Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সালাউদ্দিন আহমেদের স্থাপত্য ভুবন

সালাউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান স্থপতি। ১৯৯২ সালে তিনি আমেরিকার অরিগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলের অফ ফাইন আর্টস এবং আর্কিটেকচারে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৯৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া থেকে স্থাপত্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকায় স্থপতি হিসেবে কাজ করেন। ২০০১ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘অ্যাটেলিয়ার রবিন আর্কিটেক্টস’ নামের একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। ২০১১ সালে তিনি বসুন্ধরার করিম রেসিডেন্স এর জন্য আবাসিক বিভাগে বার্জার আকির্টৈক্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। তিনি বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য, কিউরেটরিয়াল এবং ডিজাইন প্রোগ্রামের পরিচালক। এবার শাহ্ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে এই স্বনামধন্য স্থাপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
তরুণ স্থপতিদের স্থাপত্যের অনুশীলনে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। এই পেশায় কোনো শর্টকাট নেই। একজন ভালো স্থপতি হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ভালো কাজ করতে হবে। পাশাপাশি গ্রেট আর্কিটেক্টদের কাজ অধ্যয়ন করতে হবে। কথা গুলো বলেছেন, স্বনামধন্য স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ।
তিনি একটি যৌথ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বেড়ে ওঠা ধানমন্ডিতে। বিএএফ শাহীন স্কুল থেকে তিনি এসএসসি ও এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। তার পিতা মরহুম ওয়াইজুদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। মা মরহুম মমিনা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিনী। যেহেতু তার পরিবার আর্থিক ভাবে সচ্চল ছিল, তাই ছোট বেলায় বেড়ে ওঠার সময় তিনি কখনই কোনো অভাব অনুভব করেননি। তিনি চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। আবাহনী মাঠে ঘুরে বেড়াতেন এবং ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন। স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, যখন আমি একজন স্থপতি হিসেবে আমার জীবনকে বিশ্লেষণ করি, তখন আমার মনে হয় ফুটবলের প্রেমে পড়া নিঃসন্দেহে আমাকে জীবনের একটি কাঠামো দিয়েছে। ফুটবল কখনোই একক ব্যক্তির খেলা নয়, এটি সর্বদা একটি দলের কাজ। একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই অনুপ্রেরণায় আমার নিজের কাজের গভীরে আপনি সর্বদা আমার প্রতিভাবান দলের যৌথ প্রচেষ্টা দেখতে পাবেন। ফুটবল খেলার পাশাপাশি স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ তার কলম পেন্সিল নিয়েও ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। ৮ম শ্রেণীতে পড়ার সময় আর্ট টিচার ইস্কান্দার স্যার তার মাথায় স্থপতি হওয়ার বীজ রোপন করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্কুলে স্থপতি শব্দটি আমাদের কাছে খুবই বিদেশী ছিল। একদিন যখন ইস্কান্দার স্যার আমাকে স্থপতি হতে চান কী না জিজ্ঞেস করলেন, শব্দটি সত্যি আমার মাথায় আটকে গেল। আমি যতই এটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি, ততই এটি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে। একজন স্থপতি হওয়ার ইচ্ছা আমার মাঝে একদিনে ফুটে ওঠেনি। এটি ধীরে ধীরে আমার মধ্যে বেড়েছে। কারণ আমি প্রতিদিন আরও ভালোভাবে বিষয়টিকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। স্থাপত্য হলো সেই আয়না যা আমরা সত্যিই আমাদের সমাজ তৈরিতে বিশ্বাস করি। একটি টেকসই পরিবেশের অংশ হিসেবে নিজেদের আবিস্কার করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রক্রিয়ায়, আমরা স্থাপত্যের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারি না। সমস্ত লুকানো, তথাপি, অনিবার্য উদ্দীপনার জন্য স্থাপত্যকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। অন্ধকার থেকে আলোতে, অস্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছ, অস্পষ্ট থেকে সুস্পষ্টে অতিক্রম করার অনুমতি দিতে হবে।
স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ একজন সমসাময়িক স্থপতি যিনি আমাদের চারপাশের বিষয় গুলোকে সবচেয়ে সহজ উপায়ে দেখতে বিশ্বাস করেন, বস্তুর নীতি থেকে সঠিক। তাঁর কাছে স্থাপত্য কেবল আমাদের অস্তিত্বের মূল্যবোধের জন্য নয়, এটি আসলে সর্বদা আমাদের মধ্যে থাকে। তার ডিজাইন গুলো হলো প্রেক্ষাপট, পরিবেশ, বায়ুমন্ডল এবং একটি জায়গার ইচ্ছার সরাসরি প্রতিক্রিয়া যা একজন ব্যক্তিকে এটির সাথে অনবদ্যভাবে সংযুক্ত করে।
স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাটেলিয়ার রবিন আর্কিটেক্টস এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রধান স্থপতির দায়িত্ব পালন করছেন ২০০১ সাল থেকে। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় করিম রেসিডেন্স, চট্টগ্রাম চকোরিয়ায় অলিভ গ্রোভ চিলড্রেন সেন্টারের নকশা, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাফে ম্যাংঙ্গো, নিকুঞ্জে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার ল্যান্ডস্কেপ, সেটেলমেন্ট রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির রোড সাউড মেমোরিয়াল ল্যান্ডস্কেপের ডিজাইন করেন যৌথভাবে ঢালি আল মামুনের সাথে, গুলশান-১ এ কনসার্ন আই এনজিও এর হেড অফিস, বনানীর র‌্যাংগস পার্ল, বারিধারা উইনারস ক্রিয়েশন এর হেড অফিস, নিকুঞ্জে ইশতিয়াক রেসিডেন্স ইত্যাদি।
২০০৬ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে স্থপতিদের জন্য একটি ফোরাম ‘মঙ্গলবারের সভা’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং এর কার্য নির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অনুশীলনের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে জড়িত আছেন। একজন ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতায় অংশ নেন।
স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ শৃঙ্খলার মৌলিক বিষয় গুলোর মধ্যে থাকা অবস্থায় স্থাপত্যের বিশালতা উপলব্ধি করার অভিপ্রায় হিসেবে তাঁর কাজকে বর্ণনা করেছেন। তিনি স্থাপত্যকে শুধুমাত্র একটি সৃজনশীল ক্ষেত্র হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে প্রযুক্তিগত হিসেবে দেখেন যার সমাধান তৈরি করতে সৃজনশীলতার প্রয়োজন হয়। তাঁর কাজগুলো স্থাপত্যের অনুশীলনে আবিস্কার বনাম উদ্ভাবনের দিক গুলো এবং ওভারল্যাপিং সীমানা গুলো অনুসন্ধান করে।
স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বিশ্বাস করেন, স্থাপত্য একটি সংস্কৃতির আকাঙ্খার নীল ছাপ হিসেবে কাজ করে। এর নির্মিত পরিবেশের মাধ্যমে এটি সেই জায়গাটির বাসিন্দাদের বোঝা বা ভুল বোঝাবুঝি স্পষ্ট করে। একটি সংস্কৃতি কীভাবে নিজের এবং অন্যদের জন্য সাংস্কৃতিক স্তরে যোগাযোগ করার জন্য তার কল্পনাশক্তির সাথে আচরণ করে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। সুতরাং একজন সফল স্থপতি হওয়ার জন্য কোনো শর্টকাট নেই। সততা এবং অধ্যাবসায়কেই একজন ভালো স্থপতি হওয়ার জন্য প্রধান অনুঘটক বলে মনে করেন তিনি।