Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রা ন  আ উ ট  আ ড্ডা : গল্প বলাটাই হলো আসল

সৈয়দ ইকবাল: আনন্দ আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র রানআউট-এর কারিগর তন্ময় তানসেন ও অভিনেতা সজল।  আড্ডা শুরুর আগে ছবি তোলার জন্য দু’জনকেই ডাকা হলো।  ছবি তোলার সময় পরিচালক যেনো কিছুটা অপ্রস্তুত।  কথায় কথায় তিনি বলেও ফেললেন, ছবি তোলা হিরোদের মানায়।  আমরা ভাই ক্যামেরার পেছনের মানুষ।  ক্যামেরার সামনে মানায় না।  তন্ময় তানসেনের কথা শেষ হতে না হতেই সজল তার ডান কাঁধে হাত দিয়ে একটি পোজ দিলেন এবং বললেন, এই যে এভাবে ছবি তুলতে হয়।  সিনেমায়তো অনেক ডিরেকশন দিয়েছেন।  এবার ফটোসেশনে আমি আপনাকে ডিরেকশন দিবো।  দেখবেন ছবি কতো সুন্দর হয়। ছোট্ট এই রসিকতায় বোঝা গেল দু’জনের মধ্যে সম্পর্কটা বেশ পোক্ত।  বোঝাপোড়াটাও ভালো।  ছবি তোলা শেষ হলো।  এবার দু’জন বসলেন রানআউট ছবি নিয়ে আলাপচারিতায়।

আড্ডার ডালপালা বিস্তৃত হলো সজলের কথার রেশ ধরেই।  রান আউট ছবিতে অভিনয় করতে পেরে বেশ উচ্ছসিত তিনি।  উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, আসলে আমি খুব আনন্দিত এমন একটি ছবিতে অভিনয় করতে পেরে।  সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে চারদিকে এতো রেসপন্স পাচ্ছি যা হয়তো চিন্তাই করিনি।  এটা আসলে আল্লাহর রহমত।  আমি পরিচালক তন্ময় তানসেন, ছবির পুরো ইউনিটসহ দর্শকদের কাছে বেশ কৃতজ্ঞ।  পরিচালক তন্ময় তানসেন শুরুতেই কিছু বাস্তবতার কথা শোনালেন।  বললেন, আমার দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে।  একটি ছিলো পদ্মপাতার জল, আর এটি রানআউট।  দুটি ছবির গল্প, মেকিং, গল্প বলার ধরন, গান, লোকেশন সবই একটির চাইতে অন্যটি ভিন্ন।  তবে পদ্মপাতার জল একটু ক্ল্যাসিক দর্শকদের জন্য নির্মিত আর রানআউট সবশ্রেণির দর্শকদের জন্য।  মজার বিষয় হচ্ছে আমি রানআউট-এ রেসপন্সটা বেশি পাচ্ছি।  সুশীল সমাজের অনেকে বলে থাকেন তাদের জন্য ছবি নির্মিত হয় না।  কিন্তু পদ্মপাতার জল তাদের জন্য নির্মিত ছবি ছিলো।  অথচ তাদের অনেকে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যাননি।  আসলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার কালচার থেকে আমরা সরে এসেছি।  সেই তুলনায় রানআউট-এর রেজাল্ট অনেক ভালো।  কারণ এটি সবশ্রেণির দর্শকের সিনেমা।

পরিচালকের এমন কথা শুনে সজল কিছু একটা চিন্তা করছিলেন।  তার দিকে তাকাতেই ঘোর কেটে গেলো।  তার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়া প্রসঙ্গে এবার কথোপকথন।  বললেন, চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা ছিলো অনেকদিনের।  সেই হিসেবে আরো আগে চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়েও করা হয়নি।  কারণ গল্প এবং আনুষঙ্গিক অনেক কিছু পছন্দ হয়নি।  তবে সেই খরা কাটিয়ে দিয়েছে রানআউট।  এমন গল্প এবং নির্মাণশৈলী থাকলে তো অবশ্যই পরবতর্ীতে সিনেমায় নিয়মিত হবো।  সেক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করার জায়গাটা অবশ্যই সিনেমায় থাকতে হবে।

