Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিও টিমওয়ার্কে বিশ্বাসী

এ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে সেলিম আলতাফ বিপ্লব, তামান্না সাঈদ ও খালিদ বিন কবির অন্যতম। তিনজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন। তাদের রয়েছে ‘ইন কোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিও’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। যা এখন এ দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত আর এক স্থপতি খুদিস্তা মাহজাবীন সিমি ২০২৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিওকে একটা আস্থার জায়গায় আনার পেছনে রয়েছে তাদের পুরো টিমের পরিশ্রম। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করে অনেকের নজর কেড়েছে। ২০১৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক কম্পিটিশনে প্রথম হয়ে তারা বাংলাদেশে কাতারের দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনটির কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাদেরকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক
আমাদের ডিজাইন স্টুডিওটা অনেকটা ব্যান্ড দলের মতো। এখানে সবার ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি নির্ভর না হয়ে দলগত প্রচেষ্টাকে এখানে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে এই ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিওর জন্ম। এই তরুণরাই একদিন অভিজ্ঞ হয়ে আরো নতুন তরুণদের নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে চলমান রাখবে এটাই আমাদের প্রচেষ্টা। কথা গুলো বললেন স্বনামধন্য স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব।
ইট, কাঠ, বালু ও কংক্রিটের মাঝেই তিনি খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই প্রতিটি স্থাপনায় থাকে সবুজের ছোঁয়া। ঘর-বাড়ি প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজ সহ প্রকৃতিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। স্থপতিরা সব সময় চিন্তা করেন তাদের কাজটা যেন পরিবেশ বান্ধব হয়। সুন্দর দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি পরিবেশ সহনীয় স্থাপত্যচর্চাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
১৯৯৭ সালে বিপ্লব ও তামান্না দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে বন্ধু সহপাঠী প্যাট্রিক ডি’রোজারিওকে সঙ্গে নিয়ে নিজেরা গড়ে তোলেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে খালিদ বিন কবির বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। আর ২০১০ সালে একই প্রতিষ্ঠানকে স্নাতক হন খুদিস্তা মাহজাবীন সিমি।
২০১৭ সালে স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব, স্থপতি তামান্না সাঈদ ও স্থপতি খালিদ বিন কবির তিনজনে মিলে গড়ে তোলেন ‘ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিও’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। যা এখন এ দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে একটা আস্থার জায়গায় আনার পেছনে রয়েছে তাদের পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম। একাগ্রতা আর মেধার সমন্বয়ে তারা তৈরি করেছে নান্দনিক কিছু সৃষ্টি।
ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিও প্রতিষ্ঠনের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বারিধারায় নিউ কাতারী অ্যাম্বাসী, হাতিরঝিলে হোসনে আজিজ ভিলা, সোবহানবাগে মানামা টাওয়ার, বনানী ১২ নম্বরে মানামা আরবান ফরেস্ট কমার্শিয়াল বিল্ডিং, নিকুঞ্জে রুফলাইনারস স্টুডিও অফ আর্কিটেকচার এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ডেসকো হেড অফিস বিল্ডিং, বসুন্ধরায় এল ব্লকে এম এন্ড এম রেসিডেন্স বিল্ডিং, বসুন্ধরা আই ব্লকে নিহারীকা রেসিডেন্স বিল্ডিং, পুরান ঢাকার লালবাগ রেসিডেন্স বিল্ডিং, উত্তরায় ক্যানিয়ন কমার্শিয়াল বিল্ডিং, সাভার ধামরাইতে আলিসকো গার্ডেন সহ অসংখ্য প্রজেক্টের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে তারা। তাদের সাফল্যের ঝুড়িতে জমা হয়েছে সেরা কর্মের স্বীকৃতি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকার বারিধারায় কাতারী দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনের কাজটি।
আপনাদের কাজের বৈশিষ্ট্য কী?
এ প্রশ্নের উত্তরে সেলিম আলতাফ বিপ্লব বলেন, প্রতিটি এলাকার স্থাপত্য ধারা সেখানকার প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। প্রতি এরাকার স্থাপত্য সেখানকার প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে চলতে থাকা লাভ এন্ড হেট সম্পর্কটার গল্প বলে। অনাদিকাল ধরে চলতে থাকা এই সম্পর্কটা এক একটা সময়কালকে ধারণ করা ফসিলের মতো। এক একটা স্থাপত্য কর্ম তার সময়কালের মানুষের জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রগতি আর সমাজ ব্যবস্থার প্রতিবিম্ব।

ইনকোয়েস্ট ডিজাইন স্টুডিও টিম

ভাগ্যক্রমে আমরা অনেক সহনশীল একটা প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করি। চরম ভাবাপন্ন জলবায়ুর দেশগুরোর চেয়ে প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্কটা অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের কাজের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই এলাকার সহজ অনাড়ম্বর ভাবে প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে থাকার সূত্রগুলোকে এখনকার প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে মিলানোর চেষ্টাটাই আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট।
তরুণ স্থপতিরা যারা এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনাদের পরামর্শ? এ প্রসঙ্গে স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব বলেন, স্থাপত্য এমন একটা শিল্প যা শুধু দূর থেকে উপভোগ করা নয় বরং এর মধ্যে প্রতিনিয়ত বসবাস করা হয়। তাই শিল্প গুণের পাশাপাশি এর ব্যবহারিক গুণ ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প গুণের ঘাটতি অনেক সময় মেনে নেয়া যায় কিন্তু ব্যবহারিক গুণের ঘাটতি মানুষের জীবনের জন্য হুমকিও হয়ে যেতে পারে। ছাত্র জীবন পার করার পর তাই প্রথম কয়েক বছর ওয়ার্কিং ড্রয়িং আর সাইট সুপার ভিশন যে কোনো স্থপতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েক বছরের লম্বা সময়টাতে যত ধরনের ডিসিপ্লিন এর মানুষ এই কাজের সাথে জড়িত তাদের সবার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শেখার এই আগ্রহটা ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ক্লায়েন্ট থেকে শুরু করে সব কনসালটেন্ট, কনট্রেক্টর সপ্লাইয়ার এমন কি মিস্ত্রি পর্যন্ত সবাই মিলে টিম ওয়ার্কের গুরুত্ব বোঝা দরকার। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন তারা। এই স্থপতিরা তাদের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করে চান তারা।