সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
রফিক আজম। বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান একজন স্থপতি। দেশের গ্রিন আর্কিটেকচার বা গ্রিন লিভিং ভাবনার অন্যতম প্রধান রূপকার তিনি। তাঁর স্থাপত্যশিল্পে সবুজের বিপ্লব চলছে ৩০ বছর ধরে। প্রকৃতি ও স্থাপত্যের মেলবন্ধন তাঁর কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাতত্য আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং নামের একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কাজ নিয়েও ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন তিনি। পরিকল্পনা করছেন একটি মানবিক ঢাকার। দেশি-বিদেশি নানান পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে তার ঝুড়িতে। সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্থপতি অধ্যাপক রফিক আজম স্থাপত্য বিদ্যার সম্মানজনক রবার্ট ম্যাথিউ অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেয়েছেন। কমনওয়েলথ অব আর্কিটেক্টস (সিএএ) এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার সিএএ রফিক আজমকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। এবার শাহ সিমেন্ট নির্মাণে আমি তে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান এই স্থপতিকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

স্বপ্ন দেখি এই শহরের যে কোনো রাস্তার পাশে শিশুরা হেঁটে হেঁটে অক্সিজেন নিতে নিতে স্কুলে যেতে পারবে হাসতে হাসতে নির্দিধায়। তার পরিবারের কেউ দুঃশ্চিন্তা করবে না আমার বাচ্চারা হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। এ রকম একটা শহর যেদিন হবে সেটা আমার স্বপ্ন, সেই শহরের স্বপ্ন। আমার নিজের স্বপ্ন হচ্ছে যতদূর সম্ভব এই স্বপ্নের দিকে ধাবিত হওয়া। স্বপ্নের জন্য কাজ করতে থাকা, আমি যখন পার্ক গুলো করছি, মাঠ গুলো করছি। মাঠে গিয়ে দেখবেন বাঁচ্চারা হাটছে, খেলছে, হাসছে। কারোর কোনো ভয় নেই। ওই টুকু জায়গার মধ্যে আমি যখন এটা করতে পারি, তাহলে পুরো বাংলাদেশের শহর গুলোতে এটা করা যাবে আমি বিশ্বাস করি। এ কথা গুলো বললেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান স্থপতি অধ্যাপক রফিক আজম। বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার রূপকার এই স্থপতির স্থাপত্যকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সহাবস্থান, উম্মুক্ততা ও সবুজ সংলগ্নতা। কখনো কখনো তাঁর নকশার উপজীব্য হয়ে ওঠে লালন কিংবা রবীন্দ্রনাথের ভাবদর্শন। রোদ, বৃষ্টি, আর হাওয়ার বদল তার নকশা করা স্থাপত্যের রঙ-রূপ-ধরণ বদলে দেয়। সেই সঙ্গে স্থাপত্য কলাকে তিনি ধনীদের চৌহদ্দি থেকে নামিয়ে আনতে চান সাধারণ মানুষের কাতারে। তাই সব শ্রেণী পেশার মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি শহরের নাগরিকদের দৃষ্টিসীমা বিস্তৃত করতে তাঁর নকশা করা পার্ক কিংবা ভবনের কোনো দেয়াল থাকে না। দেয়াল অপসারণের মাধ্যমে তিনি ভাঙতে চান সব নাগরিক অবিশ্বাসকে। এভাবেই তার নকশায় ঢেলে সাজানো পার্ক কিংবা খেলার মাঠ হয়ে ওঠে এলাকার সব শ্রেণীর মানুষের মিলন কেন্দ্র। সবুজ হারানো ইট কাঠে নগরে তার ডিজাইন করা ভবনের প্রতিটি তলায় থাকে একগুচ্ছ সবুজ। ছাদে পুকুর। থাকে রাগ নিবারণের ‘গোস্বাঘর’। ছোট্ট ফ্লাটের সীমিত পরিসরের মধ্যেই তিনি বানিয়ে ফেলেন বৃষ্টি কিংবা বাতাস উপভোগের জন্য এক চিলতে জায়গা। এ সব কারনে তিনি পরিচিত পেয়েছেন ‘গ্রিন আর্কিটেক্ট হিসেবে।
সবুজ সচেতন স্থাপত্য শ্লোগানে ১৯৯৫ সালে নিজে গড়ে তোলেন স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান সাতত্য।
