Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কাঁদলেন এবং হাসলেন মেসি!

বিশ্বখ্যাত ফুটবলার মেসি। ছেড়ে এসেছেন তার বহু বছরের ক্লাব বার্সেলোনা। কাঁদতে কাঁদতে বাসেৃলোনা থেকে বিদায় নিয়েছেন। এবার হাসতে হাসতে যোগদিলেন নতুন ঠিকানায়। অর্থাৎ প্যারিসে পিএসজি’র সদস্য এখন মেসি।
মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তার পৈতৃক পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছে। বড় দুই ভাইয়ের নাম রদ্রিগো ও মাতিয়াস এবং ছোট বোনের নাম মারিয়া সল। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।তিনি একটি স্থানীয় যুব পরাশক্তির অংশ হয়ে পড়েন, যারা পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে “দ্য মেশিন অফ ‘৮৭” নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাদেরকে এই নামে অভিহিত করার কারণ তাদের জন্ম সাল ছিল ১৯৮৭।
১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার। বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসিকে বার্সেলোনার যুব একাডেমি লা মাসিয়া’র সভ্য করে নেয়া হয়।
২০০৮ সাল থেকে মেসি আন্তনেলা রোকুজ্জোর সাথে বসবাস শুরু করেন। তাদের দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়, ২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে থিয়াগোর আর ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে জন্ম নেয় মাতেও। ২০১৭ সালের ১ জুলাই মহা ধুমধামে তাদের বিবাহ হয়।
পিএসজির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি সেরে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। এখন ক্লাবটির হয়ে তাঁর মাঠে নামার অপেক্ষা।
বহুল আলোচিত এ চুক্তিতে আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে একটি শর্ত রয়েছে। এই খবর জানিয়েছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস। আজ তাঁকে নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করবে পিএসজি।
ফরাসি ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি করতে কালই প্যারিসে পা রাখেন মেসি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়েই প্যারিসে এসেছেন তিনি। কাল রাতেই তাঁর সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলে পিএসজি। দুই বছরের এই চুক্তির সঙ্গে চাইলে মেয়াদটা আরও এক বছর বাড়াতে পারবেন মেসি।
আর্জেন্টাইন তারকা জানিয়েছেন, পিএসজির জার্সিতে মাঠে নামতে তিনি মুখিয়ে আছেন। এদিকে টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, এই চুক্তিপত্রে মেসির জাতীয় দল আর্জেন্টিনা নিয়ে একটি শর্ত দেওয়া আছে। তা জানলে খুশিই হবেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা।
পিএসজিতে খেলাকালীন আর্জেন্টিনার খেলা থাকলে সেটি অফিশিয়াল কিংবা প্রীতি ম্যাচ যাই হোক জাতীয় দলই হবে মেসির প্রাধান্যের জায়গা। আরও একটি শর্ত দিয়েছেন মেসি। পিএসজির নানা সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের চিকিৎসক দল।
আর্জেন্টিনা দল নিয়ে মুন্দো আলবিসেলেস্তের প্রতিবেদক রয় নেইমারও এ দুটি শর্তের কথা জানিয়েছেন টুইট করে, ‘পিএসজির সঙ্গে লিওনেল মেসির চুক্তিপত্রে একটি শর্ত রয়েছে, অফিশিয়াল কিংবা প্রীতি ম্যাচ এলে আর্জেন্টিনা দলই তাঁর কাছে প্রাধান্য পাবে। এর পাশাপাশি আরেকটি শর্ত রয়েছে, আর্জেন্টিনা দলের চিকিৎসক দল পিএসজির নানা সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।’
জাতীয় দলের হয়ে কিছুদিন আগেই প্রথম শিরোপার দেখা পেয়েছেন মেসি। ব্রাজিলের মাটিতে ফাইনালে স্বাগতিকদেরই হারিয়ে জিতেছেন কোপা আমেরিকা ট্রফি। এখন সেপ্টেম্বরে তাঁর সামনে ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ।
২ সেপ্টেম্বর ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। ৫ সেপ্টেম্বর সাও পাওলোয় আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল। ৯ সেপ্টেম্বর বলিভিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।

মাত্র ৩০ মিনিটেই মেসির সব জার্সি বিক্রি শেষ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথাটা বলছেন অনেকেই। লিওনেল মেসিকে অন্য ক্লাবের জার্সিতে দেখতে তাঁদের কেমন যেন লাগছে!
