সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
কি বলবো তাকে? লিজেন্ড? কিংবদন্তী? চির অমর কণ্ঠস্বর? সারাজীবন তিনি জীবনের গান গেয়েছেন। সেই হাদী ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল চ্যানেল আইয়ের অডিও স্টুডিওতে। হাদী ভাই অর্থাৎ সৈয়দ আবদুল হাদী। সর্বজন শ্রদ্ধেয় সঙ্গীত শিল্পী। সম্প্রতি আত্মজীবনী লিখেছেন। নিজের আনন্দ- বেদনার স্মৃতি। দারুণ ব্যাপার। আমি উত্তেজিত কণ্ঠে পদধূলি নিলাম।
হাদী ভাই এটা একটা কাজের কাজ হয়েছে। আত্মজীবনীতে আপনাকে জানা যাবে তো?
হাদী ভাই বললেন, নিশ্চয়ই। কোনো মিথ্যা লিখিনি।
আপনার প্রেম কাহিনি?
আমীরুল- আমি তো প্রেমিক মানুষ। কিন্তু খুব ভীতু। তাই অনেক প্রেম বুকে ধারণ করে প্রেম করে উঠতে পারিনি।
পাশে ফুয়াদ নাসের বাবু। মিটিমিটি হাসছেন।
সাবিনা আপার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা?
এবার হো হো করে হেসে উঠল আজম বাবু।
আমীরুল ভাই, জায়গা মতো ধাক্কা দিছে।
হাদী ভাই মিষ্টি হেসে বললেন,
নারে ভাই- আমি তো ছোটবেলায় সাবিনাকে কোলেও নিয়েছি। তবে যারা ভালো গান গায় তাদের প্রতি আমার অনেক আকর্ষণ থাকে।
তারপর হাদী ভাই শুরু করলেন তার প্রেমের গল্প। কলেজ জীবনেই তিনি প্রেমে পড়েন। হাদী ভাই পড়েন জগন্নাথে। প্রেমিকা পড়েন ইডেনে। তারপর অল্প বয়সেই বিবাহ। বিবাহিত জীবনে প্রেমের সাগরে তিনি পুরো জীবন কাটিয়েছেন।
এখন তো একা একা থাকেন হাদী ভাই।
না। না। আমি বড় মেয়ের সাথে থাকি। ও আমার সব দেখাশোনা করে। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব ওর।
তাহলে তো রাজার হালে আছেন।
নিশ্চয়ই। যার কন্যা সন্তান আছে তিনিই একমাত্র বুঝবেন, কন্যারা আসলে মায়ের মতো। আমার দ্বিতীয় কন্যাও আমার খুব খোঁজ খবর রাখে। তৃতীয় কন্যা আমেরিকা থাকে। ওদেরকে ঘিরেই আমার জীবন।
বলে হাদী ভাই হো হো করে হেসে ওঠেন।
তারপর আপন মনেই তার বাবার গল্প বললেন, তিনি ছিলেন জজ সাহেব। ইংরেজদের মতো স্যুট টাই পরতেন। কথা কম বলতেন। নিজেও একটু আধটু গান গাইতেন। পাঁচ সন্তানের বাবা ছিলেন। সরকারি চাকুরে। নির্দিষ্ট বেতনের আয়। তাই কষ্ট করেই লেখাপড়া শিখে বড় হতে হয়েছে সৈয়দ আবদুল হাদীকে।
গুরু গম্ভীর বাবা একদিন তার বন্ধুকে বললেন,
চলো সিনেমা দেখতে যাই।
বন্ধু তো আকাশ থেকে পড়লেন।
হাদীর বাবা কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার মানুষ। তিনি যাবেন সিনেমা দেখতে? বড় রহস্যময় ব্যাপার।
বাবা তখন বললেন,
শুনেছি হাদী নাকি গান গেয়েছে সিনেমায়। সেটা দেখার জন্য যেতে চাচ্ছি।
কোন সিনেমার গান সেটা?
হাদী ভাই বললেন,
গোলাপি এখন ট্রেনে। আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার।
কি বললেন আপনার বাবা? জানতে চাইলাম আমি।
বাবা প্রশংসাই করেছিলেন।
হাদী ভাই নতুন গান রেকর্ডিং এর জন্য অপেক্ষা করছেন। এই ফাঁকে আরও কিছু জানতে চাইলাম। হাদী ভাই জানালেন, তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। একুশে পদক পেয়েছেন। পুরস্কারে তার কিছু যায় আসে না। দেশের মানুষ তার গান পছন্দ করে।
হাদী ভাই, আপনার আত্মজীবনী বইটার নাম কি রেখেছেন?
জীবনের গান। খারাপ হইছে?
না, না। খুব ভালো নাম হয়েছে। কোথা থেকে বেরুচ্ছে?
প্রথমা থেকে। ওরা দ্রুত কাজ করছে। বইটার প্রতি আমার মমতা তৈরি হয়েছে।
তারপর হাদী ভাই দার্শনিকের মতো বললেন, প্রতিটা মানুষের আত্মজীবনী লেখা উচিৎ। কারণ প্রত্যেকের নিজস্ব জীবন। একক অভিজ্ঞতা। তাই প্রত্যেকেরই জীবন উপন্যাসের মতো। প্রত্যেকের আলাদা অভিজ্ঞতার জীবন। প্রত্যেকে আমাদের কাছে মূল্যবান। প্রত্যেকটা মানুষ একক ও দামী। তাই মানুষকে আমি খুব মূল্য দেই।
আমরা বললাম,
হাঁ। আপনি তো জীবনের জয়গান গেয়েছেন। লিখেছেন জীবনের গান। বইটির অপেক্ষায় আছি আমরা। বইটি পড়তে হবে। আপনাকে জানতে হবে।
লেখক : বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক