Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সখি ভালোবাসা কারে কয়

রেজানুর রহমান
ভালোবাসা আসলে কী? একটা কথা বেশ প্রচলিত মাটির ভাড় অর্থাৎ কলস আর পরিবারের মূল্য যে নিজের হাতে গড়ে সেই জানে। যে ভাঙ্গে সে তার মূল্য কোনোদিনও বোঝে না। ভালোবাসা একটি সম্পর্ক। অজান্তে তৈরি হয়। আবার অজান্তেই ভেঙ্গে যায়। ভালোবাসা পালিয়ে যায়। শুধুমাত্র ভালোবাসার কারণেই একে অন্যের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। কখনও কখনও জীবন দেয়ও। আবার এই ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল একজন অন্যজনকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ভালোবাসার শক্তি প্রবল। ভালোবাসাই জীবন সংগ্রামের উৎসাহ। আবার ভালোবাসার বিপরীতে ঘৃণা জীবন সংগ্রামের অন্তরায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন লেখেনÑ তেত্রিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি তখন বোঝা যায় তেত্রিশ বছরে ভালোবাসার মানুষ জোটেনি। জুটলে কেউ না কেউ কথা রাখতো। পৃথিবীতে যারাই জয়ী হয়েছে, সাফল্য অর্জন করেছেন তার বা তাদের পিছনে ভালোবাসার শক্তিটাই ছিল প্রবল। হয় মা-বাবার ভালোবাসা। অথবা প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসাই জীবন যুদ্ধে জয়ী করেছে। ভালোবাসার শক্তির আলোকে দেশে দেশে অনেক কালজয়ী উপন্যাস, চলচ্চিত্র লেখা হয়েছে। বাংলা ভাষার সিনেমায় উত্তম-সূচিত্রা, রাজ্জাক-কবরী, ফারুক-ববিতা, অলমগীর-শাবানার ভালোবাসার রসায়ন দর্শকের গভীর আগ্রহের বিষয়। উত্তম-সুচিত্রা জুটি সিনেমায় ব্যাপক জনপ্রিয় হবার কারণই হল ভালোবাসা।
তাহলে ভালোবাসা কি একজনের আগ্রহেই তৈরি হয়? না, তা নয়। এক হাতে যেমন তালি বাজে না, ভালোবাসাও তেমনি… একজনের আগ্রহে ভালোবাসা তৈরি হয় না। তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে না। তাহলে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। ভালোবাসা হল টু ওয়ে ট্রাফিক। একজনের প্রতি অন্যজনের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হলেই বুঝবেন ভালোবাসার শক্তিটাই প্রবল হচ্ছে। ভালোবাসার শক্তিটাই মানুষকে সাহসী করে তোলে। সে জন্য বলা হয়, ভালোবাসাই জীবনের অফুরাণ শক্তি। ভালোবাসার শক্তি যদি দুর্বল হয় তাহলে জীবনের গতি দুর্বল হতে বাধ্য। আর তাই ভালোবাসায় প্রতারণাকে আশ্রয় দিতে নেই। প্রতারণা ভালোবাসার চরমতম শত্রু।
আমার একজন ফেসবুক বন্ধু ভালোবাসার প্রভাব বোঝানেপার জন্য একটি লেখা পাঠিয়েছেন। লেখাটি মোটামুটি এরকম- এক সময় একান্নবর্তী পরিবার ছিল, ফাটা কাপে চা খেয়েও আনন্দ উৎসব করতো সবাই। কাঠের পিড়িতে বসতো সবাই। খাবার টেবিলে মাছের ছোট ছোট টুকরা ছিল, সুতোয় কেটে সেদ্ধ ডিম ভাগ করে দিতেন মা, খালা, চাচীরা। মাসে হয়তো দুই, তিনদিন মাংস ছিল। তাতেই খুশি। তাতেই ভালোবাসা শক্তি পেত। এখন বোধকরি ভালোবাসার সেই শক্তিটা নেই।
আরেক বন্ধু লিখেছেন, এখন ভালোবাসায় অনেক খাদ। নিঃশ্বার্থ ভালোবাসা আর দেখা যায় না। সবাই স্বার্থ খোজে। এক সময় একটা ডিম ভাগ করে খাওয়া ভাই-বোনেরাও বড় হয়ে একে অন্যকে ভুলে যায়। একই মশারীর ভিতর গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করে থাকা ভাই-বোনেরা বড়বেলায় এসে পরস্পরের শত্রু হয়ে যায়। কেন হয়? স্বার্থের কারনে এমনটা ঘটে। তৃতীয় পক্ষই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমাদের বাঙালি সমাজে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপুর্ন। ভালোবাসার শক্তি মূলত দুর্বল হয় এই তৃতীয়পক্ষের কারনেই।