এখানে কাটে তার বেশির ভাগ সময়। চলে স্বপ্নের সবুজ বুনিয়াদ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্ধারকৃত পার্ক ও খেলার মাঠে সবুজের সমারোহে গড়ে তোলা স্থাপনায় নিজেকে নিয়েছেন অনন্য স্থানে। নানান চ্যালেঞ্জ থাকলেও কাজের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণায় থাকতে চান অধ্যাপক রফিক আজম। তাঁর আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং আজ বিশ্বে সবচেয়ে সমাদৃত শ্লোগান। বাংলাদেশে তো বটেই বিশ্বের নানা দেশের তাঁর স্থাপত্য নিদর্শন ভবিষ্যৎ স্থপতিদের কাছে অনুকরণীয় বিষয়। মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভূটান থেকে অস্ট্রেলিয়ার যেখানেই তিনি কাজ করেছেন তা হয়ে উঠেছে দর্শনীয় বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মতিঝিল পুনরুজ্জীবন প্রজেক্ট। পুরান ঢাকায় রসুলবাগ শিশু পার্ক, আজিমপুরে মেয়র হানিফ জামে মসজিদ, রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, ভূটান অ্যাম্বাসী, সাউথ লীফ অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরায় আগাখান একাডেমী, পূর্বাচলে যমুনা গ্রুপের হাউজিং প্রকল্প। মাইজিদিতে এসএ গ্রুপের হোটেল, কামরাঙ্গিচরে কালি মন্দির শ্মসান ঘাট, বিটিআই হাউজিং প্রকল্প, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট সহ অসংখ্য ভবনের কাজ করেছেন। এছাড়াও বেশ কিছু নতুন প্রজক্টের কাজ করছেন তিনি।
বাংলাদেশের স্থপতিদের মধ্যে রফিক আজমই সর্বাধিক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। প্রাপ্ত অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে আউটস্টান্ডিং প্রপাটি অ্যাওয়ার্ড লন্ডন, ডিএনএ প্যারিস ডিজাইন অ্যাওয়ার্ডস ২০২১, ইউরোশিয়ান প্রাইজ গোল্ড ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ২০২০, ইউরোশিয়ান প্রাইজ সিলভার ডিপ্লোমা ইন আরবান প্ল্যানিং, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭, সিটি এসকেপ গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ ও ২০১৭, আর্ক এশিয়া অ্যাওয়ার্ড, গোল্ড মেডেল ২০১৭, লিডিং ইউরোপিয়ান আর্কিটেক্টস ফোরাম অ্যাওয়ার্ড ২০১২, বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন আর্কিটেকচার ২০০৭ ও ২০১৭, এ আর ইমার্জিং অ্যাওয়ার্ড, মালয়েশিয়া প্রপাটি অ্যাওয়ার্ড, পিএএম অ্যাওয়ার্ড মালয়েশিয়া, ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ এশিয়ান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড, আইএবি ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড, এমিরেটস গ্লাস লিডিং ইউরোপিয়ান আর্কিটেক্টস ফোরাম অ্যাওয়ার্ড, কেনেথ এফ ব্রাউন এশিয়া প্যাসিফিক কালচার অ্যান্ড আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড ২০০৭ অন্যতম। স্থপতি রফিক আজমের কাজ ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত। ইতালিয় প্রকাশনা সংস্থা স্কিরা ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয় রফিক আজম আর্কিটেকচার ফর গ্রিন লিভিং শীর্ষক গ্রন্থ। কোনো ভবন কিংবা কোনো প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুধু মাত্র ইট, রট, সিমেন্ট, কাঠ নির্মাণ নয়, সেখানে যেন প্রাধান্য পায় সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া।
মানুষ প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে এমন স্থাপত্যশৈলীকে মনে লালন করে তার কাজে বাস্তব রূপ দিয়েছেন স্থপতি রফিক আজম। তাঁর স্থাপত্য ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও রহস্যবাদের এক সুরেলা সংমিশ্রন। ভবন গুলোকে কাব্যিক সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো। তার এই সবুজ স্থাপত্য এবার স্বীকৃতি মেললো। বাংলাদেশি স্থপতি অধ্যাপক রফিক আজম স্থাপত্যবিদ্যার সম্মানজনক রবার্ট ম্যাথিউ অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেয়েছেন। কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস (সিএএ) এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার সিএএ রফিক আজমকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। সংস্থাটির ৪০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের কোনো স্থপতি প্রথমবারের মতো পেলেন এ সম্মাননা। কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন আর্কিটেক্টস (সিএএ) এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।
