Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মোবাশ্বের হোসেন এক স্বপ্নদ্রষ্টার নাম

মোহাম্মদ তারেক
মঞ্চের প্রতিটি চেয়ারে বসে আছেন সম্মানিত অতিথিরা। শুধু মাত্র একটি চেয়ার ফাঁকা। মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, প্রতীকীভাবে সেটি তুলে ধরতে ফাঁকা রাখা ছিল চেয়ারটি। সেই চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের ঘনিষ্ঠজনেরা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেউ কেউ চোখের জলও মোছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে স্থপতি ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় তারই শোকাতুর দৃশ্য দেখা গেল আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট (আইএবি) মিলানায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠানে।
২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্রীড়া সংগঠক ও নাগরিক আন্দোলনের সরব ব্যক্তিত্ব স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল গুণী মানুষ। শুধু নিজের জন্য অর্থ উপার্জন করেননি তিনি বিলিয়ে গেছেন মানুষের কল্যাণে। তিনি মানুষের কথা বলতেন। দেশের কথা বলতেন। নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনার জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন। দেশ স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে অংশ নিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। নাগরিক ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন এবং ক্রীড়াঙ্গনের বিকাশে কাজ করেছেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। দেশের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। মৃত্যুর পরও অবদান রাখতে চেয়েছিলেন দেশের জন্য। মানুষের জন্য। আর তাই তো মরণোত্তর দেহ দান করে গেলেন খ্যাতনামা এই স্থপতি।
সংরক্ষণ, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য মোবাশ্বের হোসেনের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এনাটমি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৬ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট (আইএবি) মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা বরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনকে নিয়ে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণসভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, দেশ ও জাতি একজন নির্ভীক মানুষকে হারিয়েছে। আজকাল সত্য বলার মতো মানুষ নেই বললেই চলে। তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ন। জাতির গর্বিত সন্তান। মোবাশ্বের হোসেন দেশের স্থাপত্যশিল্পে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি তাঁর মেধা ও মনন দিয়ে স্থাপত্যশিল্প সমৃদ্ধ করেছেন। নাগরিক অধিকার আদায়, পরিবেশ আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একটি সড়কের নামকরণ এবং প্রতিবছর মিরপুরে পথ শিশুদের নিয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বরেণ্য স্থপতি শামসুল ওয়ারেস বলেন, টাকা হলেই সব নিজের কাছে রাখতে হয় না, ভালো কাজের জন্য দান করতে হয়Ñ এই নীতির উদাহরণ ছিলেন মোবাশ্বের হোসেন। প্রয়াত এই স্থপতির জীবন নিয়ে একটি স্মরনিকা প্রকাশের আহবান জানান খ্যাতনামা এই স্থপতি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থপতিরা শোক জানিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন মোবাশ্বের হোসেনের স্মরণ সভায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ শোকবার্তা পাঠান। তাঁর পাঠানো বার্তা পড়ে শোনান সভার সঞ্চালক ও আইএবির সহ সভাপতি স্থপতি মোহাম্মদ আলী নকী। শোক বার্তায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জানান, মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত, ইতিবাচক ও সৃষ্টিমুখর একজন মানুষ। স্মৃতিচারণ করে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, তার পথিকৃৎ ছিলেন মোবাশ্বের হোসেন। সত্য কথা বলা ও সাধারন মানুষের হয়ে কথা বলার মানুষটি আর নেই। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য ও সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলা।

