Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দুই বন্ধুর ভালোবাসায় গড়া ফোর ওয়ালস

মোহাম্মদ তারেক
বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন বন্ধুত্ব মানে আস্থা আর নির্ভরতা। কেউ বলেন বিপদে আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই হলো প্রকৃত বন্ধু। আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সব কিছু। যার কোনো ভালো বন্ধু নেই তার চেয়ে অভাগাও কেউ নেই। তাহলে বন্ধুত্বের সাথে যুক্ত হলো ভালো শব্দটি। এই ভালো মানে কী? এই ভালো মানেই আস্থা আর নির্ভরতা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে- যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখী। হ্যাঁ, একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক। তমনি দুজন ভালো বন্ধু স্থপতি ওয়াহিদ আসিফ ও আহমেদ ইমতিয়াজ খান। শুদ্ধ স্থাপত্য চর্চা, স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও মানুষের জন্য স্থাপত্য এই বিশ্বাস দুই বন্ধুর মাঝে তৈরি হয় স্থাপত্য শিক্ষার সময়কালে।
দুই বন্ধু ওয়াহিদ আসিফ ও আহমেদ ইমতিয়াজ খান এই বিশ্বাস থেকেই ‘চার দেয়াল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ধারণা লালন করেন ছাত্রাবস্থায়। পরে এই নামটি ‘ফোর ওয়ালস’ এ পরিবর্তিত হয়। ২০০০ সালে এই ফার্মটি শুরু হলেও ‘ফোর ওয়ালস’ মুলতঃ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর দুজনেই যোগ দেন রাশিদুল হাসান এন্ড এসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। এরপর ২০০১ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ শিক্ষকতা করতে যোগদেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ওয়াহিদ আসিফ চাকরি পরিবর্তন করে যোগ দেন পুরালয় প্রকৌশলী নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে। দুই বন্ধুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দুই শহরে। ওয়াহিদ আসিফের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাবনা শহরে। অন্যদিকে আহমেদ ইমতিয়াজের জন্ম নরসিংদী শহরে। আর বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। তারপর স্থাপত্য শিক্ষার শুরু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই দুই বন্ধুর বন্ধুত্বেরও শুরু, যা আজও অটুট। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি ওয়াহিদ আসিফ ‘ফোর ওয়ালস’ নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু করেন।

দুই বন্ধু ওয়াহিদ আসিফ ও আহমেদ ইমতিয়াজ খান

তারপর ২০০৭ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ থাইল্যান্ডের এ আই টি থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে যোগ দেন পুরনো বন্ধুর সাথে। নবউদ্যমে শুরু হয় ‘ফোর ওয়ালস’ এর আনুষ্ঠানিক পথ চলা। তারপর থেকে গত ১৫ বছর ধরে নিরলস একাগ্রতা, কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সময়নুবর্তিতা, লক্ষ্যে অভিনিষ্টি ফোর ওয়ালসকে করে তুলেছে দেশের অন্যতম সেরা কনসালটেন্সি ফার্মে। ক্লায়েন্টের আস্থার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে দ্যর্থহীন ভাবে। মহাখালি ডিওএইচএস এর ছোট্ট একটি অফিস থেকে আজ পরিসর বেড়েছে সব দিক থেকে। হয়ে ওঠেছে অর্ধশতকেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের প্রতিষ্ঠান।
স্থাপত্যের সব শাখায় সহজ স্বাভাবিক বিচরণ হলেও ‘ফোর ওয়ালস হোটেল ডিজাইন ও হসপিটাল ডিজাইনে নিজেদেরকে করে তুলেছে অনন্য। সময়ের সঙ্গে বহুবিধ ট্রেনিং, একাগ্রতা আর মেধার সমন্বয়ে তৈরি করেছে অসাধারণ কিছু সৃষ্টি। তাদের ডিজাইন করা হোটেলের মধ্যে রয়েছে নেপালে প্লাটিনাম হোটেল, ঢাকায় হায়াত প্লেস, হানসা, রেডিসন রেড, গ্র্যান্ড হায়াত ইত্যাদি, গাজীপুরে রয়না রিসোর্ট, হায়াত রিজেন্সী, কক্সবাজারে রেডিসন ব্লু, ওয়েস্টিন ইত্যাদি। হসপিটালের মধ্যে রয়েছে ঢাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, কুষ্টিয়ায় সেলিমা মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, পাবনায় কামিনী হেলথকেয়ার ফাউন্ডেশন, নাটোরে আমিনা জেনারেল হসপিটাল ইত্যাদি।
‘ফোর ওয়ালস’ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে স্থাপত্য তৈরি হবে মানুষের জন্য, স্থানীয় সংস্কৃতি আর প্রকৃতির প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা রেখে। প্রকৃতির মাঝে মানুষের অবস্থান সৃষ্টির শুরু থেকে। মানুষ প্রকৃতির অংশ। গাছপালা জন্মে নদ-নদী বয়ে চলে কিংবা মেঘ বৃষ্টি রোদ ঝড় হয় প্রকৃতির নির্দেশনায়। প্রতিটি এলাকার প্রকৃতি নির্ভরশীল সেই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর। তাই স্থাপত্য হবে প্রতিটি এলাকার প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে। তাই মানুষ আর স্থাপত্যের মাঝে যোগ্যসূত্র হবে কমনীয় আর বহমান, সর্বোপরি মানুষের। আর এজন্য ফোর ওয়ালস সর্বদা চেষ্টা করে একটি এলাকার আবহাওয়া ইতিহাস, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, আর স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে। আর পাশাপাশি তা যেন সমসাময়িক আধুনিক স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই ধারণা আর বিশ্বাস গত পনের বছর ফোর ওয়ালসকে সাহায্য করেছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিজেদের স্বাক্ষর রাখতে। দেশের স্থাপত্যকে আধুনিক বিশ্ব স্থাপত্যের মর্যাদায় নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।