১৯৮৩ সাল থেকে রফিক আজম হলেন নবম স্থপতি, যিনি সম্মানজনক রবার্ট ম্যাথিউ অ্যাওয়ার্ডে আজীবন সম্মাননা পেলেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ফিলিপকক্স (১৯৮৩), যুক্তরাজ্যের অরুপ অ্যাসোসিয়েট (১৯৮৫), ভারতের রাজ রেওয়াল (১৯৮৯), হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি কাউন্সিল অব দ্য ইউকে (১৯৯১), ইয়ানরিচি আর্কিটেক্টস অব দ্য ইউকে (১৯৯৪), অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ বারগেস আর্কিটেক্টস (১৯৯৭), মালয়েশিয়ার টিআর হামজাহ অ্যান্ড ইয়ং (২০০০) এবং ভারতের বালকৃষ্ণ দোশী সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন। রফিক আজমের কাজ কমনওয়েলথের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে স্থাপত্য বিদ্যার উন্নয়নে উদ্ভাবনী ভূমিকা রেখেছে বলে ধরা হয়। এই ধারার স্থাপত্য বিদ্যার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্যই এ পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। আগামী ৮ আগস্ট ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে সিএএ এর সাধারণ অধিবেশন হবে। সেখানে স্থপতি রফিক আজমের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে রফিক আজম বলেন, অনেক কিছু করেছি এই ৩০ বছরে। হঠাৎ মনে হলো কেউ বা বিশ্ব বলছে, না, তুমি কিছু করছো। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজের স্বীকৃতি পেলে ভালোই লাগে এটা আসলে একটা সম্মানের ব্যাপার। আমি সত্যিই গর্বিত যে আমি আমার দেশকে কিছুটা হলেও সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি বিশ্বের সামনে। এই কাজের সম্মাননা কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে দিবে। এখন আরও সচেতন হতে হবে। দেশের মানুষ আশা করবে আমাদের কাছ থেকে আরও ভালো কিছু কাজ। জনগণের কাজে আসে যে কাজ গুলো সেই গুলো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্থাপত্য বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ভালো কাজের প্রমাণ রাখছে। এখন ধীরে ধীরে সেটা আরও বাড়ছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে এইটা আগামীতে আরও বাড়বে। তবে পাশাপাশি আমাদের ভাবতে হবে যে আমাদের পড়াশোনার স্কুল গুলো, ইউনিভার্সিটি, আর্কিটেকচারের স্কুল, প্ল্যানিংয়ের স্কুলে আরও সচেতন ভাবে পড়াতে হবে। কারণ পৃথিবী অনেক বড় হয়ে গেছে। ইনভেস্টমেন্ট আসছে অনেক বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিদেশী আর্কিটেক্ট প্ল্যানাররাও আসছে। তারা এমন ভাবে অ্যাগ্রেসিভলি আসছে যে সব কাজ নিয়ে চলে যাবে। মেগা প্রজেক্ট গুলোতে দেখা যায় যে বাংলাদেশি আর্কিটেক্ট বা প্ল্যানাররা কাজ করে না, করে বিদেশীরা। বড় বড় কাজে বাংলাদেশি আর্কিটেক্টরা ঢুকতে না পারলে কিন্তু ওই ছোট ছোট কাজ, বিদেশে অ্যাওয়ার্ড নিয়ে খুশী থাকতে হবে। কিন্তু এ দেশের টাকা বিদেশে ডলার আকারে নিয়ে চলে যাবে। এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। যেহেতু আমরা ভালো কাজ করছি, তার মানে আরও ভালো কাজ করতে পারি আমরা। তার জন্য পড়াশোনা, ট্রেনিং, প্রস্তুতিও নিতে হবে। বাংলাদেশের একটি স্থাপত্য বিশ্বের স্থপতিদের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব আর্কিটেক্টস এর দেওয়া ইউআইএ টুয়েন্টি থার্টি পুরস্কারের ভূষিত হয়েছে। এই সাফল্য অর্জন করেছে ঝিনাইদহের কোক্রিয়েশন্স অব আরবান স্পেস বাই নবগঙ্গা রিভার প্রকল্পটি। জাতিসংঘের ইউএন হ্যাবিট্যাটস এ সহযোগিতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র এসডিজির প্রচারের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে বাংলাদেশের আরও দুটি স্থাপত্য প্রকল্প উচ্চ প্রশংসিত হয়েচে। তার মধ্যে একটি পুরান ঢাকার রসুলবাগ শিশু পার্ক প্রকল্প, অপরটি রংপুরের কারুপন্য ফ্যাক্টরি।
