স্বত্বাধিকারী, শতরূপা জুয়েলার্স, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বসুন্ধরা শপিং মল দোকান মালিক সমিতি
কার্তিক কর্মকার বাংলাদেশের স্বর্ণকারু শিল্পে একটি জনপ্রিয় নাম। স্বর্ণ শিল্পের বিকাশমান ধারা তার রক্তে রক্তে প্রবাহমান। বাবা দাদার কাছ থেকে এই ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। ১৯৮৭ সালে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে এই শিল্পের একজন কারিগর হিসেবে যোগ দেন পৈত্রিক ব্যবসায়। দিন-রাত কারখানায় কাজ করে প্রথমে স্বর্ণ শিল্পে হাতের কাজ রপ্ত করেন তিনি। এরপরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান শতরূপা জুয়েলার্স। সততা, নিষ্ঠা আর আত্মবিশ^াসকে পুঁজি করে ক্রমান্বয়ে এই শিল্পে সফলতার চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে পৌঁছতে কাজ করে চলেছেন নিরন্তর। তার স্বপ্ন বাংলাদেশের স্বর্ণ বিদেশে এক্সপোর্ট করা। শতরূপা জুয়েলার্স-এর স্বত্বাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কার্তিক কর্মকার বর্তমানে বসুন্ধরা শপিং মল দোকান মালিক সমিতি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। স্বর্ণ কারুশিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে সারা বিশে^র বিভিন্ন দেশে একাধিক মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন কার্তিক কর্মকার। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম
আনন্দ আলো: স্বর্ণ ব্যবসা দিনে দিনে বাংলাদেশে কঠিন হয়ে পড়েছে স্বর্ণনীতিমালা না থাকার কারণে। স্বাধীনতার এত বছর পরও কেন নীতিমালা নেই- আপনি কীভাবে দেখেন এই অবস্থাকে?
কার্তিক কর্মকার: প্রতিবছরই আমরা আশ^াস পাই, নীতিমালা হবে বলে আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। কিন্তু এই বছর বেশি জোরালোভাবে আশ^াস পেয়েছি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে। নীতিমালাই সবচেয়ে বড় কথা না। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিষয় জড়িত আছে। স্বর্ণ ব্যবসা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ। সব দেশের জন্যই স্বর্ণ ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ।
আনন্দ আলো: বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশের নারীদের কাছে সোনার অলঙ্কার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
কার্তিক কর্মকার: আপনি যথার্থই বলেছেন। গহনা বাংলাদেশ এবং কলকাতার নারীরাই বেশি পরে। গহনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে সমস্যা আছে তা হলো-ভ্যাট সমস্যা। ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে এই সেক্টরে। তার মানে লাখে ৫ হাজার। অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা ৫ হাজার টাকা মেকিং চার্জও রাখতে পারি না। এই ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ হাজার টাকা কীভাবে দিব? আর বড় সেট। ধরেন, যখন ৫/১০ ভরির একটা সেট হয় সেখানে ৬ লাখ টাকা আসবে। সেখানে ভ্যাট দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা। যখন কাস্টমার বলে আমরা ভ্যাট দিব না তখন বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ছেড়ে দিতে হয়। আমি মনে করি, স্বর্ণ ব্যবসায় ভ্যাট কমালে একশত ভাগ ভ্যাট সংগ্রহ করা সম্ভব।
আনন্দ আলো: বাংলাদেশের স্বর্ণ কারিগরদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের। খুব কম স্বর্ণের মাধ্যমে সুন্দর গহনা তারা তৈরি করতে পারেন। এই শিল্পীদের দক্ষতা বিষয়ে কিছু জানতে চাই?
কার্তিক কর্মকার: আমি এই লাইনের মানুষ। আমার নিজের ফ্যাক্টরি আছে। আমি নিজেও এক সময় স্বর্ণ কারিগর ছিলাম। কিন্তু এখন করা হয়। এখানে শিল্পীরা যেভাবে কাজ করে, সারা বিশে^ তাদের গৌরব বা সুনাম আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা স্বর্ণ বিদেশে এক্সপোর্ট করতে পারছি না। দামের একটা ব্যাপার আছে। দামের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। দেখা গেল আমরা এক্সপোর্ট করলাম কিন্তু তাদের সবকিছুতেই জিরো পারসেন্ট বা ওয়ান পারসেন্ট আর আমাদের ৫ পারসেন্ট। এইখানে প্রতিনিয়ত আমাদের মার খেতে হচ্ছে। তাই আমরা এক্সপোর্ট করে কোথাও গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না। এই কারণে এক্সপোর্টে আমরা যেতে পারছি না। কিন্তু আমাদের গোল্ড অর্নামেন্টের চাহিদা সারাবিশে^ আছে। কারণ পাশের দেশে যে অর্নামেন্টটা ১০ ভরিতে তৈরি করবে, আমাদের এইখানে সেই একই অর্নামেন্ট ৫ ভরিতে তৈরি করে দিতে পারবে কারিগররা।
আনন্দ আলো: খুব সূ² হাতের কাজ জানে আমাদের শিল্পীরা?
কার্তিক কর্মকার: হ্যাঁ, হাতের কাজে এই দেশের কারিগররা এক্সপার্ট। এই রকম শিল্পীদের দক্ষতা দুনিয়ার কোনো দেশে নাই। তাই এই শিল্পের কারিগরদের যথার্থ সম্মান দিতে হবে।