Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সিনেমায় আমাদের বঙ্গবন্ধু!

রেজানুর রহমান

করোনা না এলে এতদিনে হয়তো অপেক্ষার প্রহর কেটে যেত। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে সিনেমাটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি হয়তো মুক্তি পেয়ে যেত। যে সিনেমার জন্য গভীর আগ্রহে নিয়ে অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ। সিনেমার নাম ‘বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু মানেই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু’ বাঙ্গালীর অস্থিত্ব, বাঙ্গালীর আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, বিশ্বস্থ ঠিকানা। ছবিটি নির্মিত হচ্ছে জাতির জনকের জীবনের ঘটনা নিয়ে। জাতির জনকের জীবন মানেই তো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জীবন। দেশ মানেই তো মা। দেশ মানেই আমি, আমরা। আর তাই বঙ্গবন্ধু সিনেমাকে ঘিরে বাঙ্গালীর গভীর আগ্রহ। কবে আসবেন কবি… টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া জুড়ে উঠবে দীপ্ত শ্লোগানÑ তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা… তোমার দেশ, আমার দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ… জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু…
একটি সিনেমার জন্য এতো আগ্রহ অতীতে আর দেখা যায়নি। অবশ্য এর কারণও আছে। সিনেমাটি তো একটি দেশকে নিয়ে, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে কথা বলা মানেই বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বলা। পৃথিবীতে এই দৃষ্টান্ত বোধকরি বিরল। একটি দেশের জন্মের ইতিহাস মানেই একজন নেতারও অবদানের ইতিহাস। আর তাই শ্লোগানটি এতো প্রাণ ছুঁয়ে যায়Ñ এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে বহু কাঙ্খিত সিনেমা ‘বঙ্গবন্ধু’। পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন উপমহাদেশের নন্দিত চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। এই ছবির শতকরা ৯০ ভাগ অভিনয় শিল্পীই বাংলাদেশের। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন তুলে ধরতে গিয়ে মূলতঃ বাংলাদেশকেই তুলে ধরা হচ্ছে। আর তাই গভীর আগ্রহ দেশের মানুষের। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে কোনো অভিনেতাকে। কেমন অভিনয় করবেন তিনি? বঙ্গবন্ধুর মতো হতে পারবেন তো? বঙ্গবন্ধুর হাটা চলা, কথা বলার ভঙ্গি, দেশ প্রেম সহ সার্বিক বিষয় সত্যিকার অর্থে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তো? এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও চলছে।
বাঙ্গালীর দুর্ভাগ্য। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর কোনো সদস্য বেঁচে নেই। ৭৫’র ১৫ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে নির্দয়, নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ। সৃষ্টিকর্তার অপার রহমতে ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু সিনেমায় তাদের চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করছেন তাদের ব্যাপারেও গভীর আগ্রহ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন তিনি কি সিনেমার পর্দায় সত্যিকার অর্থে ‘হাসিনা’ হতে পারবেন? এই নিয়েও ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