রসুলবাগ শিশু পার্কটি সম্পর্কে স্থপতি রফিক আজম বলেন, আমাদের রসুলবাগ প্রকল্প একটি ইন্টারেস্টিং কাজ ছিল। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এর জল সবুজে ঢাকা প্রকল্পের একটা অংশ ছিল। আপনারা জানেন আমরা ৩১টি প্রকল্প কাজ করেছি। তার মধ্যে এটা একটা। রসুলবাগ শিশু পার্কটি আজিমপুরের পিছনের এলাকাতে। এ জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে থাকত মাসের পর মাস। এখানে কিছু করা যেত না। পরবর্তীতে ওই এলাকার মানুষদের নিয়ে অনেক মিটিং করি। আলোচনা করে চিন্তা করলাম কী করা যায়? আমরা তিনটা কাজ খুব জরুরী ভাবে করেছি। একটা হলো পার্কের সামনে যে দেয়াল ছিল সেটা আমরা ফেলে দিয়েছি। পার্ক উম্মুক্ত হয়ে গেছে। তার মানে এটা সবার জন্য। দ্বিতীয় কাজটি ছিল জমে থাকা বৃষ্টির পানিকে সরানো। আমরা কি করলাম পায়ে হাটার পথে নিচে পানিকে ধারণ করে, সেটাকে ফিল্টার করেছি। ফিল্টার করার কারণে ওই এলাকার মানুষজন প্রতিদিন ফ্রি পানি পাচ্ছেন। ওইখানকার মসজিদেও আমরা পানি দিচ্ছি। আরেকটা কাজ করেছি আমরা, ওখানে একটা পুরান দালান ছিল দখলে। দখলকারীকে তুলে ওই দালানটাকে পূর্ণবিন্যাস করে সেখানে আমরা একটা লাইব্রেরি করেছি। রাতের বেলায় মহিলারা এখানে হাঁটতে আসে। মহিলাদের ক্লাব আছে। ব্যায়ামাগার আছে। ছাদের ওপর কফিশপ আছে। চায়ের দোকান আছে। সব কিছু মিলিয়ে পুরো জায়গা তাদের প্রাণের জায়গা। ঢাকা শহরের প্রতিটি কোনায় এমন কোনোয় সুন্দর করা সম্ভব। এমন একটা বিশ্বাস তৈরি করেছে। আমরা সবাইকে দেখাচ্ছি, এটা পসিবল। যদিও এখানে ৩১টি প্রকল্প ছিল। তার মধ্যে আমরা কিছু প্রকল্প ভাগ করে দিয়েছি অন্যান্য গ্রুপকে। তারাও কাজ করবে। একা একাতো কাজ করা যায় না। আমরা ১৯টির মতো দায়িত্বে ছিলাম। তার মধ্যে আটটির মতো কাজ শেষ হয়েছে। মানুষ ব্যবহার করছে। কিছু প্রজেক্ট চলমান আছে। দু একটি আইনি জটিলতায় আটকে আছে। অপেক্ষা করছি হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করছি। ৭৫টি ওয়ার্ডে স্কুল আছে কী না, না থাকলে স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা করছি। সার্বিক ভাবে এই ওয়ার্ড গুলোর সুষ্ঠু জীবনযাপনের যে সব সুবিধা প্রয়োজন সে সবের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি, জায়গার ব্যবস্থা করছি। নদীর ধার ঘেষে কামরাঙ্গীচরকে নতুন সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক হিসেবে তৈরির কাজও চলছে। হাজারীবাগে যেখানে ট্যানারি ছিল সেই জায়গাকে আরবান ফরেস্টে তৈরি করতে চাচ্ছি। দখলমুক্ত হওয়া নদীর ধারে গাছ লাগানোর একটা পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি মতিঝিল এলাকা নিয়েও কিছু কাজ চলমান। এখানে যে হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট হয়েছে, সেটা কিন্তু সন্ধ্যা হলে আর কোনো কাজে আসেনা। মেন্ট্রোরেলকে কেন্দ্র করে ওই এরিয়াকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার একটা পরিকল্পনা রয়েছে ড্যাপে। একটু সময় লাগলেও দেখা যাবে হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে কিছু পরিবর্তন আসা শুরু হবে। মূলত এসব নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে সময় কাটছে। স্থপতি রফিক আজম ও তাঁর দল এখন পর্যন্ত সফল ভাবে ঢাকা শহরের ৩১টি কমিউনিটি পার্ক ও খেলার মাঠকে আমূল বদলে দিয়েছেন আলো-ছায়া আর সবুজে।