জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খান স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমান

সবাই তাকে মোটু ভাই বলে ডাকে। এর অবশ্য কারণও আছে। শারীরিক অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের কারণে অর্থাৎ স্থ‚লকায় শরীরের কল্যাণে মোশারফ হোসেন হয়ে গেছেন মটু ভাই। বাবা ডাকে মটু ভাই, ছেলেও ডাকে মটু ভাই। মোশারফ হোসেন এনিয়ে কখনই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। মাঝে মাঝে শুভাকাক্সক্ষীদের অনেকে পরামর্শ দেয় মোশারফ শরীরের প্রতি নজর দাও, জিহŸারে কন্ট্রোল করো। তা না হইলে তুমি তো মিয়া ঝামেলায় পড়বা। কিন্তু মোশারফ কারও কথায় কান দেয় না। মুখরোচক খাবার দেখলেই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এই তো কয়েকদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে এক কেজি গুরু মাংস সে একাই খেয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন একজন স্থানীয় চিকিৎসক। এভাবে গুরুর মাংস খেতে দেখে উপযাচক হয়েই তিনি মোশারফকে জিজ্ঞেস করলেনÑ ভাই আপনার ডায়াবেটিস আছে নাকি?

মোশারফ গুরুত্বহীন ভঙ্গিতে বললÑ জানি না। কোনোদিন মেপে দেখেনি।

চিকিৎসক জানতে চাইলেনÑ প্রেসার, কোলস্টোরেল সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে?

না।

ওজন কত?

এই ধরেন ৮৫ কেজি।

হাইট!

৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।

বয়স?

সামনের মাসে ৪৩ ক্রস করবে।

এই বয়সে এভাবে গুরুর মাংস খাচ্ছেন, এটা তো ভাই ঠিক নয়।

ডাক্তারের কথায় গুরুত্বহীন ভঙ্গিতে হেসে ফেলল মোশারফ। বললÑ খাওয়া দেখলে ভাই ঠিক থাকতে পারি না। আর গুরুর মাংসের কথা বলতেছেন? আমার সবচেয়ে ফেবারিট খাবার।

মোশারফকে চিনেন না চিকিৎসক। তবুও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলেন। একজন মানুষকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা চিকিৎসকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে এই মোটা লোকটি যেভাবে নিয়ন্ত্রণহীন খাবার খায় তাতে যে কোনো সময় তার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এই লোক নিশ্চয়ই ঘন ঘন চা খায়? এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলেনÑ ভাই, আপনি নিয়মিত চা খান?

হ্যাঁ।

দিনে কয় কাপ?

কম করে হলেও ১০/১২ কাপ।

নিশ্চয়ই দুধ চা, সঙ্গে সাধারণ চিনি থাকে?

হ্যাঁ। বলেই চায়ের পক্ষে সাফাই গাইল মোশারফÑ

চা না খাইলে মাথা ঠিক রাখতে পারি না।

চিকিৎসক এবার সত্যি সত্যি অবাক হলেন। মোশারফের জন্য তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এই লোক খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন না হলে, সাধারণত চিনিসহ চা খাওয়া কমিয়ে না দিলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। মোশারফের দিকে সহানুভ‚তির দৃষ্টিতে তাকালেনÑ

ভাই আমি একজন  চিকিৎসক। আমার একটা পরামর্শ রাখবেন?

মোশারফ আগ্রহ দেখিয়ে বললÑ পরামর্শ! বলেন।

একটা বয়সে খাবার-দাবারের ব্যাপারে প্রতিটি মানুষের উচিত সচেতন থাকা। এটা কি বিশ্বাস করেন? মোশারফ মাথা নেড়ে বললÑ হ্যাঁ বিশ্বাস করি। কিন্তু জিহŸারে তো কন্ট্রোল করতে পারি না।

চিকিৎসক বললেনÑ যে কোনো মূল্যে জিহŸাকে কন্ট্রোল করতেই হবে। আর একটা কথা। প্রতিদিন সাধারণ দুধ দিয়ে কাপের পর কাপ চা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

চা খাওয়া বন্ধ করতে হবে শুনে হৈ হৈ করে উঠলো মোশারফÑ আপনি কি বলতেছেন এইসব? চা ছাড়া তো আমার চলবে না।

চিকিৎসক মৃদু হেসে বললেনÑ আমি আপনাকে চা খেতে নিষেধ করতেছি না। তবে সাধারণ তিনি দিয়ে চা খেতে নিষেধ করছি। সাধারণ চিনি খাওয়া একদম বাদ। মোশারফ অবাক হয়ে বললÑ চিনির আবার সাধারণ, অসাধারণ আছে নাকি?

