Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

নতুন পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট

কেমন হলো অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারানোতে প্রাপ্তি আছে, আছে কিছু অপ্রাপ্তিও।
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ, তাতেই ৪-১ ব্যবধানে জয়! সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশ দল যেমন অনেক রেকর্ড গড়েছে, অস্ট্রেলিয়াকেও উপহার দিয়েছে লজ্জার কিছু রেকর্ড। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সিরিজটা তাই বিশেষ জায়গা নিয়েই থাকবে। তবে প্রাপ্তির সঙ্গে আছে হিসাব না মেলা কিছু প্রশ্নও। সেই প্রাপ্তি আর প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা হয়েছে এই লেখায়।

মোস্তাফিজকে নতুন করে পাওয়া
সিরিজে সবচেয়ে তাক লাগানো পারফরম্যান্স মোস্তাফিজুর রহমানের। ৫ ম্যাচে ১৭ ওভার বল করেছেন, ওভারপ্রতি মাত্র ৩.৫২ গড়ে রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৭টি। কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে আসলে সিরিজে মোস্তাফিজের বোলিংটাকে বোঝানো যাবে না। সেটি বুঝতে হবে ম্যাথু ওয়েডকে করা সেই স্লোয়ারে কিংবা অ্যাশটন অ্যাগারকে করা কাটারে। এতটাই রহস্যময় লেগেছে তাঁর বোলিং, যেন ২০১৫ সালের মোস্তাফিজই ফিরে এসেছেন আরও ভয়ংকর রূপে। ভাবা যায়, টি-টোয়েন্টিতে একজন বোলার তাড়া করতে নামা একটা দলের বিপক্ষে ম্যাচের ১৯তম ওভারে মাত্র ১ রান দিচ্ছেন! মোস্তাফিজের গোলকধাঁধার সমাধান করতে না পেরে ড্যান ক্রিস্টিয়ান স্বীকার করেছেন, ‘তার বলে এত কিছু হয়, পিচেও বল ওঠা-নামা করে, তাই বল কেমন হবে, বোঝার উপায় নেই। আমরা কোনো সমাধান বের করতে পারিনি।’

সম্পর্কিত

সাকিবের অদম্য মানসিকতা
শেষ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়, আরও একবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সেরাও। এসব সাকিব আল হাসানের কাছে নতুন কিছু নয়। এই সিরিজে সাকিব আরও একবার দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের বাকিদের সঙ্গে তাঁর সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা মানসিকতায়। নইলে আগের ম্যাচে ৩০ রানের একটা ওভার, ৪ ওভার মিলিয়ে ৫০ রান দেওয়ার পর আর কার পক্ষে সম্ভব পরের ম্যাচেই ওভাবে ঘুরে দাঁড়ানো! অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ সেটা জানেন বলেই তৃতীয় ম্যাচে বোলিংয়ে নামার আগে তিনি চেয়েছিলেন সাকিব যেন সবার সঙ্গে কথা বলেন। সতীর্থদের সাহস দেওয়ার কাজটা যে তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ পারবে না! ব্যাট হাতে সিরিজটা ভালো কাটেনি, তারপরও তিনি রানের হিসাবে দলের সেরা ব্যাটসম্যান, দুই দল মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা। কিন্তু এই সিরিজে যে রকম উইকেটে খেলা হয়েছে, সেটা দিয়ে আসলে ব্যাটসম্যানদের বিচার করতে যাওয়া বোকামিই হবে।

আফিফের স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং
পুরো সিরিজে মাত্র দুজন ব্যাটসম্যানকে দেখেই মনে হয়েছে তারা উইকেটটা ভালো পড়তে পেরেছেন। ব্যাটিংয়ের জন্য এত বাজে উইকেটে কীভাবে চটজলদি নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, সেটা জানেন। একজন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ, অন্যজন বাংলাদেশের আফিফ হোসেন। প্রথম ম্যাচেই ১৭ বলে ২৩, পরের ম্যাচে ৩১ বলে অপরাজিত ৩৭ রান করে ম্যাচসেরা। তবে দুটো ইনিংস দেখে এটাও মনে হয়েছে, আফিফ আসলে তেড়েফুঁড়ে মারার মতো স্লগার নন, তিনি পুরোদস্তুর জাত ব্যাটসম্যান। ইনিংস মেরামত করতে পারেন, প্রয়োজনে রানের গতি বাড়ানোয়ও ভূমিকা রাখতে পারেন। পরের ম্যাচগুলোতে তাঁকে ৬-৭ নম্বরে না নামিয়ে ৪-৫ নম্বরে নামানো যেত। তাতে বাংলাদেশ মিডল অর্ডারে একজন নিখাদ ব্যাটসম্যানের বিকল্পও পেত হয়তো।

