চোখ মেলে ঘুরে আসুন বাংলাদেশে!

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অসাধারণ কিছু দশর্নীয় স্থান যা দেখলে অনেকেরই বিশ্বাস হবেনা এটা আমাদের দেশেরই কোনো জায়গা। বিশেষ করে বান্দরবান ও সিলেটের কিছু পাহাড়ী অঞ্চল আছে যা দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। একদিকে যেমন সবুজের লীলাভূমি অন্যদিকে পাহাড়ী প্রাকৃতিক বড় বড় ঝর্না হৃদ আর জলাভূমি। পাহাড় থেকে নেমে আসা বিশুদ্ধ টলটলে পানি হৃদে বা জলাভূমিতে নেমে এসে অপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা করেছে যা দেখলে সত্যি অবাক হবেন পার্বত্য জেলা বান্দরবান-এ এরকম হাজার হাজার হৃদ বা জলাভূমি রয়েছে। এই জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছোটবড় অনেক টুরিস্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে সেখানে গেলে অসংখ্য দশর্নীয় স্থানের খোঁজ পাবেন। এই সব টুরিস্ট প্রতিষ্ঠানে দশর্নীয় স্থান পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ রয়েছে সেই মোতাবেক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পছন্দের জায়গা ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকায় অবস্থিত বান্দরবান ও সিলেটের দশর্নীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখার অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন যাওয়ার আগে।

মনে রাখবেন আপনি বান্দরবান বা সিলেটের অসাধারণ পাহাড়ী অঞ্চল দেখতে যাওয়ার সময় অবশ্যই পাঁচ বা দশ জনের টিম করে যাবেন। অথবা টুরিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করলে তারাই আপনাকে বড় বড় টিমে অনত্মর্ভুক্ত করে নেবে। পাঁচ বা দশজনের টিমে যাওয়ার কারণ অপরিচিত পাহাড়ী অঞ্চলে যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যায় পড়তে পারেন। তাছাড়া ভ্রমণ খরচও অনেক সাশ্রয় হবে টিমে বেশি সদস্য থাকলে। টুরিস্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে আজই ঠিক করে নিন কয়েকটি দিন নিজের মতো করে কোথায় কাটাবেন।

এখন মার্চ মাস। ঋতুরাজ বসনত্মকাল। না গরম না শীত আবহাওয়া। এমন অসাধারণ আবহাওয়ায় পরিবার নিয়ে তিন থেকে চার দিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন বান্দরবান বা সিলেট থেকে। দেখবেন ঘুরে আসার পর মনটা কেমন চাঙ্গা হয়। পরিবারের সদস্যরাও এই আনন্দ উপভোগ করার পর ভালো থাকবে।

অনেকেই আছেন বান্দরবান ও সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে নিরাপত্তা ও খাওয়া দাওয়ার বিষয় ভেবে পিছিয়ে যান। এটা অবশ্যই আগে মাথায় রাখা দরকার যে পরিবারের নিরাপত্তা সবার আগে ভাবা প্রয়োজন। তারপর ভূরিভোজের বিষয়টি সামনে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ী অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া টুরিস্ট গাইড প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘুরতে গেলে প্রতিষ্ঠান থেকেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা আগে নিশ্চিত করা হয়। আগে থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই প্যাকেজ ট্যুর সাজান তারা। তবে শর্ত একটাই পাঁচ বা দশজনের টিম থাকা চাই।

খাবার দাবার সংকটে একটা সময় মানুষ দশর্নীয় এসব জায়গায় ঘুরতে যেতে পারত না। এসব অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো বড় নৌকা, স্পীড বোর্ড। এই বাহন থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয় দশর্নীয় স্থানে। তাই সঙ্গে করে খাবার নেয়া অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। ইদানিং এই টুরিস্ট পয়েন্টে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান অনেক খাবারের দোকান। ঘুরতে যাওয়ার সময় খাবারের অর্ডার দিয়ে আসার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গরম গরম খাবার হাজির করে দিবে সামনে। ইচ্ছা করলে টুরিস্ট প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ করে। খাবারের মধ্যে আছে বাঙ্গালী খাবার, পাহাড়ী খাবার ও স্যানক্স। পাহাড়ী অঞ্চলের হাঁস, মুরগী, মাছ অথবা সবজির নানা পদের সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন। এছাড়া প্রতিটি স্পটেই পাবেন বোতলজাত পানি।

কিভাবে যাবেন: বান্দরবানের দশর্নীয় স্থান দেখতে গেলে ঢাকা থেকে অথবা দেশের যে কোনো প্রানত্ম থেকে আগে বান্দরবান সদরে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে গাড়িতে বা নৌকায় গনত্মব্যে পৌঁছাতে পারেন। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে তার মধ্যে আছে ডলফিন, সেন্ট মার্টিন, গ্রীন লাইন ও সোহাগ পরিবহণ। ডলফিন ও সেন্ট মার্টিন ঢাকা থেকে সরাসরি সার্ভিস এসি ও নন এসি। অন্যান্য পরিবহণ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পর সেখান থেকে বান্দরবান অভিমুখে রওনা হবে তাদের অন্য একটি বাসে। অনুরূপভাবে সিলেটে যারা যেতে চান তারা ঢাকা থেকে ট্রেনে  অথবা বাসে প্রথমে সিলেট যাবেন তারপর সেখান থেকে গাড়ি নৌকা বা স্পীডবোর্ডে গনত্মব্যে যেতে হবে।

