শীতের প্রস্তুতি!

ঋতু চক্রের পালাবদলে এখন হেমনেৱর শেষ সময়। তাই তো প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। অনেক পরিবারে শীতের পুরোনো পোশাকগুলোই আবার নামিয়ে, রোদে দিয়ে শীত মোকাবিলার আয়োজন চলছে। শীত তো থাকবে মোটে দুই মাস, অথবা আরও কম সময়। তাই বলে কী শীতের পোশাকের ক্ষেত্রে ফ্যাশন বাদ পড়বে? বোধকরি না। বরং শীতেই সবচেয়ে বেশি ফ্যাশনেবল পোশাক দেখা যায়। একটু স্টাইলিশ চিন্তা-ভাবনা যাদের তাদের জন্য সময়টা বেশ আনন্দের। প্রতি বছরই শীত পোশাকের বাহারে কমতি থাকে না। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন শপিং মল থেকে শুরু করে ছোট-বড় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ঘুরে দেখা গেছে নিত্য-নতুন ডিজাইনের শীত পোশাক নিয়েই যত ব্যস্ততা।

এবার শীতে ফ্যাব্রিক বা কাপড়ের ক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্য দেখা যাবে, এমনই জানালেন ডিজাইনাররা। নানা নকশার ‘আউটার উইয়ার’ অর্থাৎ অন্য পোশাকের ওপর পরার মতো আরেকটি পোশাক যেমন- কোট, জ্যাকেট, ব্লেজার, সোয়েটার ইত্যাদি বাজারে আসিতে শুরু করেছে। পশ্চিমা ট্রেন্ড মেনেই নকশা করা হচ্ছে এসবের, তবে কাপড়টা এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী হওয়া চাই এমন চেষ্টাও চলছে। হালকা ধাঁচের এসব শীতের পোশাকের মজাটা হলো- এতে ভেতরের পোশাকটিও তেমন ঢাকা পড়ছে না। অর্থাৎ সামনের অংশে খোলা কোনো সোয়েটার পরলে ভেতরে পছন্দের টি-শার্টটিও পরতে পারেন। প্রিয় টি-শার্ট বা টপসগুলো গরমের জন্য তুলে রাখার তেমন প্রয়োজন নেই। ব্লেজারের বেলাতেও তাই। সামনের অংশে বোতাম দেয়া শীতের পোশাক এখন কমই দেখা যাচ্ছে। সোয়েটারের গলাও বেশ বড় চলছে। অসমান কাটের সোয়েটারও এই শীতে বেশ দেখা যাবে। শীতের পোশাকে কাটের বৈচিত্র্যের কথাই জানালেন প্রাইড গ্রুপ রিটেইলের বিপণন ও যোগাযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক সুম্বল মোমেন। তাঁদের ব্র্যান্ডের অধীনে আরবান ট্রুথ ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাচ্ছে শীতের পোশাকের নতুন সংগ্রহ।

গত বছরের তুলনায় এবার শীতের পোশাকের ট্রেন্ডে বড় পার্থক্য হলো রং। উজ্জ্বল রং, ক্লালার ব্লকিং, চড়া প্রিন্ট এসব এ বছর তেমন চলছে না। রঙের বেলায় বেশ সংযত ভাবটাই এ বছর দেখা যাবে। ‘নিউট্রাল রং’ যেমন: কালো, ছাই, ধূসর, বাদামি ইত্যাদির দাপট থাকবে এবার। তবে রঙের বৈচিত্র্যে মেতে উঠতে বাধা নেই। কারণ সেই লেয়ারিং। বাদামি ব্লেজারের সঙ্গে পরে নিন গাঢ় সবুজ বা সাদা-কালো স্ট্রাইপের জাম্পস্যুট। কিংবা ছাই কোটের তলায় থাক লাল বা বেগুনি টি-শার্ট।

পাতলা বা কৃত্রিম চামড়া, জিন্স, সুতি, গ্যাবার্ডিন, মখমল কাপড়ের ব্লেজার বা জ্যাকেট, উলের তৈরি পাতলা নানা রঙের সোয়েটার ইত্যাদি বেশ চলবে এবারের শীতে। হুডি জ্যাকেটও মিলবে বাজারে। উলের সোয়েটারে গোল গলার পাশাপাশি ভি গলা চলছে। সামনের দিকে বুক পর্যন্ত কেটে কোনোটিতে আবার দু’তিনটি রঙিন বোতাম এঁটে দেয়া আছে। ফুল হাতার এসব সোয়েটারের হাতার দিকে আলাদা রং তার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলেছে। গ্যাবার্ডিন কাপড়ের ক্যাজুয়াল ব্লেজারে এক রং ছাড়াও মিলবে নানা ধরনের ওয়াশ। ফলে এগুলো বেশ বৈচিত্র্যময়। জ্যাকেট বা ব্লেজার, যেটাই পরুন না কেন, সঙ্গে হাইনেক বুট আর গলায় পেঁচিয়ে নিতে পারেন স্কার্ফ। ব্যস, এটুকুতেই এই শীতে আপনি হয়ে উঠতে পারেন আকর্ষণীয়।