সৌম্যকে নিয়ে দুশ্চিন্তা
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল না। এই উইকেটে রান করতে না পারার জন্য কোনো ব্যাটসম্যানকে বলির পাঁঠা বানানোও যৌক্তিক হবে না। তবে সৌম্য সরকারের সমস্যাটা শুধু উইকেটকেন্দ্রিক ছিল না। পাঁচ ম্যাচের একটিতেও আসলে শুরুটাই করতে পারেননি সৌম্য। এটা তাঁর চিরকালীন সমস্যারই ছবি অধারাবাহিকতা। টানা বেশ কিছু ম্যাচ ভালো খেলবেন, এই আশা কোনো দিনই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ওপেনার। ৫টি ইনিংস খেলে ৫০ বলে ২৮ রান! তামিমের চোট পুরোপুরি সারতে যদি সময়ও লাগে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন দাস ফিরলেই জায়গা হারাতে হতে পারে সৌম্যর।

সুযোগ নিলেন নাসুম
জিম্বাবুয়েতে ঝলক দেখানো শামীম হোসেন এই সিরিজে ৩ ইনিংসে করেছেন ১০ রান। মুশফিক-লিটন না থাকায় নুরুল হাসানের সুযোগ ছিল কিছু করে দেখানোর। দ্বিতীয় ম্যাচে আফিফকে সঙ্গ দেওয়া ২২ রানের ওই ইনিংসটা ছাড়া তিনিও ব্যর্থই বলা যায় ব্যাট হাতে। তবে নাসুম সুযোগটা নিয়েছেন দারুণভাবেই। প্রথম ম্যাচেই ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা। পুরো সিরিজে উইকেটের হিসাবে জশ হ্যাজলউডের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে (৮ উইকেট)। নিউজিল্যান্ড সিরিজে একই রকম উইকেটে খেলা হলে নাসুমকে নিয়মিত একাদশে দেখা যেতেই পারে।

ফিল্ডিংয়ে উন্নতির সুযোগ
সব ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের রানটা ১০-১৫ কমিয়ে দিয়েছে স্রেফ দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই রানটাই বড় হয়ে যায় অনেক সময়। উল্টো দিকে বাংলাদেশের এই জায়গায় খুব একটা উন্নতি চোখে পড়েনি। পয়েন্টে ফিল্ডারের হাতে বল রেখে রান নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ৩৮ বছর বয়সী ড্যান ক্রিস্টিয়ানও যেভাবে লাফিয়ে ছক্কা বাঁচিয়েছেন, সেখান থেকে শেখার আছে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের।