কোথায় থাকবেন: সারাদিন অর্থাৎ ভোর পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যনত্ম ঘুরে ফিরে অবশ্যই আপনাকে ফিরে আসতে হবে বান্দরবান অথবা সিলেটের সদরে। কারণ এই দুই জেলার টুরিস্ট জোনে এখন পর্যনত্ম নিরাপদ ও ভালো মানের হোটেল গড়ে উঠেনি। অনেকে ১০/১২ জনের টিম করে তাঁবু টাঙ্গিয়ে টুরিস্ট জোনে থাকার চেষ্টা করেন এটা নিরাপদ নয়।

জাদিপাই ঝর্না

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাহাড়ি সবুজের সমারোহ আর মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা কার না থাকে! এ জন্য বান্দরবানের জুড়ি নেই। নীলগিরির জাদিপাই ঝর্নায় গেলে মেঘের সঙ্গে খেলা করার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে।  নীলগিরির পাহাড়ে  পাহাড়ে যেন মেঘের বসবাস। আপনাকে মেঘ ছুঁয়ে যাবে তার অনাবিল মায়াবেষ্টনি দ্বারা। যা আপনাকে বারবার টেনে নিয়ে যাবে ঐ মেঘের কোলে।

শৈল প্রপাত

শৈলপ্রপাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর এক অপূর্ব সৃষ্টি। কেওক্রাডংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে সুউচ্চ বড় পাহাড়গুলো ঠিক আপনার পায়ের নিচে মনে হবে। ঝর্নাগুলো অরণ্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিস্ময়কর রূপ নিয়ে। পাহাড়কে ক্রমাগত ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে গায়ে রংধনু এঁকে দিচ্ছে এইসব ঝর্না। আধখানা চাঁদের আকৃতি নিয়ে রিমঝিম শব্দে সারাটা এলাকা মাতিয়ে রেখেছে যে ঝর্না, তার নাম শৈলপ্রপাত। এ ছাড়া বান্দরবানের বগালেক, রিঝুক ঝর্না, চিংড়ি ঝর্না ও  মিলনছড়িসহ আরও বেশ কয়েকটি দেখার মতো স্থান রয়েছে।

মেঘ আর পাহাড় যেথায় লুকোচুরি খেলে

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির বা প্যাগোডা ঐতিহাসিক স্বর্ণমন্দির। সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি সুদৃশ্য এই স্বর্ণমন্দিরটি আসলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান। পাহাড়ের খাদে কৃত্রিম হ্রদ, শিশুপার্ক, নৌকা ভ্রমণ, ঝুলনত্ম সেতু ও চিড়িয়াখানা নিয়ে মেঘলার অপরূপ সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। পাহাড়ের ওপর নির্মিত নীলাচল ও শুভ্রনীলা থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার দৃশ্য অপরূপ। ২৫০০ ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে এ অপরূপ বিচিত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন চিম্বুকে। পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে ভেসে যাওয়া মেঘের ভেলা দেখতে পাবেন।

সুন্দরবনে কত অজানা

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। এই বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী। সুন্দরী গাছের আধিক্যের জন্য এই বনের নাম সুন্দরবন। পৃথিবীর অন্যতম এই বনটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এই বনের ৬০ ভাগ বাংলাদেশের, ৪০ ভাগ ভারতের। বাংলাদেশের অংশে এর বিসত্মৃতি ৪১১০ বর্গ কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে পৃথিবীর বিরল প্রজাতির বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এখানে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখি দেখা পাবেন। তার বেশির ভাগই অজানা। ১২০ প্রজাতির মাছ ছাড়া এখানে পাবেন ৪০ প্রজাতির সত্মন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ। আছে নানান ধরনের হরিণ। সুন্দরবনে নৌ, রেল ও বাসে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব সাড়ে ৪শ কিলোমিটার।

কুয়াকাটায় সূর্যোদয় ও সূর্যাসত্ম

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। বরিশাল বিভাগের শেষ মাথায় পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণে এর অবস্থান। এর দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার।

কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাসত্ম দেখা যায়। ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির  বাঁক থেকে আর সূর্যাসত্ম দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। কুয়াকাটা খুবই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও কোলাহলমুক্ত। যারা একটু নিরিবিলি পছন্দ করেন তাদের জন্য বেড়ানোর আদর্শ জায়গা কুয়াকাটা। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে গড়ে তোলা হয়েছে পরিকল্পিত ইকো পার্ক।

সিলেটের লালাখাল: স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দুধারের অপরূপ সৌন্দর্য্য দীর্ঘ নৌপথ ভ্রমণের সাধ যে কোনো পর্যটকের কাছে এক দুর্লভ আকর্ষণ তেমনি এক নির্জন মন কাড়া স্থান লালাখাল। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান এবং রাতের সৌন্দর্য্য ভরপুর এই লালাখাল সিলেট জেলার জৈনত্মাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। নদীর স্বচ্ছ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীড বোর্ডে করে আপনি যেতে পারেন লালাখাল। যাবার পথে আপনার দু’চোখ জুড়িয়ে যাবে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সিলেট শহর থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট লাগে লালাখাল যেতে। কী সুন্দর নীল পানি। একেবারে মাটি দেখা যায় পানির দিকে তাকালে। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান।

কংলাক ঝর্না: বান্দরবান সদরে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। হোটেল ফোর স্টার, হোটেল গ্রিন হিল, হোটেল হিল বার্ডসহ আরও অনেক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। এছাড়া পর্যটন কর্পোরেশনেরও হোটেল ও মোটেল রয়েছে।

সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। থ্রি স্টার হোটেল পর্যনত্ম পাবেন এখানে। পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল রয়েছে সিলেট সদরে। আছে সুপ্রীম নামে একটি নাম করা হোটেল। নিচে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো ইচ্ছে করলে একবার ঘুরে আসুন।

  • ভ্রমণ
Comments (০)
Add Comment