অস্বাভাবিক কিছু নয়। মেসি বার্সেলোনার, বার্সেলোনা মেসির এত দিন ধরে তো এভাবেই ভাবা হয়েছে। পেশাদার ফুটবলের নির্মমতা সে ভাবনায় ছেদ টানলেও নতুন ক্লাবে মেসির ৩০ নম্বর জার্সির কদর কিন্তু এতটুকু কমেনি।
পিএসজি মেসিকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আর্জেন্টাইন তারকার সব জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে।
সংবাদকর্মী জোনাস আদনান গিয়াভেরের সূত্র মারফত তথ্যটি জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘ফুটবল এসপানা’। বাংলাদেশ সময় কাল রাতেই মেসির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছে পিএসজি। এরপর তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা দেয় পিএসজি।
কাল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ১৫ মিনিট নাগাদ ‘প্যারিসে এক টুকরা হীরা’ নামে মেসিকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভিডিও পোস্ট করে ফরাসি ক্লাবটি। সংবাদকর্মী জোনাস জানিয়েছেন, (বাংলাদেশ সময়) রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে পিএসজির অফিশিয়াল অনলাইন স্টোরে মেসির সব জার্সি বিক্রি হয়ে যায়।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেসির জার্সি বেশ চড়া দামেই বিক্রি করছে পিএসজি। গোটা স্কোয়াডের মধ্যে মেসির জার্সির দামই সবচেয়ে বেশি ১৫৭.৯৯ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ১৫ হাজার ৭২০ টাকা।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, মেসির পর জার্সির দামের দিক থেকে সমান অবস্থানে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার, আনহেল দি মারিয়া ও লিয়ান্দ্রো পারেদেস। তাঁদের জার্সির দাম ১০৭.৯৯ ইউরো করে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৭৪৫ টাকা)।
তবে নিজেদের অফিশিয়াল অনলাইন স্টোরে মেসির তিনটি সংস্করণের জার্সি বিক্রি করছে পিএসজি। মেসি যে জার্সি পরবেন, তেমন সংস্করণগুলোর দাম ১৫৭.৯৯ ইউরো করে। ‘স্টেডিয়াম সংস্করণ’এর জার্সির (হোম) দাম আরেকট কম ১০৮.৩৮ ইউরো।
স্টেডিয়াম সংস্করণে মেসির অ্যাওয়ে জার্সির দাম আরও কম—৮৮.৭৬ ইউরো। তবে এসব জার্সি পিএসজি এখনো আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করা শুরু করেনি। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সতর্কতা হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত। এমনকি নাইকির অফিশিয়াল অনলাইন স্টোরেও মেসির জার্সি ছাড়া হয়নি।
বার্সেলোনায় ১০ নম্বর জার্সি পরে খেললেও পিএসজিতে ৩০ নম্বর জার্সি পরবেন মেসি। আরএমসি স্পোর্টস এর আগে জানিয়েছিল, মেসিকে পিএসজিতে আসতে প্ররোচিত করতে নেইমার নাকি তাঁকে ১০ নম্বর জার্সি সেধেছিলেন। মেসি রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই জার্সি নেইমারেরই থাকছে।
বার্সায় শুরুতে এই ৩০ নম্বর জার্সি পরেই খেলেছেন মেসি। ২০০৫ সালের ১ মে, বার্সার হয়ে প্রথম গোলটি তিনি ৩০ নম্বর জার্সিতেই করেছিলেন রোনালদিনিওর পাস থেকে।
ব্রাজিলিয়ান তারকা তখন বার্সায় ১০ নম্বর জার্সি পরছেন। পরে রোনালদিনিওর কাছ থেকে ১০ নম্বর জার্সিটি হাতবদল হয়ে মেসির কাছে আসে। পিএসজিতে এখন ৩০ নম্বর জার্সিটি পরছেন গোলকিপার আলেক্সান্দ্রে লেঁতেলিয়ের।
এদিকে ২১ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে মেসি বার্সেলোনা ছাড়লেও তাঁর জার্সি ক্যাম্প ন্যুর দোকানে বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছে ক্লাবটি। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেসির এরই মধ্যে পিএসজির খেলোয়াড় হয়ে গেলেও অনেকেই তাঁর বার্সায় ১০ নম্বর জার্সিটি কিনছেন, বিশেষ করে পর্যটকেরা।

সম্পর্কিত

প্যারিসে মেসি, আর্জেন্টাইনরা খুশি
ছবির দেশে, কবিতার দেশে খেলবেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার সঙ্গে ছিন্ন করেছেন দীর্ঘ ২১ বছরের বন্ধন। কিন্তু মেসির পিএসজি-যাত্রাকে কীভাবে দেখছে তাঁর নিজের দেশ আর্জেন্টিনার মানুষ?
আর্জেন্টিনার মানুষ খুশি। প্যারিসে গিয়ে মেসি কখন কোন হোটেলে উঠেছেন, কখন পিএসজির সঙ্গে চুক্তি সই করলেন, কখন সংবাদ সম্মেলনে এলেন প্রতিটি ক্ষণের খোঁজখবর রাখছেন আর্জেন্টিনার মেসি ভক্তরা।
পিএসজিতে মেসির জার্সি নম্বর ৩০ হলেও আর্জেন্টাইনদের কাছে মেসির পরিচয় তো ‘নাম্বার টেন’ই। সেই পরিচয় ধরে আর্জেন্টাইন সংবাদপত্র ওলে শিরোনাম করেছে, ‘মেসি এসেছে, প্যারিসে ১০ নম্বরের অভ্যুত্থান ঘটেছে।’
বার্সেলোনার ভক্তরা যখন তাদের তারকা ফুটবলারকে হারিয়ে কাঁদছে, তখন পিএসজির পাঁড় সমর্থকেরা আনন্দে উদ্বেল। পিএসজি মেসিকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটেই বিক্রি হয়ে গেছে আর্জেন্টাইন তারকার সব জার্সি।
বাংলাদেশ সময় ভোর পৌনে চারটার মধ্যে পিএসজির অফিশিয়াল অনলাইন স্টোরে মেসির সব জার্সি বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য বেশ চড়া দামেই সবাই কিনছে মেসির জার্সি।
পুরো দলে মেসির জার্সির দাম সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ‘প্যারিসে এক টুকরা হিরে’ নামে মেসিকে নিয়ে তৈরি একটা ভিডিও পোস্ট করেছে পিএসজি।
ছয়বারের ব্যালন ডি’অরজয়ী মেসির প্যারিস যাত্রাকে বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে আর্জেন্টাইনরা। বুয়েনস এইরেসের ৬০ বছর বয়সী স্বাস্থ্যকর্মী হোসে ইতুরিয়া বলছিলেন, ‘বার্সেলোনায় শেষটা দেখে ফেলেছে সে এবং মেসির নতুন কোথাও যাওয়াটা অবশ্যই ভালো বিষয়। সত্যটা হচ্ছে সেরার যোগ্য সে। কারণ, সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।’
তারার মেলায় মেসির সঙ্গে খেলবেন ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে, ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা, স্পেনের সেন্টার ব্যাক সের্হিও রামোস ও ব্রাজিলের নেইমার। নতুন এই তারকাদের সঙ্গে খেলে মেসির ভালো হবে বলে মনে করছেন ৩৮ বছর বয়সী সমর্থক দারিও লুকি, ‘একটা নতুন পরিবেশ এবং তাকে ঘিরে থাকবে আরও অনেক তারকা। সব মিলিয়ে এটা তার এবং তার দলের জন্য ভালো কিছুই হবে।’

নেইমার-এমবাপ্পের সঙ্গে খেলা মেসির কাছে ‘মাথা খারাপ করে দেওয়া’
লিওনেল মেসি। নেইমার। লুইস সুয়ারেজ। বার্সেলোনার ‘এমএসএন’ ত্রয়ী ভেঙে গেছে আগেই। মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজি এসেছেন। তাঁকে নিয়ে এবার পিএসজি গড়ছে নতুন ত্রয়ী এমএনএম! মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে।
পিএসজির এ ত্রয়ী সময়ের ফুটবলের সবচেয়ে ভয়ংকর ত্রয়ী হতে যাচ্ছে, এমনটাই ভাবছেন সবাই। নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে খেলতে উন্মুখ মেসিও। এ দুজনের সঙ্গে খেলার ব্যাপারটিকে মেসি বলছেন মাথা খারাপ করে দেওয়া!
