এটি একটি রাতের গল্প
-হাবিবুল ইসলাম হাবীব
চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা কিংবা প্রেম অনেক আগে থেকেই। আশির দশকে চলচ্চিত্রের নানান আন্দোলনের সঙ্গে তার ছিল সম্পৃক্ততা। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘বখাটে’ নির্মাণ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হন। মঞ্চ নাটকে রয়েছে তার বিশাল ক্যারিয়ার। নাটক-বিজ্ঞাপন নির্মাণেও রয়েছে দক্ষতা। তিনি নির্মাণ করলেন ‘রাত্রির যাত্রী’ শিরোনামে পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি চলচ্চিত্র। পাঠক, এই নির্মাতার নাম হাবিবুল ইসলাম হাবীব। আলোচিত চলচ্চিত্র ‘রাত্রির যাত্রী’ নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সঙ্গে। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।
আনন্দ আলো: ‘রাত্রির যাত্রী’ সিনেমাটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাই?
হাবিবুল ইসলাম হাবীব: ছবিটি সেন্সর থেকে সনদ পেয়েছে। হলে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এর আগে ছবিটি নিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় নানান ধরনের প্রচারনা চলবে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটির প্রচার প্রচারণা চলছে। রাত্রির যাত্রীর সহযাত্রী ফোরাম এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার সহযাত্রী বন্ধুরা করছে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। ফেসবুকে গেলেই দেখা যায় রাত্রির যাত্রী ফ্যান ক্লাব। রাত্রির যাত্রী ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতাসহ সারা বিশ্বের বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন ছবিটি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টা এমন নয় যে, আমি বলে দিয়েছি বলেই তারা করছে। এটা নেহায়েত বাংলা সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই এমন করছে। এ আমার সৌভাগ্য বলা যায়। সিনেমার প্রতি ভালোবাসা দেখে আমি অভিভ‚ত।
আনন্দ আলো: ছবিটি দর্শক কেন দেখবেন? নতুনত্ব কী আছে?
আনন্দ আলো: বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?
হাবিবুল ইসলাম হাবীব: বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রে সুনামী চলছে। বাণিজ্যিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে আমাদের চলচ্চিত্র। শিল্পকে কখনো বাণিজ্যিক করা ঠিক না, তা জানি। তবে সেখানে আবার যদি বাণিজ্য না থাকে তাহলে টিকে থাকা খুব কঠিন। শিল্প ও বাণিজ্য দুটোই এক সঙ্গে হতে হবে।
আনন্দ আলো: ছবির গল্পটা কেমন?
হাবিবুল ইসলাম হাবীব: একটি রাতের গল্প। গ্রাম থেকে শহরে রাতে একটি মেয়ে আসার পর ঘটনাক্রমে নানান ঘটনার মুখোমুখি হয়। এই শহরের রাতের কিছু ঘটনা ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আরো রয়েছে মানবতা বোধ, জীবন সংগ্রাম ও প্রেমের গল্প।
আনন্দ আলো: আপনি তো এক সময় মঞ্চ নাটকের সঙ্গেও দীর্ঘদিন পথ চলেছেন…
হাবিবুল ইসলাম হাবীব: হ্যাঁ। শুধু গ্রæপ থিয়েটারই করিনি। গ্রæপ থিয়েটারের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনও করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় পথনাটক ছিল আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণার উৎস। ‘ব্যারিকেড চারদিক’ শিরোনামের পথনাটক তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অলিগলিতেও মঞ্চস্থ হয়। এছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গেও কাজ করি। এরপর অনেকদিন নানা কারণে কাজ থেকে দূরে ছিলাম। ২০০০ সালের পর প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করি। বিজ্ঞাপনও নির্মাণ করি বেশকিছু। এরপর আবার একটা গ্যাপ। দীর্ঘদিন পর সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শ কিংবা ভালোবাসায় ‘রাত্রির যাত্রী’ নির্মাণ করি। চিত্রনায়িকা মৌসুমী, আনিসুর রহমান মিলন, অরুনা বিশ্বাস, এটিএম শামসুজ্জামান, সালাহউদ্দিন লাভলু, সোনিয়া, মারজুক রাসেল ও সাদিয়া আফরিনসহ অনেকেই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন।
