Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তিনে তিন! অস্ট্রেলিয়াও হার মানলো বাংলাদেশের কাছে

মামুনুর রহমান

দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের এমন কেউ নেই যাদের বুক আজ দুরুদুরু করে কাঁপে নাই। কোন নাটকীয়তা নয় এমন বলার সময় এসেছে বলতেই পারি আমরা। তিনে তিন জয়। সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হলো প্রিয় দল বাংলাদেশ। বিশ্ব পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া তো অবশ্যই। গোটা বিশ্ব আজ বিস্মিত। বাংলাদেশ সিরিজ চ্যাম্পিয়ন হলো ২ ম্যাচ হাতে রেখেই। লেখার সময় অন্যরকম একটা আনন্দ খেলে যাচ্ছে। টি/২০ র বুম বুম ক্রিকেটের অনুপস্থিতি ছিল। তবে লো স্কোরিং ম্যাচে যেভাবে অজিরা নাকানিচুবানি খেয়েছে তাতে এটা নিশ্চিত দম্ভ করার মতো বড় বড় বুলি আওড়াতে কিছুটা হলেও আগামীতে বেগ পেতে হবে তাদের। করোনা বাক্যে মুশফিকুর রহিমকে খেলতে না দিয়ে যে অহমিকা তারা প্রকাশ করেছিল, এখন নিশ্চিত করে বলাই যায় তাদের অহংকারের পতন হলো। বাংলাদেশে আসার পূর্বে তারা যত গুলো বিধিনিষেধ দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কে তার প্রতিটিই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে তারা ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল যেন কোন খেলায় না জিততে পারে তা বিধিনিষেধে উল্লেখ করতে। কথায় আছে হোতা মুখ সব সময় ভোঁতা হয়। আজ তৃতীয় ম্যাচে তারই প্রমান আবার পাওয়া গেল।
অজিদের আজকের ম্যাচের প্রদর্শন কিন্তু আগের দুই ম্যাচের থেকে অনেক আক্রমনাত্মক ও জেতার জন্য মরিয়া মনে হয়েছে। সিরিজে টিকে থাকতে লম্বা সময় মাঠে বাউন্ডারি আটকানোর চেষ্টা, ব্যাটিংয়ে খুব বেশি রুম না দেয়া, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্লেজিংয়েও অংশ নিয়েছে তারা। শেষ রক্ষাটা আর হলো না। না হবার পেছনে তাদের ইতিহাস চমৎকার স্বাক্ষী বহন করে। টিম অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় ডু অর ডাই সিচুয়েশনে কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ১০ রানে জিতে অজিদের বিপক্ষে টাইগারদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো সংস্করণের সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।এ জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ এখন ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

টাইগারদের মতো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ছিল দৃষ্টিকটু। শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপে আঘাত হানেন নাসুম আহমেদ। ওপেনার ম্যাথু ওয়েড ব্যক্তিগত এক রানে ফেরেন শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ক্যাপ্টেন ফিরে গেলেও দলের বিপদ কাটিয়ে তুলেন অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান বেন ম্যাকডারমট। তবে ৩৫ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তিনি দলীয় স্কোরে। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ম্যাকডারমট সাজঘরের পথ ধরলে ব্যাট হাতে লড়ে যান মিচেল মার্শ করেন দলের জন্য প্রয়োজনীয় ৫১রান । অর্ধশতকের দেখা পেয়ে উইকেট থেকে বিদায় নেন তিনিও। অ্যালেক্স কেরি ২০ রানে অপরাজিত থেকে যান।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের হয়ে আজকের সফল বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। নিশ্চিত ভাবে বলাই যায় পরের দুই ম্যাচের জন্য মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে রীতিমতো কাটা ছেঁড়া করবে অজিরা।

তবে শুরু থেকেই দাপুটে বোলিং করে অতিথি বোলাররা। তাই তো ব্যাটিংয়ে নেমেই হোঁচট খেয়ে বসে বাংলাদেশ। দলীয় ৩ রানের মাথায় হারিয়ে বসে তারা তিন উইকেট। জশ হ্যাজলউডের বলে উইকেটের পিছনে ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম (১)। অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ফেরেন অ্যাডাম জাম্পার এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পা দিয়ে।

মন্থর উইকেটে এমন বিপদের সময়ে দলের ব্যাটিং লাইন-আপের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তৃতীয় উইকেটে বড় স্কোরের সাহস যোগান দুজনে। কিন্তু ৪৪ রানেই ভেঙে যায় তাদের জুটি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সাজ ঘরে ফেরেন মাত্র ২৬ রান করে। দুরন্ত ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রান নিয়ে রানআউটের শিকার হন তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন। অস্ট্রেলিয়ানদের ক্ষুরধার বোলিংয়ে ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দিতে না পেরে ৯৭ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে এলোমেলো হয়ে পড়া স্বাগতিকরা। মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে লড়াই করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি। তিনি আউট হন ৫২ রান করে । ইনিংসের শেষ তিন বলে মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসানের উইকেট নিয়ে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেন নাথান এলিস।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাথান এলিস। আর দুটি কওে উইকেট নেন জশ হ্যাজলউড ও অ্যাডাম জাম্পা।

লক্ষ্য বড় নয়। জিততে মাত্র ১২৮ রান করতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু এই রানই তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। মিচেল মার্শের প্রতিরোধের পর মুস্তাফিজ-শরিফুলদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার জয়ের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৭ রান করেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন নাথান এলিস। শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজ ও মেহেদীকে আউট করে নিজের অভিষেক ম্যাচ হ্যাটট্রিকে রাঙালেন এলিস। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১১৭ রানে থামে অস্ট্রেলিয়া।