আজ প্যারিসে পিএসজির হয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও করে ফেলেছেন মেসি। প্যারিসে পা রাখার পর থেকেই দেখেছেন তাঁকে ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনা। বার্সেলোনার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনের কান্না ভুলে মেসি তাই এখন রোমাঞ্চিত।
পিএসজির হয়ে খেলতে উন্মুখ মেসি সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘প্যারিসে যে সংবর্ধনা পেয়েছি, সেটা অসাধারণ। আপনাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব আমি।’
নেইমার অবশ্য রোমাঞ্চিত আগে থেকেই। মেসিকে নিয়ে পিএসজির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বন্ধুকে ‘ফিরে পেয়ে’ উচ্ছ্বাস জানিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
সেই নেইমার, এমবাপ্পের সঙ্গে খেলার ব্যাপারে মেসিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দিয়েছেন, ‘এমন দারুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিদিন কাজ করার ব্যাপারটা মাথা পাগল করে দেওয়া।’
অবশ্য শুধু এ দুজন নয়, পিএসজিতে নতুন সতীর্থদের সবার প্রতিই মেসির সম্মান অশেষ। থাকবে না-ই বা কেন! রামোস, ভেরাত্তি, ভাইনালডাম, দোন্নারুম্মা, মারকিনিওস, দি মারিয়া, ইকার্দি, হাকিমি…পিএসজির দলে যে তারকার মেলা! সেখানে ধ্রুবতারাই যেন হয়ে এলেন মেসি।
আর পিএসজিতে আসার পেছনে জ্বলজ্বলে আরেক বড় তারার কথাই বললেন মেসি। তাঁর বন্ধু, বার্সেলোনায় এক সময়ের সতীর্থ, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমার।
মেসি বললেন, ‘আমি নেইমারকে অনেক আগে থেকেই চিনি। আমাদের লক্ষ্য এক। আমরা অনেক বছর আলাদা ছিলাম, কিন্তু আমার মনে হয় আমরা একসঙ্গে খেললেই ভালো হয় ব্যাপারটা। আমার পিএসজিতে আসার পেছনে নেইমারও অন্যতম একটা কারণ। অন্য সতীর্থদের সঙ্গে খেলতেও তর সইছে না আমার।’
মেসির সঙ্গে এ মৌসুমে পিএসজিতে যোগ দিয়েছেন সের্হিও রামোস, জর্জিনিও ভাইনালডাম, আশরাফ হাকিমি ও জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। ২০১৫ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতা মেসির চাওয়া, কখনোই চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতা পিএসজিকে অধরা শিরোপাটা এনে দেওয়া।
‘পিএসজি এ মৌসুমে দুর্দান্ত কিছু খেলোয়াড় দলে এনেছে। গত কয়েক বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার ক্ষেত্রে বেশ অনেক দূর এগিয়েছিল তারা। আমি এই ক্লাবে এসেছি ওই লক্ষ্য নিয়েই। আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আমি পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার চেষ্টা করব। আমার লক্ষ্য আরেকটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, আর আমার মনে হয় আমি সে জন্য আদর্শ জায়গাতেই এসেছি’ – মেসির কণ্ঠে রোমাঞ্চ।