আইএবির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, তিনি মারা গেছেন, কিন্তু তাঁর জীবনের শিক্ষা রয়ে গেছে। শুধু নিজের জন্য কোনো কিছু না করে সবার জন্য করলেন, সবাইকে নিয়েই উপরে ওঠা যায় এ শিক্ষা তাঁর জীবন থেকে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সারা যাকের বলেন, মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন একজন শিল্পী, স্থপতি ও দেশপ্রেমিক। ঢাকা শহরকে তিনি যেভাবে দিয়ে গেছেন, তার তুলনা হয় না। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, ওই সময় অর্থ সংগ্রহের অংশ হিসেবে মোবাশ্বের হোসেন একটি অ্যাপার্টমেন্ট দান করেছিলেন।আইএবির সাধারন সম্পাদক স্থপতি নবী নেওয়াজ খান বলেন, মোবাশ্বের হোসেন এক মৃত্যুঞ্জয়ীর নাম। এক স্বপ্নদ্রষ্টার নাম। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি আইএবিতে বরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের নামে একটি কর্ণার চালু করার ঘোষণা দেন। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের ছেলে সাঈদ হোসেন তমাল বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা সর্বস্ব ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। বহু মুক্তিযোদ্ধারা পরবর্তীতে সাধারণ হিউম্যান হয়ে গেছেন। তিনি সাধারন হিউম্যান হতে পারেননি। তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য বাবা তার দেহ দান করে গেছেন। ছেলে হিসেবে বাবার অসম্পূর্ন কাজ গুলো শেষ করতে চান তিনি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান শোক বার্তায় বলেন, মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যু দেশের জন্য এক অপূরনীয় ক্ষতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সুপরিকল্পিত নগরায়নে মোবাশ্বের হোসেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন এবং সাধারন সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, দেশের স্থাপত্যশিল্পে মোবাশ্বের হোসেনের অবদান অসামান্য, অনস্বীকার্য। তিনি বাঙালি জাতির গর্বিত সন্তান। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, নাগরিক অধিকার আদায়, পরিবেশ আন্দোলন এবং সারা দেশের ভৌত, পরিকল্পনা প্রণয়ন সহ পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিৎ করণে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার ছিলেন তিনি। নগরের মাঠ, পার্ক ও খাল অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করতে তিনি সাধারন মানুষের পাশে ছিলেন। আমরা একজন প্রতিভাদীপ্ত স্থপতি ও অসাধারণ দেশ প্রেমিককে হারালাম। স্মরণ সভায় আইএবির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ, সাবেক সভাপতি কাজী গোলাম নাসির, সাবেক সাধারন সম্পাদক ফারহানা শারমীন, স্থপতি খাদেম আলী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন অংশ নিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ছিলেন সংগ্রামে অগ্রভাগের সৈনিক হিসেবে। নাগরিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান মুখ।
একজন স্থপতি হিসেবে তিনি যেমন মেধার সাক্ষর রেখেছেন পেশাগত জীবনে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে গণমানুষের অধিকারে সব সময়ই ছিলেন সোচ্চার। নৈতিকতার প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। তিনি ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। মাতৃভূমিকে তিনি কেবল দিয়েই গেছেন। বিনিময়ে কিছু ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করেননি কখনোই। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ভীষণ আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ। চাইলে তিনি বিলেতের স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনও বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু কখনোই তিনি তা চাননি। ২৩ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের আগ মুহূর্তে মোবাশ্বের হোসেনের মা চেয়েছিলেন দেশের এমন উত্তাল পরিস্থিতিতে ছেলে যেন তার সঙ্গে লন্ডনে চলে যান। মায়ের অনুরোধের পরও বিদেশে নির্ঝঞ্চাট জীবন যাপনের প্রতি আগ্রহী হননি তিনি। পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য রয়ে গেলেন এ মাতৃভূমিতে। অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন। তিনি রণাঙ্গনে ক্র্যাকপ্লাটনের অন্যতম গেরিলা ছিলেন তা চিরকাল আড়ালেই থেকে গেছে। এই পরিচয়টি নিয়ে নীরবে গর্ববোধ করলেও কখনোই তা প্রকাশ্যে আনেননি। বিনয়ী এই মানুষ রণাঙ্গনের যোদ্ধা হয়েও কখনোই মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেননি। স্পষ্ট ভাষায় বলতেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আলাদা ভাবে সরকারি স্বীকৃতি নেওয়ার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে কর্মজীবনে চাইলে এই গুণী স্থপতি সরকারি চাকরির মতো নির্ঝঞ্চাট চাকরি জীবনও বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মাত্র দেড় মাস চাকরি করেন। যদিও তিনি আর পদত্যাগ পত্রটিও জমা দেননি। ছোটবেলা থেকে অসমান্য সাংগঠনিক দক্ষতা বিদ্যমান ছিল মোবাশ্বের হোসেনের। আমৃত্যু সেই দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন নানান ক্ষেত্রে। পরিবেশ রক্ষার তাগিদে যেমন তার হাতে জন্ম হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা)। ক্রীড়া ক্ষেত্রে তার হাতে জন্ম হয় সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের, ভোক্তা অধিকারের স্বার্থে গড়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব), স্থপতি ইনস্টিটিউটেও তিনি দেখিয়েছেন অসীম দক্ষতা। কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস ও আর্ক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত জীবনে স্থপতি হিসেবে যেমন প্রসিদ্ধ ছিলেন মোবাশ্বের হোসেন ঠিক তেমনি দেশ সেবায় ছিলেন অবিচল। স্থাপত্য শিল্পে তার সৃষ্টি কতটা নান্দনিক তার প্রমাণ মেলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের অপূর্ব নকশা কাঠামো। সেখানে তিনি ভবনের গৎবাঁধা নকশার চেয়ে প্রাধান্য দেন স্থাপত্যের মাধ্যমে প্রাণ সঞ্চার করাকে। একই উদাহরণ তার নকশায় করা মিরপুরের প্রশিকা ভবন, গ্রামীণব্যাংক এর প্রধান কার্যালয়ও। স্থপতি হলেও পরিবেশ নিয়ে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন মোবাশ্বের হোসেন। পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের সর্বদা সোচ্চার ছিলেন তিনি। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন ক্রীড়ামোদীও। নানা নাগরিক অধিকারের বিষয়ে প্রথম সারির সৈনিক ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। মৃত্যুর আট মাস আগেও কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠ নিয়ে তিনি সর্বদাই ছিলেন স্থানীয়দের পাশে। ঠিক তেমনি ধানমন্ডি মাঠ সবার জন্য খোলা রাখতে তার অবিরাম প্রচেষ্টা ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করতেও দ্বিধা করেননি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। তা সত্ত্বেও চুল পরিমাণও ছাড় দেননি এই স্থপতি। মোবাশ্বের হোসেনের চিন্তা ভাবনায় জুড়েই ছিল এদেশের মাটি ও মানুষ। দেশ এগিয়ে যাবে এই ছিল তার স্বপ্ন ও আশাবাদ। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম থেকে সব নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিঃসন্দেহে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের অবদান থাকবে চির ভাস্বর হয়ে।

