Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ইউরোপ ঘুরে ঢাকায় স্থাপত্য শিল্পকর্মের প্রদর্শনী

মোহম্মদ তারেক
সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্যের অসাধারণ মিশ্রণ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থাপত্য সাক্ষর রেখেছে বৈশ্বিক অঙ্গনে। ব-দ্বীপ অঞ্চলে কেবল জল ও স্থলের মধ্যকার সীমানাকে একে অপরের সাথে একীভূত হয়েছে তাই নয়, একই সাথে অতীত এবং বর্তমানও নতুন ভাবে মিলিত হয়ে ক্রমাগত তৈরি হচ্ছে নতুন গঠন ও পরিবেশ। আবহাওয়া ও পরিবেশের এই ঐতিহাসিক বিকাশেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এখনকার স্থাপত্য। সেই সব স্থাপত্যের নমুনা হিসেবেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত এবং উদীয়মান স্থপতিদের ষাটটি বাছাইকৃত স্থাপত্য নিয়েই শুরু হয়েছে বেঙ্গল ষ্ট্রিম : দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অফ বাংলাদেশ প্রদর্শনীটি। এই প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে বিভিন্ন প্রজেক্টের মূল ড্রয়িং, মডেল, ফটোগ্রাফ এবং স্থাপত্য সম্পর্কিত অন্যান্য নথি।
সম্প্রতি ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাটালি চুয়ার্ড। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়। সরকার সারাদেশে সব ধরনের প্রাথমিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, সাংস্কৃতিক বিকাশেও সরকার কাজ করছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজের প্রশংসা করে বলেন, স্থাপত্যকে একটি শিল্প হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। তাদের জাতীয় পুরস্কার যেমনÑ একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা উচিত। বাংলাদেশে স্থপতিরা অনেক ভালো কাজ করলেও আমরা এখনো বিভিন্নভাবে দেশীয় ঐতিহ্য হারাচ্ছি। একদিকে আমাদের ঢাকায় অনেক দীপ্তিময় ভবন আছে। অন্য দিকে আমাদের শহর গুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে। ঢাকায় বেশ কিছু পুরনো ভবন আছে, যে গুলোকে ভালো ভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিসেস নাটালি চুয়ার্ড বলেন, বেঙ্গল স্ট্রিম প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থাপত্য সম্পর্কে ভালো ভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছে ইউরোপ। চলতি বছর বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। প্রদর্শনীটির মাধ্যমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক কাজী খালেদ আশরাফ বেঙ্গল স্ট্রিম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যোগ দেন এবং ভিডিও বার্তায় সম্মানিত অতিথি, প্রদর্শনীর কিউরেটর এবং স্থপতিদের তাদের সদয় উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রদর্শনীর কিউরেটর নিখলাস গ্র্যাবার, আন্দ্রেয়াস রুবি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং মিসেস লুভা নাহিদ চৌধুরী।
প্রদর্শনীর সিনোগ্রাফিক সহযোগী স্থাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ সমগ্র প্রদর্শনী সম্পর্কে তার বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশের সমসাময়িক স্থাপত্যের উদ্ভাবন গুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান স্থপতি সামসুল ওয়ারেস, স্থপতি সাইফ উল হক, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল, স্থপতি এহসান খান, স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী, স্থপতি জুবায়ের হাসান সহ শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ।
আগের দিনের বাঁশের কাঠামোর বদলে এখন বেটন ব্রুটের কংক্রিট দেয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত ইটের তৈরি বাংলা ধাঁচের জালি কাজ গুলো ধীরে ধীরে অর্ধস্বচ্ছ ফ্যাব্রিকে রূপান্তিরিত হয়েছে। বঙ্গীয় ব-দ্বীপের স্থাপত্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের এই দোলাচল স্থাপত্যে আধুনিকতাবাদের উপস্থিতির প্রমাণ দেয়। বাংলার অগ্রজ স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ও আধুনিকতাবাদের গুরু লুই কান এর স্থাপত্যকর্মেও এই মেলবন্ধন লক্ষনীয়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই তরঙ্গকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের সে সবের ধারণা দেবে।
বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ প্রদর্শনীটি সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম ও বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টেসের যৌথ প্রযোজনায় নানা দেশে প্রদর্শিত হয়েছে। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন নিক্লস গ্র্যাবার, আন্দ্রেয়াস রুবি ও ভিভিয়ান হেরেন্স বার্গার।
২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অব বাংলাদেশ প্রদর্শনীটি শুরু হয়। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমসাময়িক স্থাপত্যের উদ্ভাবন ও ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা হয়। পরে প্রদর্শনীটি ফ্রান্সের বোর্দোতে আর্ক এন রিভ সেন্টার ডি আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফ্রটে ডয়েস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে প্রদর্শনী হয়।
দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রদর্শনীটি এবার ঢাকায় এসেছে। এই প্রদর্শনীটিতে স্থাপত্যের অংকন, মডেল, আলোকচিত্র ও স্থাপত্য সম্পর্কিত নানা নথি প্রদর্শিত হয়েছে। সবার জন্য প্রদর্শনী উম্মুক্ত থাকবে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। মঙ্গলবার ব্যতীত প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত। বেঙ্গল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটেলমেন্টস এবং সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়াম যৌথভাবে বেঙ্গল স্ট্রিম: দ্য ভাইব্রেন্ট আর্কিটেকচার সিন অফ বাংলাদেশ শীর্ষক স্থাপত্য প্রদর্শনী আয়োজন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।