করোনা না থাকলে হয়তো বঙ্গবন্ধু সিনেমার শুটিং বাংলাদেশেই হতো। করোনার কারণে ভারতের মুম্বাইয়ে শহরতলীর এক প্রান্তে পাহাড় লেক আর সবুজে ঘেরা দাদা সাহেব ফালকে চিত্র নগরী অর্থাৎ ফিল্ম সিটিতে চলছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ শুটিং। অ্যারে পার্ক নামে এক বিস্তীর্ন এলাকায় ছটিরও বেশী লোকেশনে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেট। কোথাও টুঙ্গীপাড়ার নদীর ঘাট বা ফুটবল মাঠ, আবার কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত কলকাতার ঐতিহাসিক বেকার হোস্টেল।
বাংলাদেশ থেকে আকাশ পথে ভারতের মুম্বাইয়ে উড়ে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুতে অভিনয় করে এসেছেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। শুটিং এর প্রয়োজনে কেউ কেউ একাধিকবার মুম্বাইয়ে গেছেন। শেষ খবরে জানা গেছে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমার কিছু অংশের শুটিং বাংলাদেশে হবার কথা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়তো বাংলাদেশ অংশের শুটিং হবে।
বঙ্গবন্ধু’ সিনেমায় দেশের যে শিল্পীরা অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তারা এক অর্থে ভাগ্যবান। কারণ তারাও ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবেন! এ কারণে তারাও গভীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন পর্দায় সিনেমাটি দেখার জন্য। পাশাপাশি গভীর আগ্রহ দেখা দিয়েছে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। যারা সাধারনত এখন সিনেমা দেখেন না তারাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন সেলুলয়েডের পর্দায় বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য। তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ শুরু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমাকে ঘিরে। ইতিহাসের মুখোমুখি হতে চায় তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সাজেদুর রহমান বললেন, গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য। আমার বন্ধুদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ শুরু হয়েছে ছবিটির ব্যাপারে।
সত্যিকার অর্থেই একটি সিনেমার জন্য ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে দেশের মানুষ। কবে আসবেন কবি। যিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখেছেন। যার শিরোনাম বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি…

শ্যাম বেনেগালের কথা
অসম্ভব উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমা নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছিয়াশি বছরের ‘তরুণ’ উপমহাদেশের বহুল আলোচিত চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।
গত বছরের ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই মুম্বাইতে কাঠফাটা রোদ আর তার সঙ্গে শরীর নিংড়ে নেওয়া আর্দ্রতা- এর মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে তিনি রোজ শুট করছেন টানা বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে।