অবহেলা ভালোবাসার চরম শত্রু। আপনি কাউকে ভালোবাসেন। কিন্তু যদি কখনও বুঝতে পারেন যে সে আপনাকে অবহেলা করছে তাহলে নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। তবে একটা কথা বেশ জরুরি। অহেতুক অবহেলা একজন মানুষকে তার চলার পথের গতি কমিয়ে দেয়। অবহেলা কতটা ভয়ানক সেটা কেবল সে বুঝে যে প্রিয় মানুষ গুলোর কাছে চরম অবহেলিত। অনেক সময় দেখা যায় মা-বাবা অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। এটা বয়সের দোষ নয়। দোষ হল দুশ্চিন্তা। কোথাও যেন ভালোবাসার শক্তি দুর্বল হবার দুশ্চিন্তা। একটা বিষয় নিশ্চয়ই খেয়াল করেন সবাই, সন্তান কাঁদলে গোটা বাড়ির মানুষ জেনে যায়। কিন্তু মা-বাবা যখন কাঁদে তখন অনেক সময় পাশের মানুষটিও জানে না। এটাই জীবনের সত্য। এই গল্পে ভালোবাসার শক্তিটা বেশ দুর্বল। যেখানে মর্যাদা নেই সেখানে না থাকাই ভালো। সময় পেলে খোঁজ নেওয়াটা হলো দায়িত্ব। আর সময় বের করে খোজ নেওয়াটাই হল ভালোবাসা। আমরা অনেক সময় কোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে চট করে অভিযোগ করি-কিরে তোর তো দেখাই নেই। কিন্তু আমরা কি ভাবি এই যে প্রশ্নটা করলাম, আমি কি আদৌ বন্ধুর খোঁজ নিয়েছি? তাহলে বন্ধু খোঁজ নিবে এটাই বা ভাবি কেন? হাত মেলানোর জন্য পরস্পরের দুটি হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। তাহলেই কথা জমে। বিশ্বাস সৃষ্টি হয়। বিশ্বাসই হল বন্ধুত্বের মুল শক্তি।
বর্তমান সময়ে বন্ধুত্বের এই শক্তিটা কতটা প্রবল? একটা সময় ছিল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুত্ব গড়ে উঠতো। স্কুলের বন্ধু, কলেজের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। কারও কারও এমন বন্ধুও আছে যার সাথে সেই স্কুল জীবন থেকেই সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও তা অটুট। পাড়ার বন্ধুর ভূমিকা আবার অন্যরকম। একই পাড়ায় অথবা গ্রামে বসবাস করতে গিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পাশের বাড়ির বন্ধু, পাশের ফ্লাটের বন্ধুও অনেকের জীবনের সেরা বন্ধু। আমি এমন এক বন্ধুত্বের খবর জানি, যাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল ল্যাংটা কালে। একই স্কুল, একই কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এক বন্ধুর ভাগ্যে জোটে বুয়েটে পড়ার সুযোগ। অন্যজনের ভাগ্যে মেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মনে করা হয়েছিল এবার বুঝি দুই বন্ধুর সম্পর্কে একটু শিথিলতা আসবে। তেমন কিছুই ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে দুই বন্ধুই এখন সংসারের হাল ধরেছে। একজন সরকারী কলেজের শিক্ষক। অন্যজন সরকারি আমলা। নিজেদের বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখার জন্য একজনের ছেলের সাথে অন্যজনের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। যদিও তৃতীয় পক্ষ দু’জনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে চেয়েছিল। কিন্তু দু’জনের দৃঢ়তার কাছে হার মেনেছে। দুই বন্ধুর মধ্যে পারস্পারিক বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাই তৃতীয় পক্ষকে সুবিধা করতে দেয়নি।
অন্যদিকে এমন এক সম্পর্কের কথা জানি শুধুমাত্র তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিকা বিয়ে করে। প্রেমের বিয়ে। সংসার ভালোই চলছিল। হঠাৎ সংসারে অশান্তি নেমে আসে। ছেলের এক বন্ধু প্রায়ই তার বাসায় আসতো। ছেলে বন্ধুটি বাসায় যখন থাকতো না তখনও আসতো। এই নিয়ে তৃতীয় পক্ষ ছেলে বন্ধুটির কানে কূমন্ত্রনা দেয়। ব্যস, বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। বন্ধুর সংসারও টিকে না। এটাকে কি আমরা বন্ধুত্বর সম্পর্ক বলে অভিহিত করবো। তার আগে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া দরকার। বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন, প্রকৃত অর্থে বন্ধুত্ব মানেই বিশ্বাস। কারণ জীবনের অনেক বিষয় আছে যা আমরা বাবা-মাকে বলি না। বলার সাহসও করি না। কিন্তু প্রিয় বন্ধুকে বলি। তার মানে বন্ধু হল সেই ব্যক্তি যার উপর অন্ধের মতো বিশ্বাস করা যায়। বন্ধু বলেছে, বন্ধু আশ্বাস দিয়েছে? তার মানে এখানে বিশ্বাসই শক্তি। কাজেই অন্ধকারেও ঝাপ দেওয়া যায়।
