রং তুলি ও ক্যানভাসের ছোঁয়া

কখনো তেল রং আবার কখনো জল রং। কোনো ছবিতে প্রকাশ পায় বিমূর্ততা, আবার কখনো প্রকাশ পায় বাস্তবতার ছোয়া। আরো অনেক মাধ্যমেই ছবি আঁকেন নবীন চিত্রশিল্পী আরেফিন ছোঁয়া। ছোঁয়ার বেড়ে ওঠা শিল্পমনষ্ক সাংস্কৃতিক পরিবেশে। উৎসাহ পেয়েছেন নিজের সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে এবং ছেলেবেলায় ছবি আঁকার হাতে খড়ি গুণী লেখক, চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা আফজাল হোসেন-এর কাছে। তারপর থেকে চলছে রং তুলির সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম। ছোট্ট হাতে সাদা পৃষ্ঠায় রঙ পেন্সিলে হাতি-ঘোড়া আর ঘরবাড়ি আঁকতে আঁকতে কখন যে জানা হয়ে গেছে ছবি আঁকার মূল মন্ত্র, তৈরি হয়ে গেছে তার নিজস্ব মতবাদ ও ছবি আঁকাকে করে নিয়েছেন জীবনের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে তা বুঝতেই পারেননি।

ছবি আঁকার প্রতি তার আবেগকে আরো দৃঢ় ও আরো গভীরভাবে জানতে ছোয়া লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নেন চারুকলার উপরেই। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (টঙউঅ)-এর কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে। কিন্তু তিনি মনে করেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া মূল বিষয় নয় বরং ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনা, দর্শন ও সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গিই সুন্দর শিল্পকর্ম সৃষ্টির মূল উৎস।

শিল্প হল শিল্পীর অন্তর্নিহিত আবেগের বহি:প্রকাশ। চারুশিল্প, কারুশিল্প, নাট্যশিল্প অথবা সঙ্গীতশিল্প, যেকোন শিল্পই শিল্পীর কল্পনানির্ভর। শিল্পী তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সৃজনশীলতায় বাস্তবতাকে তুলে আনে তার শিল্প মাধ্যমে। কেননা শিল্প হলো বাস্তবতার অনুকরণ। তেমনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ছোয়ার আঁকা প্রতিটি ছবিতে প্রতিফলিত হয়েছে দেশ, মানুষ ও দেশের মানুষের প্রতিকূল অবস্থাতে বেঁচে থাকার প্রতীকী চিত্র। অতি অল্প সময়েই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সকলের। অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী সম্মাননা পুরস্কার। সম্প্রতি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ‘মিথীলা এয়াইন আর্ট গ্যালারি’তে অনুষ্ঠিত ‘রাইজিং দ্যা রুট্স’ ১৫-২০ আগস্ট, ২০১৭ শিরোনামে আয়োজিত এক চারুকলা প্রদর্শনীতে অর্জন করেন ‘গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড’। শিল্পী ছোঁয়ার সেই ছবিটি যেন ডেকে ফেরে চতুর্দিক, আর্তনাদে জাগিয়ে তুলতে চায় ঘুমন্ত চিত্ত। জানান দেয় ‘সময় হয়েছে সাড়া দেবার’। এ যেন কালো ছায়া থেকে আলোয় ফিরিয়ে আনবার আহŸান। এজন্যই হয়তো চিত্রকর্মটির নাম ‘আহŸান’। নেপাল ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের অংশগ্রহণকারী তরুণ চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘রাইজিং দ্যা রুট্স’ চারুকলা প্রদর্শনীটি আয়োজন করেন নেপালের ‘মিথীলা এয়াইন আর্ট গ্যালারী’ আর সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি এবং নেপাল ও বিজেশ^রী সেকেন্ডারি স্কুল, কাঠমান্ডু, নেপাল-এর চারুকলা বিভাগ।

শুধু তাই নয় শিল্পী ছোঁয়ার আঁকা ছবি এরই মধ্যে স্থান পেয়েছে ২২তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৭, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায়। তার আঁকা চিত্রটিতে ব্যবহৃত হয়েছে তেল রং। বিমূর্তধর্মী এই ছবিটির নামকরণ করা হয়েছে ‘নির্বাক’। ছবিটি দেখে হৃদয়ের কোণে একটুখানি জায়গা জুড়ে সামান্য শুণ্যতা সৃষ্টি হয়। একটা মুখশ্রী কিন্তু তার কথা বলা বা দেখার কোন অধিকার নেই। নির্লিপ্ত একটা জীবস্বত্তা। তবে ছোঁয়ার ক্যানভাসে যেন কথা বলার ভাষা পেয়েছে ‘নির্বাক’। এছাড়া গত বছরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ‘শিল্পিত বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘আমাদের ঢাকা’ চিত্র প্রদর্শনী ২০১৬ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ঢাকার ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরেন তার ক্যানভাসে।

ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল চিন্তাধারার কারনে সকলের প্রিয়মুখ হয়ে উঠেছেন ছোঁয়া। এই অল্প সময়েই তার জীবনের অর্জনকে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বলে তিনি মনে করেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবেই দেখতে চান তরুণ প্রজন্মের এই চিত্রশিল্পী আরেফিন ছোঁয়া।

  • প্রতিবেদন
Comments (০)
Add Comment