আনন্দ আলো: প্রত্যাশার কথা বলবেনÑ
হাবিবুল ইসলাম হাবীব: প্রত্যাশা তো অবশ্যই অনেক বড়। অন্যরকম একটি গল্পের ছবি এটি। প্রথাগত ভাবনা কিংবা প্রথাগত ফরম্যাটের বাইরে একটি সিনেমা বানানোর চেষ্টা করেছি। দর্শক দেখলেই তা বুঝতে পারবেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বনভোজনে তারকাদের মিলনমেলা
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ৫ মে
আলোচিত ভুবন মাঝি
সম্প্রতি মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’। ছবিটি পরিচালনায় ফাখরুল আরেফীন খান। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট শুরু ১৯৭০ সালে, মুক্তিযুদ্ধের ভোরের সময়। একসঙ্গে তিন সময়ের কাহিনি চলতে থাকে, গল্পে ভীষণ ঠাস বুনন আর ভঙ্গি একদম আলাদা। গল্প শেষ হয় ২০১৩ সালে। এই চলচ্চিত্রের যে কাহিনি শুরু হয় ১৯৭০ সালে তা পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধে কিন্তু কিছু কিছু জীবনের ক্ষত যা পূরণ হওয়ার নয় এমন বেদনা চরিত্রকে বহন করতে হয় আরও দীর্ঘ সময়। স্বাধীন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আবার যুদ্ধাপরাধীদের আসন আর ধর্মান্ধ কাজের একটা গল্প চলতে থাকে, সেই ৬ দফার আন্দোলন থেকে হালের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কুষ্টিয়া লংমার্চ পর্যন্ত এক সূত্রে গেঁথে দেয়ায় পরিচালকের মুন্সিয়ানাকে ধন্যবাদ। তবে ছবির একটি দৃশ্যের পর পর তিনটি সালকে আলাদা আলাদা করে দেখানোটা দর্শক বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে। আর বারবার গল্পে কতক্ষণ আগের দৃশ্য কতক্ষণ পরের দৃশ্য দেখানোয় দর্শক ঠিক মতো রিলেট করতেও সমস্যা হয়েছে। কারণ ছবি চলার সময় অনেকেই বুঝতে পারেনি
ছবিতে শিল্প নির্দেশনার বিষয়টা আরও অনেক ভাবতে হতো। ‘পিন্ডি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা’ দেয়ালের চিকায় সাইনবোর্ড বানানোর ইচ্ছাকে সংযত রাখতে হতো। অতীতের দিনগুলোকে বর্তমান চিত্রায়নে একটু গবেষণা একটু জানাশোনা প্রয়োজন ছিল। রেডক্রসের তিনটা তাঁবু ভীষণ একাকী এবং গল্প থেকে দূরে সাজানো মাঠ মনে হয়, যদিও সেসব দৃশ্যে সেবিকার যুদ্ধে উজ্জীবিত করবার যে তাগিদ তা মনে রাখার মতো। ছবিতে মিজান চরিত্রের অভিনেতা মাজনুন মিজান যে মোটরসাইকেলটি চালিয়েছে তা সময়ের সঙ্গে দারুণ মানিয়েছে। গল্পে ইস্ট পাকিস্তানের পুলিশের এই জনযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টা ভীষণ সরলভাবে চিত্রায়িত। সেজন্য পুলিশগুলো কোন দলের হয়ে কাজ করছিল তা স্পষ্ট ছিল না। তবে ছবিটিতে বেকগ্রাউন্ড মিউজিক ও দৃশ্যায়নের প্রশংসা করতেই হয়।
পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খান বলেন, ‘আমরা একটি ডকুমেন্টারি করছিলাম। সেটি নির্মাণ করতে গিয়ে একজন বাউলকে পাই। পরে তাকে নিয়ে আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এর পরে কুষ্টিয়া গিয়ে আমরা আরো ভালো করে রিসার্চ করি। তখনই আমার এই গল্পের একজন চরিত্র পাই, যার নাম মতিউর রহমান। তার চরিত্রকে আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তাকে ঘিরেই আমি ‘ভুবন মাঝি’র গল্পটি তৈরি করি।’