মন্দিরা ও অভির গল্প!

মেয়েটি ব্যক্তিগতভাবে বেশ চটপটে। যতক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে থাকে ততক্ষণ মুখে কথার খই ফোটে। অথচ নাটকে একদম চুপচাপ। কম কথা বলে। নাটকে তার চরিত্রটাই এমন চাপা স্বভাবের। বন্ধুরা মাঝে মাঝে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- তুই কীভাবে পারিস এভাবে চুপ থাকতে? মেয়েটি তখন শুধুই হাসে। তার হাসিও বেশ শান্ত, মায়াময়।

এবার একটি ছেলের কথা বলি। তার স্বভাবও বেশ চটপটে। অন্যায় দেখলে সহ্য করতে পারে না। অথচ নাটকে যে চরিত্রে অভিনয় করে সে চরিত্রটিও বেশ শান্ত স্বভাবের। তার বিরুদ্ধে অন্যায় হলেও সহজে প্রতিবাদ করে না। যেন মাটির মানুষ।

দুজনের আসল নাম বলার আগে নাটকের নামটাই বলি। নাটকে মেয়েটির নাম মন্দিরা আর ছেলেটির নাম অভি। অভিনয়ের গুণে দুজনের আসল নাম চাপা পড়তে শুরু করেছে।

দীপ্ত টিভির ‘অপরাজিতা’ নামের ধারাবাহিকে দুজন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের নিয়ে নাটক পাড়ায় আলোচনাটা বেশ সরব। যেখানেই যান সেখানেই ভক্তদের চাপ সামাল দিতে হয়। সেলফি তোলার ঝক্কিটাতো আছেই। ফেসবুকে তাদের ফলোয়ারের সংখ্যা অনেক। কয়েকদিন আগে দুজনের দেখা মিলল আনন্দ আলোর কার্যালয়ে। ব্যাস শুরু হলো জম্পেশ আড্ডা।

এবার তাদের আসল নামটা বলি। নাইরুজ সিফাত ও আফজাল কবীর। চটপটে স্বভাবের নাইরুজ সিফাত অনেকটা হৈচৈ করেই আনন্দ আলো কার্যালয়ে ঢুকলেন। প্রশ্নটা তখনই উঠল- অ্যাই… আপনি এত চটপটে স্বভাবের। সারাক্ষণ শুধুই হাসেন। অথচ নাটকে এত চুপচাপ থাকেন কি করে?

প্রশ্ন শুনে একটু যেন ভাবলেন সিফাত। বললেন, তার আগে দীপ্তর অপরাজিতায় কীভাবে যুক্ত হলাম সে ঘটনাটাই বলি। ফেসবুকে অপরাজিতার ব্যাপারে খবর পাই। আমার বাবা নূরুল আলম তালুকদার একজন অভিনয় শিল্পী। বিটিভির অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে আমি কখনো অভিনয় করবো এমনটা চিন্তাও করিনি। ফেসবুকে খবরটা দেখে কেন যেন মনে হলো দেখি না অডিশন দিয়ে। দীপ্ততে অডিশন দিতে গিয়ে দেখি অনেক ভিড়। সবার শেষে অডিশন দিলাম। ভেবেছিলাম আমাকে ওরা পছন্দ করবে না। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম ওরা আমাকেই পছন্দ করলো। তারপর গ্রুমিং সেশনে যোগ দিলাম। এক ধরনের মনোসংযোগ তৈরি হয়ে গেল। চটপটে স্বভাবের সিফাত হয়ে গেল শান্ত স্বভাবের সংগ্রামী নারী মন্দিরা। নিজের এই পরিবর্তন দেখে আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হই।

পাশেই বসেই মন্দিরার কথা শুন ছিলেন অভি অর্থাৎ আফজাল কবীর। অপরাজিতায় কীভাবে যুক্ত হলেন? প্রসঙ্গ তুলতেই স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের একজন ছাত্র। নাটকে অভিনয় করবো অথবা নাটকের কাজেই জড়িত থাকবো বলে নাট্যকলায় ভর্তি হই। ইতোমধ্যে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে ফেলেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম নাটকের জগতেই আর থাকবো না। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরির চেষ্টা করবো।

বিশিষ্ট অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি আমাদের নাট্যকলা বিভাগের একজন শিক্ষয়িত্রী। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। হঠাৎ একদিন দীপ্ত টিভির ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়ে বললেন, ওরা একটি ধারাবাহিক নাটকের জন্য অভিনেতা অভিনেত্রী খুঁজছে। তুমি যাও, অডিশন দিয়ে আসো।

