Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ঢাকা স্টুডিও নিয়ে মনিরুজ্জামানের যত স্বপ্ন

দেশের কালচার, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্টুডিও ঢাকা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। কিছু দিন আগে ‘টীচ ফর বাংলাদেশ’ এর প্রধান কার্য্যালয়ের ডিজাইনের জন্য তিনি ভারতের স্বনামখ্যাত জে কে সিমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এর বর্ষসেরা স্থপতির পুরস্কার অর্জন করেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট ‘নির্মাণে আমি’তে স্বনামধন্য এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

আমরা যে কোনো ধরনের বিল্ডিং ডিজাইন নিয়ে কাজ করি। ইন্টেরিয়ার করি, বিল্ডিং ডিজাইন করি, এ রিলেটেড ল্যান্ড স্কেপিং করি। আমাদের একটা উদ্দেশ্য থাকে, কেউ যদি কোনো একটা কাজের জন্য বলে আমরা চেষ্টা করি আমাদের মেধা দিয়ে, আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে, আমরা আমাদের মতো করে যতটুকু ভালোভাবে কাজটা করা সম্ভব সেটা করি। আমরা এনজয় করি কাজটা। আমরা একটা প্যাশন নিয়ে কাজ করি। এই প্যাশনটা আমাদের মধ্যে আছে। আর আমাদের কাজের ছোট বড় স্কেল বা বাজেট বিষয় না। একটা কাজের বাজেট কম আমরা কম ফোকাস করি। বেশি বাজেটের কাজ বেশি ফোকাস করি। আমাদের কাছে সব কাজই সমান। যে কাজটাতে আমরা ফ্রিডম বেশি পাই বা ক্লায়েন্টের সাপোর্টটা পাই, ওই কাজ গুলোতে আমরা বেশি এনজয় করার চেষ্টা করি। তখন কাজ গুলোর ভালো রেজাল্ট আসে।
একথাগুলো বললেন স্থপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্যশিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি চাকরিজীবি ছিলেন। মা রুজুফা বেগম গৃহিনী। গর্ভমেন্ট ল্যাবেরটরী স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৩ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ২০০৪ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্টুডিও ঢাকা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের তিনি প্রধান স্থপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্টুডিও ঢাকা বর্তমান সময়ে স্থাপত্য অঙ্গণে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে চলেছেন বিভিন্ন স্থাপনার মধ্য দিয়ে। এই অফিসের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। অধিকাংশ সদস্যই বয়সে তরুণ। তরুণ স্থপতিদের নিয়ে গড়া বড় একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান স্থপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ওদের ভাবনা গুলো আমি সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমরা সবাই একটা দল। দলের এই স্পিরিটটাই আমাদের কাজ এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। তারুণ্যের শক্তিটা কাজে লাগানোর ওপর জোড় দেন তিনি। স্থপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান দেশের নামকরা হাসপাতাল ক্লাব, ইন্ডাস্ট্রি, রিসার্চ সেন্টার, কর্পোরেট অফিস, আবাসিক ভবন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।
‘স্টুডিও ঢাকা’ প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- গুলশানে টীচ ফর বাংলাদেশ প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রামের রাউজানের হামদুমিয়া মসজিদ ও ইসলামী রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘সেনাকুঞ্জ’, কক্সবাজার শিশু হাসপাতাল, কক্সবাজার অফিসার্স ক্লাব, কুমিল্লায় শ্রুতি ডেনিম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, বসুন্ধরায় ২০ হাজার বর্গ ফুটের ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেট অফিস, উত্তরায় চিত্রা আবাসিক ভবন, বনানীতে প্যারামাউন্ট বোট হাউজ ও এগ্রো শপ, নিকুঞ্জে অ্যাম্বাসেডর রেসিডেন্স বিল্ডিং, বসুন্ধরায় পুনর্ভবা রেসিডেন্স বিল্ডিং সাভারে ২০ ট্রেড সেন্টার, সেমকর্প হেড অফিস তলা অলিম্পিয়া, দেশব্যাপী বার্জার পেইন্টস এর এক্সপিরিয়ান্স জোন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি ‘টীচ ফর বাংলাদেশ’ এই ভবনের ডিজাইন করেই আন্তর্জাতিক একটি পুরস্কার ঘরে তুলেছেন স্থপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

স্থপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান

কিছুদিন আগে ভারতের জে কে সিমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এর সর্বশেষ আসরে মোট ছয়টি বিভাগে বাংলাদেশের স্থপতিরা পুরস্কৃত হন। এর মধ্যে ফরেন কান্ট্রিজ অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে আর্কিটেক্ট অব দ্য ইয়ার পদক লাভ করেন স্টুডিও ঢাকার প্রধান স্থপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ১৯৯০ সাল থেকে দেয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠান জে কে সিমেন্ট শুরুতে শুধু নিজের দেশের স্থাপত্য ও স্থপতিদেরই পুরস্কৃত করত। ১৯৯৮ সাল থেকে ভারতের বাইরেও এই পুরস্কারের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল সহ মোট ১০টি দেশ এখন পুরস্কারের আওতাভুক্ত। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটা আমাদের প্রথম অ্যাওয়ার্ড পাওয়া। অবশ্যই অনুভূতিটা খুবই আনন্দের। কেউ যদি আমাদের কাজটা ভালো বলে, তখন তো ভালোই লাগে।
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত একটি দলের সমন্বয়ে তারা ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ‘টীচ ফর বাংলাদেশ’ এর প্রধান কার্যালয়ের জন্য কাজ করেন এবং এই পদক লাভ করেন। ‘টীচ ফর বাংলাদেশ’ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনে এবং উন্নতিকল্পে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার দিক থেকে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে এই প্রতিষ্ঠান বদ্ধ পরিকর। তাদের প্রধান কার্যালয় নকশার সময় তাদের কাজের প্রকৃতি ও পদ্ধতিকে মাথায় রাখা হয় সবচেয়ে বেশি। গতানুগতিক অফিসের নকশা থেকে বের হয়ে ‘স্টুডিও ঢাকা’ ঢাকার গুলশানে একটি নতুন ধারার অফিসের সূচনা করে।
স্থপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আমরা সব সময় স্থপতি হিসেবে কল্পনাকরি, কিন্তু অফিস ডিজাইনের সময় আমি নিজেকে এই অফিসের একজন হিসেবে কল্পনা করি এবং সেখান থেকে সব রকমের ডিজাইনের শুরু হয়।
একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ডিজাইনের শুরু থেকে স্থপতি এবং তার পুরো দল মাথায় রাখেন তা হলো কোনো রকমের গাছ না কাটা। সীমিত উচ্চতার এই অফিসের নির্মাণে সব রকমের দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এক তলা বিশিষ্ট এই অফিস ভবনকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে অফিসের রুমগুলোকে ভাগ করা হয়। এই অফিস ভবনে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্রীয় এম্ফিথিয়েটার। অফিস সহ আগত সকলের জন্য এটি একটি নিজস্ব জায়গা। প্রাথমিক ভাবে কেবল মাত্র একটি গ্যালারী কিংবা লেকচার হল নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তীতে এম্ফি থিয়েটার করা হয়।
ইট কাঠের নগরীতে অফিসের জন্য আমাদের চিন্তাভাবনাকে বদ্ধ ও সীমিত না করে প্রকৃতির সাথে মেল বন্ধনের মাধ্যমে একটি নিজস্ব জায়গা তৈরিই ছিল আমদের লক্ষ্য। বললেন, স্থপতি মনিরুজ্জামান।