়ে জরুরি মাথার চুলে যেন জট না পাকায়। আর তাই শ্যাম্পু করার আগে ভালো চিরুনি দিয়ে মাথার চুল আঁচড়ে নিন। এই শীতে চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদন সমৃদ্ধ শ্যাম্পুই সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে। এক্ষেত্রে কুমারিকা হতে পারে আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।

কেন কুমারিকা জরুরি তার একটি ব্যাখ্যাও দেয়া যেতে পারে। কুমারিকা বিশ্বখ্যাত একটি হেয়ার অয়েল। অনেকেই জানেন, আদিকাল থেকেই প্রাচীন শ্রীলঙ্কা নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক বনৌষধি উপকরণের উৎস হিসেবে সুপরিচিত। সৌন্দর্য চর্চায় বহুল ব্যবহৃত ব্রাহ্মী,অ্যালোভেরার মতো উপকরণগুলো প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ঐ সিংহল দ্বীপে। ঐ শ্রীলঙ্কাতেই তৈরি হয় সবার প্রিয় কুমারিকা হেয়ার অয়েল।

কুমারিকা তেল শতভাগ প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে তৈরি। কুমারিকা হেয়ারফল কন্ট্রোল তেল-এ আছে আমলকী, ব্রাহ্মীলতা, অ্যালোভেরা ও এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেলের নির্যাস। যা নিয়মিত ব্যবহারে নারীর মাথার চুল পড়া কার্যকরভাবে বন্ধ করে। এছাড়াও কুমারিকা হেয়ারফল কন্ট্রোল অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের ক্ষেত্রে বাড়তি আরো দুটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ক. চুলের আগা ফাটা রোধে কুমারিকা হেয়ার অয়েল বেশ কার্যকর। চুলের আগা ফাটা রোধে কুমারিকার আছে মধু ও মেহেদীর গুণসমৃদ্ধ কুমারিকা স্পিøট অ্যান্ড কন্ট্রোল অয়েল। যা চুলে পুষ্টি যুগিয়ে চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে।

খ. কুমারিকা ড্যানড্রাফ কন্ট্রোল অয়েলে আছে মেথি ও লেবু। যা নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হয়।

একথাতো সত্য চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুল পড়া, খুশকি, আগা ফাটাসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধানে হারবাল উপকরণই সেরা। এক্ষেত্রে কুমারিকা হেয়ার অয়েলের জুড়ি নাই। ১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই মন্তব্য কুমারিকা চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করে লক্ষণীয়ভাবে। কাজেই আর দেরি নয় কুমারিকাই হোক আপনার মাথায় চুল পরিচর্যার অন্যতম বন্ধু।

  • প্রতিবেদন