মার্কো ভেরাত্তির সঙ্গে খেলা নিয়েও রোমাঞ্চিত মেসি, ‘আমরা ওকে অনেক দিন থেকেই বার্সেলোনায় আনতে চাচ্ছিলাম। তবে এখন তো উল্টোটা ঘটে গেল। আমি এখানে ওর সঙ্গে খেলতে এলাম। সে দুর্দান্ত। এখানে যারা আছে, তারা সবাই নিজ নিজ পজিশনে বিশ্বের সেরা।’

প্যারিসে মেসির হোটেলের ভাড়া প্রতি রাতে ২০ লাখ টাকা
পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর পরিবার নিয়ে লিওনেল মেসি আপাতত প্যারিসের লে রয়্যাল মনচিআও হোটেলে থাকছেন। পিএসজি তাঁকে বাড়ি খুঁজে না দেওয়া পর্যন্ত মেসি এ হোটেলেই থাকবেন।
পিএসজির মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেস থেকে হোটেলটি মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। যদিও সতীর্থ সের্হিও রামোস অনুরোধ করেছেন তাঁর বাসায় থাকতে, কিন্তু মেসি আপাতত এ হোটেলেই থাকছেন এবং সেখানে একসময় ছিলেন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সিনেমাজগতের বড় তারকারা।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, হলিউডের সিনেমা প্রযোজক ওয়াল্ট ডিজনি ও অভিনেতা রবার্ট ডি নিরোও রয়্যাল মনচিআও হোটেলে থেকেছেন। বাসা খুঁজে পাওয়ার আগে এই পাঁচ তারকা হোটেলেই থাকতে হবে মেসিকে।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতি রাতে এই হোটেলের ভাড়া ১৭ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২০ লাখ টাকা। ১৯২৮ সালে যাত্রা শুরু করা এ হোটেল প্যারিসে শিল্পী, সেলিব্রিটি ও বুদ্ধিজীবীদের দেখা করার জায়গা।
মেসির বর্তমান ক্লাব সতীর্থ ও বন্ধু নেইমারও এই হোটেলে থেকেছেন। বার্সেলোনা ছেড়ে ২০১৭ সালে তিনি পিএসজিতে যোগ দেওয়ার সময় এই রয়্যাল মনচিআও হোটেলেই ছিলেন। প্যারিসের সবচেয়ে বিলাসবহুল অঞ্চলে অবস্থিত মনচিআও হোটেল।
হোটেলটিতে প্রায় সময়ই নানা রকম চিত্র প্রদর্শনী হয়ে থাকে। একঘেয়েমি কাটাতে এসব প্রদর্শনীতে সময় কাটাতে পারে মেসি ও তাঁর পরিবার।
২৩ মিটার লম্বা সুইমিং পুল (প্যারিসে হোটেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়), সিনেমা দেখার ব্যক্তিগত জায়গা ছাড়াও ছয়টি বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট রয়েছে এ হোটেলে। মাতসুইশা রেস্টুরেন্ট এর মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান খাবার জায়গা। জাপানিজ থেকে পেরুভিয়ান রসুইঘরের খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে।
পিএসজির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছেন মেসি। চাইলে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে পারবেন বার্সেলোনার সাবেক এ ফরোয়ার্ড। বেতন-ভাতা মিলিয়ে ক্লাবটিতে বছরে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
পিএসজিকে খেলোয়াড়দের বার্ষিক বেতন বাবদ প্রচুর অর্থই খরচ করতে হচ্ছে ২৫ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। মনচিআও হোটেলে ১৪ হাজার ৮২৩ রাত থাকলে এ পরিমাণ টাকা খরচ হবে।