‘কল-টাইম’ কখনও ভোর পাঁচটা, কখনও বেলা বারোটা। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে বেনেগাল রোজ সেটে হাজির- সঙ্গে তাঁর পুরো টিম।
“সেই প্রায় চল্লিশ বছর আগে ‘আরোহণ’ নামে একটা বাংলা ছবি করেছিলাম, তারপর এটা আমার দ্বিতীয় বাংলা ছবি। যদিও দুটোর মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না”, হাসতে হাসতে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন প্রবীণ এই পরিচালক।
আসলে এর আগেও গান্ধী, সুভাষ বোস, নেহরুর জীবন নিয়ে কাজকর্ম করেছি।
“এবার বাঙালি জাতীয়তাবাদের নায়ককে নিয়ে কাজ করার এত বড় সুযোগ- সেই ড্রাইভটাই বোধহয় আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিচ্ছে”, পেঁপের টুকরো মুখে ফেলে স্মিত হেসে বলছিলেন শ্যাম বেনেগাল।
সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়েছিলেন মুম্বাইতে এখন ফিল্মের যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো মূলত শেখ মুজিবের জীবনের প্রথম পর্ব ও পারিবারিক অংশটুকুর – পরিচালকের কথায় যেটা ছবির ‘ডোমেস্টিক পার্ট’।
“এটা একটা খুব লম্বা কাজ, লং হল! এপ্রিলে ভারতের এই অংশটুকুর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর মনসুন শেষ হলে, ধরা যাক আগস্টের শেষ দিকে বা সেপ্টেম্বরের গোড়ায় লোকেশন সরে যাবে বাংলাদেশের বিশাল ক্যানভাসে।”
“যেমন ধরুন শেখ মুজিবের বিশাল জনসভাগুলো। উনি তো আর দশটা মানুষের সামনে ভাষণ দিতেন না, তাঁর কথা শুনতে হয়তো পাঁচ লক্ষ মানুষের ভিড় হতো।”
“তো সেই জিনিস তো আর এখানে রিপ্রোডিউস করা সম্ভব নয়, বাংলাদেশেই ওটা করতে হবে”, বলছিলেন শ্যাম বেনেগাল। তার কতা অনুযায়ী খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধুর শুটিং বাংলাদেশে শুরু হবে বলে আশা করা যায়।

আমি মানুষ শেখ মুজিবের প্রেমে পড়ে গেছি
আরেফিন শুভ
‘বঙ্গবন্ধু’র বায়োপিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রতারকা আরেফিন শুভ। বেশ কয়েক দফা অডিশন দেওয়ার পর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর নাম এই চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
“সত্যি বলতে কী সেই দিনটার পর আমার জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আমি যেন একটা অদ্ভুত মোডে ঢুকে গেছি”, শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ভ্যানিটি ভ্যানে বসে বিবিসিকে বলছিলেন আরেফিন।
একটু আগেই তাকে দেখেছি অনশন ধর্মঘটে শীর্ণ, দুর্বল শেখ মুজিবের মেকআপে।
ঘটনাচক্রে সেদিন ছিল আরেফিন শুভ-র জন্মদিন। অথচ রুগ্ন, অনশনক্লিষ্ট চেহারাটা ফুটিয়ে তুলতে তিনি আগের রাত থেকে একদম না-খেয়ে আছেন- মেথড অ্যাক্টিংয়ের পাঠ যেরকমটা বলে!
‘বঙ্গবন্ধু’র সেই লুক প্রকাশ করার এখনও অনুমতি নেই, কাজেই আরেফিনের সঙ্গে কথা হল তিনি মেক-আপ তোলার পরই।
“বলে না যে ভালবাসা অন্ধ হয়? ভালোবাসার বা প্রেমের কোনও চোখ থাকে না? আমারও এখন যেন সেই অবস্থা, জানেন? কারণ আমি মানুষ শেখ মুজিবের প্রেমে পড়ে গেছি।”
“আসলে এই মানুষটার সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে গিয়ে, গবেষণা করতে গিয়ে, তার জীবনদর্শনটা উপলব্ধি করতে গিয়ে এই মানুষটা আমাকে একেবারে প্রেমে পাগল করে দিয়েছেন। আর সেই প্রেম থেকেই আমি কাজটা করছি।”
