Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ম্যাপস নিয়ে শাহরিয়ার ইকবাল রাজের যত স্বপ্ন

শাহরিয়ার ইকবাল রাজ। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। দীর্ঘ দুই দশক ধরে স্থাপত্যশিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০২ সালে গড়ে তোলেন ‘ম্যাপস ডিজাইন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল আপন টাইন থেকে ডিজিটাল আর্কিটেকচার এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর দেশে এসে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে এই স্থপতি একই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সালে গড়ে তোলেন ‘কারুকাজ ডেভেল্পমেন্ট লিমিটেড’ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি ফায়ার সেফটি বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং এ ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
স্থপতি শাহরিয়ার ইকবাল রাজের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বেড়ে ওঠা সরকারি কলোনীতে যেখানে ছিল বিশাল খেলার মাঠ যার সবুজের ছায়া। অবশ্য তার স্কুলিং হয়েছে বেশ কঠিন শৃংঙ্খলার মাঝে। শাহরিয়ারের বাবার নাম মো: রজব আলী। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ফেরদৌস জাহান গৃহিনী। তারা দুজনেই মারা গেছেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেঝ শাহরিয়ার। স্কুলে পড়াকালীন শাহরিয়ারের ছবি আঁকাআঁকির প্রতি ছিল প্রচন্ড নেশা। ছোটবেলায় তার ইচ্ছা ছিল মেরিনার হওয়ার। তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ফৌজদারহাট কলেজ থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯০ সালে। ১৯৯২ সালে একই কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ২০০১ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০২ সালে গড়ে তোলেন ‘ম্যাপস ডিজাইন লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রধান স্থপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে তিনি। সাথে আছেন তারই ব্যাচমেন্ট স্থপতি আবু হাশেম মাসুদ্দুজামান। এর পরপরই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল আপনটাইন থেকে ডিজিটাল আর্কিটেকচার এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর দেশে এসে ফিরে এসে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। বর্তমানে তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি স্থাপত্যের নানান বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি আধুনিক স্থাপত্যচর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এই স্থপতি ‘কারুকাজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ২০১০ সালে। ইতোমধ্যে তিনি দেশের নামকরা কমার্শিয়াল বিল্ডিং, ফ্যাক্টরী বিল্ডিং, ট্রেনিং সেন্টার, স্কুল, ব্যাংক, ডুপলেক্স বিল্ডিং সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ গুলশান-১ এ সিটিস্কেপটাওয়ার, রাজশাহীতে ১০ তলা মুন রাবেয়া টাওয়ার, বাঁশখালীতে মি: ওয়ালির ডুপলেক্স বিল্ডিং, নেত্রকোনায় মি: আরিফ ডুপলেক্স বিল্ডিং, মোহাম্মদপুরের খিলজী রোডে কারুকাজ হাসিম হ্যারিটেজ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, কিশোরগঞ্জে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধি ফাউন্ডেশনের অধীনে স্কুল, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় লংঙ্কা বাংলার সিকিউরিটিজ অফিসের ইন্টেরিয়র, ইউনিকেপ সিকিউরিটিজ অফিসের ইন্টেরিয়র, সিলেটে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ট্রেিিনং সেন্টার, গাজীপুরে কাটিং এজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ওয়াশিং প্ল্যান্ট, নরসংদীতে মান্নান ভূইয়ার রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের রেনুভেশনের কাজ, ভাকুরতায় কৃষিবাড়ি এগ্রো লিমিটেড, মিরপুর শেওড়াপাড়ায় অ্যাডজাস্ট প্রপার্টিজ এর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মিরপুর-২ এ মি: মোমেন রেসিডেন্স, মিরপুর শাহ্ আলী বাগে মি: সোহাগের রেসিডেন্স, মুন্সি এন্টার প্রাইজের বেশ কয়েকটি অফিসের ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। বর্তমান তিনি বেশ কয়েকটি নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন। ২০১০ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তাহমিনা শফিক। তিনি একজন চাকরীজীবি।

