একটি বইয়ের সুখ দুঃখ

সুজন হায়দার

আমাদের সুখ আছে, দুঃখও আছে। প্রথমে সুখের কথা বলি। আমাদেরকে সবাই বন্ধু ভাবে। আমরা মানুষের প্রিয় বন্ধু। এই যে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এত বড় বইয়ের মেলা হয়ে গেল, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসেছে আমাদেরকে দেখতে। বন্ধুত্ব না থাকলে এটা কি করে সম্ভব। মানুষ আমাদেরকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। পছন্দ করে। আদর করে কাছে টেনে নেয়। আমাদের বই জগতের এক সদস্যের কথা বলি। সে এবারই একুশে বইমেলায় জন্ম নিয়েছে। জন্মেই মেধা ছড়িয়েছে। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য মানুষের কী যে প্রাণান্তকর চেষ্টা। এবার একুশে বইমেলায় আমাদের বাড়িঘর বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। এপারে বাংলা একাডেমি, ওপারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দুই পারেই আমাদের বাড়িঘর সাজানো। রঙিন, ঝলমলে পরিবেশ সর্বত্র। আমরাও সেজেছি রঙিন বর্ণাঢ্য সাজে। মানুষেরা যেমন ঈদ, বৈশাখ, পূজা পার্বনে নতুন করে সাজে আমাদেরও তেমনি নতুন নতুন সাজ। সবচেয়ে আনন্দের হলো আমাদেরকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের সষ্ট্রাও বটে। আমাদের জন্য তার অনেক মায়া ও ভালোবাসা। প্রধানমন্ত্রীর মতো এই দেশের মানুষও আমাদেরকে ভালোবাসে। সেজন্যই তো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসেছে আমাদেরকে দেখতে। সবাই যে আমাদেরকে তাদের বাসায় নিয়েছে তাতো নয়। কিন্তু দেখতে এসেছে প্রতিদিন এটাইবা কম কিসে? আমাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা যে কত গাঢ় তার একটা উদাহরণ দেই। ঐ যে বললাম আমাদের বই জগতে এবার অনেকগুলো মেধাবী বইয়ের জন্ম হয়েছে। সে রকম একটি বই এসেছে মেলায়। পত্রপত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশনে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তার আগমন সংবাদ। প্রতিদিন বইমেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। মেলার গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মুহূর্তে কয়েকশ পাঠক হাজির হয়ে গেল আমাদের সেই বইবন্ধুকে নিজেদের বাড়িতে নেবার জন্য। তখন সে কি উত্তেজনা আমাদের মধ্যে। আমাদের নিজেদের একটা নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটওয়ার্কে কোন বইয়ের কেমন অবস্থা তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বোঝা যায়। মেলায় কোন বই ভালো চলছে, কোন বইয়ের কাটতি বেশ আমরা তা বুঝতে পারি। যখন কোনো বই নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় তখন আমাদের বই জগতেও দারুণ সাড়া পড়ে। আমরা তখন পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান করি। যাকে নিয়ে এত হৈচৈ তাকে দলবেঁধে দেখতে যাই। আমাদের কবি অথবা লেখক আমাদের শরীরে অটোগ্রাফের আদর দিচ্ছেন। সামনে পাঠকের দীর্ঘ লাইন। দৃশ্যটা দেখতে কি যে ভালো লাগে। আমরা অবসরে নিজেদের মধ্যে মানুষের এই ভালোবাসা নিয়ে কথা বলি। যেমন এবারের বইমেলা নিয়ে আমরা খুউব খুশি। আমাদের বাড়িঘর সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। বিদেশ থেকেও অনেক মানুষ আমাদেরকে দেখতে এসেছিল। সবার মুখে শুধুই বইমেলার প্রশংসা আর প্রশংসা। এবার পাঠক বেড়েছে। বাবা-মায়ের কল্যাণে শিশুদের সঙ্গে এবার আমাদের অনেক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। একুশে বইমেলায় ছিল একাধিক শিশু প্রহর। বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা এসেছিল বইমেলায়। শিশুদেরকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সত্যি ওরা ফুলের মতো সুন্দর। ওদের নরম তুলতুলে হাত আমাদের অনেকের শরীর স্পর্শ করছিল। আহ কী যে ভালো লাগছিল। শিশুরা যেদিন আমাদের মেলায় বেশি বেশি এসেছে সেদিন আমাদের কদরও বেড়েছে।

  • প্রতিবেদন
Comments (০)
Add Comment