“আমি কিন্তু এখানে জাতির পিতা, রাজনীতিবিদ বা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের কথা বলছি না- বলছি মানুষ শেখ মুজিবের কথা”, সেই সঙ্গেই যোগ করেন আরেফিন শুভ।
“কাজেই প্রতিটা শট, প্রতিটা মুহুর্তই আমার কাছে কল্পনার মতো। আমি খালি ভাবছি উনি কি আমার কাজটা দেখতে পাচ্ছেন? কিছু কি বলতে চাইছেন?”
“উনি কি ভাবছেন এই গাধাটাকে কে এই চরিত্রটা দিয়েছে? না কি উনি খুশি হচ্ছেন?”, বলতে বলতে ধরে আসে আরেফিন শুভর কণ্ঠস্বর।

শুটিং এর বাইরের গল্প
‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন শ্যাম বেনেগালের বহুদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী শামা জাইদি, সঙ্গে ছিলেন অতুল তিওয়ারি।
প্রবাদপ্রতিম পরিচালক এম এস সথ্যুর স্ত্রী শামা নিজেও থিয়েটার ও চলচ্চিত্র দুনিয়ার একজন কিংবদন্তী, এর আগেও শ্যাম বেনেগালের বহু ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি।
এই বিরাশি বছর বয়সেও তিনি প্রায় রোজই বঙ্গবন্ধুর সেটে আসছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাচ্ছেন।
শামা জাইদি বলছিলেন, শুধু জাতির নায়ক হিসেবে নন, এই ছবিতে তারা শেখ মুজিবকে ধরতে চেয়েছেন তাঁর একান্ত পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকেও।
“এ কারণেই আমরা যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি, প্রথমেই তাঁকে বলেছিলাম আমরা ছবিটা বানাতে চাই আপনার মায়ের চোখ দিয়ে, শেখ মুজিবের প্রিয় ‘রেণু’র চোখ দিয়ে।”
“এরপর টানা দুদিন ধরে শেখ হাসিনা আমাদের তাঁর মায়ের গল্প শুনিয়েছিলেন।”
“একজন নিরীহ গ্রামের মেয়ে, যে তাঁর স্বামীকে রাজনীতিতে আসতে দিতে চায় না- সেখান থেকে ফজিলাতুন্নিসা মুজিব কীভাবে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর সার্থক অর্ধাঙ্গিনী হয়ে উঠেছিলেন সেটাই তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন”, বলছিলেন শামা জাইদি।
তিনি আরও জানাচ্ছেন, এই চিত্রনাট্যের ‘রাজনীতি’র দিকটাও শুধরে দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“শেখ হাসিনা আমাদের বলেছিলেন, নান্দনিক দিক থেকে আপনারা চিত্রনাট্যে যা খুশি করুন আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু চিত্রনাট্যে যে রাজনীতির অংশটা, সেটা কিন্তু নিজেই দেখে দিয়েছেন।”
“বস্তুত রোজ ফজরের নামাজের পর শেখ হাসিনা নিজেই স্ক্রিপ্টটা নিয়ে ঘন্টাদুয়েক বসতেন। তারপর নোট নিয়ে আমাদের নানা মূল্যবান পরামর্শ দিতেন, যেগুলো চিত্রনাট্যে প্রতিফলিত হয়েছে”, বললেন শামা জাইদি।

বঙ্গবন্ধুর বাবা মায়ের কথা
বিবিসির রিপোর্টার লিখেছেন, যেদিন ফিল্ম স্টুডিওর সেটে বঙ্গবন্ধুর শুটিং দেখতে যাই, সেদিন ‘লেকডাউন’ লোকেশনে শ্যুট করা হচ্ছিল টুঙ্গিপাড়া গ্রামের নৌকাঘাটে বিশেষ একটি দৃশ্যের। কারাগারে উনিশ দিনের টানা অনশন ধর্মঘটের পর মুক্তি পেয়েছেন তরুণ শেখ মুজিব, নৌকো করে তাঁকে নিয়ে আসা হচ্ছে নিজের গ্রামে।
নদীর ঘাটে তাঁকে নিতে এসেছেন বাবা লুৎফর রহমান, খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন গ্রামবাসীরাও। পুরো গ্রামে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে, অনশনে দুর্বল মানুষটাকে ধরাধরি করে নৌকা থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন তারা।