শাহরিয়ার ইকবাল

বর্তমান স্থাপত্যচর্চার বিষয়ে স্থপতি শাহরিয়ার ইকবাল রাজ বলেন, আমার স্থাপত্যচর্চা শুরু হয় ২০০২ সাল থেকে। অবশ্য ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষকতায় বেশ কিছুটা সময় দেবার কারনে স্থাপত্য চর্চায় স্বভাবতই কম সময় দেয়া হয়। ব্যবসায়িক সাথীদের সহায়তায় ‘ম্যাপস ডিজাইন লিমিটেড’ পরিচালনা করছি। আমার সাথে আমারই ব্যাচমেন্ট স্থপতি আবু হাশেম মাসুদ্দুজামান আছে। আমি প্রধান স্থপতি হিসেবে এখানে কাজ করছি। আমরা মূলত রেসিডেন্টশিয়াল, কমার্শিয়াল এবং ফ্যাক্টরী বিল্ডিং ডিজাইন করে থাকি। এর পাশাপাশি আমি ফায়ার সেফটি বিষয়ক বিভিন্ন ট্রেনিং এ ট্রেনার হিসেবে কাজ করছি। আমার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে সিটিস্কেপ টাওয়ার। স্থাপত্যটি লীড প্ল্যাটিনাম সার্টিফাইড প্রজেক্ট। স্থাপত্যটি বাংলাদেশে এই ক্যাটাগরিতে প্রথম কমার্শিয়াল বিল্ডিং। আমার সাথে এ প্রজেক্টে কাজ করেছেন স্থপতি মুজতাবা আহ্সান এবং আমাদের ক’জন ছাত্র। প্রজেক্টটিকে বাংলাদেশে সাসটেইনেবল আর্কিটেকচার এর মাইল ফলক হিসেবে দেখা হয়।
আপনি যখন ডিজাইন করেন তখন কোন বিষয়টা মনে রাখেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি স্থপতি হিসেবে অন্যের অর্থে আমি আমার স্বপ্ন নির্মাণ করি, আর তাই প্রাথমিক ভাবে ক্লাইন্টের ইচ্ছে এবং প্রয়োজনকে আমার নান্দনিকতায় আঁকতে চেষ্টা করি। তারপর পুরো বিষয়টি ড্রইং বোর্ডে স্থাপত্যকলায় রূপ দিতে থাকি। পরিবেশের ব্যাপারে আমি বরাবরই সচেতন থাকতে চেষ্টা করি। অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যত স্থপতিদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন? এ প্রশ্নের জবাবে স্থপতি শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, পরিবেশের পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি তবে স্থপতিরা এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এর সমাধানে টেকনোলজীর সাহায্য নিতে হবে, নতুন ধারাকে স্বাগত জানানোর বিমুখতা আমাদের দেশের স্থাপত্যকে বরাববরই চ্যালেঞ্জ করে আসছে। নতুনরাই পারে এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে।
স্থাপত্য শিক্ষকতার সাথে আপনি জড়িত আছেন। বাংলাদেশের স্থাপত্য শিক্ষার বিষয়ে কিছু বলুন? প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার ইকবাল রাজ বলেন, মেধাবী ছাত্র পাওয়ার ব্যাপারে বুয়েট বরাবরই ভাগ্যবান। আর সংগত কারণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বুয়েটকেই রোল মডেল মনে করে। তবে আমি মনে করি এই বিশ্বাসের পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর স্থাপত্য বিভাগ বিশ্বের তুলনায় গবেষণায় বেশ পিছিয়ে। এ বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানকেই গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবহারিক জীবনে বৈরী পরিবেশের পরিবর্তন, শক্তির অপচয়, কার্বন নিঃসরণ ইত্যাদি বিষয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মৌলিক গবেষনার কোনো বিকল্প নেই আর এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান ঢাকার নগরায়ন নিয়ে স্থপতি শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, কমপেক্ট সিটি ডিজাইন হিসেবে ঢাকার অনেক প্রসপেক্ট থাকা স্বত্তেও ঢাকা ধীরে ধীরে অবাসযোগ্য নগরীতে পরিনত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ অস্বাভাবিক যানজট আর অপরিকল্পিত নগরায়ন। মধ্য যুগের মত এখনো আমাদের সড়ক বাতির কোনো ব্যবহার দেখা যায় না। এ শহরে রাজনীতিবিদ আর প্রতিষ্ঠানিক প্রধানরা নগর পরিকল্পনায় ভূমিকা পালন করছেন। ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী করতে সঠিক পরিকল্পনা আর নগর পরিকল্পনাবিদদের সাহায্য নিতে হবে।