Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বিশুদ্ধ স্থাপত্য চর্চাই যার স্বপ্ন

আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে যারা দেশের সৃষ্টিশীল কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ইফতেখার হাসান। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগ দেন রূপায়ন হাউজিং কোম্পানিতে। সেখানে দেড় বছর চাকরি করার পর সহকারি স্থপতি হিসেবে যোগ দেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে। সেখানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পাঁচ বছর কাজ করেন। ২০১০ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্থাপনা কৌশল’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন তৈরি করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি’তে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

ডিজাইনের শুরুতেই ক্লায়েন্টের চাহিদা বিস্তারিত বুঝে নেবার চেষ্টা করি। সঙ্গে সাইটের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাটুকু সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য চলে সূক্ষ্ম হিসেব নিকেশ। শুরু হয় স্কেচ-সহজ সরল রেখার বিন্যাস আর বেসিক জিওমেট্রিক ত্রিমাত্রিক কম্পোজিশন। প্রকৃতির সঙ্গে নিখুঁতভাবে ভারসাম্য চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে নির্মিতব্য ভবনটি খাপ খাওয়ানোর প্রয়াস থাকে একই সঙ্গে। ভবনটির প্রতিটি পরিসরে প্রকৃতির আলো বাতাস কিংবা জানালা বা ব্যালকনির ফ্রেমে সুন্দরতম দৃশ্যটি নিশ্চিত করাও আমার ডিজাইনের এক অপরিহার্য দিক। একথাগুলো বললেন, স্থপতি ইফতেখার হাসান।

স্থপতি ইফতেখারের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমেদ। মা ইসমত আরা গৃহিণী। ছোট বেলায় ছবি আঁকাআঁকির বীজটা রোপন হয়েছিল। ছবি আঁকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়া। তিনি হয়েছেনও একজন সফল স্থপতি।

রংপুর জেলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৫ সালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। ইফতেখার হাসান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৩ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন ‘রূপায়ণ হাউজিং কোম্পানিতে’। তারপর ২০০৫ সালে তিনি স্থাপত্য অধিদপ্তরে সহকারী স্থপতি হিসেবে যোগ দেন। সেখানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ৫ বছর কাজ করেন। ২০১০ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজে গড়ে তোলেন ‘স্থাপনা কৌশল’ নামের একটি ফার্ম। ইতোমধ্যে ইফতেখার দেশের নামকরা কমর্শিয়াল বিল্ডিং ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, পাঁচ তারকা হোটেল, হসপিটাল, গার্মেন্টস, অফিস বিল্ডিং, স্কুল সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে টেকনাফে পাঁচ তারকা হোটেল দ্য ইকোভ্যালী হোটেল এন্ড রিসোর্ট, পাবনায় ১৫ স্টোরিড মিক্সড ইউজ বিল্ডিং ডক্টরস টাওয়ার, নরসিংদীতে ব্রাদার্স ডাইং ট্রিপল ট্রিপল্যাক্স, রামপুরা ১৪ তলা রেসিডেন্সশিয়াল প্রজেক্ট টোমা মাউটন প্যালেস, বসন্ধুরায় দ্য সিগনেচার বাই সিলভার কি, আফতাব নগরে ১০০ অ্যাপার্টমেন্ট হাউজিং ডোমিনেন্ট আনন্দধারা, ধানমন্ডিতে রূপায়ন হারমনি ১৫ স্টোরিড রেসিডেন্সশিয়াল কমপ্লেক্স, রংপুরে লিটল ব্লেসিং আর্কিটেক্টসহ হাউজ, নোয়াখালীর মাউজদিতে এশিয়া হসপিটাল এন্ড ট্রমা স্টোর, বাসাবোতে ইবনে সিনা মডেল স্কুল, আশুলিয়ায় আলিফ গ্রুপের গ্রীন ফ্যাক্টরী কমপ্লেক্স, দেওয়ান ট্রেড সেন্টার, মেহনাজ গার্মেন্টস, অ্যাম্ব্রয়ডারি ভিলেজ, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদে তনু টাওয়ার, কাঠালগঞ্জের সোবহান টাওয়ার, উত্তরায় এনভয় গ্রুপের প্রজেক্ট, আফতাব নগরে এ এল জেড এর আফতাব নগর, বারিধারায় ডোমেন্ট ড্রিম, চট্টগ্রামের লালখান বাজারে বিএনএস গ্রুপের কনডেমিনিয়াম প্রজেক্ট, গুলশান এভিনিউতে বিএনএস গ্রুপের ইন্টেরিয়র, বাড্ডায় স্কয়ার বানিজ্যিক ভবন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র কাজ করেছেন। ২০০২ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মারজিয়া হাসান। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী।

ইফতেখার হাসান

স্থপতি ইফতেখার হাসান বলেন, আমি আধুনিক পাশ্চাত্য ধারা অনুসরণ করি বটে তবে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে স্থাপত্যে ফুটিয়ে তুলতে ভালোবাসি। একই সাথে উপমহাদেশীও আবহাওয়ায় উপযোগী এবং নতুন আঙ্গিকে সাজাতে পছন্দ করি। ফর্ম ও ফাংশনকে ডিজাইনেই সন্নিবেশ করি ক্লায়েন্টের চাহিদা ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই করে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্তপতি ইফতেখার হাসান। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি ইফতেখার হাসান বলেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক ভালো কাজ করতে চাই। সেই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে নিজস্ব স্টাইলে বিশুদ্ধ স্থাপত্য চর্চা চালিয়ে যেতে চাই।