এই বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন বাংলাদেশের বিনোদন জগতের সুপরিচিত নাম চঞ্চল চৌধুরী।
“পিতার সঙ্গে শেখ মুজিবের আসলে একটা মাল্টি-ডায়মেনশনাল সম্পর্ক ছিল। বাপ-ব্যাটা একসঙ্গে ফুটবল খেলতেন, আরও অনেক কিছু করতেন যেগুলো সে আমলে খুব একটা দেখা যেত না”, বলছিলেন তিনি।
“আদর, সোহাগ, শাসন- সেই সম্পর্কের আসলে অনেকগুলো পরত ছিল। তার সব খুঁটিনাটি হয়তো চিত্রনাট্যে আসেনি, তার পরও যেটুকু এসেছে সেগুলো সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”
“আর একটা জিনিস হল বঙ্গবন্ধুর পিতার চরিত্রে অভিনয় করাটা তো আমার কাছে সত্যিই বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ আমার বয়স বলি, যাই বলি কোনওটাই তো বাস্তবে সেরকমটা নয়”, হাসতে হাসতে বলেন চঞ্চল চৌধুরী।
“তা ছাড়া চরিত্রের যে সময়টাকে ধরছি সে সময়ের ঠিকঠাক রেফারেন্সও তো খুব একটা নেই, কাজেই চরিত্রটার রূপায়নে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাও কাজ করছে বলতে পারেন।”
এবং চঞ্চল চৌধুরী একা নন, বাংলাদেশের যে নামী অভিনেতারা এই ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত তারা প্রত্যেকেই খুব দরদ দিয়ে কাজটা করছেন, এবং যেন একটা অনাবিল ঘোরের মধ্যে আছেন।
যেমন বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুনের ভূমিকায় অভিনয় করা প্রবীণা অভিনেত্রী দিলারা জামান।
এই আশি ছুঁই-ছুঁই বয়সে ডায়াবেটিস তাকে বেশ কাবু করে ফেলেছে, সকাল-বিকাল ইনসুলিনের ভরসাতেই থাকা। কিন্তু তারপরও এই কোভিডকালে তিনি বেশ ঝুঁকি নিয়েই মুম্বাই চলে এসেছেন, সেটে আসছেন রোজ সকাল-বিকেল।
দিলারা জামান বলেন, “আসলে কি আমেরিকার পাট গুটিয়ে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন স্বপ্নেও ভাবিনি এত বড় একটা কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।” কাজটা শেষ করতে পারলে হয়তো এটাই হবে আমার জীবনের শেষ কাজ, জানি না!
“কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি এই ছাপ্পান্ন বা সাতান্ন বছরের অভিনয় কেরিয়ারে এটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠতম কাজ। কারণ জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যাকে বলা হয়- তাঁর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জীবনের এক পরম প্রাপ্তি।”

মুজিব কোট প্রসঙ্গ
বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট, পোশাক-আশাক আর বিখ্যাত ‘মুজিব কোট’ নিয়েও অনেক গবেষণা করেছে ‘টিম বঙ্গবন্ধু’। এই মুভিতে কস্টিউম ডিজাইন করছেন পিয়া বেনেগাল, যার ঝুলিতে রয়েছে বলিউডের বহু ছবির জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা।
ফিল্ম সিটির এক প্রান্তে তার নেতৃত্বে চলছে ‘বঙ্গবন্ধু’র শিল্পীদের শত শত পোশাক তৈরির কারখানা। অবিরাম সেলাই মেশিনের ঘড়ঘড় আর কাঁচির কারিকুরিতে তৈরি হচ্ছে পিরিওড ফিল্মের কস্টিউম। ‘স্মার্ট অ্যান্ড ড্যাশিং হ্যান্ডসাম’ শেখ মুজিবের পরিণত বয়সের ‘ড্রেস সেন্স’ মুগ্ধ করে রেখেছে পিয়া বেনেগালকেও।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “যদি ওঁনার মুজিব কোটের কথাই ধরি, তার যেমন চমৎকার কাট – তেমনি একটা দারুণ আইডিয়া হল সেই কোটের হোয়াইট ইনার কলার, যেটা রোজ পাল্টানো হত।”
