সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্রনাথ সরকার। বাংলাদেশের একজন কাঠামোগত প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৩ সালে নিজে গড়ে তোলেন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ যাবত তিনি বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করে অনেকের নজর কেড়েছেন। এবার শাহ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’-তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
প্রকৌশলী রবীন্দ্রনাথ সরকারের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইল এ। সেখানেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবার নাম রাখাল চন্দ্র সরকার। তিনি শিক্ষক ছিলেন। মা কল্পনা রানী সরকার ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিন ভাইবোনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ সরকার সবার ছোট। ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। হয়েছেনও সফল প্রকৌশলী। নিজের আগ্রহ থেকে প্রকৌশলী হওয়া তার। পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)-এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ২০০৮ সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাস করার পরপরই তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন সাদ মুসা গ্রুপে।
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (ঝঊখ) কোম্পানিতে যোগ দেন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
২০১৩ সালে নিজে গড়ে তোলেন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটেনশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে কাওরান বাজারের ১৪ তলা র্যাফাস টাওয়ার, ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইটি এইচআর ডি এইচ ভবন, গুলশান-২ এ বকুল সাউথ ব্রিজ অটোগ্রাফ, সাদ মুসা গ্রুপের ২০ তলা টাইপ সি টু ভবন, চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে ১৪ তলা সানমার বেলমন্ট হাইরাইজ বিল্ডিং, গুলশানে ১৪ তলা সাউথ রিপল ভবন,সাউথ লিভস আবাসিক ভবন, ধানমন্ডি ১৪ তলা সাউথ ম্যাজেস্ট্রি আবাসিক ভবন, গুলশান এভিনিউতে ১৪ তলা সাউথ স্কয়ার কমার্শিয়াল ভবন, ধানমন্ডিতে ১৪ তলা রুবিস সাউথ ব্লু ওয়াটার ভবনের নকশাসহ অসংখ্য ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু প্রজেক্টের স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশকিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রকৌশল শিক্ষা আজ সারা বাংলাদেশে প্রসারিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ইউনিভার্সিটির সংখ্যা বেড়েছে। বছরের পর বছর আমাদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের ল্যাবরেটরির অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে। আমাদের অনেক স্বনামধন্য শিক্ষক বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসে তারা বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছেন। সবমিলিয়ে আমি বলব স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রকৌশল শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়ছে।
যেসব ভবন তৈরি হয়ে আছে সেগুলোকে কীভাবে ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, যেসব ভবনের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সেগুলো যদি ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন ত্রুটির কারণে ভূমিকল্প সহনীয় না হয় সেক্ষেত্রে শুরুতেই ভবনগুলো ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে সেখানকার মাটি পরীক্ষা, ভবনটির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি ঐ ভবনটির ভার বহন করতে সক্ষম কী না, ভবনের কলাম ও বীমে পর্যাপ্ত রড এবং ঢালাই আছে কিনা এগুলো চেক করতে হবে। ফেরোস্কেনিং এবং কোর কাটিংয়ের মাধ্যমে এগুলো সহজেই পরীক্ষা করা যায়। এক কথায় বলতে গেলে একটা ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধ হবে কিনা সেটা নির্ভর করে তার ডাকটাইল বিহেভিয়ারের ওপর। এর মানে হচ্ছে, ‘ডব ডধহঃ সড়ৎব পড়হপৎবঃব ঃযধহ ংঃববষ’.
প্রকৌশলী রবীন্দ্রনাথ সরকার ২০০৭ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম পূর্ণতা রায়। তিনি একজন ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বুয়েট থেকে পাস করেছেন। এই দম্পতি এক কন্যা সন্তানের জনক-জননী। মেয়ের নাম পরিণীতা সরকার।
এই প্রকৌশলী তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশায় দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকৌশলী রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, প্রাইভেট সেক্টর থেকে আমি আমার দেশকে এগিয়ে নিতে চাই এবং আমার দেশকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ভবন উপহার দিতে চাই। এটাই আমার উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা।