পাশের দেশের জাহাজওয়ালাদের অনেকেই ব্যাপারটা বোঝে। তাই তারা নাটক নামক জাহাজটিকে যেখানে সেখানে থামায় না। নির্ধারিত কিছু স্টেশনে থামায়। ফলে খুব দ্রুত এবং স্বচ্ছন্দে গনৱব্যে পৌছা যাবে ভেবে যাত্রী এইসব জাহাজে উঠে পড়ে। ফলে দেশী জাহাজে যাত্রী কম হচ্ছে বলে অনেকের ধারনা। অন্য একটি গ্রুপ এই ধারনা মানতে নারাজ। তাদের মনৱব্য আমাদের অধিকাংশ জাহাজের ভেতর আধুনিক সুযোগ সুবিধা নাই বলে যাত্রী সহজে আকর্ষন বোধ করে না। অর্থাৎ আমাদের টিভি নাটক কাহিনী থেকে শুরু করে কারিগরি ক্ষেত্রেও এখনো আধুনিক মানের হতে পারেনি তাই দর্শক তেমন আগ্রহ পাচ্ছে না।
ডিরেক্টরকে বলা হয় ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। অর্থাৎ তিনিই জাহাজের নাবিক। তিনি যেভাবে জাহাজ চালাবেন সেভাবেই জাহাজ চলবে। নাটক, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে গিয়ে এই কথাটা প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে নাটক, সিমেনা কি জাহাজের মতো কিছু? তা নাহলে জাহাজের সাথে তুলনা করা হয় কেন? ধরা যাক, নাটক, সিনেমা জাহাজের মতই কিছু। একজন ক্যাপ্টেন এই জাহাজটি চালান। ঝড়, ঝঞ্চা, নদী সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ, দৈত্যরূপী স্রোতকে উপেক্ষা করে তিনিই জাহাজ চালিয়ে নিয়ে যান নির্ধারিত গনৱব্যে। যিনি জাহাজ চালনায় যত বেশি দক্ষ, তার জাহাজে যাত্রীও থাকে বেশি। নাটক, সিনেমার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। যে পরিচালক ভালো নাটক বানান তার নাটক দেখার জন্য দর্শক মুখিয়ে থাকে। তাই যদি হয় তাহলে আমাদের দেশে টিভি নাটক ও সিমেনার এতো করুন অবস্থা কেন? কয়েকদিন আগে নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচন উপলক্ষেই জানা গেল ডিরেক্টরস গিল্ড-এর সদস্য সংখ্যা প্রায় চারশ। অর্থাৎ দেশে শুধুমাত্র টিভি নাটক বানায় এমন পরিচালকের সংখ্যা চারশ। অর্থাৎ আমাদের আছে ৪শ ক্যাপ্টেন। আমরা প্রায় চারশ ক্যাপ্টেন জাহাজ চালাচ্ছি। তবুও অনেক যাত্রী উঠছে ভিনদেশী জাহাজে। নিজের দেশের জাহাজে উঠতে অনেকেই নারাজ। তাদের পছন্দ ভিনদেশী জাহাজ। তার মানে আমরা কি জাহাজ চালাতে অক্ষম? তাই বা বলি কি করে? ৪শ জন ক্যাপ্টেন। সবাই কি অক্ষম? নাকি আমাদের জাহাজ আধুনিক মানসম্পন্ন নয়? সেটাইবা বলি কি করে? আধুনিক ধ্যান ধারনার অনেক নির্মাতা আছেন আমাদের দেশে। তবুও আমাদের জাহাজে যাত্রী উঠতে চায় না কেন? এ ব্যাপারে কয়েকজন দর্শক প্রায় অভিন্ন মনৱব্য করলেন। তারা বললেন, বর্তমান যুগ হলো গতির যুগ।
আমরা দ্রুত গনৱব্যে পৌছাতে চাই। ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে এমনকি বিমানে উঠেই কখন গনৱব্যে পৌছাব এই চিনৱায় ছটফট করতে থাকি। সে কারনে যে যত কম সময়ে গনৱব্যে পৌছে দিতে পারবে তার প্রতিই আকৃষ্ট হই। নাটক, সিনেমার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। উদাহরণ দিতে গিয়ে তারা বললেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে টিভি নাটক টিভিতে প্রদর্শন শুরু হলে ঠিক কখন শেষ হবে তা বলা মুশকিল। বিজ্ঞাপন হলো এক একটা স্টেশন। নাটক যদি হয় একটা জাহাজ তাহলে অবস্থা দাঁড়ায় এরকম জাহাজটি বিজ্ঞাপন নামক ছোটবড় স্টেশনে এতোবার থামে যে যাত্রী বিরক্ত হয়। জাহাজটিতে সহজে উঠতে চায় না। অথচ পাশের দেশের জাহাজওয়ালাদের অনেকেই ব্যাপারটা বোঝে। তাই তারা নাটক নামক জাহাজটিকে যেখানে সেখানে থামায় না। নির্ধারিত কিছু স্টেশনে থামায়। ফলে খুব দ্রুত এবং স্বচ্ছন্দে গনৱব্যে পৌছা যাবে ভেবে যাত্রী এইসব জাহাজে উঠে পড়ে। ফলে দেশী জাহাজে যাত্রী কম হচ্ছে বলে অনেকের ধারনা। অন্য একটি গ্রুপ এই ধারনা মানতে নারাজ। তাদের মনৱব্য আমাদের অধিকাংশ জাহাজের ভেতর আধুনিক সুযোগ সুবিধা নাই বলে যাত্রী সহজে আকর্ষন বোধ করে না। অর্থাৎ আমাদের টিভি নাটক কাহিনী থেকে শুরু করে কারিগরি ক্ষেত্রেও এখনো আধুনিক মানের হতে পারেনি তাই দর্শক তেমন আগ্রহ পাচ্ছে না।
এক্ষেত্রে কি বলেন আমাদের নাট্য পরিচালকেরা অর্থাৎ ক্যাপ্টেনেরা? ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে ডিরেক্টরস গিল্ড-এর নির্বাচনে ডিরেক্টরদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে সবাই খুব খুশি হয়েছে। পাশাপাশি অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে দেশে এতো ডিরেক্টর থাকতে আমাদের নাটক নামক জাহাজে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না কেন? কে দিবে এর জবাব?
নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে দাঁড়িয়েছিলেন চয়নিকা চৌধুরী। তিনি তার এক প্রচারপত্রে বলেছেন, ভালো কাজ কখনো একা হয় না। ভালো কাজ সবাইকে নিয়ে করতে হয়। নির্বাচন উপলক্ষে এই যে নতুন, পুরাতনের জোয়ার দেখা দিয়েছে তা অনেক আনন্দের, ভালো লাগার। ডিরেক্টরস গিল্ড-এর প্রতি আমাদের মায়া আছে, ভালোবাসাও আছে। কিন্তু ভালোবাসা থাকলেই চলবে না। একটি সংগঠনের উন্নতি করার জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি অনেক সময়ও দিতে হয়। একথা বলছি এ কারণে যে, এর আগে আমি কমিটিতে ছিলাম। ২৪টি সভার মধ্যে ২৩টি সভায় উপস্থিত থেকেছি। প্রায়শই ৪/৫ জন ডিরেক্টর অপেক্ষায় থাকতাম কখন কোরাম পূর্ণ হবে এই ভরসায়।
সময় বদলেছে। এবার প্রায় ৪শ জন ডিরেক্টর উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের নেতাদের নির্বাচিত করেছে। আমাদের বিশ্বাস এবার কাজের কাজ কিছু একটা হবে। অর্থাৎ আমাদের নাটকের জাহাজেই বেশি যাত্রী হবে। তা নাহলে হয়তো একদিন ক্যাপ্টেনদের কোন দাম থাকবে না।
পরিচালকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করতে চাই
-গাজী রাকায়েত, সভাপতি, ডিরেক্টরস গিল্ড
একটি জাহাজে ৩৮৬ জন যাত্রী। সেই জাহাজের ক্যাপ্টেন কে হবে যার প্রত্যেক যাত্রী এক একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন? ডিরেক্টরস গিল্ড বুদ্ধিমান, নেতৃত্ব প্রদান কারী সংগঠন। আমি মনে করি নতুন পুরাতনেরা সংমিশ্রনে ডিরেক্টরস গিল্ড এর কার্যনিবার্হী পরিষদকে সাজানো উচিৎ। প্রযোজনা সংস্কৃতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টানৱ প্রতিষ্ঠা করুক ডিরেক্টরস গিল্ড। জয় হোক পরিচালকদের।
নির্বাচনী ঘোষণাপত্রে এমনটাই লিখেছিলেন গাজী রাকায়েত। ডিরেক্টরস গিল্ড এর সভাপতি নির্বাচিত হবার পর আনন্দ আলোয় এক সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলেছেন।
আনন্দ আলো: অনেক অভিনন্দন। ডিরেক্টরস গিল্ড এর সভাপতি হলেন, কেমন লাগছে?
গাজী রাকায়েত: খুউব ভালো লাগছে। কৃতজ্ঞতা জানাই সংগঠনের সকল সদস্যের প্রতি। কথাতো অনেক হলো এবার কাজ করার পালা।
আনন্দ আলো: সংগঠনের জন্য প্রথম কোন কাজটি করতে চান?
গাজী রাকায়েত: এখন থেকে আমার কাজই হবে পরিচালকদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে কাজ করে যাওয়া। আমাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের সংকট রয়েছে তা দূর করতে চাই। পরিচালকেরা নানা রকম অসহায়ত্বে ভোগে। যেমন অনেকে ঠিক মতো সম্মানী পান না। নাটক নির্মাণের পর সেটি আসলে কোথায় প্রচার হবে এরকম অনিশ্চয়তায় ভোগেন অনেক পরিচালক। তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সব চেয়ে বড় কথা একজন শিল্পী যেমন খুশি মনে নাটকের সেটে যায় এবং অভিনয় শেষে খুশি মনে বাসায় ফিরে আসে পরিচালকের ক্ষেত্রটিও তাই হওয়া উচিৎ। পরিচালক হলেন ক্যাপ্টেন অব দ্যা শিপ। কাজেই তাকে সেভাবেই মর্যাদার জায়গায় দাঁড় করাতে চাই।
আনন্দ আলো: নাটক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যৌথভাবে কাজ করার ভাবছেন বলে শোনা যাচ্ছে…
গাজী রাকায়েত: হ্যা, এই মুহূর্তে বিষয়টি আমার কাছে বেশ গুরুত্বপুর্ন। একজন পরিচালককে নাটক নির্মাণ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিভাগের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। কাজেই একটা ভালো কাজের জন্য সবার মাঝে ঐক্য জরুরি। আমরা সব সংগঠন যেমন- অভিনয় শিল্পী, টেকনিশিয়ান, মেকআপম্যান, প্রযোজক সহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিলে একটি বড় জোট গঠন করতে চাই। এটি ফেডারেশনের মতো একটি জোট হবে। এটা করা গেলে আমাদের শোবিজে সবার জন্যই একটি কাঙ্খিত পরিবর্তন আনা সম্ভব।