“আমি ঠিক জানি না এই কলারের আইডিয়াটা মুজিবের নিজস্ব, না কি তাঁর গৃহিণীর – কিন্তু এই ঘাম আর ধুলোর দেশে এই আলাদা কলারের ভাবনাটা চমৎকার একটা কনসেপ্ট।”
“একটা কোটের জন্য আসলে অনেকগুলো কলার থাকত- আর কোট তো আর রোজ কাচাকুচি করা সম্ভব নয়, কিন্তু নোংরা হলেই সাদা কলারটা পাল্টে নেওয়া খুব সোজা”, কোটের আলাদা কলারের উচ্ছ্বসিত তারিফ করে বলছিলেন পিয়া। এভাবেই এই ফিল্মের শ্যুটিংয়ে ছোটখাটো নানা খুঁটিনাটির মধ্যে দিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন করে আবিষ্কারের পালা।


১. আরেফিন শুভ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)
২. দেওয়ান মোঃ সাইফুল ইসলাম সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম)
৩. শহীদুল আলম সাচ্চু (এ, কে, ফজলুল হক)
৪. রাইসুল ইসলাম আসাদ (আব্দুল হামিদ খান ভাসানী)
৫. গাজী রাকায়েত (আব্দুল হামিদ (রেনুর দাদা))
৬. খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান)
৭. দিলারা জামান (বয়স্ক সাহেরা খাতুন) (সাহেরা খাতুন)
৮. সঙ্গীতা চৌধুরী (ছোট সাহেরা খাতুন) (সাহেরা খাতুন)
৯. প্রার্থনা দীঘি (রেনু (ছোট))
১০. তিশা (রেনু (বড়))
১১. কামরুল হাসান (শেখ কামাল)
১২. ইশরাক তুর্য্য (শেখ কামাল ছোট ৮/১২ বছর)
১৩. তৌহিদ (শেখ কামাল ছোট ৫ বছর)
১৪. শরীফ সিরাজ (শেখ জামাল ছোট)
১৫. তুষার খান (মানিক মিয়া)
১৬. ফজলুর রহমান বাবু (খন্দকার মোস্তাক আহমেদ)
১৭. লুৎফর রহমান (বয়স্ক নাসির) (নাসির)
১৮. সমু চৌধুরী (কামরুজ্জামান)
১৯. খলিলুর রহমান কাদেরী (মনসুর আলী)
২০. ফেরদৌস আহমেদ (তাজউদ্দীন)
২১. শতাব্দী ওয়াদুদ (পাকিস্তানি আর্মি অফিসার)
২২. নরেশ ভূঁইয়া (জেলে-১)
২৩. সাইলেন পাল (জেলে-২)
২৪. মোস্তাফিজুর ইমরান নুর (শেখ মনি)
২৫. শাহনাজ সুমি (আরজু মনি)
২৬. নুসরাত ফারিয়া (শেখ হাসিনা (ছোট শেখ হাসিনা))
২৭. জান্নাতুল সুমাইয়া (শেখ হাসিনা (বড় শেখ হাসিনা))
২৮. ওয়ানিয়া জারিন আনভিতা (শেখ হাসিনা (ছোট শেখ হাসিনা ৮/১২ বছর))
২৯. সামান্তা রহমান (শেখ রেহানা (ছোট))
৩০. নাইরুস সিফাত (রোজি জামাল)
৩১. নাজিবা বাশার (সুলতানা কামাল খুকী)
৩২. লিমা আখতার (হেলেন (বড়))
৩৩. পুস্পিতা (হেলেন (ছোট ১৩/১৭ বছর))
৩৪. সাইখ খান (১৩ বছর)
৩৫. তৃদ্বীপ সরকার (রোমা (ছোট ৮ বছর))
৩৬. ডমিনিক গোমেজ (প্রিন্সিপ্যাল অব গোপালগঞ্জ স্কুল)
৩৭. ইয়াশরিব হাবিব (রাশেল (৫ বছর বয়স))
৩৮. সাব্বির আহমেদ (টুফেল)
৩৯. সাদমান প্রত্যয় (ছাত্র)
৪০. আসিউল ইসলাম (ছাত্র/মহিউদ্দীন)
৪১. জর্জ দীপ্ত ডি’কস্তা (গোপালগঞ্জ/ইউনির্ভাসিটি ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট)
৪২. সোলাইমান খোকা (স্কুল টিচার গোপালগঞ্জ)
৪৩. রোকেয়া প্রাচী (বয়স্ক মহিলা)
৪৪. আবুল কালাম আজাদ (জেল গার্ড)
৪৫. শামী সাগর (ছোট মহিউদ্দীন অথবা জেল গার্ড)
৪৬. রোমেজ রাজু (জেল গার্ড)
৪৭. তৌকির আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী)
৪৮. খন্দকার হাফিজ (জেনারেল ওসমানী)
৪৯. মিশা সওদাগর (আইয়ুব খান)
৫০. মোঃ সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া)