 

তিনি ছিলেন ভালো কাজে প্রেরণার উৎস

স্থপতি ইকবাল হাবিব, নগর ও পরিকল্পনাবিদ

মোবাশ্বের ভাইয়ের মৃত্যুতে প্রথমত একজন মহান মুক্তিযোদ্ধার মহাপ্রয়াণ হলো। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, অস্ত্রও সমর্পন করেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও সমর্পন করেছেন। কিন্তু মোবাশ্বের ভাই কখনো সেই চেতনা সমর্পন না করে অতি গুরুত্ব ও যত্নসহকারে তা লালন করেছেন। ’৯০ এর পর বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে মিশে গিয়ে খেলাধুলাকে দুর্নীতিমুক্ত করার আন্দোলন শুরু করেন। ভোক্তাদের অধিকার আদায়ে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আদালতে একাধিকবার রিটও করেন মোবাশ্বের ভাই। নানা নাগরিক আন্দোলনে, নগর উন্নয়ন আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়েছেন।

স্থাপত্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দিতে এশিয়া অঞ্চলের স্থপতিদের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখানেও থামেননি তিনি। পরিবেশ আন্দোলনেও যোগ দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দুষণবিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার দেখানো পথ ধরে ভেজাল বিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তার হৃদয় জুড়েই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। মোবাশ্বের ভাই সব সময় একটি কথা বলতেন, মুক্তিযুদ্ধের পর অস্ত্র ছেড়েছেন, কিন্তু চেতনা ছাড়েননি। তিনি গ্রিন ভয়েস এবং স্কাউটের তরুণদের হাত ধরে সারা দেশ ঘুরেছেন। মোবাশ্বের ভাই বলতেন, গান ও কবিতায় সব সময় দেশকে গড়ে তোলা যায় না। দেশকে গড়ে তুলতে হলে নিপীড়িতদের প্রতিবাদের ভাষায় উজ্জীবিত করতে হবে উজ্জীবিত হতে হবে। মোবাশ্বের ভাইয়ের মহাপ্রয়াণের মাধ্যমে যেন আলোকিত সূর্যের যবনিকাপাত ঘটলো। হয়তো একদিন এ বাংলার মাটিতে আরও মোবাশ্বের তৈরি হবে, কিন্তু আমাদের সবার প্রিয় সেই মোবাশ্বের ভাই হতে পারবে কজন?
আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের সবার কাজই হবে মোবাশ্বের ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ এবং আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। অসুস্থ পরিবেশ, দখল, দূষণ ও দুর্বৃওায়নের বিরুদ্ধে এবং জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। জনমত তৈরিতে আমরা যেন থেমে না যাই। সারা দেশের গণমানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও আর্শীবাদে আমাদের প্রিয় মোবাশ্বের ভাই যেন সর্বোচ্চ সম্মান পান, তার আত্মা যেন শান্তি পায় সেটাই আমাদের প্রার্থনা।