ঐ যে বললাম আমি টিভি নাটকের ব্যাপারে মহাবিরক্ত হয়ে পড়েছি। তাই দীপ্ততে অডিশন দিতে যাব কি যাব না ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আমার প্রিয় শিক্ষিকার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য হলেও দীপ্ততে অডিশন দিতে যাওয়া উচিত। অডিশন দিতে গিয়ে অনেক ফর্মালিটিস ফেস করতে হলো। আমি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছি। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম যারা অডিশন দিচ্ছে তাদেরকে পাত্তাই দিব না। মনে মনে চাইছিলাম আমি যেন অডিশনে না টিকি। আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি প্রশ্নের উত্তর জানি। অথচ উত্তর দিচ্ছি না। এটা ওটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছি। অডিশন শেষ। চলে আসব ভাবছি। হঠাৎ শুনলাম আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। এরপর থেকেই বদলে গেল আমার জীবন। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মাল। এখন তো আর অভিনয় ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না।

এত গেল নাটকে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে গালগপ্প। এবার আসা যাক নাটকের প্রয়োজনে প্রথম ক্যামেরায় দাঁড়ানো প্রসঙ্গে। নাইরুজ সিফাত স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন- ‘প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর দিন সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিল। এত আনন্দ আমি আমার জীবনে আর কখনোই পায়নি। তবে শুটিং করার প্রায় দেড় বছরের মতো সময় কেটে যায়। তারপর নাটকটি দীপ্ততে প্রচার শুরু হয়। এতদিন অপেক্ষা করা সত্যিই খুব কষ্টের ছিল। কারণ চ্যানেল অন এয়ারে আসতে দেরি হচ্ছিল। এরপর যখন শুরু হয় তখন তো অন্যরকম সব অভিজ্ঞতা কাজ করতে থাকে। মানুষের চারদিক থেকে প্রশংসা শুনতে থাকি। আর এখন তো আমাকে সবাই মন্দিরা বলেই ডাকে। নিজের নাম তো হারিয়েই গেল!’

সিফাত কথাগুলো বেশ আনন্দের সঙ্গেই বললেন। সঙ্গে সঙ্গে আফজাল কবীরও স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন- ‘অনেক গ্রুমিং আর রিহার্সেলের পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ফলে অন্যরকম অনুভ‚তি কাজ করছিল। সর্বোপরি কাজ করার পর পর্দায় নিজেকে দেখে সত্যিই অন্যরকম লাগছিল। বোধকরি চরিত্রের সঙ্গে এতটাই মিশে গেছিলাম যে নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। আড্ডার এক পর্যায়ে আসে জনপ্রিয়তাকে কীভাবে উপভোগ করে তা নিয়ে আলোচনা। সিফাত বলেন, ‘দর্শকদের কাছ থেকে বেশ সাপোর্ট পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষ আমাকে চিনে ফেলে এবং কথা বলে- এটা খুব উপভোগ করি। পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি এবং এখনো পাচ্ছি। আশা করছি দর্শকদের ভালোবাসায় আরো কাজ করবো। আফজাল বলেন, ‘প্রতিদিন ফেসবুকে বেশ ফ্যান ফলোয়ার বাড়ছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় কেউ আমার সঙ্গে কথা বলার সময় অভি দা বলেন। ফেসবুকে এই কথাটা বেশি শুনি। আর আমার ভক্তদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। নাটকের চরিত্রের কথা মাথায় রেখেই আমার সঙ্গে ‘অভি দা’ সম্বোধন করে কথা বলেন। এটা সত্যিই অনেক সম্মানের বিষয়।’

এই নাটকটিতে অভিনয়ের আগে নাইরুজ বেশকিছু বিজ্ঞাপনে মডেলিং করেছেন। তবে নাটকে অভিনয় এটাই প্রথম। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নাইরুজ বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখার চেয়ে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বেশি পছন্দ করি। সেভাবেই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সবার দোয়ায় দেখা যাক কী হয়। এখন দীপ্ত টিভির বাইরেও কাজ করতে পারছেন তিনি। কারণ দুবছরের যে কনট্রাক্ট ছিল তা শেষ হয়েছে। তাই তো এরইমধ্যে সিফাত বেশ কয়েকটি খন্ড নাটক এবং একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ শুরু করেছেন। আরো করেছেন একটি মিউজিক ভিডিও-এর কাজ। নাইরুজ সিফাত ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ কমপ্লিট করেছেন। এখন পুরোপুরি অভিনয় নিয়েই তার ব্যস্ততা।

আফজাল কবীর ‘অপরাজিতা’ ধারাবাহিকের আগে বেশকিছু খন্ড ও ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। তবে তার অভিনয়ের টার্নিং পয়েন্ট এই নাটকটিই। বর্তমানে তিনিও দীপ্ত টেলিভিশনের বাইরে কাজ করতে পারছেন। কারণ তারও দুবছরের কন্ট্রাক্ট শেষ হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক, টেলিফিল্ম এবং ধারাবাহিকে কাজ করা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান আফজাল কবীর। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সফল অভিনেতা হিসেবেই দেখতে চান বলে উল্লেখ করেন। আর এ জন্য তিনি নিজেকে সেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

  • টিভি গাইড
Comments (০)
Add Comment