ডিজাইনের পাশাপাশি দামের ভিন্নতা রয়েছে শীতের পোশাকে। তবে বিভিন্ন ধরনের চামড়ার নকশা করা জ্যাকেট কেনা যাবে ১৮০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। ক্যাজুয়াল ব্লেজার মিলবে ১৪০০ থেকে ৪০০০ টাকায়। হুডি জ্যাকেট বা সোয়েটার দোকান ভেদে কেনা যাবে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। তা ছাড়া উলের সোয়েটারের দাম পড়বে ৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত।

শীতে চাদর মুড়ি দেয়ার রেওয়াজ নতুন নয়। কোট, জ্যাকেট, জাম্পার প্রভৃতি যত কেতাদুরস্তই হোক, শীত আটকাতে চাদর মুড়ি দেয়ার উষ্ণ অনুভবের তুলনা হয় না। উপমহাদেশে, বিশেষত এই বাংলায় শীতবস্ত্র হিসেবে চাদরের ব্যবহার চলছে প্রাচীনকাল থেকে। অভিজাত শ্রেণির লোকেরা কাঁধে ঝোলান সূক্ষ্ম সুতার কারুকাজ করা বিখ্যাত কাশ্মিরী শাল। গরিবের গায়ে সুতির চাদর। আরও এক প্রকারের জিনিস আছে, তা হলো- উত্তরীয়। শীত নিবারণের চেয়ে এই বসৱুটি অধুনা সম্মাননা জ্ঞাপনার্থেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। উত্তরীয়ের সঙ্গে বেশ রাবীন্দ্রিক ভাব আছে। ‘কাশ্মিরী শাল’ বলে ব্যাপক পরিচিত এই শীতবস্ত্রটি ভারতের কাশ্মির ও পাকিস্তানি কাশ্মির উভয় এলাকাতেই তৈরি হয় এবং আমাদের দেশেও বেশ সহজলভ্য। পুরুষদের চিকন পাড় শালের (পাকিস্তানি) দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। মোটা পাড় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। মহিলাদের শাল (সিঙ্গেল) ৬৫০ থেকে এক হাজার টাকা। ভারতীয় শালের দাম এর চেয়ে কিছুটা চড়া। পাড়হীন শাল অর্থাৎ আলোয়ান আছে বেশ কয়েক রকমের। বুননের বৈচিত্র্যের ওপর এগুলোর দাম নির্ভর করে। তুষ, নূর এমন বিভিন্ন ধরনের নাম আছে এসব শালের। দাম একটু বেশি। ওম হয় ভালো। পাওয়া যাবে নিম্নে ১ হাজার ৫০০ থেকে ঊর্ধ্বে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

আর্টিস্টি, ওটু, একস্ট্যাসি, আরবান ট্রুথ, ফ্রিল্যান্ড, স্মার্টেক্স, তানজিম স্ট্রিট, ওয়েস্টেকস, ক্যাটস আই, প্লাস পয়েন্ট, ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট ও তার আশপাশ, উত্তরা, ধানমন্ডির বিভিন্ন শপিং মল, মিরপুর ছাড়াও রাজধানীর প্রায় মার্কেটেই কিনতে পারেন শীতের পোশাক। অপেক্ষাকৃত নতুন ব্র্যান্ড যেমন: রেলুসে, নয়ের, সিকোসোর সংগ্রহও বেশ আকর্ষণীয়। ঢাকার বনানী ১১ নম্বর সড়ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে, যমুনা ফিউচার পার্ক, আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ও বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে পাবেন শীতের পছন্দের পোশাক। এছাড়াও দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতেও পাবেন শীতের পোশাকের বিশাল সমারোহ। আড়ং, অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, রং বাংলাদেশ, অন্যদিন, প্রবর্তনা, নগরদোলা, সাদাকালো, বিবিআনাসহ বিভিন্ন দেশীয় হাউজে পাবেন শীতের চাদর ও কটিসহ আরো পোশাক।

  • ফ্যাশন কর্নার
Comments (০)
Add Comment