Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভবনের ব্যবহারিক দিকেই গুরুত্ব দিতে চান আবু সাঈদ

ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ। বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান স্থপতি। দীর্ঘদিন যাবত এ দেশের আদি স্থাপত্য রক্ষার কাজ নিয়ে গবেষনা করে যাচ্ছেন তিনি।১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭সালে জার্মানের কার্লস রুহেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের ডিন। সম্প্রতি এশিয়ার স্থপতিদের সদস্য দেশ গুলোর সংগঠন ’আর্ক এশিয়া’এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ। বিভিন্ন সময়ে তিনি আর্ক এশিয়া সহ দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ স্থপতি ইনষ্টিটিউট এর সাবেক সভাপতি। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। তার সম্পাদনায় স্থাপত্যের আদি ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে মসজিদের স্থাপত্য স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মাননা ও পুরস্কার। কিছুদিন আগে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এ সংস্কার কাজের নেতৃত্ব দেন। এবার শাহসিমেন্ট নির্মাণে আমি’তে স্বনামধন্য এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শনীয় স্থাপনার কাজ করে ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ অনেকের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলা। কিন্ত তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার নাম আব্দুর রশীদ। তিনি কুমিল্লা শহীদ শামসুল হক পলিটেকনিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। মা হেলেনা বেগম গৃহিনী। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৩ সালে । পাশ করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ইসিবিএল নামক এক ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে চার বছর কাজ করেন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান জার্মানিতে। ১৯৯১ সালে জার্মানির কার্লস রুহেল ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স পাস করেন।১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে যোগদেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের ডিন এর দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্য চর্চাও করে যাচ্ছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, নগর ভবন (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন), শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের গেস্ট হাউস,যশোরে বি এ এফ এর বীর মতিউর রহমান একাডেমি, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমি, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেন্ট্রাল লাইব্রেরী ও সেন্ট্রাল মসজিদ, যশোরে বি এ এফ এর জিমনেশিয়াম, জার্মানির ফরচিয়েমের ফায়ার ব্রিজ স্টেশন ও দুরলেচ রেসিডেন্স বিল্ডিং, ঢাকায় বক্শি বাজারে ই সি বি এল এর অফিস বিল্ডিং, সোনারগাঁও মিউজিয়াম বড় সর্দারের বাড়ি। কেরানীগঞ্জে দোলেশ্বর হানাকিয়া জামে মসজিদ,. নিমতলী দেউরি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ফরিদুপুরের আলফাডাঙায় বুরাজ নবাব বাড়ি, কিশোরগঞ্জে মিঠামাইন কাচারি বাড়ি ইত্যাদি। আবু সাঈদ বলেন, আামার মূল ফোকাস হল এ দেশের আদি বিল্ডিং গুলোকে সংরক্ষণ করা। বিল্ডিং গুলো আদিতে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া।স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুবই পরিচিত একটি নাম।

সবার সাথে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ার বেশ নিপুন কারিগর। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারেন। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।তিনি শিক্ষার্থীদেরকে আপন পিতার মত আগলে রাখেন, ভালোবাসেন। সেই ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ দীর্ঘ পথ চলার পরিক্রমায় সম্প্রতি এশিয়ার বাইশ দেশের স্থপতিদের শীর্ষ সংগঠন ‘আর্ক এশিয়া’ এর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। অনুভূতি ব্যক্ত করে ড. আবু সাঈদ বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্ববোধ করছি এ দায়িত্বটা পেয়ে। আরেক দিকে এটা এক ধরনের প্রেসারও। যদি সাকসেস ফুল না হতে পারি তা হলে তো দেশের ইমেজটা নষ্ট হবে। আমি চেষ্টা করবো যাতে এশিয়ার যে আইডেন্টিগুলো সেটা সারা দুনিয়ায় ফোকাস করা যায় কিনা। আমাদের ট্রেডিশন, আমাদের এশিয়ান সিটিজগুলো তুলে ধরা আমার প্রধান উদ্দেশ্য হবে। আমাকে আর্ক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন আমার প্রিয় স্থপতিরা। তাদের এ ভালোবাসার প্রতিদান দিতে আগামীতে কাজ করতে সবার সহযোগিতা চাই।
তরুণ স্থপতিরা যারা এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী? এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট স্থপতি ড. আবু সাঈদ বলেন, তরুণ স্থপতিরা স্থাপত্যচর্চা করবে এটা যেন সাসটেইনেবল স্থাপত্য হয়। আমাদের পরিবেশ, আমাদের বাংলাদেশের জলবায়ু সেটাকে কন্সিডার করলেই এটা সাসটেইনেবল হবে। আমরা যদি এখন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ডকে ফলো করি অনেক লার্জ, সারফেস, অনেক কিছু, যে গুলো আমাদের দেশের ক্লাইমেটের জন্য ফিজিবল না। ঐ ধরনের আর্কিটেকচার তরুণদের করা উচিৎ না। তরুণদের করা উচিৎ আমাদের কনটেক্সট যেটা প্রয়োজন সে ধরনের মেটারিয়াল ব্যবহার করা, সে ধরনের টেকনোলজি ব্যবহার করা, সে ধরনের স্পেস তৈরী করা তাহলে এটা বাঙালীর স্থাপত্য হবে। আজ কাল আমরা খুব বেশি ঝুঁকছি ওয়েস্টার্ন ফোকাস বা আমেরিকান ফোকাস বা ডেভেলাপ কান্ট্রির ফোকাসের দিকে। ঐখান থেকে তরুণদের বেরিয়ে আসতে হবে। লোকাল কনটেক্সট প্রতি নজর রাখতে হবে।। তরুণ স্থপতিরা যারা এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী? উত্তরে ড. আবু সাঈদ বলেন, তরুণদের বলব, ভবন নির্মাণের দুইটি দিক রয়েছে। একটি ব্যাবহারিক দিক এবং আরেকটি নান্দনিক দিক। এই দুইটির সমন্বয় ঘটলেই ভালো ভবন হবে। নান্দনিকতার চেয়ে ভবনের ব্যবহারিক দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।