কিন্তু এমন বন্ধুত্ব কী দেখা যায় আজকাল? যদিও বন্ধুত্বের ধরণ পাল্টে গেছে। আগে ছিল চিঠি। এখন চিঠির জায়গা দখল করেছে ফেসবুক অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অতীতকালে বন্ধুকে চিঠি লিখে ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকতে হতো। কবে আসবে চিঠির উত্তর? এই নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটেনা। আর এখন সামান্য মন খারাপ হলেই বন্ধুকে জানাতে ভুল করিনা। নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখে দিলামÑ বন্ধুরা মন খারাপ। ব্যস লাইক, কমেন্টেস এর লড়াই শুরু হয়ে যায়। কত যে পরামর্শ। হাজার হাজার। কারও কারও লাখ লাখ ফ্যান ফলোয়ার। কিন্তু সবাই কি বন্ধু? না বন্ধু নয়। ফেসবুকে সকালের বন্ধু বিকেলে হয়তো নাই। কোথাও গেল? নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে এদের সংখ্যা হয়তো কম। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় লাইক, কমেন্টস দেওয়া হাজার হাজার ফেসবুক বন্ধুর সবাই কিন্তু বন্ধু নয়। এটার প্রমাণ পাবেন আপনি যখন বিপদে পড়বেন।
তাহলে সময়কে কী আমরা অস্বীকার করব? চিঠি তো এখন কেউ লেখে না। পড়ে না। চিঠির জায়গা দখল করেছে এসএমএস। ভাব প্রকাশের সংক্ষিপ্ত রুপ। র ষড়াব ুড়ঁ লিখতেও যেন অনেক কষ্ট। লিখে পাঠালÑ ষখঁ. বুঝে নিতে হবে লিখেছে র ষড়াব ুড়ঁ. এত স্বল্প কথায় তাৎক্ষনিক ভাবে মন ভরলেও প্রকৃত অর্থে মন ভরে না। ফলে ইদানিং ভালোবাসতেও সময় লাগে না, আবার ব্রেকআপ বলতে সময়ের ধার ধারেন না অনেকে। গতকালের প্রেম আজ ভেঙ্গে যায় সহজে। কখনও কখনও বিয়ের স্থায়িত্ব একমাসও টিকে না। যে মাসে বিয়ে সেই মাসেই ডিভোর্স। ঢাকা সিটি করপোরেশনের এক তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এই তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকাই বেশি। অতীতকালে পুরুষ অর্থাৎ স্বামীর পক্ষ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা হতো। এখন স্ত্রীরাই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করছেন। ঠুনকো কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। ভালোবাসার শক্তি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ বিয়ে এবং সংসারে ভালোবাসার শক্তিটাই আসল।

মেহজাবীন টিভি নাটকের অসাধারণ একজন অভিনেত্রী। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মেহজাবীন কোনো নাটকে থাকা মানেই সে নাটক হিট। এমনও দেখা গেছে গল্পের গাথুনি ভালো নয়। কিন্তু মেহজাবীন তার অসাধারন অভিনয় দক্ষতায় নাটকটি প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। আর তাই টিভি নাটক অথবা টেলিফিল্মে মেহজাবীন থাকলেই পরিচালক, প্রযোজক, স্পন্সরদাতা প্রতিষ্ঠান সহ দর্শকের মন ভালো হয়ে যায়। আমাদের টিভি নাটকে অনেক ব্যস্ত তারকা মেহজাবীন চৌধুরী। নানামুখি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে মেহজাবীন প্রমান করেছেন অভিনয় করলে মোটেই অভিনয় হয় না। অভিনয়ে দক্ষতাই আসল। দেশের অসংখ্য তরুণের হার্টথ্রব আমাদের মেহজাবীন। আর তাই আনন্দ আলোর ভালোবাসা দিবস সংখ্যায় আমাদের প্রিয় তারকা মেহজাবীনই হয়েছেন প্রচ্ছদ মুখ। অনেক শুভ কামনা মেহজাবীনের জন্য।