Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

দুই বন্ধুর স্থাপত্য ভাবনা

খালিদ আহমেদ খান ও খোন্দকার নাজমুল হাসান। দুই বন্ধু সহপাঠী। দু’জনই ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন। বিশেষ করে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, কোকাকোলা, রেকিট অ্যান্ড বেনকিজার, নেসলে, চ্যানেল আই ভবন, ডেইলি স্টার বিল্ডিং, মেরিট রিয়েল এস্টেট, গার্মেন্টস ও জুট সেক্টরের বিল্ডিং তৈরি করে তারা ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি’তে দুই স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসের কথা। বুয়েট থেকে সদ্য পাস করা দুই আর্কিটেক্ট বন্ধু খোন্দকার নাজমুল হাসান ও খালিদ আহমেদ খান মিলে গড়ে তোলেন নিওফরমেশন আর্কিটেক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
শুধুমাত্র বিল্ডিং ডিজাইন নয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেস, লে আউট থেকে শুরু করে ফার্নিচার-ফিক্সচার ডিজাইন, অগ্নি নির্বাপণ লে আউট, সাইন ডায়াগ্রাম সবই ঢেলে সাজানো শুরু করেন তারা। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে এদেশীয় স্থপতিদের এই নতুন কনসেপ্ট গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে যোগ করে নতুন মাত্রা। এরপরই নিওফরমেশনের পোর্টফোলিওতে একে একে যোগ হয় ব্যাবিলন গ্রুপ, ওসাকা ফ্যাশন, স্টারলিং ফ্যাশন, লা বেল গার্মেন্টস, ডেবোনিয়ার, দাদা ক্যাপ ম্যানুফ্যাকচারিং, ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল, রিদিশা নিটিং ও স্পিনিং, ইকোটেক্স লিমিটেড ও নর্দান কর্পোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের নাম। এরপর শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। ১৯৯৯ সালে নিওফরমেশন গার্মেন্টস ডিজাইনের পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে কাজ আরম্ভ করে। এ সময় তারা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ইউনিট- এক ডিজাইনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এটি তাদের ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করে। সেই থেকে আজ অবধি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি প্রোডাকশন ইউনিট ডিজাইনের সাথে নিওফরমেশন আর্কিটেক্ট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চ্যানেল আই এর অত্যাধুনিক স্টুডিও নির্মাণসহ অফিস সাজানোর ক্ষেত্রে দুই বন্ধুর স্থাপত্য ভাবনাই গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখেছে।
নিওফরমেশন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই প্রাধান্য দেয় মাল্টিন্যাশনাল ও দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট অফিস ডিজাইন। বিগত কয়েক বছর তারা এরই ধারাবাহিকতায় কোকাকোলা, ফারইস্ট লিমিটেড, রেকিট অ্যান্ড বেনকিজার লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিট্রেন্ড লিমিটেড, বেটস লিমিটেড, ডেনিম ডিজাইন হাউস, এসকোয়ার গ্রুপ ও ম্যাডোনা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছে। নিত্যনতুন গবেষণা, নতুন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তোলাসহ আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান যাতে এদেশে গড়ে তোলা যায় সে লক্ষ্যেও কাজ করে চলছেন তারা। বাইরের প্রফেশনালদের নির্ভরতা কমিয়ে যাতে এদেশের তরুণেরাই আন্তর্জাতিকমানের কাজ করতে পারে সেটাও তাদের ভাবনার বড় একটি বিষয়।
১৯৯৭ সালে একশ’ বর্গফুটের অফিসটি বর্তমান লালমাটিয়ার ২৬০০ বর্গফুটের এক বিশাল অফিস। ৮ জন নিয়মিত আর্কিটেক্টসহ ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চলছে দুই বন্ধু স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান নিওফরমেশন আর্কিটেক্টস। কাজের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এদেশের মানুষ, প্রকৃতি, আবহাওয়া ও জলবায়ুকে গুরুত্ব দেন তারা। এদেশের দক্ষ মানুষই সবচেয়ে বড় শক্তি এটা তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। শুধু বিশ্বাসই নয় এ বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দিতে শিশুদের নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। আগামী সম্ভাবনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে একটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট সেন্টার গড়ার স্বপ্ন দেখেন তারা।
খালিদ আহমেদ খানের জন্ম খুলনার শান্তিধামে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি। বাবা মরহুম ওয়াজেদ আলী খান ছিলেন ব্যাংকের চাকুরে। মা সাজেদা খানম। ছয় ভাইয়ের মধ্যে পঞ্চম খালিদ ’৯৭ সালে মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ’৮৯ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে। ১৯৯১ সালে ক্লাস শুরু। এরপর ১৯৯৭ সালে বুয়েট থেকে পাস করে সহপাঠী বন্ধু খোন্দকার নাজমুল হাসানকে নিয়ে গড়ে তোলেন নিওফরমেশন আর্কিটেক্ট। বুয়েটে দ্বিতীয় বছরে পড়াকালে দুজনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দু’বন্ধু মিলেই কিছু একটা গড়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই থেকে আজো তাদের বন্ধুত্ব অটল। সুখে-দুঃখে দুজন দুজনের পাশে এসে দাঁড়ান। দুজনই মুভি দেখতে ভীষণ পছন্দ করেন। স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করতে চান দুজন মিলেই।
চ্যানেল আই ২৩ পেরিয়ে ২৪ শে পদার্পন করছে। দুই বন্ধু বললেন, ভবনটির দিকে তাকালে মনে হয় আমরাও তো আছি চ্যানেল আই-এর সাথে। চ্যানেল আই আমাদের টিভি চ্যানেল। শুভ জন্মদিন চ্যানেল আই।