সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্যশিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে তপন কান্তি সরকার অন্যতম। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করার পর তিনি যোগ দেন ‘প্রোফাইল লিমিটেড’এ। ২০১৪ সালে নিজে গড়ে তোলেন থ্রী পয়েন্টস কনসালটেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। মেধাবী এই আর্কিটেক্ট বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরী করেছেন। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রায় দশটির অধিক আর্কিটেকচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা। এবার শাহ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক
ভবিষ্যতে আরো নানান ধরনের কাজের সাথে যুক্ত থাকতে চাই। শুধু ব্যক্তিগত কাজ নয়, পাবলিক কাজের মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে অবদান রাখতে চাই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে দেশের সম্মান বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখি। কথা গুলো বললেন স্থপতি তপন কান্তি সরকার। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদরে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তপন কান্তির বাবা মৃতঃ সাধন চন্দ্র সরকার। মা অর্পনা রানী সরকার সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। স্থপতি তপন কান্তি সরকার দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকাআঁকি ছিল তার পছন্দের বিষয়। সৃষ্টিশীল কোনো কিছু করার উদ্দেশ্যে স্থপতি হওয়া তার।
আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ২০০০ সালে। ২০০২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৯ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করার পরপরই তপন কান্তি যোগ দেন ‘প্রোফাইল লিমিটেড’ এ।

সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে পাঁচ বছর কাজ করেন। ২০১৪ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘থ্রী পয়েন্টস কনসালটেন্ট’ নামের একটি ফার্ম। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তপন কান্তি সরকার দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, ভ্যাকেশন হাউজ ও রিসোর্ট, মসজিদ, স্কুল, অফিস বিল্ডিং, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ডুপলেক্স বিল্ডিং, ট্রিপলেক্স বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে সাইর মোহাম্মদ পাড়া জামে মসজিদ, জিনাত বাটিকা ভ্যাকেশন হাউজ, খুলনার শাহ্পুরে রুগুনাথপুর হাইস্কুলের বিজ্ঞান ভবন, নেত্রকোনায় গ্রীণ ভিউ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মহাখালি ডিওএইচএস-এর এবিএম মোখলেছ ম্যানসন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, এবিএম প্রতিক্ষা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, কক্সবাজারে ব্যক্তিগত ডুপলেক্স ভবন জল আঙ্গিনা, মহাখালি ডিওএইচএস-এ এবিএম জাহান ভিলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। এ ছাড়াও মানিকগঞ্জে স্টোন ব্রিকস লিমিটেডের ফ্যাক্টরি অফিস, মহাখালি ডিওএইচএস এ প্রান্তিক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, নেত্রকোনায় সোবহান ভিলা ট্রিপলেক্স, হক ভ্যাকেশন হাউজ ও রিসোর্ট সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে তার।
স্থাপনার কাজে তপন কান্তির রয়েছে অসম্ভব সাফল্য। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তিনি পুরস্কৃত হয়েয়েছন। যার ফলশ্রুতিতে তার সাফল্যের ঝুড়িতে জমা হয়েছে সেরা কর্মের স্বীকৃতি। উল্লেখযোগ্য অ্যাওয়ার্ড গুলোর মধ্যে রয়েছে। আমেরিকান আর্কিটেকচার মাস্টার প্রাইজ ২০২২, লন্ডন ওপেল অ্যাওয়ার্ড ২০২২, লন্ডন এল আইসিসি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, দেশ-বিদেশের প্রায় দশটির অধিক আর্কিটেকচার ম্যাগাজিনে তাদের কাজ প্রকাশিত হয়েছে।
২০০৪ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম ঝুলন রানী সরকার। তিনি সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। এই দম্পতি দুই কন্যা সন্তানের জনক-জননী।
স্থপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, থ্রী পয়েন্টস কনসালটেন্ট তার শুরু থেকেই একটি স্বতন্ত্র ধারা বজায় রেখে কাজ করে চলছে। আমরা বিশ্বাস করি সহজ ও সরল থেকেই অসাধারন কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়। থ্রী পয়েন্টসের স্লোগানই হলো সাধারন পরিকল্পনা অসাধারন প্রভাব। কিন্তু এই সরল পরিকল্পনা বলা যত সহজ, তার বাস্তবায়ন কিন্তু ততটাই কঠিন। অনেক কিছু কাট ছাঁট করে তবেই কিন্তু সরলতা তৈরী হয়। তার জন্য দরকার একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রম। স্থপতি ও প্রকৌশলীর মাঝে আন্তঃ সম্পর্ক ও সহযোগিতা তাদের মূল শক্তি। শক্তিশালী টিমওয়ার্ক ও পারস্পারিক বোঝাপড়া তাদের চলার পথের পাথেয়। একটি প্রকল্পের সাথে যুক্ত সকলেই এমন কি একজন লেবারও যদি মনে করে প্রকল্পটিতে তারও অধিকার আছে, তবেই একটি প্রকল্প সার্থক হয়ে তৈরী হয়। থ্রী পয়েন্টস এই ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। আর তখনই তৈরী হয় একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নান্দনিক নির্মাণ। এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্থপতিরা রাতারাতি কোনো কিছু বদলে দিতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে অনুপ্রাণিত করতে পারেন ও ভালো কিছুর উদাহরণ তৈরী করতে পারেন। থ্রী পয়েন্টসও চায় তাদের কাজের মাধ্যমে দেশ ও সমাজে অবদান রাখতে এবং দেশের মুখ সারা পৃথিবীতে উজ্জ্বল করতে।