উইকেট যেন চাঁদের কলঙ্ক
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট সিরিজ জয়ের সাফল্যেও রেখে দিয়েছে কিছু প্রশ্ন।
টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শুধু বিশ্বকাপে, এটাই যেন নিয়ম হয়ে যাচ্ছিল। সেটাও যদি দুই দল একই গ্রুপে পড়ে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মধ্যে এর আগে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি। এবার নিজেদের কন্ডিশনে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে পেয়ে সুযোগটা হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। হাতের তালুর মতো চেনা কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ‘উপহার’ দিয়েছে ৪-১–এর লজ্জা।
এত বড় অর্জনে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে আনন্দের হাওয়া, তখন আরেকটি আলোচনাও চলে আসছে সামনে। আগামী অক্টোবরেই ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ব্যাটিং উইকেটেই খেলা হবে সেখানে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ যদি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হয়, তাহলে ঘরের মাঠে কম রানের উইকেটে খেলে কতটা ভালো হলো সে প্রস্তুতি? দেশের কোচ ও সাবেক ক্রিকেটারদের মুখে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো জাতীয় দলের জন্য প্রশংসাবাক্য যেমন আছে, চাঁদের কলঙ্কের মতো থাকছে কম রানের উইকেটে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির প্রসঙ্গও।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দুই দলেরই ওভারপ্রতি রানরেট (৫.৮৫) ছিল দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। বোলিংটা যে সিরিজজুড়েই দাপট দেখিয়েছে, সেটি এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। ঘরের মাঠের সুবিধাটা বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়েই নিয়েছে। সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ এই সাফল্যে গর্ববোধ করলেও বিশ্বকাপ ভাবনা মাথায় রেখে কাল মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘আমরা সিরিজগুলো খেলছি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। যদি অক্টোবরে বিশ্বকাপ না থাকত তাহলে আমার বক্তব্য ভিন্ন হতো। আমরাও নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা নেব। কিন্তু কোন পর্যায় পর্যন্ত নেব, সেটা ভাবতে হবে। উইকেট আরেকটু ব্যাটিং সহায়ক হলে ভালো হতো।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান অবশ্য এ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা করছেন না। তাঁর বাজি বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞতায়। খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্য দলগুলোর চেয়ে বর্তমানে এগিয়ে বাংলাদেশই। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জল-হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
রকিবুলও বলছিলেন, ‘আমাদের দলে অনেক ক্রিকেটারই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা অনেক ক্রিকেট খেলেছে। মোস্তাফিজ আইপিএল খেলা ক্রিকেটার। ওরা জানে কীভাবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। আমার মনে হয় না নিজেদের ঘরের মাঠের কন্ডিশনে খেললে বিশ্বকাপে খুব সমস্যা হবে।’
জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়টাকে দেখছেন সতর্ক চোখে। মন্থর উইকেটে নয়, ভালো উইকেটে বাংলাদেশ দলের বোলাররা কেমন করেন, সেটিই দেখতে চান তিনি, ‘সিরিজটা বোলাররা জিতিয়েছে। যেই উইকেটে মাত্র ১১০-১২০ রান হয় সেখানে বোলারদের কতটা দক্ষতা, সেটা একটা বিষয়। দুনিয়ার কোথাও এমন উইকেটে টি-টোয়েন্টি হয় না। তাই এই সিরিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব প্রশংসা করতে চাই না।’
অল্প রানের উইকেটে সিরিজ খেলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে যদি কিছু ক্ষতি হয়েও থাকে, সেটি পুষিয়ে দেওয়ার উপায় বললেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সঙ্গে এই সিরিজের পার্থক্য আছে। বিশ্বকাপে কন্ডিশন এমন থাকবে না। তবে এই ঘাটতিটা আমরা বিশ্বকাপের আগে একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলে পুষিয়ে নিতে পারি, যেখানে উইকেট থাকবে ব্যাটিং সহায়ক। খেলবে দেশের সেরা ক্রিকেটাররা। তাহলে ম্যাচের প্রস্তুতিও হয়ে গেল।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই দেখছেন অন্যভাবে। তাঁর মতে, এই সিরিজে ঘরের মাঠের টি-টোয়েন্টিতে কলার উঁচু করে খেলতে নামার আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে বাংলাদেশ, ‘আমাদের জন্য খুবই ফলপ্রসূ একটা সিরিজ হলো। টি-টোয়েন্টিতে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাইনি। সিরিজ শুরুর আগে যদি বলতাম যে আমরা ৪-১–এ জিতব, তাহলে কিন্তু কেউই বিশ্বাস করত না। জয় খুবই ভালো অভ্যাস। আমরা এই সিরিজে সেই অভ্যাসটা ধরতে পেরেছি।’
ক্রিকেট: সিরিজ জয় ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশের পাঁচটি ভালো দিক
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল সিরিজ শুরুর আগে, যদিও বাংলাদেশের কন্ডিশন বিবেচনায় কেউ কেউ বলছিলেন মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশ একটি বা নিদেনপক্ষে দুটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে যেতে পারে।
সেখানে প্রথম তিনটি ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলেন সাকিব, মুস্তাফিজ, আফিফদের দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ৪-১ ব্যবধানে।
এ সিরিজে শেষ ম্যাচে বোলিং পারফরমেন্সের পর সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ‘ডাবল’ পুরো করেছেন। তিনি হলেন প্রথম ক্রিকেটার – যিনি আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০০ রান করেছেন ও ১০০ উইকেট নিয়েছেন ।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে উন্নতি
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং নিয়ে অভিযোগ ও সমালোচনা হয় নিয়মিত, বিশেষত সীমিত ওভারের খেলায় ফিল্ডিং দিয়েই বৃত্তের ভেতরে রান থামানো, কঠিন ক্যাচ ধরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো বিষয় যেখানে ঘটে থাকে, সেখানে সহজ ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না- এটা অনেক সময় দেখা গেছে।
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতেই একটা হাইলাইট হয়ে থাকবে শরিফুল ইসলামের বলে অ্যাস্টন অ্যাগার সোজা ব্যাট চালালে সেটা শামিম হোসেনের দারুণভাবে ডাইভ দিয়ে ধরে ফেলার মুহূর্তটি।
এই সিরিজে মাথার অনেক ওপরে ওঠা বলগুলোও বাংলাদেশের ফিল্ডাররা মিস করেননি।
বৃত্তের ভেতর বল খুব বেশি বেরোতে দেননি, যার ফলে অপ্রয়োজনীয় রান কম হজম করতে হয়েছে।
ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে দেখা যায়, চার বা পাঁচ রানের ব্যবধানই ম্যাচের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত- সেখানে ফিল্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ম্যাচ হারে বা জয়ে।