চিকিৎসক বললেনÑ অবশ্যই আছে। আপনি চিনি দিয়ে চা খেতে চাইলে জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্রতি ভরসা রাখতে পারেন। শুধু চায়ে নয়, পায়েসসহ মিষ্টি জাতীয় খাবারেও জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করুন। চর্বি জাতীয় ও মুখরোচক খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন দেখবেন আপনার শরীর অনেক ঝরঝরা লাগবে। কাজ কর্মে শক্তি পাবেন। আমার পরামর্শগুলো মেনে চলবেন প্লিজ…

চিকিৎসকের কথা শোনার পর মোশারফের কেন যেন মনে হলো খাবারের অভ্যাসগুলো একবার বদলে ফেলে দেখি না অবস্থা কি দাঁড়ায়। মুখরোচক খাবার পরিহার করতে থাকলো মোশারফ। চায়ে সাধারণ চিনির পরিবর্তে জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি খেতে শুরু করলো। কয়েকমাস পর মোশারফের মনে হলো শরীর আগের চেয়ে হালকা বোধ হচ্ছে। আগের মতো মাথা ব্যথা নেই। নেই অবসাদ। যখন তখন ঝিমুনি, ঘুম ঘুম ভাব এখন আর হয় না। মোশারফ যাকেই কাছে পায় তাকেই পরামর্শ দিতে শুরু করলোÑ ভাইরে খাবার নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ চিনি দিয়ে দুধ চা খাবেন না। চায়ে যদি চিনি খেতেই চান তাহলে জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্রতি গুরুত্ব দিন।

সাম্প্রতিক কালের এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনিতে নানান ধরনের কেমিক্যাল মেশানোর কারণে মানুষের প্রচুর অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে। যাদের বয়স ৪০ অতিক্রম করেছে ক্যালরীসম্পন্ন চিনি খাওয়ার ফলে তাদের হাই প্রেসার, ডায়াবেটিস, অবসাদগ্রস্ত হওয়া, রক্তে কোলস্টেরল বেড়ে যাওয়াসহ নানান অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডাক্তারের মতে চিনি বর্জন করে জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করলে মারাত্মক সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করে আপনি যে উপকার পাবেন তার মধ্যে আছেÑ

 যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাও এই চিনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।

 সব বয়সী মানুষ এই চিনি সব খাবারের সঙ্গে খেতে পারবেন।

চা, কফি ও পায়েসের সঙ্গে এই চিনি ব্যবহার করে খেলে স্বাদ সাধারণ চিনির মতোই মনে হবে।

 যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা এই চিনি খেলে অবসাদ দূর হয়ে যাবে।

 চিনি ব্যবহারে প্রেসারের ঝুঁকি কমাবে।

 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।

 এই চিনি সব ধরনের খাবারে ব্যবহার করা যাবে যেমন দই, মিষ্টি, পায়েস, শরবতসহ মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার।

জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি শুধু খেলেই ডায়েট সম্পন্ন হবে না। তার সঙ্গে ব্যায়াম করাও জরুরি। অনেকে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় পান না। তাঁরা বাসায় হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন।

বাজারে অনেক জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনির প্যাকেট পাওয়া যায়। দাম সাধারণ চিনির মতোই। সাধারণ চিনির চেয়ে দানা একটু ছোট। স্বচ্ছ ও পরিষ্কার সাদা দানার এই জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি বাজারের প্রতিটি স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আপনাকে আসল জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি বেছে নিতে হবে। ভালো ব্র্যান্ডের জিরোক্যালরী চিনি কিনতে ভুলবে না।

শুধু অতিরিক্ত মোটা বা মেদবহুল মানুষ জিরোক্যালরী সম্পন্ন চিনি খাবেন এমন কোনো কথা নেই। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, যারা আগামী দিনে সুস্থ থাকতে চান, সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চান তাদের এই চিনি খাওয়া উচিত। এই চিনি খাওয়ার ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। ডাক্তাররাও ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাধারণ চিনি না খাওয়ার জন্য। অনেকেই চায়ে কম চিনি খান অর্থাৎ এক কাপে এক বা দেড় চামচ চিনি খান। কিন্তু কম চিনি খেলেও তাতে ক্যালরী কিন্তু ঠিকই থাকে। তাই যতটুকু সম্ভব জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপ্রেসার ও কোলস্টেরেল কম হবে।

  • ফিচার
Comments (০)
Add Comment