তার মানে কী ছোটপর্দা থেকে বিদায় নিচ্ছেন গ্ল্যামার বয় সজল? এমন প্রশ্নে সজলের উত্তর বেশ সন্তোষজনক।  বললেন, আমি আসলে পর্দা বিভাজনে বিশ্বাসী নই।  ছোট পর্দা বড় পর্দা আমার কাছে কোনো বিষয় নয়।  আমার কাছে দুটোই বেশ সম্মানজনক জায়গা।  আমি নাটক করি উৎসব কেন্দ্রিক, ঈদেই বেশি নাটকে অভিনয় করা হয়।  যেহেতু আমি খ  বা একক নাটকেই বেশি অভিনয় করি, সেহেতু ছবিতে লম্বা কোনো সময় দেয়া সমস্যা নয়।  তার মানে এই নয় যে, আমি ছোট পর্দাকে বিদায় জানাবো।  আর চলচ্চিত্রে বিশাল ক্যানভাসে কাজ করা যায়, তাই এখানে অভিনয়ের ক্ষেত্রে একটা আনন্দ রয়েছে।  ভিন্নধমর্ী গল্পে আমি অবশ্যই অভিনয় করবো।  এরই মধ্যে আরো দু’একটি ছবি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।  খুব শিগগিরই সুখবর জানাবো।  নিজের ছবির হিরো সজলের মুখ থেকে কথাগুলো শুনছিলেন তন্ময় তানসেন।

Sajolএবার পরিচালকের কাছে প্রশ্ন ছিলো রানআউট এর মতো এমন একটি গল্প নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি সম্পর্কে।  কথায় কথায় বললেন, আমার চোখে দেখা বাস্তব কোনো গল্পের আদলে নির্মিত ছবি রানআউট।  আমাদের সমাজে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।  যে যেই কাজটা করে না, তাকে খুব সুন্দরভাবে সেই ঘটনায় জড়িয়ে দেয়া হয়।  আমার এক বন্ধু যাকে কিনা বিনা দোষে জোড়া খুনের মামলায় জড়িয়ে ফেলা হয়েছিল।  এমন অনেক ঘটনাই আছে সমাজে।  তেমনি গল্পের ছবি রানআউট একটি সহজ সরল ছেলেকে যখন খুনী কিংবা অপরাধী বানানো হয় তখন আসলে গল্পটা অন্যরকমই হবে।  সেই চিন্তা-ভাবনা থেকেই রানআউট নির্মাণ করি।  এর সঙ্গে ছিল সিনেমাটিক ম্যুভ, মোশন, নাচগান, অ্যাকশন, মিউজিক সব।  টেলিভিশন মিডিয়া থেকে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন তাদেরকে নিয়ে প্রায় সময়ই চলচ্চিত্র পাড়ায় নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়।  এমন বিষয়ে তন্ময় তানসেনের বক্তব্য হচ্ছে, এই বিষয়ে আমার নিজস্ব একটা ধারণা খুব পরিষ্কার।  আমার কাছে সিনেমা আর নাটকের মধ্যে কোনো পার্থক্য মনে হয় না।  আমার কাছে শুধু মনে হয় একটা গল্প আমি চল্লিশ মিনিটে বলবো আর আরেকটা গল্প আমি আড়াই ঘন্টায় বলবো।  এর মধ্যে রয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য ক্যাটাগরির ফিল্ম।  এখন ফিল্মে বড় ক্যানভাসে কাজ করতে পারি যেটা নাটকে সম্ভব হয়ে উঠে না।  তবে নাটক বানিয়েছি বলে ফিল্ম বানাতে পারবো না এটা আমি মানতে নারাজ।  আর আমাদের ছবি দর্শক দেখবে না এটাও মানতে নারাজ।

এই বিভেদ বোধহয় এখন শেষ হওয়ার দিন এসেছে।  আমরা টিভি মিডিয়ার মানুষজন গত কয়েক বছরে বেশকিছু ভালোমানের ছবি নির্মাণ করেছি যা দর্শক হলে বসে দেখেছে এবং দেশবিদেশে অনেক পুরস্কারও পেয়েছে।  আমাদের রানআউটের কথাই যদি বলি ১৬ অক্টোবর মুক্তির পর থেকে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলার হলে গিয়ে দর্শকদের রেসপন্স দেখেছি।  তারা যে কতোটা উচ্ছসিত তা নিজের চোখে না দেখলে বলা মুশকিল ছিল।  তাহলে টিভি মিডিয়ার মানুষ বলে কী দর্শকরা হলে আসেনি।  আসলে এমন কথাবার্তা যারা বলে থাকেন তারা সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ।  একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন তন্ময় তানসেন।  এরই সঙ্গে বললেন, নিজের পরবতর্ী সিনেমা নিয়ে অনেক স্বপ্নের কথা।

বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে তার নতুন সিনেমার কাজে হাত দিবেন বলে জানান।  এখন চলছে ছবির পান্ডুলিপির কাজ।  সবকিছু ঠিকঠাক করে এই বছরের শেষ নাগাদ নতুন ছবির ঘোষণা দিবেন তিনি।  সজলের বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে বলেন, রানআউটের ঘোরে আমি এখনো আছি।  এই ঘোরে থাকতে চাই আরো কয়েকদিন।  চলতি মাস থেকে দুএকটি নাটকের কাজ করবো।  তারপর নতুন ছবি নিয়ে হয়তো ঘোষণা দিতে পারবো।