আমার বাসায় থাকতে পারো, মেসিকে রামোস
ছিলেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের দুই কান্ডারি। ভাগ্যের ফেরে আজ দুজনের গায়ে একই জার্সি। বলা হচ্ছে লিওনেল মেসি আর সের্হিও রামোসের কথা। গত মৌসুমেও একজনের কাঁধে ছিল বার্সেলোনার নেতৃত্ব, আরেকজন রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক। এখন দুজনই রিয়াল-বার্সা ছেড়ে এসেছেন পিএসজির ছায়াতলে। আজীবন খেলার মাঠে একে অপরকে ঘায়েল করার সংকল্প নিয়ে মাঠে নামা রামোস ও মেসির লক্ষ্য এখন অভিন্ন।
রামোস এসেছিলেন আগেই। মাস দেড়েক আগেই নিশ্চিত হয়েছিল রিয়ালে থাকছেন না তিনি, পিএসজিও দাঁও মারতে দেরি করেনি। একই কথা প্রযোজ্য মেসির ক্ষেত্রেও। মেসি বার্সায় আর থাকছেন না, এ খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই পিএসজি উঠেপড়ে মেসিকে দলে আনার কাজ করেছে, যাতে তারা শতভাগ সফল। তাই এতকাল যে দৃশ্যপট কল্পনাও করা যেত না, সেটাই আজ বাস্তব।
এখন থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বেন মেসি-রামোস। খেলোয়াড়ি স্বার্থে দুজনকেই এখন অতীতের মন কষাকষি ভুলে যেতে হবে। সে পথে রামোস যে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন, সেটাই প্রমাণিত হলো যেন।
পরিবার নিয়ে আপাতত মেসি প্যারিসের লে রয়্যাল মনচিআও হোটেলে অবস্থান করছেন। যত দিন পিএসজি তাঁর জন্য বাড়ি না খুঁজে দিতে পারছে, তত দিন এখানেই থাকবেন মেসি। হোটেলটা যথেষ্ট বিলাসবহুল, তবে দিন শেষে সেটা তো হোটেলই। নিজের মতো করে থাকার ব্যাপারে সেখানে মন সায় না দেওয়াই স্বাভাবিক। রামোস বোঝেন সেটা। বোঝেন বলেই মেসিকে প্রস্তাব দিয়েছেন নিজের বাড়িতে থাকার জন্য।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এটাই সত্য। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল পাইসের সাংবাদিক হুয়ান ইরিগোয়েন জানিয়েছেন এ খবর।
রামোসের কাছের কিছু সূত্র ইরিগোয়েনকে নিশ্চিত করেছেন এ খবর। রামোস নাকি মেসিকে বলেছেন, ‘তুমি যদি হোটেলে না থেকে কোনো বাসায় থাকতে চাও, চাইলে আমার বাসায় থাকতে পারো।’ সে সূত্র আরও নিশ্চিত করেছে, অতীতের শত্রুতা ভুলে রামোস এখন মেসিকে নিজের একজন হিসেবে আগলে রাখতে প্রস্তুত।
মেসির জন্য বাড়িই শুধু নয়, পিএসজি মেসির তিন ছেলে থিয়াগো, মাতেও ও চিরোকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এল পাইস। তবে রামোস যে মেসিকে এই প্রথম তাঁর বাসায় থাকতে বললেন, তা কিন্তু নয়; এর আগে বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির চুক্তি নিয়ে যখন জটিলতা চলছিল, তখন রামোস ঠাট্টা করে জানিয়েছিলেন, মেসি যদি রিয়ালে যোগ দেন, তাহলে প্রথম কয়েক সপ্তাহ মেসিকে তাঁর বাসায় থাকতে দিতে রাজি রামোস। সেবার ঠাট্টা করে বললেও এবার যে ঠাট্টা করে বলেননি, এটা বলেই দেওয়া যায়।
যাই হোক, মেসি-রামোস এখন যে সতীর্থ!