নুরুল হাসান সোহানের উইকেটকিপিং
আগে অনেক ম্যাচেই খোলা চোখেই দেখা গেছে বাংলাদেশের উইকেট কিপিংয়ে দুর্বলতা।
তবে বিশেষ করে স্পিন বোলিংয়ে উইকেটের ঠিক পেছনেই থাকা ব্যক্তির ভূমিকা অনেক বেশি, বোলারের সাথে যোগাযোগ, স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ তৈরি করা, যথাযথ রিভিউ সিদ্ধান্তে সহায়তা- এসব ভূমিকায় নুরুল হাসান সোহানকে বেশ চটপটে মনে হয়েছে এই সিরিজে।
তৃতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ১০ রানের জয় পায়। যেখানে ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র এক রান দেন, সেই ওভারে একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে পেছনে যেতে পারতো- কিন্তু সোহান ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্তত দুটি রান বাঁচিয়ে দেন।
এছাড়া স্পিন বোলিংয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে ক্ষিপ্রতা ও ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে যথাযথ জায়গায় ফিল্ডারদের নির্দেশনা দেয়ার কাজেও সোহানের বিচক্ষণতা লক্ষ্য করা গেছে এই সিরিজে।

নতুন স্পিনাররাও নিজেদের প্রমাণ করেছে
মেহেদি হাসান ও নাছুম আহমেদ গত কয়েক সিরিজ ধরেই বাংলাদেশ দলের সাথে আছেন এবং কয়েক ম্যাচ খেলেছেনও। কিন্তু এই সিরিজ জয়ে দুজন সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট এনে দেয়া এবং ওভারপ্রতি বেশ হিসেবি বোলিং করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছেন। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের এই যাত্রায় প্রথম আশাব্যঞ্জক মুহূর্তও আসে মেহেদি হাসানের হাত ধরে, যখন প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের একদম প্রথম বলেই অ্যালেক্স ক্যারিকে বোল্ড আউট করে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি। অভিজ্ঞ স্পিন বোলার অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগার এমনকি সাকিব আল হাসানের চেয়েও সফল ছিলেন মেহেদি আর নাছুম।

আফিফ হোসেন ও শরিফুলের উত্থান
আফিফ হোসেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পারফর্ম করার পর থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা চলছে ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে। কেউ কেউ ‘পরবর্তী সাকিব’ তকমাও দেন তাকে। আফিফ হোসেন ছোট ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি ছাপও রেখেছেন নিজের সামর্থ্যের – কিন্তু বড় কোন দলের বিপক্ষে এই প্রথম এভাবে পারফর্ম করলেন। সাকিব সর্বোচ্চ রান করলেও এই সিরিজে আফিফ হোসেন ব্যাট হাতে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, উইকেটে যেখানে রান নেয়া কঠিন আফিফ নামার সাথে সাথেই রান বের করার বেশ সাবলীল চেষ্টা করে থাকেন। মিচেল স্টার্কের বলে একটা কভার ড্রাইভ তো পুরো সিরিজের সেরা শটগুলোর একটি হয়ে আছে। আফিফের আরেকটি দিক- খুব সাবলীলভাবে ছক্কা মারতে পারেন তিনি।
একই সাথে মুস্তাফিজের সাথে জুটি বেঁধে শরিফুল ইসলামও নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেন এই সিরিজে। সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় তার নাম আছে, শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শরিফুলের বল থেকে রান নিতে হিমশিম খেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। একই সাথে মুস্তাফিজ যখন একপ্রান্তে রান নেয়া কঠিন করে তুলছিলেন, তখন শরিফুল এর ফায়দা নিয়ে উইকেট আদায়ের কাজটাও করেছেন।
সব মিলিয়ে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়া সিরিজ বেশ কয়েকটি আশাবাদের বীজ রোপণ করেছে বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল সাজানো এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে সবকিছু।