মোহাম্মদ তারেক: সেদিন আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনটি। শীতের সন্ধ্যায় প্রাণের টানে, বন্ধুত্বের আহ্বানে ছুটে এসেছিলেন সঙ্গীত, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। অনেক দিন পর দেখা হয়েছে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। তাই একজন অন্যজনকে ডেকেছেন ‘তুই’ বলে অথবা আপনি সম্বোধনেও ছিল অনাবিল ভালোবাসা। একই শহরে থাকা হয় অথচ ব্যস্ততার কারণে দেখা হয়ে ওঠেনি অনেকদিন। তাই হাতে হাত মিলানো। উষ্ণ করমর্দন। পরে আড্ডায় মশগুল হয়ে ওঠা। বিশেষ করে সঙ্গীতাঙ্গন নিয়ে একথা সেকথা। এমন নানান মধুর গল্পে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল পরিবেশ।
দিনটি ছিল ৭ জানুয়ারি। শিল্পী তপন চৌধুরীর জন্মদিন। বিশেষ এই দিনের পাশাপাশি সঙ্গীত জীবনে ৪০ বছরের বেশি সময় পার করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী তপন চৌধুরী। বিষয়টিকে উপজীব্য করে বাংলা ঢোলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। এ অনুষ্ঠানে তপন চৌধুরী সঙ্গীত জীবনের চার দশক উদযাপন, শিল্পীর ২১তম একক অ্যালবাম ‘ফিরে এলাম’-এর প্রকাশনা এবং তার সঙ্গীত জীবনের শুরুর দিকে অবদান রাখা সাত গুণীকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। জাকজমকপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের এক মহা মিলনমেলাই যেন বসেছিল। কে হাজির ছিলেন না সেখানে? তপন চৌধুরীকে আশীর্বাদ জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকা রুনা লায়লা, চিত্রনায়ক আলমগীর, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, আলাউদ্দিন আলী, ফরিদ আহমেদ, সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নকীব খান, কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ুব বাচ্চু, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, ফোয়াদ নাসের বাবু, লাবু রহমান, মাকসুদ, সুমনা হক, সাবাতানি, ঝুমু খান, মানাম আহমেদ, শমী কায়সার, সাদিয়া ইসলাম মৌ, বাদশা বুলবুল, আলম আরা মিনু, শওকত আলী ইমন, কবির বকুল, মেহরীন, এসডি রুবেল, অনুপমা মুক্তি, শফিক তুহিন, ক্লোজআপ তারকা সাব্বির, কিশোর, পুলকসহ আরো অনেকে।
ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, তপন খুব বুঝেশুনে গান করে। আমি একটা কথা খুব বিশ্বাস করি আওয়াজ, আন্দাজ এবং রেওয়াজ যার ঠিক থাকবে আজীবন তার গান ভালো হবে এবং শ্রোতারাও তার গান ভালোভাবে নেবেন। তপন নিশ্চয়ই এ তিনটি ঠিকভাবে করে বলেই তার গান এখনো শ্রোতারা আগ্রহভরে শোনেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা ঢোল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক।
বাংলা ঢোল আয়োজিত অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়েছে জানিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, আমি এককথায় অভিভূত, মুগ্ধ। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসেন তা নিজের চোখে দেখে গেলাম। সবার প্রতি আমার ভালোবাসা। বাংলা ঢোলের এনামুল হকের চেষ্টাতে এমন একটি অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে। আমার অনেক ভালোলাগার মানুষদের সঙ্গে আবার দেখা করার, তাদের সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি। সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তপন চৌধুরীর সঙ্গীতে বেড়ে ওঠার জন্য যাদের অবদান রয়েছে তেমন কয়েকজন মানুষকে সম্মানা জানানো হয়। সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন, সুব্রত বড় ুয়া রনি, নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, আমজাদ হোসেন, আলাউদ্দিন আলী, তাজুল ইসলাম ও মিলু খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তপন চৌধুরীর জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান শিল্পী আলম আরা মিনু, সাব্বির, কিশোর, বাদশা বুলবুল, অনিমা মুক্তি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে তপন চৌধুরীর সঙ্গীত জীবনের চারদশক নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ও শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। আয়োজনের শেষ পর্যায়ে তপন চৌধুরীর জন্মদিনের কেক কাটা হয়। এ সময় জন্মদিনের গান পরিবেশন করেন ফাহমিদা নবী।