Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রুকুনের স্থাপত্য ভাবনা

দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যারা সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রুকুন উদ্দিন ভূঁইয়া। ২০০৫ সালে আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি আমেরিকার সাভানা কলেজ অব আর্ট এন্ড ডিজাইন থেকে আর্কিটেকচারের ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে নিজে গড়ে তোলেন মেট্রোপলিটন আর্কিটেক্টস নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই ফার্মের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতি রুকুন উদ্দিন ভুঁইয়া। আর পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি রাদিয়া সুলতানা। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করেছে। এবার শাহ্ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক। 

কাজের ক্ষেত্রে আমরা স্থাপত্যের মৌলিকতাকে প্রাধান্য দিয়েছি সব সময়। প্রতিটি কাজেই চেষ্টা করি নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট করার। প্রতিটি নিরিক্ষণেই থাকে হাজারো বাধা বিপত্তি আর এই প্রতিবন্ধকতাই কাজকে করে তোলে আরো যুক্তি যুক্ত এবং যুগোপযোগী। কাজের বাইরেও আমাদের গবেষণা থেমে থাকে না।

ভ্রমণের নেশা আছে বলেই পৃথিবীর যখন যেখানে যাই চেষ্টা করি সেখান থেকে সেরাটুকু নিয়ে এসে আমাদের দেশের উপযোগী করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে। আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে মধ্যে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষ দেশ, প্রকৃতিকে মাথায় রেখে পরিবেশ বান্ধব নকশা করার। একথা গুলো বললেন স্থপতি রুকুন উদ্দিন ভুইয়া। এই স্থপতি সব সময় চিন্তা করেন তার কাজটা যেন পরিবেশ বান্ধব হয়। সুন্দরও দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি পরিবেশ সহনীয় স্থাপত্য চর্চাই তার অন্যতম লক্ষ্য।

স্থপতি রুকুনের গ্রামের বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলায়। অবশ্য তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পিরোজপুরে বলেশ্বরের পাড়ে। রুকুন এর বাবার নাম এ কে এম রহিম উদ্দিন ভুঁইয়া। তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য ডাক্তার। মা তানজীদা বেগম ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মধ্যে রুকুন সবার ছোট। পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি প্রাইভেট ভাবে কয়েক বছর কাজ করেন। ২০০৭ সালে স্থপতি রুকুন উদ্দিন ভূঁইয়া মাস্টার্স করার জন্য পাড়ি জমান আমেরিকাতে। সাভানা কলেজ অব আর্ট এন্ড ডিজাইন থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর নিজ দেশে ফিরে আসেন স্থাপত্য চর্চার উদ্দেশ্যে। দেশের জন্য কিছু করার তাগিদে গড়ে তোলেন তার আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠান ‘মেট্রোপলিটন আর্কিটেক্টস’। ২০১০ সালে স্থপতি রাদিয়া সুলতানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনারই একই কর্মক্ষেত্র তাদের ‘মেট্রোপলিটন আর্কিটেক্টস’। ২০১১ সাল হতে এ পর্যন্ত যে সকল প্রকল্প ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ গুলশান এভিনিউতে নাভানার এফ এস কসমো, গুলশান-১ এ ট্রাঙ্কুয়ালিটি, বারিধারার আবাসিক এলাকায় হ্যাজেলউড, পাইনউন, পল্টনে ওশিয়ানা, প্রগতি সরনিতে ৩৩ কাঠায় অ্যাট্রিয়াম, কনকর্ড এর গলফ ভিউ রাফাত কামার, গ্র্যান্ড রুবি, চট্টগ্রামে খুলশী টাউন সেন্টার, বসুন্ধরায় প্রিমিয়াম শেখ, প্রিমিয়াম আরিফিন ও সিকান্দর। সরকারি অর্থায়নে রয়েছে শ্যামলীতে পি কে এস এফ ও বেড়িবাধে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টার, পিদিম ফাউন্ডেশনের কর্পোরেট অফিস। রয়েছে আমেরিকান অ্যাম্বেসির অর্থায়নে করা প্রিজারভেশন প্রকল্প বরেন্দ্র মিউজিয়াম, রাজশাহী, ইন্টেরিয়র প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে- ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ই এম কে সেন্টার, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, টিম ইঞ্জিনের কর্পোরেট অফিস, তেজগাঁও এসপিএল টাওয়ারে আমাদের বাড়ি লিমিটেড এর কর্পোরেট অফিস। এছাড়াও বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য মতিঝিলে রূপায়ন রেড ক্রিসেন্ট টাওয়ার, বসুন্ধরায় বিজনেস পার্ক ও রূপায়ন সিটি উত্তরার কিছু প্রজেক্ট।

স্থপতি রুকুন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, স্থাপত্য কলা শুধুই ইমারতের নকশা করা এমন মনে করিনি কখনোই। এই মাধ্যমে জড়িয়ে আছে হাজারও শিল্পের নির্যাস। আর এই বিশ্বাসেই প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ক্যানভাসে আমরা এঁকে চলেছি অতিকায় ত্রিমাতিক আল্পনা। আমাদের প্রতিটি নির্মাণেই রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র। আর এই স্বকীয়তাটুকুকে আমরা ব্যাখ্যা করি মানব শিশুর সঙ্গে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠা নিবিড় পর্যাবেক্ষণ করলে দেখা যায় কেমন করে সে একটু একটু করে পুর্ণাঙ্গ মানুষের অবয়ব পায়। তেমনি আমাদের কাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনে পায় চূড়ান্ত রূপ। আমাদের কাছে স্থাপত্যের পূর্ণতা শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, কখনো কখনো এটি পূর্ণতা পায় ভাস্কর্য, সঙ্গীত, কলা, কবিতা, ফটোগ্রাফি ও শিল্পের হাজারো মাধ্যমে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি রুকুন বলেন, মানুষ হাজার বছর ধরে স্থাপত্যের শক্তিশালী ভাষাকে ব্যবহার করে প্রকৃতি, সমাজ এবং সময়কে বেঁধে রেখেছে। আর আমরা আমাদের কাজ দিয়ে স্থাপত্যের এই মৌলিক ভাবনাটুকু প্রতিনিয়ত লিপিবদ্ধ করছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যা হয়তো সাহায্য করবে আগামী প্রজন্মকে ভালোভাবে বেঁচে থাকার। প্রকৃতিকে বোঝার বা নিজেকে অনুধাবন করার জন্য । এই শিক্ষা ও গবেষণালদ্ধ জ্ঞানটুকুই চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে পারলেই আমরা ভাবছি আমাদের স্থপতি হিসেবে জন্ম স্বার্থক হয়েছে।